জুলাই ২৪ থেকে জুলাই ২৫: ক্ষমতা, নাকি ক্ষমতার বৈষম্য
Published: 2nd, August 2025 GMT
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্বাক্ষরের পর ১৯ জুলাই থেকে ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার–বিষয়ক হাইকমিশনের একটি মিশন শুরু হয়েছে। এ ধরনের মিশন মূলত সংঘাতপ্রবণ বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এবং তা বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন তৈরি করে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং মনে করে, এ ধরনের একটি অফিস যদি বিগত সরকারের আমলে থাকত, তাহলে বিভিন্ন অপরাধের ঘটনা সঠিকভাবে তদন্ত, লিপিবদ্ধ ও বিচার করা সম্ভব হতো। তবে অপরাধ যেহেতু সব সরকারের আমলেই নানা মাত্রায় সংঘটিত হয়, মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনাই লিপিবদ্ধ করা জরুরি। কারণ, মানবাধিকার সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হওয়াটাই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হয়ে থাকে।
২.জুলাই আন্দোলনের বর্ষপূর্তিতে বর্তমান সরকারের সব অর্জন উদ্যাপনের পাশাপাশি এই এক বছরে সংঘটিত অপরাধ, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও রাজনৈতিক বৈষম্যের একটি তুলনামূলক চিত্রও থাকা দরকার, যা অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরের খেরোখাতায় লিপিবদ্ধ হয়ে থাকবে। কেননা গণ–অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের এক বছর পর বাংলাদেশ কতটুকু বৈষম্যহীন হতে পেরেছে; উপদেষ্টামণ্ডলী ও ছাত্রনেতারা সাধারণ জনগণের কাতার থেকে ক্ষমতার আসনে গিয়ে কতটুকু বৈষম্যবিরোধী থাকতে পেরেছেন, তা পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করাটাও একান্ত জরুরি।
বর্তমান সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির যে পরিসংখ্যান দেখা যায়, তা নিয়ে মানবাধিকার–বিষয়ক হাইকমিশনের কার্যালয়ের (ওএইচসিএইচআর) সত্যানুসন্ধান প্রতিবেদনে গত ফেব্রুয়ারি মাসেই যে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল, তা এ সময়েও ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘অরাজনৈতিক শক্তির দ্বারা নির্যাতনের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীদের মানবাধিকার রক্ষার জন্য কর্তৃপক্ষ কার্যকর প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেনি।’ (পৃ. ৫৪)
এ ছাড়া পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও গণমাধ্যমের ওপর প্রতিশোধমূলক আক্রমণের বিষয়ে দ্রুত ও স্বাধীন তদন্তের জোরালো সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে। এগুলো সম্পন্ন করলে দেশের সামাজিক কাঠামো, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও ভবিষ্যতের সংহতির জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে বলে আশঙ্কাও প্রকাশ করা হয়। (পৃ. ৫৬)
কিন্তু আমরা দেখেছি, অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ১৪ অক্টোবর নির্দেশনা দেওয়া হয় যে জুলাই আন্দোলনকে সফল করতে যেসব ছাত্র-জনতা সক্রিয়ভাবে আন্দোলনের মাঠে থেকে এর পক্ষে কাজ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ১৫ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত সংশ্লিষ্ট ঘটনার জন্য কোনো মামলা, গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হবে না।
গোপালগঞ্জের প্রত্যেকেই আওয়ামী লীগের সমর্থনকারী, এ ধরনের ভাবনাও সমস্যাযুক্ত। ‘মুজিববাদ দমনের’ দোহাই দিয়ে এভাবে পুরো একটি অঞ্চলকে টার্গেট করা, হাজারো মানুষকে মামলা দেওয়া—মানবাধিকারের মানদণ্ডে কোনোভাবেই ন্যায্যতা পায় না।সরকার প্রতিষ্ঠার একদম প্রথমেই এ ধরনের ‘সিলেকটিভ দায়মুক্তি’ দেওয়া আসলে কতটা ন্যায়সংগত বা নতুন মোড়কে রাজনৈতিক বৈষম্যকেই পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে কি না, সে প্রশ্ন ওঠে। ঠিক যেমনটা আমরা পূর্ববর্তী সরকারের আমলে বিভিন্ন সময়ে দেখেছি যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে গুম, খুন বা বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় সুষ্ঠু বিচার হয়নি বলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ প্রকাশ পেয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ইতিহাসের অধ্যাপক রিচার্ড মিনিয়ার ১৯৭১ সালে তাঁর পূর্ব এশিয়ার আন্তর্জাতিক সামরিক ট্রাইব্যুনাল নিয়ে লেখা গ্রন্থে ‘ভিক্টরস জাস্টিস’ বা ‘বিজয়ীর ন্যায়বিচার’ ধারণাটি প্রথম ব্যবহার করেন, যেখানে একটি সংঘাত–উত্তরকালে ক্ষমতাধর পক্ষ বিরোধী পক্ষকে অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে শাস্তি দিলেও নিজেদের একই ধরনের অপরাধ বা অন্যায়কে উপেক্ষা করে বা ক্ষমা করে দেয়। ক্ষমতার পালাবদলে এ সময়ের ‘বিজয়ীদের’ কাছ থেকে রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগে গুণগত কোনো পরিবর্তন কি দেখতে পাচ্ছি আমরা, তা ভেবে দেখা প্রয়োজন।
এ প্রসঙ্গে ওএইচসিএইচআর প্রতিবেদনের ১৮ নম্বর সুপারিশের উল্লেখ করা যায়, যেখানে গণগ্রেপ্তারের সংস্কৃতি বন্ধ করার জন্য পুলিশকে বাধ্যতামূলক আদেশ জারি এবং প্রয়োগ করার কথা বলা হয়েছে, বিশেষত যেখানে অপ্রমাণিত এবং সন্দেহভাজন তালিকার ওপর ভিত্তি করে গণগ্রেপ্তার করা হয়। অথচ ১৬ জুলাই এনসিপির ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিতে (যা দেশের অন্যান্য জেলায় ‘জুলাই পদযাত্রা’ হিসেবেই উল্লেখিত হয়েছে) এনসিপির দলীয় নেতাদের ওপর ‘আওয়ামী সন্ত্রাসীদের’ আক্রমণের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী এলাকাটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার সময় অনেকেই গুলিবিদ্ধ হন এবং পাঁচজন মারা যাওয়ার খবর গণমাধ্যমে এসেছে।
বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন আরেকজনকে নির্দেশ দিচ্ছেন, ‘ডাইরেক্ট গুলি কর!’ তখন আরেকজন উত্তর দিলেন, ‘গুলি তো করছি স্যার।’ দৌড়ে পালিয়ে যাওয়া মানুষদের পেছন থেকে গুলি করতে করতে তাদের এভাবে এগিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে মনে হলো রিওয়াইন্ড করে ঠিক এক বছর আগে চলে গেছি, যখন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মরে পড়ে থাকা ছাত্রের ভিডিও দেখাতে দেখাতে একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলছিলেন, ‘স্যার, গুলি করলে মরে একটা, আহত হয় একটা, একটাই যায়, বাকিডি যায় না। এইটাই হলো স্যার সবচেয়ে বড় আতঙ্কের আর দুশ্চিন্তার বিষয়।’
৩.গোপালগঞ্জে সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তিদের কেউ মুদিদোকানি, কেউ মুঠোফেনের দোকানে কাজ করেন, কেউবা রিকশাওয়ালা। তাঁদের ৫ জনের মধ্যে ৪ জনের লাশ ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল প্রতিবেদন না করেই তড়িঘড়ি করে কবর দেওয়া বা সৎকারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ব্যাপক সমালোচনার পর তিনজনের লাশ কবর থেকে তুলে ময়নতদন্তের জন্য নেওয়া হয়। প্রশ্ন উঠেছে, তাঁদের প্রাণহানির দায় কার ওপর বর্তায়?
১৬ তারিখের ঘটনার ধারাবাহিকতায় গোপালগঞ্জে লাগাতার কারফিউ জারির পাশাপাশি চারটি হত্যা মামলাসহ ১৪টি মামলার কথা জানি। এসব মামলায় ১ হাজার ১৭৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ১৪ হাজার ৫৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৩৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
১৬ জুলাই প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ফেসবুক পেজে এনসিপির নেতা–কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনাকে ‘নৃশংস আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, এ জঘন্য কাজ ‘কথিত’ নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের কর্মীদের দ্বারা করা হয়েছে, যা শাস্তির বাইরে থাকবে না। কিন্তু যুক্তিসংগত সন্দেহের ঊর্ধ্বে না গিয়ে শুধু ‘আওয়ামী সন্ত্রাসী’ হিসেবে ধারণার ভিত্তিতে গুলি চালিয়ে পাঁচজন মানুষের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে ন্যূনতম শোক প্রকাশের বিষয়টি প্রত্যাশিত ছিল।
এনসিপির পথসভায় দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্কেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র র আমল ম নব ধ ক র গ প লগঞ জ র জন ত ক এনস প র এ ধরন র এক বছর র জন য প রক শ আওয় ম র ওপর ক ষমত অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের আরও ২০০ মিটার বিলীন
পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের আরও ২০০ মিটার অংশ পদ্মায় বিলীন হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার বাঁধটির ওই অংশ নদীতে বিলীন হয়। এ সময় নদীগর্ভে চলে গেছে বাঁধের পাশে থাকা ২০টি বসতবাড়ি। আর ভাঙন আতঙ্কে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ৫০টি বাড়ির বসতঘর ও বিভিন্ন স্থাপনা। এ নিয়ে ৬ দফায় বাঁধটির ৮০০ মিটার পদ্মায় বিলীন হয়ে গেল।
ভাঙন রোধে গত তিন মাসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উদ্যোগে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ লাখ ৫৫ হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। ভাঙনের কারণে তা–ও নদীতে তলিয়ে গেছে। বাঁধের ওই ৮০০ মিটার অংশের পাশে থাকা ৩৩টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ৫০টি বসতবাড়ি গত দুই মাসে বিলীন হয়েছে। ভাঙন বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনটি গ্রামের ৬০০ পরিবার এবং মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজারের ২৪০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ঝুঁকিতে পড়েছে।
শরীয়তপুর পাউবো ও স্থানীয় সূত্র জানা যায়, শরীয়তপুরের পদ্মা নদীর অংশ জাজিরার নাওডোবা এলাকা থেকে শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতু নাওডোবার ওপর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে পদ্মা নদীর ৫০০ মিটারের মধ্যে সার্ভিস এরিয়া ২, সেনানিবাস, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এসব অবকাঠামো নির্মাণের জন্য যখন জমি অধিগ্রহণ করা হয়, তখন ২০১২ সালের দিকে নাওডোবা এলাকায় পদ্মার ভাঙন শুরু হয়। পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা নদীভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য তখন সেতু থেকে ভাটির দিকে (পূর্ব দিকে) দুই কিলোমিটার এলাকায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ওই বাঁধের পাশে (দক্ষিণ দিকে) আলাম খাঁরকান্দি, ওছিম উদ্দিন মাদবরকান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সিকান্দি এবং মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজার অবস্থিত।
পাউবো সূত্র বলছে, গত বছর নভেম্বর মাসে জাজিরার নাওডোবা জিরো পয়েন্ট এলাকায় পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের ১০০ মিটার অংশে ভাঙন দেখা দেয়। এরপর এ বছর ৭ জুন আবার বাঁধের ১০০ মিটার, ৭ জুলাই ২০০ মিটার, ৯ জুলাই ১০০ মিটার, ২৩ জুলাই ১০০ মিটার অংশ ভেঙে নদীতে ধসে পড়ে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার ওই বাঁধের আরও ২০০ মিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন ঠেকাতে অস্থায়ী ভিত্তিতে ৬০০ মিটার অংশে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে পাউবো। এ পর্যন্ত ওই এলাকায় ১ লাখ ৫৫ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। তাতে ব্যয় হয়েছে ৭ কোটি টাকা। তাও কোনো কাজে লাগেনি। ভাঙনের কারণে ওই জিও ব্যাগগুলো নদীতে তলিয়ে গেছে। ওই এলাকা দিয়ে নদী অন্তত ১০০ মিটার হতে ১৫০ মিটার ভেতরে (দক্ষিণ দিকে) প্রবেশ করেছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে পদ্মার ভাঙনে আলম খাঁরকান্দি এলাকার আবুল বাশার মাদবরের দুটি ঘরসহ বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। ঘরের অবশিষ্ট জিনিসপত্র তিনি সড়কের পাশে স্তূপ করে রেখেছেন। আবুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদ্মা তীরে বাড়ি হওয়ায় তিন দফা ভাঙনের কবলে পড়েছি। পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় বাড়ির সঙ্গে বাঁধটি হওয়ায় ভেবেছিলাম আর কখনো ভাঙনে নিঃস্ব হতে হবে না। কিন্তু তা আর হলো না, আমার সব শেষ। এখন বেঁচে থাকার জন্য আর কিছুই রইল না। উদ্বাস্তু হয়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছি।’
ভাঙন আতঙ্কে গতকাল শুক্র ও আজ শনিবার তিনটি গ্রামের ৫০টি বসতবাড়ির বিভিন্ন স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আলী হোসেন মাদবর নামের একজন শনিবার সকাল থেকে দুটি বসতঘর ভেঙে মালামাল সরাচ্ছিলেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ভাঙনের কারণে একটু দুশ্চিন্তায় ছিলাম। রাতে আতঙ্কে ঘুমাতে পারতাম না। এখন আর পদ্মা পারে থাকতেই পারলাম না। বাপ-দাদার ভিটেমাটি ফেলে ঘর নিয়ে চলে যাচ্ছি। জানি না কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেব।’
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান প্রথম আলোকে জানান, নদীতে অনেক স্রোত। ভাঙন ঠেকাতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে, তাতেও কোনো কাজ হচ্ছে না। ভাঙনের কারণে বালুভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে। জাজিরার ওই স্থানে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হবে। সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদীভাঙনের শিকার হয়ে মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে, এটা কষ্টদায়ক। আমরা ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর নির্মাণের জন্য টিন, নগদ টাকা ও খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। যাঁরা ভিটেমাটি হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়েছেন, তাঁদের পুনর্বাসন করার জন্য খাসজমি খোঁজা হচ্ছে। সেই জমিতে তাঁদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে।’