দুই নারীর সঙ্গে কথা–কাটাকাটি, পরে ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে ব্যবসায়ীকে মারধর
Published: 3rd, August 2025 GMT
বরগুনা পৌর শহরে এক ব্যবসায়ীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শনিবার রাত ১০টার দিকে শহরের বিবি সড়কের একটি কাপড়ের দোকানে এ ঘটনা ঘটে। মারধরের শিকার ব্যবসায়ীর নাম জসীম উদ্দিন। তাঁর ‘ল্যাডিস পয়েন্ট’ নামে একটি দোকান আছে ওই সড়কে। ঘটনার পর ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে তাঁরা দোকানপাট বন্ধ করে দেন।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয় ব্যবসায়ী সূত্রে জানা যায়, জসীম উদ্দিন তাঁর শিশুসন্তানকে নিয়ে খাবার কিনতে যাচ্ছিলেন। পথে তাঁর সন্তানের সঙ্গে এক নারী পথচারীর ধাক্কা লাগলে শিশুটি পড়ে যায়। এ ঘটনা নিয়ে জসীমের সঙ্গে দুই নারীর কথা–কাটাকাটি হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে বাজারের বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা উভয় পক্ষকে ডেকে সমাধানের চেষ্টা করেন।
এর মধ্যে ইয়াসমিন তানিয়ার ছেলে সিনহা রহমান, যিনি নিজেকে ‘সমন্বয়ক’ পরিচয় দেন, কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন। কথোপকথনের একপর্যায়ে তিনি উত্তেজিত হয়ে জসীম উদ্দিনকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। এতে বাজারে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের দোকানদাররা দোকান বন্ধ করে দেন।
ভুক্তভোগী জসীম উদ্দিনের দাবি, সমিতির সালিসে গেলে সবার সামনেই তাঁকে মারধর করা হয়।
বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ বলেন, ‘ঘটনার মীমাংসায় আমরা উভয় পক্ষকে ডেকেছিলাম। কিন্তু বৈঠকের একপর্যায়ে ওই নারীর ছেলে ও তাঁর সঙ্গী দোকানে ঢুকে জসীমকে মারধর করেন। উপস্থিত সবাই মিলে পরিস্থিতি সামাল দিই। এরপর আমরা সব দোকান বন্ধ করে দিই। উপযুক্ত বিচার না হলে কাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য দোকান বন্ধ থাকবে।’
এ ঘটনায় অভিযুক্ত সিনহা রহমান বলেন, ‘আমার বোনের সঙ্গে ব্যবসায়ীর শিশুসন্তানের ধাক্কা লাগার পর ব্যবসায়ী খারাপ ভাষায় কথা বলেন। আমার মা প্রতিবাদ করলে তিনি তাঁর সঙ্গেও অশোভন ভাষায় কথা বলেন। পরে আমি বন্ধুদের নিয়ে গিয়ে জসীমকে খুঁজি। সালিসের সময়ও তিনি আমার মাকে অপমান করলে আমি তাঁর কলার ধরেছিলাম, ধস্তাধস্তি হয়েছে। তবে মারধরের অভিযোগ মিথ্যা।’ আজ বিকেলে বিএনপির এক নেতা সালিস করবেন বলে তিনি জানান।
বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এখন আমার মোবাইলে ওর কোনো ফোন আসে না
ঘরে তাকে তাকে সাজিয়ে রাখা বই। টেবিলে খাতা, আর নানা অর্জনের মেডেলসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র। প্রতিটি কোনায় থাকা স্মৃতি চিহ্নগুলো পরিবারকে আফিকুল ইসলাম সাদের স্মৃতিকে মনে করিয়ে দেয়।
২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে ঢাকার ধামরাইয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ এই শিক্ষার্থীর স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে আছেন তার মা-বাবা। ছেলেকে হারিয়ে দিশাহারা তারা। ছেলে হারানোর বেদনায় দিন কাটে তাদের। মা-বাবার একটাই দাবি, ছেলে হত্যার বিচার।
পুলিশ বলছে, মামলায় অন্তত অর্ধ শতাধিক আসামি গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শিগগিরই দেওয়া হবে তদন্ত প্রতিবেদন।
আরো পড়ুন:
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু
রবিবার সমাবেশ, ঢাকাবাসীর কাছে ছাত্রদলের অগ্রীম দুঃখ প্রকাশ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সকালে ধামরাই হার্ডিঞ্জ সরকারি স্কুল অ্যন্ড কলেজ গেটের সামনে বিক্ষোভ চলছিল। এসময় কলেজছাত্র সাদ গুলিবিদ্ধ হন। সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনদিন পর ৮ আগস্ট সকালে তিনি মারা যান।
সাদ সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। ধামরাইয়ের রথখোলা এলাকায় বাবা মো. শফিকুল ইসলাম, মা জাহানারা বেগম এবং ছোট ভাই সাজেদুল ইসলাম আবীরের সঙ্গে থাকতেন তিনি। তার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের দড়গ্রাম এলাকায়।
আফিকুল ইসলাম সাদ
ছেলের কথা জিজ্ঞাসা করতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন সাদের মা জাহানারা বেগম। তিনি বলেন, ‘‘ও যতক্ষণ বাইরে থাকত, কিছুক্ষণ পরপরই কল দিয়ে খোঁজ নিত, নিজের খোঁজ জানাত। এখন আমার মোবাইলে ওর কোনো ফোন আসে না।”
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমার সন্তানকে আল্লাহ শহীদের মর্যাদা দান করেছেন। আল্লাহ যেন আমার সন্তানকে জান্নাতে নেয়।”
শোককে ধারণ করে ছেলে হত্যায় জড়িতদের বিচারের দাবি করেন সাদের বাবা মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘‘যে ফ্যাসিস্টরা তাকে শহীদ করেছে, আমাদের বুক খালি করেছে, আমার সন্তানকে নিয়ে নিয়েছে তাদের বিচার যেন এই বাংলার মাটিতে হয়।”
সাদকে হত্যার ঘটনায় গত বছরের ২১ আগস্ট ধামরাই থানায় মামলা করেন তার নানা আজিম উদ্দিন। মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য বেনজীর আহমদসহ কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের ৮২ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাত আসামি করা হয় ৮০-৯০ জনকে।
এ মামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কবীর মোল্লাসহ দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের অন্তত ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। অন্যদের গ্রেপ্তারে চলছে অভিযান।
ধামরাই থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘সাদ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ৫০ জনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। মামলাটি তদন্তাধীন। শিগগিরই মামলার প্রতিবেদন আদালতে পাঠানো হবে।”
ঢাকা/মাসুদ