মা-বাবা শুধু একটি সন্তান চেয়েছিলেন। একটি ভ্রুণ দত্তক নেওয়ার মাধ্যমে তারা সন্তান পেয়ে খুশিও হয়েছেন। কিন্তু এই সন্তানের মা-বাবা হতে গিয়ে একটি সায়েন্স ফিকশন সিনেমার মতো সত্য গল্পের অংশ হয়ে গেছেন তারা। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওর এক দম্পতির ঘরে এক ছেলে সন্তান জন্ম নিয়েছে। যে ভ্রূণ থেকে শিশুটির জন্ম হয়েছে সেটি অনেক পুরনো।

ভ্রুণটি ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে হিমায়িত অবস্থায় সংরক্ষিত ছিল। ধারণা করা হচ্ছে,  এটি সম্ভবত একটি নতুন বিশ্ব রেকর্ড। ৩৫ বছর বয়সী লিন্ডসি এবং ৩৪ বছর বয়সী টিম পিয়ার্স গত শনিবার তাদের ছেলে থাডিয়াস ড্যানিয়েল পিয়ার্স-এর জন্মের খবর জানান। পিয়ার্স দম্পতির সাত বছরের দাম্পত্য জীবনে কোনো সন্তান হয়নি। এরপর তারা লিন্ডা আর্চার্ড নামের এক নারীর একটি ভ্রূণ দত্তক নেন।

পিয়ার্স দম্পতি এমআইটি টেকনোলজি রিভিউকে জানিয়েছেন, তাদের পরিবার মনে করে, এটা যেন কোনো সায়েন্স ফিকশন সিনেমার গল্প। কেননা, বিশ্বে এই প্রথম  এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দীর্ঘ সময় হিমায়িত থাকা কোনো ভ্রূণ থেকে সফলভাবে জীবিত শিশুর জন্ম হওয়ার ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে। এর আগের রেকর্ডটি ছিল ২০২২ সালে জন্ম নেওয়া এক যমজ সন্তানের, যাদের ভ্রূণ ১৯৯২ সালে হিমায়িত করা হয়েছিল।

আরো পড়ুন:

সেই আছিয়ার পরিবারকে গরু ও গোয়াল দিল জামায়াত

শিশু ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন, মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা 

৬২ বছর বয়সী লিন্ডা ১৯৯৪ সালে তার তৎকালীন স্বামীর সঙ্গে আইভিএফ (ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন) পদ্ধতিতে ভ্রূণটি তৈরি করেছিলেন। সে সময়ে লিন্ডা আর্চার্ড মোট চারটি ভ্রূণ তৈরি করেছিলেন। এর মধ্যে একটি থেকে জন্ম নেয় তার বর্তমান ৩০ বছর বয়সী মেয়ে। বাকি তিনটি ভ্রূণ হিমায়িত অবস্থায় সংরক্ষণ করে রাখা হয়। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে গেলেও লিন্ডা বাকি ভ্রূণগুলো নষ্ট করেননি। বরং অর্থ খরচ করে সংরক্ষণ করেছেন। লিন্ডা তার ভ্রুণ দেশের বাইরে কোনো দম্পতির কাছে চলে যাক, তাও চাননি।

তিনি চেয়েছিলেন, ভ্রুণটি যুক্তরাষ্ট্রের কোনো দম্পতির কাছে যাক। এক সময় তিনি খুঁজে পান একটি খ্রিষ্টান ভ্রূণ দত্তক সংস্থা—নাইটলাইট ক্রিশ্চিয়ান অ্যাডপশনস। তারা স্নোফ্লেকস নামের একটি প্রোগ্রাম চালায়। 

লিন্ডা আর্চার্ড যে 'স্নোফ্লেকস' প্রোগ্রামের মাধ্যমে ভ্রূণ দান করেন, সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী সেখানে দাতারা পছন্দ অনুযায়ী দম্পতি বেছে নিতে পারেন। তারা চাইলে গ্রহণকারীর ধর্ম, জাতি ও জাতীয়তা সম্পর্কেও নির্দিষ্ট পছন্দ জানাতে পারেন।

লিন্ডার পছন্দ ছিল—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত, বিবাহিত, শ্বেতাঙ্গ ও খ্রিষ্টান একটি দম্পতি। শেষ পর্যন্ত তার ভ্রূণ লিন্ডসি ও টিম পিয়ার্স দম্পতির সঙ্গে মিলে যায়।

দম্পতির আইভিএফ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা ক্লিনিক, টেনেসির রিজয়েস ফার্টিলিটি জানায়, তাদের লক্ষ্য যেকোনো ভ্রূণই স্থানান্তর করা, সেটির বয়স বা অবস্থা যেমনই হোক না কেন।

লিন্ডসি পিয়ার্স বলেন, তারা কোনো রেকর্ড ভাঙার উদ্দেশ্যে এগোননি, তারা শুধু একটি সন্তান চেয়েছিলেন।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র জন ম ন

এছাড়াও পড়ুন:

রাশিয়ার কাছে ট্রাম্পের পরমাণু সাবমেরিন মোতায়েনের ঝুঁকি আসলে কতটা

সাধারণ সময়ে এই ঘটনা খুবই অস্বাভাবিক, যুগ পরিবর্তনকারী ও ভয়জাগানিয়া বলে মনে হতো। কারণ, স্নায়ুযুদ্ধকালেও কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রকাশ্যে রাশিয়ার উপকূলের দিকে পরমাণু সাবমেরিন পাঠানোর এমন নির্দেশ দেননি।

এই ধরনের পরমাণু উত্তেজনার খেলায় আগে কখনো যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নেতা জড়াননি।

সত্যি বলতে, ১৯৬২ সালে কিউবান ক্ষেপণাস্ত্র–সংকটে সোভিয়েত ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের উপকূল থেকে মাত্র ৯০ মাইল দূরে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র বসিয়ে বিশ্বকে পরমাণু যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। সেই সময় ১৩ দিন ধরে পুরো পৃথিবী ভয় আর অনিশ্চয়তায় কাঁপছিল।

তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কল্পনাবিলাসী শাসনব্যবস্থার কারণে এবার তেমন ভয় বা আতঙ্ক দেখা যাচ্ছে না। এটি মোটেই কিউবান ক্ষেপণাস্ত্র–সংকটের দ্বিতীয় সংস্করণ নয়, তা খুব স্পষ্ট।

তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কল্পনাবিলাসী শাসনব্যবস্থার কারণে এবার তেমন ভয় বা আতঙ্ক দেখা যাচ্ছে না। এটি মোটেই কিউবান ক্ষেপণাস্ত্র–সংকটের দ্বিতীয় সংস্করণ নয়, তা খুব স্পষ্ট।

তবে তার অর্থ এই নয় যে ট্রাম্প যা করলেন, সেটি কোনো ঝুঁকিমুক্ত সিদ্ধান্ত।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রাশিয়ার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অবস্থান এমনভাবে বদলেছেন, যেটা তাঁর পূর্বসূরিদের কেউই সাহস করেননি। এমনকি অনেকটা হালকাভাবেই তিনি পারমাণবিক উত্তেজনার সিঁড়ির প্রথম ধাপে পা রেখেছেন।

এখন যদি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পাল্টা জবাব দিতে চান, তাহলে বড় ধরনের সংকট তৈরি হতে পারে।

ট্রাম্প হয়তো মনে করছেন, পুতিন তেমন কিছু করবেন না। আসলে ট্রাম্প সম্ভবত এবার রাশিয়ার কৌশলই ব্যবহার করছেন।

পুতিন দীর্ঘদিন ধরেই পারমাণবিক অবস্থান বদলানোকে চাপ সৃষ্টির কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। পশ্চিমাদের সঙ্গে উত্তেজনার সময় তিনি প্রায়ই কালিনিনগ্রাদে পারমাণবিক ওয়ারহেড ছুড়তে সক্ষম ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেন। এই কালিনিনগ্রাদ এলাকাটি ন্যাটোর সদস্যদেশ পোল্যান্ডের সীমান্তে অবস্থিত।

২০২৩ সালে পুতিন বেলারুশে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করেন। স্নায়ুযুদ্ধের পর এই প্রথম রাশিয়া নিজেদের দেশের বাইরে পারমাণবিক অস্ত্র মোতায়েন করল। তিনি ইউক্রেনে বারবার কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ইঙ্গিতও দিয়েছেন।

আর গতকাল শুক্রবার পুতিন ঘোষণা দিলেন, রাশিয়া ওরেশনিক নামে একধরনের হাইপারসনিক মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি শুরু করেছে। এসব ক্ষেপণাস্ত্র ২০২৫ সালের মধ্যেই বেলারুশে মোতায়েন করা হবে। তিনি দাবি করেন, এই ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের জন্য নির্দিষ্ট স্থানও ইতিমধ্যে বাছাই করে রাখা হয়েছে।

গত কয়েক দিনে রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ সতর্ক করে বলেছেন, ট্রাম্পের নানা হুমকি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ বাধিয়ে দিতে পারে। মেদভেদেভ রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আক্রমণাত্মক ভূমিকা পালন করছেন। তিনি এর আগেও পরমাণু যুদ্ধের হুমকি দিয়েছেন।

পুতিন দীর্ঘদিন ধরেই পারমাণবিক অবস্থান বদলানোকে চাপ সৃষ্টির কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। পশ্চিমাদের সঙ্গে উত্তেজনার সময় তিনি প্রায়ই কালিনিনগ্রাদে পারমাণবিক ওয়ারহেড ছুড়তে সক্ষম ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেন।

কিছুদিন আগেও পুতিনের ভক্ত হিসেবে পরিচিত ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তিনি রাশিয়ার হুমকিকে পাত্তা দিচ্ছেন এবং তার মোকাবিলায় পাল্টা চাল দিচ্ছেন।

অন্যভাবে বললে, রাশিয়া যেটাকে ‘কেবল হুমকি’ হিসেবে দিচ্ছে, ট্রাম্প সেটাকে ‘আসল হুমকি’ হিসেবে নিচ্ছেন। এটা অনেকটাই উল্টো পরিস্থিতি। কারণ, ট্রাম্পের সমর্থকেরা সাধারণত বলে থাকেন, তাঁর কথাকে সরাসরি না নিয়ে রূপকভাবে বুঝতে হবে।

মেদভেদেভকে উদ্দেশ করে ট্রাম্প তাঁর নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে লেখেন, ‘শব্দের গুরুত্ব অনেক। আর সেগুলো অনেক সময় এমন পরিণতি ডেকে আনতে পারে, যা কেউ চায় না।’

তাই ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই হুমকিকে অনেকটাই নাটকীয় ‘পারফরম্যান্স’ বলা যায়। হ্যাঁ, এটি উচ্চ ঝুঁকির, দায়িত্বহীন। তবে শেষমেশ এটি একধরনের ‘লোক দেখানো কার্যকলাপ’।

ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের পেছনে অন্য উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। আগামী কয়েক দিনে ট্রাম্পকে ব্যাখ্যা করতে হবে, ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কী পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। দিন দিন এটির গুরুত্ব আরও বাড়ছে। কারণ, গতকাল শুক্রবার কিয়েভে রাশিয়ার এক হামলায় ৩১ জন নিহত হয়েছেন।

এ ছাড়া রাশিয়ার তেল-গ্যাস কেনা দেশগুলো বিশেষ করে চীন, ভারত, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ওপর দ্বিতীয় স্তরের নিষেধাজ্ঞা জারি করার পরিকল্পনাও ট্রাম্পের জন্য কূটনৈতিক চাপে পরিণত হয়েছে।

এ সবকিছুর মাঝখানে ট্রাম্প যদি পরবর্তী সময়ে তাঁর হুমকি থেকে সরে দাঁড়াতে চান, তাহলে তিনি দেখাতে পারবেন যে সাবমেরিন মোতায়েনের মাধ্যমে তিনি রাশিয়াকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। তিনি এমন একটি কৌশল নিয়েছেন, যার ঝুঁকি হয়তো বেশি, কিন্তু অর্থনৈতিক খরচ তুলনামূলকভাবে কম। বিশেষ করে যেসব মিত্রদেশকে তিনি অন্য ক্ষেত্রে পাশে পেতে চান, তাদের ওপর শুল্ক আরোপের চেয়ে এই মূল্য তুলনামূলক কম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ