কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার বলেছেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র জনগণের অধিকার। এটা নিয়ে কোনো আপস করব না, এটা আমাদেরকে পেতেই হবে। গণ-অভ্যুত্থানের পর তাৎক্ষণিকভাবে জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়ার কথা। জুলাই ঘোষণাপত্র হঠাৎ হয়ে গেল জুলাই সনদ। আমরা তো কেউ জুলাই সনদ চাইনি। যারা জীবন দিয়েছে—আমাদের ঘোষণাপত্র কই?’

গতকাল শুক্রবার রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের শিল্পকলা একাডেমিতে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ও আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা ও ভাবগানের আসরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন ফরহাদ মজহার।

গণ-অভ্যুত্থানের অভিপ্রায় ছিল গণ সার্বভৌমত্ব কায়েম করা মন্তব্য করে ফরহাদ মজহার বলেন, ক্ষমতার মালিক হবে জনগণ। যদি রাষ্ট্রের কাছে ক্ষমতা রেখে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রাখা হয়, তাহলে রাষ্ট্র আমলাতান্ত্রিকতা দিয়ে চলবে। বিভিন্ন বাহিনীসহ প্রশাসকেরা তখন শাসক হবে, ঠিক যেমন ইংরেজ শাসকেরা আমাদেরকে শাসন করেছে। তাই এই রাষ্ট্রব্যবস্থা চললে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়ে যাবে।’

ফরহাদ মজহার বলেন, ‘তথাকথিত জাতীয় ঐকমত্য—এটা হচ্ছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করার পরিকল্পনা। জাতীয় ঐক্য ছিল—সেই জাতীয় ঐক্যের নাম গণঐক্য। গণঐক্য ছাড়া গণ-অভ্যুত্থান হয়নি। যদি জনগণ ঐক্যবদ্ধ না থাকত, তাহলে গণ-অভ্যুত্থান সম্ভব ছিল না। এখন যারা জাতীয় ঐক্যের কথা বলছে, তারা গণঐক্যকে ধ্বংস করতে জাতীয় ঐক্যের কথা বলছে। এখন এটা দিয়ে ছাত্রদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। গণঐক্য ছাড়া গণ-অভ্যুত্থান হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থান করেছে জনগণ। এর পেছনে কোনো মাস্টারমাইন্ড কিংবা তথাকথিত বিশেষ কোনো গ্রুপের নেতৃত্ব ছিল না। গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের দুটি চাওয়া ছিল—ব্যক্তির অধিকার ও ব্যক্তির মর্যাদা নিশ্চিত করা, আর দ্রুত অর্থনৈতিক বিকাশ ত্বরান্বিত করা এবং তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। তা বাস্তবায়ন করতে হলে রাষ্ট্রকে সংস্কার নয় বরং নতুনভাবে গঠন করতে হবে।’

জুলাই ঘোষণাপত্র জনগণের অধিকার মন্তব্য করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের পর তাৎক্ষণিকভাবে জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়ার কথা। কিন্তু ৫ আগস্টের পর জনগণ যে ক্ষমতা পেয়েছিল, তা আবারও ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে, যেহেতু জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে দেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় জুলাই ঘোষণাপত্র হঠাৎ হয়ে গেল জুলাই সনদ। আমরা তো কেউ জুলাই সনদ চাইনি। আমাদের অভিপ্রায় আছে, আমাদের যারা জীবন দিয়েছে, আমাদের ঘোষণাপত্র কই?’

এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভাব বৈঠকীর প্রধান সমন্বয়কারী মোহাম্মদ রুমেল, জেলা শিল্পকলা একাডেমির সংস্কৃতি কর্মকর্তা সুদীপ্তা চক্রবর্তী, জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলীয় যুগ্ম-মুখ্য সংগঠক মো.

আতাউল্লাহ, এনসিপির কেন্দ্রীয় সংগঠক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সমন্বয়ক আজিজুর রহমান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া শিল্পী সংসদের সভাপতি আল আমিন শাহিন প্রমুখ। পরে একটি মনোজ্ঞ ভাবগানের আসর অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ল ই সনদ আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

একাত্তরের গণহত্যার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে: আলাল

বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, ‘‘বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি তোলা উচিত, চব্বিশ এবং আগের গণহত্যা, নির্যাতন-নিপীড়ন, ভোটাধিকার হরণ—এসবের জন্য যদি আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হতে পারে। তাহলে একাত্তরে গণহত্যা, ধর্ষণ, নারকীয় হত্যাযজ্ঞের জন্য জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করতে হবে। তাদের কার্যক্রমও নিষিদ্ধ করতে হবে। একই অপরাধে দুই রকমের বিচার হতে পারে না।’’

শনিবার (১ নভেম্বর) রাজধানী ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের আয়োজনে ‘স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষায় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অপরিহার্য’ শীর্ষক মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

দ্রুত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করুন: দুলু

নৌকা ডুবেছে, শাপলা ভাসবে: এনসিপির তুষার

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘‘যদি আওয়ামী লীগের মতো একই ধরনের অপরাধে জামায়াতের বিচার না হয়, তাহলে সেটা হবে ইতিহাসের প্রতি অবিচার।’’

তিনি বলেন, ‘‘আজকে জামায়াত তাদের পোশাক-চেহারা, আচরণ পাল্টে নতুন রূপে হাজির হয়েছে। তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের সঙ্গে বৈঠক করছে। কিন্তু, মূল উদ্দেশ্য বিএনপিকে আক্রমণ করা। এই বহুরূপীদের চেহারা জনগণ চিনে ফেলেছে।’’

বিএনপির এই নেতা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে বিএনপিই একমাত্র শক্তি। অথচ এই শক্তিকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র চলছে। সরকার নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে নির্বাচনের নামে প্রক্রিয়া চালালেও জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা কেড়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

আলাল আরো বলেন, ‘‘বর্তমান সরকার মনে করেছে, দেশের সব অনাচারের মূলে সংবিধান। কিন্তু সমস্যার মূল সংবিধান নয়—ক্ষমতার অপব্যবহার ও জনগণের ভোটাধিকার হরণ। শেখ হাসিনার ১৬-১৭ বছরের শাসনে এই অন্যায়, নির্যাতন, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারই হয়েছে সবচেয়ে বড় বাস্তবতা।’’

ঢাকা/রায়হান/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদ জনগণের নয়, কিছু উপদেষ্টার প্রয়োজন: হাফিজ
  • একাত্তরের গণহত্যার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে: আলাল
  • জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিতে সংগ্রাম, শপথ যুব সংসদের সদস্যদের
  • বন্দরে বিএনপি নেতা তাওলাদের উপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে আল্টিমেটাম
  • বিএনপি ও জামায়াত কে কোন ফ্যাক্টরে এগিয়ে
  • অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে: ফখরুল
  • সরকার নিরপেক্ষতা হারালে জনগণ মাঠে নামবে: তাহের
  • সংস্কার ইস্যুতে সব দল ঐক্যবদ্ধ থাকলেও বিএনপি অবস্থান পরিবর্তন করে
  • বিএনপি-জামায়াত দেশকে অন্য এক সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
  • জনগণের সঙ্গে এটা প্রতারণা: মির্জা ফখরুল