যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া উত্তেজনা: বিশ্ব কি পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকির মুখে পড়তে যাচ্ছে
Published: 2nd, August 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার জলসীমার কাছে দুটি কৌশলগত পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন। ট্রাম্পের এ নির্দেশকে বিশ্ব পরিস্থিতির নাটকীয় মোড় বলে মনে করছেন অনেকে।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ বিশ্বজুড়ে খবরের শিরোনাম হয়েছে। বিশ্ববাজারে উদ্বেগ ছড়িয়েছে, আর ন্যাটোর মিত্রদেশগুলো সতর্ক অবস্থানে গেছে।
সেই সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে পারমাণবিক উত্তেজনা বৃদ্ধির শঙ্কা আবারও ঘনীভূত হচ্ছে। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ বিশ্বরাজনীতির দৃশ্যপট পরিবর্তন করতে পারে এবং পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগে কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জোরদার হচ্ছে।
দিমিত্রি মেদভেদেভ কী বলেছেন
গত বৃহস্পতিবার রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমানে নিরাপত্তা পরিষদের উপপ্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভ যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, কল্পিত ‘ডেড হ্যান্ড’ কতটা বিপজ্জনক হতে পারে, সে বিষয়ে ট্রাম্পের সচেতন থাকা উচিত। মূলত রাশিয়ার স্নায়ুযুদ্ধকালীন পারমাণবিক অস্ত্রব্যবস্থার প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি এ সতর্কবার্তা দেন।
মেদভেদেভের এই বক্তব্যে দারুণ চটে যান ট্রাম্প, এরপরই তিনি রাশিয়ার কাছে সাবমেরিন মোতায়েনের সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। মেদভেদেভের ওই বক্তব্যকে ট্রাম্প ‘বোকামিপূর্ণ ও উসকানিমূলক হুমকি’ বলে উল্লেখ করেছেন।
মেদভেদেভ এবং ট্রাম্পের এই কথার লড়াই স্নায়ুযুদ্ধের সময়ের পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে উত্তেজনার কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। কারণ, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত শুধু একটি সামরিক পদক্ষেপ নয়, বরং এটি বিশ্বব্যাপী বাড়তে থাকা উত্তেজনা এবং ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে একটি শক্তিশালী ভূরাজনৈতিক বার্তাও।
মস্কোর উসকানিমূলক হুমকি সহ্য করবে না ওয়াশিংটন
ট্রাম্প তাঁর এই পদক্ষেপকে ‘সতর্কতামূলক ব্যবস্থা’ হিসেবে উপস্থাপন করলেও এটি স্নায়ুযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্টের নেওয়া সবচেয়ে সাহসী পারমাণবিক সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসন মস্কোকে একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে। সেই বার্তা হলো—মস্কোর উসকানিমূলক হুমকি সহ্য করবে না ওয়াশিংটন।
তবে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ শুধু রাশিয়াকে সামরিকভাবে বিরত রাখার জন্য নয়; বরং এটি একটি বিস্তৃত চাপ প্রয়োগের অংশ, যার মধ্যে কঠোর অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণও রয়েছে।
সাবমেরিন মোতায়েনের পাশাপাশি ট্রাম্প রাশিয়ার ওপর শুল্ক ও বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞাও বাড়াচ্ছেন। তিনি নানা বৈশ্বিক জোট ও বিভিন্ন দেশের আচরণের সঙ্গে রাশিয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণকে সরাসরি তাঁর কৌশলে যুক্ত করছেন। যেমন—যেসব দেশ রাশিয়ার পক্ষে ঝুঁকছে বা যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী অবস্থান নিচ্ছে, তাদের ওপর শুল্ক ও বাণিজ্যিক চাপ বাড়ানো হচ্ছে।
এর মধ্যে ভারতও রয়েছে। ব্রিকস জোটের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ভারত। দেশটি এখনো রাশিয়ার কাছ থেকে ছাড়মূল্যে তেল ও অস্ত্র আমদানি অব্যাহত রেখেছে।
মেদভেদেভ-ট্রাম্পের কথার লড়াই স্নায়ুযুদ্ধের সময়ের পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে উত্তেজনার কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। কারণ, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত শুধু একটি সামরিক পদক্ষেপ নয়, বরং এটি বিশ্বব্যাপী বাড়তে থাকা উত্তেজনা এবং ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে একটি শক্তিশালী ভূরাজনৈতিক বার্তাও।যুক্তরাষ্ট্রের সাবমেরিন কতটা শক্তিশালী
ট্রাম্প রাশিয়ার কাছাকাছি যেসব সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন, সেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ওহাইও-ক্লাস ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বহরের অংশ। সেগুলো বেশ কয়েকটি পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্র বহন করতে সক্ষম।
যুক্তরাষ্ট্রের ওই স্টেলথ সাবমেরিনগুলো যেকোনো রাডার বা শনাক্তকরণ ব্যবস্থা ফাঁকি দিতে সক্ষম। দারুণ শক্তিশালী এই সাবমেরিনগুলো যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অস্ত্রাগারের অন্যতম মারাত্মক ধ্বংসাত্মক অস্ত্র।
মেদভেদেভ কি স্নায়ুযুদ্ধকালের পারমাণবিক হুঁশিয়ারি পুনরুজ্জীবিত করেছেন ট্রাম্প প্রশাসন ও মস্কোর মধ্যে এই উত্তেজনা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ইউক্রেনের দীর্ঘায়িত যুদ্ধ, সাইবার হুমকি এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সম্পর্কে উত্তেজনার পারদ আগেই চড়ছিল। এর মধ্যে এই ঘটনা উত্তেজনার পারদকে চূড়ান্তে পৌঁছে দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সাম্প্রতিক এই উচ্চ সতর্ক অবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন দিমিত্রি মেদভেদেভ। তিনি কয়েক মাস ধরে যুদ্ধংদেহী এবং আগ্রাসী কথাবার্তা বলে যাচ্ছেন। নিজের সাম্প্রতিক বিবৃতিতে মেদভেদেভ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রস্তাবিত ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং এর পরিবর্তে রাশিয়ার বিশাল পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডারের কথা উল্লেখ করেছেন।
এটি একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল মুহূর্ত। সাবমেরিন মোতায়েনের খবর প্রচার করে, ট্রাম্প একদিকে যেমন আগ্রাসন রোধ করছেন, অন্যদিকে রুশদের (যুদ্ধ নিয়ে) ভুল–বোঝাবুঝি বা ভুল গণনার আশঙ্কাকে বাড়িয়ে দিচ্ছেনএলেনা পেত্রোভ, আটলান্টিক ইনস্টিটিউটের পারমাণবিক কৌশলবিষয়ক বিশ্লেষকমেদভেদেভ তাঁর বক্তব্যে ‘ডেড হ্যান্ড’ কৌশলের কথাও উল্লেখ করেন। এটি স্নায়ুযুদ্ধ যুগের একটি পুরোনো কৌশল। এই ব্যবস্থা সম্পর্কে বলা হয়, যদি রাশিয়ার জাতীয় নেতৃত্ব সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসও হয়ে যায়, তবে এই ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পারমাণবিক অস্ত্র নিক্ষেপ করতে সক্ষম।
ভয়াবহ এই তথ্যটি পশ্চিমা দেশগুলোর সরকারের মধ্যে প্রবল উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে এবং সম্ভবত ট্রাম্পের দ্রুত সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণে বড় ভূমিকা রেখেছে।
প্রকাশ্যে এসব মন্তব্য করে মেদভেদেভ হয়তো বোঝাতে চাইছেন, ইউক্রেন নিয়ে চলমান সংঘাতে রাশিয়াকে ভয় দেখিয়ে বা চাপ প্রয়োগ করে নিজেদের ভূরাজনৈতিক অবস্থান থেকে পিছু হটতে বাধ্য করা যাবে না।
রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের কারণে ভারত ও ব্রিকস জোট কি ট্রাম্পের শুল্কের লক্ষ্যবস্তু হয়েছে
হ্যাঁ, এবং বার্তাটি অত্যন্ত স্পষ্ট। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের চলমান বাণিজ্যের কারণে এটিকে একটি শাস্তিমূলক পদক্ষেপ বলে বিবেচিত হচ্ছে।
ব্রিকস জোটের দেশগুলোর ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের বিরক্তি প্রকাশ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে ভারত, ব্রাজিল ও চীনের ওপর। এসব দেশ ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার ভূমিকার পরও মস্কোর সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে বা আরও গভীর করেছে।
এর মধ্যে ভারতের অবস্থান বিশেষভাবে সংবেদনশীল। কারণ, দেশটি রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রে কৌশলগত অবস্থান বজায় রেখেছে। রাশিয়া থেকে তেল আমদানি এবং বর্ধিত সামরিক অংশীদারত্বের কারণে ভারত ট্রাম্পের ক্ষোভের কারণ হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা এমনটাও ইঙ্গিত দিয়েছেন, ভারতকে ‘একটি উদাহরণ’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, যাতে অন্যান্য দেশ ওয়াশিংটনের হুঁশিয়ারির সীমা অতিক্রম করার সাহস না করে।
যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও-ক্লাস ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী সাবমেরিন ইউএসএস আলাস্কা (এসএসবিএন ৭৩২).উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স বম র ন ম ত য় ন র য ক তর ষ ট র র র এই পদক ষ প ট র ম প র এই ক পদক ষ প ব যবস থ অবস থ ন ইউক র ন র জন ত কর ছ ন চলম ন গ রহণ র ওপর সতর ক
এছাড়াও পড়ুন:
শেফালি আর দীপ্তিতে নতুন মুম্বাইয়ে নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত
নাবি মুম্বাই। নয়া মুম্বাই। নতুন সেই মুম্বাইয়ে কাল নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পেল মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত।
দীপ্তি শর্মার করা ৪৬তম ওভারের তৃতীয় বলে নাদিন ডি ক্লার্কের তোলা ক্যাচটি এক্সট্রা কাভারে ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌরের হাতে জমা হতেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের আনন্দে মাতল পুরো ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকা ২৪৬ রানে অলআউট, ভারত ৫২ রানে জয়ী।
ভারতের জয়ের উৎসব অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছিল পাঁচ ওভার আগেই। লরা ভলভার্টকে ফিরিয়ে পথের কাঁটা উপড়ে ফেলেই উদ্যাপন শুরু করেছিল ভারতীয়রা। অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করে দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক চোখ রাঙাছিলেন ভারতের উৎসব ভন্ডুল করার। কিন্তু সেঞ্চুরি করার পরপরই ক্যাচ তুললেন ভলভার্ট। আর সেই ক্যাচ নিতে গিয়ে আমানজোত কৌর ভারতের প্রায় শত কোটি মানুষের হৃৎস্পন্দন প্রায় থামিয়ে দিয়েছিলেন। একবার নয়, দুবার নয়, তৃতীয়বারের চেষ্টাতেই ক্যাচ নিতে পারেন আমানজোত। এবারও বোলার সেই অফ স্পিনার দীপ্তি শর্মা।
৯৮ বলে ১০১ রান করে ভলভার্ট যখন ফিরলেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ৪১.১ ওভারে ২২০/৭। এরপর শুধু আনুষ্ঠানিকতাই ছেড়েছে ভারত। দীপ্তি আরও ২টি উইকেট নিয়ে পেয়ে গেছেন ৫ উইকেট। আর ভারত হয়ে গেছে চ্যাম্পিয়ন। এর আগে ব্যাট হাতেও ৫৮ বলে ৫৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন দীপ্তি।
ব্যাট হাতে ৮৭ রান করা শেফালি বর্মা বল হাতে নিয়েছেন ২ উইকেট