যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার জলসীমার কাছে দুটি কৌশলগত পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন। ট্রাম্পের এ নির্দেশকে বিশ্ব পরিস্থিতির নাটকীয় মোড় বলে মনে করছেন অনেকে।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ বিশ্বজুড়ে খবরের শিরোনাম হয়েছে। বিশ্ববাজারে উদ্বেগ ছড়িয়েছে, আর ন্যাটোর মিত্রদেশগুলো সতর্ক অবস্থানে গেছে।

সেই সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে পারমাণবিক উত্তেজনা বৃদ্ধির শঙ্কা আবারও ঘনীভূত হচ্ছে। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ বিশ্বরাজনীতির দৃশ্যপট পরিবর্তন করতে পারে এবং পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগে কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জোরদার হচ্ছে।

দিমিত্রি মেদভেদেভ কী বলেছেন

গত বৃহস্পতিবার রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমানে নিরাপত্তা পরিষদের উপপ্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভ যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, কল্পিত ‘ডেড হ্যান্ড’ কতটা বিপজ্জনক হতে পারে, সে বিষয়ে ট্রাম্পের সচেতন থাকা উচিত। মূলত রাশিয়ার স্নায়ুযুদ্ধকালীন পারমাণবিক অস্ত্রব্যবস্থার প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি এ সতর্কবার্তা দেন।

মেদভেদেভের এই বক্তব্যে দারুণ চটে যান ট্রাম্প, এরপরই তিনি রাশিয়ার কাছে সাবমেরিন মোতায়েনের সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। মেদভেদেভের ওই বক্তব্যকে ট্রাম্প ‘বোকামিপূর্ণ ও উসকানিমূলক হুমকি’ বলে উল্লেখ করেছেন।

মেদভেদেভ এবং ট্রাম্পের এই কথার লড়াই স্নায়ুযুদ্ধের সময়ের পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে উত্তেজনার কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। কারণ, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত শুধু একটি সামরিক পদক্ষেপ নয়, বরং এটি বিশ্বব্যাপী বাড়তে থাকা উত্তেজনা এবং ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে একটি শক্তিশালী ভূরাজনৈতিক বার্তাও।

মস্কোর উসকানিমূলক হুমকি সহ্য করবে না ওয়াশিংটন

ট্রাম্প তাঁর এই পদক্ষেপকে ‘সতর্কতামূলক ব্যবস্থা’ হিসেবে উপস্থাপন করলেও এটি স্নায়ুযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্টের নেওয়া সবচেয়ে সাহসী পারমাণবিক সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসন মস্কোকে একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে। সেই বার্তা হলো—মস্কোর উসকানিমূলক হুমকি সহ্য করবে না ওয়াশিংটন।

তবে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ শুধু  রাশিয়াকে সামরিকভাবে বিরত রাখার জন্য নয়; বরং এটি একটি বিস্তৃত চাপ প্রয়োগের অংশ, যার মধ্যে কঠোর অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণও রয়েছে।

সাবমেরিন মোতায়েনের পাশাপাশি ট্রাম্প রাশিয়ার ওপর শুল্ক ও বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞাও বাড়াচ্ছেন। তিনি নানা বৈশ্বিক জোট ও বিভিন্ন দেশের আচরণের সঙ্গে রাশিয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণকে সরাসরি তাঁর কৌশলে যুক্ত করছেন। যেমন—যেসব দেশ রাশিয়ার পক্ষে ঝুঁকছে বা যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী অবস্থান নিচ্ছে, তাদের ওপর শুল্ক ও বাণিজ্যিক চাপ বাড়ানো হচ্ছে।

এর মধ্যে ভারতও রয়েছে। ব্রিকস জোটের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ভারত। দেশটি এখনো রাশিয়ার কাছ থেকে ছাড়মূল্যে তেল ও অস্ত্র আমদানি অব্যাহত রেখেছে।

মেদভেদেভ-ট্রাম্পের কথার লড়াই স্নায়ুযুদ্ধের সময়ের পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে উত্তেজনার কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। কারণ, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত শুধু একটি সামরিক পদক্ষেপ নয়, বরং এটি বিশ্বব্যাপী বাড়তে থাকা উত্তেজনা এবং ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে একটি শক্তিশালী ভূরাজনৈতিক বার্তাও।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবমেরিন কতটা শক্তিশালী

ট্রাম্প রাশিয়ার কাছাকাছি যেসব সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন, সেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ওহাইও-ক্লাস ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বহরের অংশ। সেগুলো বেশ কয়েকটি পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্র বহন করতে সক্ষম।

যুক্তরাষ্ট্রের ওই স্টেলথ সাবমেরিনগুলো যেকোনো রাডার বা শনাক্তকরণ ব্যবস্থা ফাঁকি দিতে সক্ষম। দারুণ শক্তিশালী এই সাবমেরিনগুলো যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অস্ত্রাগারের অন্যতম মারাত্মক ধ্বংসাত্মক অস্ত্র।

মেদভেদেভ কি স্নায়ুযুদ্ধকালের পারমাণবিক হুঁশিয়ারি পুনরুজ্জীবিত করেছেন ট্রাম্প প্রশাসন ও মস্কোর মধ্যে এই উত্তেজনা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ইউক্রেনের দীর্ঘায়িত যুদ্ধ, সাইবার হুমকি এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সম্পর্কে উত্তেজনার পারদ আগেই চড়ছিল। এর মধ্যে এই ঘটনা উত্তেজনার পারদকে চূড়ান্তে পৌঁছে দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সাম্প্রতিক এই উচ্চ সতর্ক অবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন দিমিত্রি মেদভেদেভ। তিনি কয়েক মাস ধরে যুদ্ধংদেহী এবং আগ্রাসী কথাবার্তা বলে যাচ্ছেন। নিজের সাম্প্রতিক বিবৃতিতে মেদভেদেভ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রস্তাবিত ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং এর পরিবর্তে রাশিয়ার বিশাল পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডারের কথা উল্লেখ করেছেন।

এটি একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল মুহূর্ত। সাবমেরিন মোতায়েনের খবর প্রচার করে, ট্রাম্প একদিকে যেমন আগ্রাসন রোধ করছেন, অন্যদিকে রুশদের (যুদ্ধ নিয়ে) ভুল–বোঝাবুঝি বা ভুল গণনার আশঙ্কাকে বাড়িয়ে দিচ্ছেনএলেনা পেত্রোভ, আটলান্টিক ইনস্টিটিউটের পারমাণবিক কৌশলবিষয়ক বিশ্লেষক

মেদভেদেভ তাঁর বক্তব্যে ‘ডেড হ্যান্ড’ কৌশলের কথাও উল্লেখ করেন। এটি স্নায়ুযুদ্ধ যুগের একটি পুরোনো কৌশল। এই ব্যবস্থা সম্পর্কে বলা হয়, যদি রাশিয়ার জাতীয় নেতৃত্ব সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসও হয়ে যায়, তবে এই ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পারমাণবিক অস্ত্র নিক্ষেপ করতে সক্ষম।

ভয়াবহ এই তথ্যটি পশ্চিমা দেশগুলোর সরকারের মধ্যে প্রবল উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে এবং সম্ভবত ট্রাম্পের দ্রুত সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণে বড় ভূমিকা রেখেছে।

প্রকাশ্যে এসব মন্তব্য করে মেদভেদেভ হয়তো বোঝাতে চাইছেন, ইউক্রেন নিয়ে চলমান সংঘাতে রাশিয়াকে ভয় দেখিয়ে বা চাপ প্রয়োগ করে নিজেদের ভূরাজনৈতিক অবস্থান থেকে পিছু হটতে বাধ্য করা যাবে না।

রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের কারণে ভারত ও ব্রিকস জোট কি ট্রাম্পের শুল্কের লক্ষ্যবস্তু হয়েছে

হ্যাঁ, এবং বার্তাটি অত্যন্ত স্পষ্ট। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের চলমান বাণিজ্যের কারণে এটিকে একটি শাস্তিমূলক পদক্ষেপ বলে বিবেচিত হচ্ছে।

ব্রিকস জোটের দেশগুলোর ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের বিরক্তি প্রকাশ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে ভারত, ব্রাজিল ও চীনের ওপর। এসব দেশ ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার ভূমিকার পরও মস্কোর সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে বা আরও গভীর করেছে।

এর মধ্যে ভারতের অবস্থান বিশেষভাবে সংবেদনশীল। কারণ, দেশটি রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রে কৌশলগত অবস্থান বজায় রেখেছে। রাশিয়া থেকে তেল আমদানি এবং বর্ধিত সামরিক অংশীদারত্বের কারণে ভারত ট্রাম্পের ক্ষোভের কারণ হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা এমনটাও ইঙ্গিত দিয়েছেন, ভারতকে ‘একটি উদাহরণ’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, যাতে অন্যান্য দেশ ওয়াশিংটনের হুঁশিয়ারির সীমা অতিক্রম করার সাহস না করে।

যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও-ক্লাস ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী সাবমেরিন ইউএসএস আলাস্কা (এসএসবিএন ৭৩২).

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স বম র ন ম ত য় ন র য ক তর ষ ট র র র এই পদক ষ প ট র ম প র এই ক পদক ষ প ব যবস থ অবস থ ন ইউক র ন র জন ত কর ছ ন চলম ন গ রহণ র ওপর সতর ক

এছাড়াও পড়ুন:

সরকার ও ষুধশিল্পে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে

ওষুধশিল্পের মালিকেরা মনে করছেন, মালিকদের বাদ দিয়ে সরকার ওষুধের বিষয়ে নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। সরকারের এই নীতি ওষুধশিল্পকে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। এ অবস্থায় শিল্পমালিকেরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রায় এক হাজার ওষুধের অনুমোদন দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির (বাপি) কার্যালয়ে আজ শনিবার দুপুরে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় সমিতির নেতারা এসব কথা বলেন। ‘ওষুধশিল্প-কারখানা পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা ও বর্তমান চ্যালেঞ্জ’ বিষয়ে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে স্বাস্থ্য খাতে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম। আর এই আয়োজনে সহযোগিতা করে বাপি।

মতবিনিময় সভার শুরুতে বাপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও ইউনিমেড ইউনিহেলথের চেয়ারম্যান এম মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ওষুধে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশের মানুষের প্রয়োজনের ৯৮ শতাংশ ওষুধই এখন দেশে তৈরি হয়। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশ দেড় শর মতো দেশে ওষুধ রপ্তানিও করছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এখন সহজে ওষুধ পাওয়া যায়। ওষুধ নিয়ে সাধারণ মানুষ ও চিকিৎসকদের মধ্যে অসন্তুষ্টি নেই। ওষুধের এই সাফল্যের পেছনে আছে ১৯৮২ সালের ওষুধনীতি।

ওষুধশিল্প খাতের এই সাফল্য এখন হুমকির মুখে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ওষুধশিল্পের মালিকেরা। সমিতির সহসভাপতি ও রেনাটা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ কায়সার কবির সাংবাদিকদের বলেন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কারবিষয়ক কমিশনের কিছু সুপারিশ এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু নীতি ও পদক্ষেপ ওষুধশিল্পকে আবারও আশির দশকের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে।

মতবিনিময় সভায় ওষুধশিল্পের মালিকেরা অভিযোগ করেন, অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা হালনাগাদ করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে গঠিত ১৮ সদস্যের টাস্কফোর্সে ওষুধশিল্পের কোনো প্রতিনিধি রাখেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ওষুধের মূল্য নির্ধারণ কমিটিসহ আরও তিনটি কমিটিতে শিল্পমালিকদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। যদিও অতীতে এসব কমিটিতে মালিকপক্ষের প্রতিনিধি রাখা হতো।

বাপির কোষাধ্যক্ষ ও হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ হালিমুজ্জামান বলেন, ‘ওষুধশিল্পের মালিকেরা স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন। কিন্তু তাঁদের কথা কেউ শুনছে না। মনে হচ্ছে এই শিল্পটাকে নিশানা করা হয়েছে, শিল্পটাকে কেউ নষ্ট করে দিতে চায়। সরকারের নেওয়া কিছু পদক্ষেপ ওষুধশিল্পকে আবারও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।’

বাপির পক্ষ থেকে সম্প্রতি সাংবাদিকদের ইনসেপ্‌টা ফার্মাসিউটিক্যালস ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের বিভিন্ন কারখানা ঘুরিয়ে দেখানো হয়। অনুষ্ঠানে সাংবাদিকেরা তাঁদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরার পাশাপাশি মালিকদের নানা বিষয়ে প্রশ্ন করেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে সভায় উপস্থিত একাধিক শিল্পমালিক জানান, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কনীতি ওষুধশিল্পের জন্য ইতিবাচক, নাকি নেতিবাচক হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়।

স্বল্পোন্নত দেশ হওয়ায় বাংলাদেশ ওষুধের মেধাস্বত্বের ক্ষেত্রে ছাড় পায়, তাই দেশে ওষুধের দাম কম বা সহনশীল। বাপির মহাসচিব ও ডেল্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাকির হোসেন বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে গেলে মেধাস্বত্বের সেই ছাড় আর পাবে না বাংলাদেশ। ফলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে নিবন্ধন না থাকা নতুন ওষুধের দাম অনেক বেশি হবে।

সভায় উপস্থিত একাধিক ওষুধ কোম্পানির মালিক অভিযোগ করেন, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ওষুধ নিবন্ধন প্রদানের ক্ষেত্রে বিলম্ব করছে। সংশ্লিষ্ট কমিটির সভাও ঠিকমতো হচ্ছে না। অধিদপ্তর যদি দ্রুততম সময়ের মধ্যে হাজারখানেক ওষুধের নিবন্ধনপ্রক্রিয়া শেষ করে, তবে তাতে দেশের মানুষ উপকৃত হবেন।

মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকেরা জানতে চান ওষুধের কাঁচামালের বিষয়ে শিল্পমালিকেরা কী করছেন। এ সময় তাঁরা জানতে চান, ওষুধ উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও ওষুধের ৯০ শতাংশ কাঁচামাল এখনো কেন আমদানি করতে হচ্ছে। জবাবে বাপির মহাসচিব মো. জাকির হোসেন বলেন, গজারিয়ায় এপিআই শিল্প পার্কের প্লটগুলো প্রয়োজনের তুলনায় খুবই ছোট ছোট। বর্তমানে এপিআই শিল্প পার্কে ওষুধ কারখানার মালিক আছেন ২৭ জন। তাই সিদ্ধান্ত হয়েছে কয়েকটিকে প্লটকে একত্র করে প্লটের আকার বাড়ানো হবে। তাতে মালিকের সংখ্যাও কমে ১০-১২ জনে দাঁড়াবে। এ ছাড়া এপিআই শিল্প পার্কে গ্যাসের সংযোগ না থাকায় সেখানে কাঁচামালের কারখানা গড়ে উঠছে না।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত একাধিক শিল্পমালিক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বীকার করেন, একদল অসাধু লোক প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির ওষুধ নকল করে বাজারে ছাড়ছে। এসব অসাধু লোক এখন শহর ছেড়ে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে।

মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন বাপির নির্বাহী কর্মকর্তা মে. জে. (অব.) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, নিপ্রো জেএমআই ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাক, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ