সংবাদ কে লিখেছে—মানুষ না এআই, এতে বিশ্বাসযোগ্যতা বদলায়
Published: 2nd, August 2025 GMT
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি কিংবা করপোরেট বিবৃতি—পাঠকের কাছে এসব কতটা বিশ্বাসযোগ্য, তা নির্ভর করে লেখকের পরিচয়ের ওপর। যদি বলা হয়, লেখাটি একজন মানুষ লিখেছেন, তাহলে সেটি পাঠকের কাছে অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। আর যদি বলা হয়, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) লিখেছে, তাহলে পাঠকের আস্থা কমে যায়।
বিষয়টি উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের কানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায়। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক গবেষণা সাময়িকী ‘করপোরেট কমিউনিকেশনস: অ্যান ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল’-এ গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষকেরা মত দিয়েছেন, সংকট পরিস্থিতিতে এআই ব্যবহার করা হলেও মানুষের দায়দায়িত্ব, সম্পাদনা ও জবাবদিহির জায়গাতে পাশ কাটানো যাবে না।গবেষণাটি পরিচালনা করেন কানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ক্যামেরন পিয়ার্সি, পিএইচডি গবেষক আইমান আলহাম্মাদ ও সহকারী অধ্যাপক ক্রিস্টোফার এথারিজ। গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা—লেখাটি মানুষ লিখেছে নাকি এআই, জানলে কি পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গি বদলায়?
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই দৈনন্দিন জীবনের অনেক ক্ষেত্রে তার জায়গা করে নিচ্ছে। মানুষ এটি ব্যবহার করার বিভিন্ন উপায় খুঁজছে। এর ফল ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুইই হতে পারে। প্রায়ই এর ব্যবহারের কথা জানানো হয় না। কানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগবিষয়ক একটি স্নাতক ক্লাসে দেখা হয়, মানুষ ও এআইয়ের লেখার মধ্যে পার্থক্য বোঝা যায় কি না, আর তখনই এ গবেষণার ভাবনাটি আসে।
একজন সহগবেষক ক্যামেরন পিয়ার্সি বলেন, ‘মানুষ ও এআইয়ের লেখা আলাদা করতে না পারলেও লেখকের পরিচয় জানলে পাঠকের প্রতিক্রিয়া ভিন্ন হয় কি না, এটাই ছিল আমাদের মূল প্রশ্ন।’
দি বলা হয়, লেখাটি একজন মানুষ লিখেছেন, তাহলে সেটি পাঠকের কাছে অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। আর যদি বলা হয়, এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) লিখেছে, তাহলে পাঠকের আস্থা কমে যায়।গবেষণা পদ্ধতিগবেষণাটি ছিল বহুপদ্ধতিভিত্তিক বিশ্লেষণ। এতে অংশগ্রহণকারীদের একটি কাল্পনিক করপোরেট সংকট পরিস্থিতি জানানো হয়। ‘চাঙ্কি চকলেট কোম্পানি’-এর কিছু পণ্যের গ্রাহক অসুস্থ হয়ে পড়েন। কর্মীদের ইচ্ছাকৃত অপকর্মের কারণে এটা হয়েছিল।
অংশগ্রহণকারীদের তিন ধরনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পড়তে দেওয়া হয়: তথ্যভিত্তিক, সহানুভূতিশীল ও ক্ষমা প্রার্থনামূলক। প্রতিটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেই বলে দেওয়া হয়, সেটি একজন মানুষ কিংবা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা লিখেছে।
মানুষ ও এআইয়ের লেখা আলাদা করতে না পারলেও লেখকের পরিচয় জানলে পাঠকের প্রতিক্রিয়া ভিন্ন হয় কি না, এটাই ছিল আমাদের মূল প্রশ্ন।সহগবেষক ক্যামেরন পিয়ার্সিমানুষের লেখা হলে বিশ্বাস বেশিগবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, যাঁরা মনে করেছেন, সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি একজন মানুষ লিখেছেন, তাঁরা সেটিকে অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য ও কার্যকর বলে মনে করেছেন। কিন্তু যদি বলা হয়, একই বার্তাটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরি করেছে, তখন পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটা নিরপেক্ষ বা সন্দেহপ্রবণ হয়ে যায়।
তবে বার্তার ধরন—তথ্যভিত্তিক, ক্ষমা প্রার্থনামূলক বা সহানুভূতিশীল—এই তিনটির ক্ষেত্রে পাঠকের প্রতিক্রিয়ায় তেমন পার্থক্য দেখতে পাননি গবেষকেরা।
আপনি যদি লেখার কাজে এআই ব্যবহার করেন, তাহলে অবশ্যই স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে, ভুলের দায় নিতে হবে এবং পাঠকের প্রতিক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।গবেষক ক্রিস্টোফার এথারিজদায় মানুষেরইগবেষকেরা বলেছেন, সংকটকালীন সময়ে বা অন্য সময়ে করপোরেট বার্তায় যদি লেখকের পরিচয় গোপন রাখা হয়, তাহলে পাঠক মনে মনে প্রশ্ন তোলেন—কে দায়ী?
অন্যদিকে গবেষক ক্রিস্টোফার এথারিজ বলেন, ‘আপনি যদি লেখার কাজে এআই ব্যবহার করেন, তাহলে অবশ্যই স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে, ভুলের দায় নিতে হবে এবং পাঠকের প্রতিক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’
গবেষকেরা মত দিয়েছেন, সংকট পরিস্থিতিতে এআই ব্যবহার করা হলেও মানুষের দায়দায়িত্ব, সম্পাদনা ও জবাবদিহির জায়গাতে পাশ কাটানো যাবে না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ত র ম ব দ ধ মত ত একজন ম ন ষ করপ র ট
এছাড়াও পড়ুন:
প্রশিক্ষকদের দায়িত্বে উদাসীনতাসহ যেসব অসংগতি উঠে এল প্রাথমিক তদন্তে
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সুইমিংপুলে সাঁতার কাটতে গিয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সায়মা হোসাইনের মৃত্যুর ঘটনায় প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তদন্ত কমিটি। পানিতে ডুবে যাওয়ার পর উদ্ধারে ধীরগতি, প্রশিক্ষকদের দায়িত্বে উদাসীনতাসহ কিছু বিষয় উঠে এসেছে প্রাথমিক প্রতিবেদনে।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। এ সময় তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান, সহ–উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দিন, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ, জনসংযোগ কর্মকর্তা অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদারসহ তদন্ত কমিটির অন্যান্য সদস্য, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাঁতার প্রতিযোগিতা আয়োজনকারী শারীরিক শিক্ষা বিভাগের নিয়মানুযায়ী হলগুলোর সাঁতারু দলের জন্য একজন প্রশিক্ষক বাধ্যতামূলক। সব হলে একজন করে ক্রীড়া প্রশিক্ষকের পদ থাকলেও সায়মার হলে (মন্নুজান হল) পদটি ফাঁকা ছিল। এ ছাড়া সায়মা সাঁতার দলের সদস্য ছিল না। তবু তিনি সুইমিংপুলে সাঁতার প্রশিক্ষণে অংশ নেন।
ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ঘটনার দিন আরও দুটি হলের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ ছিল। সেই হল দুটির প্রশিক্ষকেরা সুইমিংপুলে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সামনেই সাঁতার অনুশীলন করছিলেন সায়মাসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী। স্বাভাবিকভাবেই সবাই সাঁতার কাটলেও সবার অগোচরে হঠাৎ ডুবে যান সায়মা। বিষয়টি টের পাওয়ার পর তাঁকে পুল থেকে ওপরে তুলতে সময় লেগেছে ২০ মিনিটের বেশি। বাইরে থেকে ছাত্রদের ডেকে এনে সায়মাকে পুল থেকে উদ্ধার করেন প্রশিক্ষকেরা। ওপরে তুলে তাঁর বুকে চাপ দিয়ে পানি বের করার চেষ্টা করা হলেও তাঁর মুখ দিয়ে পানির সঙ্গে খাবার বের হচ্ছিল।
চিকিৎসা প্রসঙ্গে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের চিকিৎসক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর সুপারিশ করেন। তবে সেখান থেকে রওনা করা অ্যাম্বুলেন্সে কোনো অক্সিজেন সিলিন্ডার ছিল না। জরুরি বিভাগে থাকা সিলিন্ডারেও পর্যাপ্ত অক্সিজেন ছিল না। সেটি বদলে গাড়ি প্রস্তুত করে রওনা দিতে আট মিনিট সময় লেগেছে। একটি সিলিন্ডারে কতটুকু অক্সিজেন আছে বা নেই, সে সম্পর্কে কর্তব্যরত নার্স ও ওয়ার্ডের কর্মকর্তাদের অভিজ্ঞতা ও চর্চা না থাকায় সেখানেও সময় নষ্ট হয়। তবে সায়মাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসক, নার্স ও ওয়ার্ডের কর্মকর্তাদের অনেক বেশি চেষ্টা ছিল।
সায়মার শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল উল্লেখ করে ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, ‘আমরা সায়মার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি সায়মার শ্বাসকষ্টের সমস্যা ছিল। এর জন্য তিনি চিকিৎসাও নিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে। শ্বাসকষ্টের জন্য ইনহেলার ব্যবহার করতেন তিনি।’
প্রতিবেদনে সুপারিশের বিষয়ে ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, প্রশিক্ষক ও অন্য শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে একজন শিক্ষার্থী সাঁতার কাটার সময় পানিতে তলিয়ে যাওয়া ও প্রায় ২০ মিনিট পর তাঁর বিষয়টি নজরে আসা প্রশিক্ষকদের দায়িত্বে উদাসীনতার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। দুজন প্রশিক্ষক বসে নিজেরা গল্প করছিলেন। ওনারা যদি এটা না করতেন, হয়তো তাঁদের দৃষ্টিতে মেয়েটি থাকতেও পারত। তাই তদন্ত কমিটি তাদের প্রশিক্ষক পদ থেকে প্রত্যাহারের সুপারিশ করছে। সুইমিংপুল তদারকির জন্য একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া আশঙ্কাজনক রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য চিকিৎসাকেন্দ্রের জরুরি বিভাগে কর্মরতদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থারও সুপারিশ করা হয়েছে।
শিক্ষককে হেনস্তার অভিযোগ
এদিকে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের উত্তর দেয় কর্তৃপক্ষ। তবে একটি প্রশ্ন করাকে কেন্দ্র করে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আমিনুল ইসলামকে হেনস্তার অভিযোগে সিনেট ভবনেই স্লোগান দিতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে তাঁরা প্রশাসন ভবনে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করেন। তাঁরা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে ক্লাস বর্জন ও অনশন কর্মসূচিতে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল ইসলাম মাসউদ, প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান ও জনসংযোগ কর্মকর্তা অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার। শিক্ষার্থীদের দাবি, সিনেট ভবনে ওই শিক্ষককে প্রশ্ন করতে বাধা দিয়ে হেনস্তা করেন ওই কর্মকর্তারা।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, ‘এ রকম কোনো ঘটনা সেখানে ঘটেনি। সংশ্লিষ্ট শিক্ষকই বিষয়টি ভালোভাবে বলতে পারবেন।’ এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল ইসলাম মাসউদ ও জনসংযোগ কর্মকর্তা অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁরা সাড়া দেননি।
গত ২৬ অক্টোবর বিকেলে সায়মা হোসাইনের মৃত্যুতে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন ও ১০ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশের আশ্বাসে সেদিনের আন্দোলন প্রত্যাহার করেন শিক্ষার্থীরা। পরে তাঁরা গত তিন দিন ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে প্যারিস রোডে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন। গতকাল প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশের কথা থাকলেও করা হয়নি। এ জন্য আজ দুপুর ১২টার দিকে তাঁরা প্রশাসন ভবনের সামনে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।