যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনার ১২ দিন পর আজ রোববার রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ খুলেছে।

আজ সকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির কলেজ শাখার (নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি) শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসে। তবে আজ কোনো পাঠদান কার্যক্রম হয়নি। আগামী বুধবার (৬ আগস্ট) থেকে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হবে।

শিক্ষার্থীরা যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের আত্মার মাগফিরাত, আহত ব্যক্তিদের দ্রুত আরোগ্য কামনায় আয়োজিত দোয়া এবং শোক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। পরে নিজেদের মধ্যে কুশলাদি বিনিময় করে বাসায় ফিরে যায়।

সকাল সোয়া ১০টার দিকে দিয়াবাড়ি গোলচত্বর–সংলগ্ন মাইলস্টোন কলেজে গিয়ে দেখা যায়, ইউনিফর্ম পরা শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে। কিছু কিছু শিক্ষার্থীর কাঁধে ব্যাগ রয়েছে।

কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আরাফাত বলে, ‘সকাল সাড়ে ৮টায় এসেছি। কোনো ক্লাস হয়নি। টিচাররা আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, ভালো–মন্দ খোঁজখবর নিয়েছেন। পরে দোয়া মাহফিলে অংশ নিয়েছি। এখন বাসায় চলে যাচ্ছি।’

মাইলস্টোনের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহ বুলবুল প্রথম আলোকে বলেন, আজ কলেজ শাখা খুলেছে, তবে পাঠদান কার্যক্রম হচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা শোক ও দোয়া অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বাসায় ফিরে যাচ্ছে। শিক্ষার্থী বেশি হওয়ায় কলেজ শাখার শিক্ষার্থীরা তিন ধাপে (সকাল ৯টা, সাড়ে ১০টা ও দুপুর ১২টা) শোক ও দোয়া অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মাইলস্টোনের লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.

) কামালউদ্দীন মিলনায়তনে গিয়ে দেখা যায়, দ্বিতীয় ধাপের শোক ও দোয়া অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। পুরো মিলনায়তনে শিক্ষার্থীতে পরিপূর্ণ। তাদের মধ্যে শোকের আবহ বিরাজ করছে।

অনুষ্ঠানে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা কর্নেল (অব.) নুরন নবী বলেন, ‘যে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে গেল, যে ২৭টি ছোট শিশু নিঃশেষ হয়ে গেল, কীভাবে এটা আমরা মেনে নিতে পারি? আমাদের দুজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। পাঁচজন শিক্ষক এখনো হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। সঙ্গে আছে আরও ৩৩ জন শিক্ষার্থী। কী সান্ত্বনা দেব আমি এদের বাবা-মায়েদের? মাইলস্টোনের এক শিক্ষক দম্পতি দুর্ঘটনায় তাঁদের সন্তান হারিয়েছেন। এই শোক কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে নুরন নবী আরও বলেন, ‘আমি অনেকের বাসায় গিয়েছি, যাঁরা তাঁদের সন্তানদের হারিয়েছেন। কী সান্ত্বনা দেব? মা নির্বাক হয়ে আছেন, কথা বলতে পারছেন না। বাবাও শোকে পাথর হয়ে আছেন। এই শোক কাটিয়ে ওঠার নয়। এই শোক মা-বাবাদের তাঁদের মৃত্যুর সময়ও যন্ত্রণা দেবে।’

মাইলস্টোন কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জিয়াউল আলম বলেন, ‘আমার জীবনের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা গত ২১ জুলাই ফেস করেছি। আমি আমার কক্ষ ভবন-১-এ কাজ করছিলাম। হঠাৎ একটা শব্দ। জানালা দিয়ে দেখি আগুন। দৌড়ে যাই। তখনো বিন্দুমাত্র সন্দেহ হয়নি কেউ এটাতে চলে যেতে পারে। হঠাৎ যখন দেখি এক শিক্ষার্থী ও এক ম্যাডাম পড়ে আছে, আমি শকড হই। মুহূর্তের জন্য নিজেকে হারিয়ে ফেলি।’

কলেজ শাখার শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে জিয়াউল আলম বলেন, ‘তোমাদের ছোট ক্লাস টু, থ্রি ও ফোরের শিক্ষার্থীরা, তারা এখনো ট্রমাটাইজড। তোমরা অনেককেই হয়তো চেনো। তাদের বাসা তোমরা ভিজিট করতে যাও। ওদের সময় দাও।’

সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করে অধ্যক্ষ বলেন, ‘নিজেদের এই ট্রমা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। যারা চলে গেছে, তাদের অনেকের বড় ভাইবোন তোমাদের সহপাঠী। ওদেরও সময় দাও, ট্রমা থেকে বের করে আনো। নিহত ব্যক্তিদের অভিভাবকদেরও সময় দাও। কলেজের এই গুমোট পরিবেশ, অস্বস্তিকর পরিবেশ থেকে আমরা বের হয়ে আসতে চাই। যদি আমরা এগিয়ে আসি, একে অন্যের পাশে দাঁড়াই, আশা করি দ্রুত এই অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব।’

অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে অধ্যক্ষ জিয়াউল আলম বলেন, ‘যেসব শিক্ষার্থী ট্রমার মধ্যে আছে, আতঙ্কিত, তাদের কাউন্সেলিং করানো হচ্ছে। অভিভাবকদেরও কাউন্সেলিং করানো হচ্ছে। আগামী তিন মাস কাউন্সেলিং চালানো হবে।’

বেশির ভাগ অভিভাবক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরোপুরি খুলে দেওয়ার পক্ষে বলে জানান অধ্যক্ষ। তিনি বলেন, অভিভাবকেরা চাচ্ছেন, শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আসুক। একজন আরেকজনের সঙ্গে দেখা হলে, শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বললে, তাদের ভেতরে যে আতঙ্ক, গুমোট অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। তাই আগামী বুধবার (৬ আগস্ট) থেকে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ইলস ট ন কল জ শ খ অন ষ ঠ ন কল জ র র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ

দীর্ঘ ৯ মাস পর শনিবার থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু প্রথম দিন কোনো জাহাজ সেন্ট মার্টিনে না যাওয়ার কারণে পর্যটকেরা দ্বীপে যেতে পারেননি। হাজারো পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যেতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। অন্যদিকে জাহাজমালিকেরা বলছেন, সরকারের বিভিন্ন শর্তের কারণে পর্যটকদের আগ্রহ না থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে সরকারের কোনো বাধা নেই। লিখিতভাবে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে দিনে গিয়ে দিনেই চলে আসতে হবে; রাতে থাকা যাবে না।

এদিকে রাতে থাকার সুযোগ না থাকায় পর্যটকেরা যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না। কারণ, দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করে দ্বীপে গিয়ে আবার সেদিনই চলে আসতে হবে। এ কারণে জাহাজমালিকেরাও জাহাজ চালাতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তাঁদের দাবি, দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন, জাহাজমালিকেরা যদি জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার। সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন।

শাহিদুল আলম বলেন, আগে টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করলেও নিরাপত্তার কারণে এখন কক্সবাজার শহর থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত করবে।

সি ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে জাহাজ ছেড়ে গেলে সেন্ট মার্টিন পৌঁছাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে পর্যটকেরা কিছুই ঘুরে দেখতে পারবেন না। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি ব্যবসার জন্যও তা অলাভজনক। এ কারণেই অনেক পর্যটক সেন্ট মার্টিন যেতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।

হোসাইন ইসলাম আরও বলেন, রাতযাপন করার সুযোগ না থাকলে সেন্ট মার্টিনের পর্যটন মৌসুম জমে না। পর্যটকেরা রাতের সৈকত দেখতে চান, ঢেউয়ের শব্দ শুনতে চান। সেটাই তো সেন্ট মার্টিনের আসল আকর্ষণ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে কার্যকর করা হবে। এ লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনসেন্ট মার্টিনে নিষেধাজ্ঞা উঠছে কাল, তবে জাহাজ চলবে কি৩১ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ