বগুড়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানি চলাকালে মঞ্চ লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপ করেছেন এক ব্যক্তি। তবে, জুতাটি মঞ্চ পর্যন্ত পৌঁছায়নি। রবিবার (১০ আগস্ট) বেলা পৌনে ১১টার দিকে জেলার টিটু মিলনায়তনে এ ঘটনা ঘটে। ওই ব্যক্তির নাম ছাকোয়াত হোসেন মণ্ডল।

কী কারণে জুতা মেরেছেন? জানতে চাইলে ছাকোয়াত হোসেন বলেন, ‘‘আজকের গণশুনানিতে আমার অভিযোগ জানাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, কোনোভাবে অভিযোগ জানাতে পারছিলাম না। তাই জুতা মেরেছি, যাতে দৃষ্টি আকর্ষণ করে কথা বলার সুযোগ পাই। এতে আমার যে শাস্তি হয় হবে। কথা বলার সুযোগ না পেলেও জুতা মারতে পেরেছি এটা ভেবে তৃপ্তি পাব। এমন চিন্তা থেকে জুতা মেরেছি।’’

আরো পড়ুন:

মাদারীপুরে ২ কলেজে দুদকের অভিযান 

সাবেক মন্ত্রী জাবেদ ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে ১৫ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা

ছাকোয়াত হোসেন

কী অভিযোগ জানাতে চেয়েছিলেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমি পেশায় একজন মৎস্যচাষি। বিভিন্ন জায়গায় পুকুর এবং বিল লিজ নিয়ে মাছ চাষ করি। ২০১২ সালে বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার গারামারা গ্রামের তিনটি বিল ও তিনটি পুকুর বছরে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা লিজ নিয়ে এবং ২১ লাখ টাকা খরচ করে মাছ চাষ শুরু করি। এরই মধ্যে, বগুড়া-১ আসনের তৎকালীন এমপি আব্দুল মান্নান স্থানীয় শালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটির ভোটপ্রথা তুলে দিয়ে তার শ্যালক লিটনকে সভাপতি বানাতে চান। আমি এর প্রতিবাদ করে বলেছিলাম, শালিকা গ্রাম থেকে কেউ স্কুলের সভাপতি হবেন, আপনার বা আপনার শ্যালকের সভাপতি হতে চাওয়াটা আমাদের কাছে ভালো লাগছে না। এটাই ছিল আমার অপরাধ। পরে এমপির শ্যালক ছাত্রলীগ-যুবলীগের ক্যাডারদের দিয়ে ২০১৫ সালের মে মাসের ১৭ তারিখে আমার মাছের খামার দখল করে নেয়। এরপর থানা, জেলা, এসপি, ডিসি, ঢাকার বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু, কোনো কাজ হয়নি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকটি দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু, কোথাও বিচার পাইনি। সব জায়গায় থেকে অসহযোগিতা পেয়েছি। চেয়েছিলাম, আজকের গণশুনানিতে অভিযোগ জানাব। সেই সুযোগও পাচ্ছিলাম না। তাই, আমার ভেতরে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। জুতা নিক্ষেপের পরে দুদকের লোকজন আমাকে অনুষ্ঠানস্থল থেকে বের করে দেয়। পরে আবার অনুষ্ঠানে বসতে দেওয়া হয় এবং বলা হয়, মঞ্চে ডেকে অভিযোগ শোনা হবে। তবে শেষ পর্যন্ত আমাকে মঞ্চে ডাকেনি।’’

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একুশে টেলিভিশনের বগুড়া জেলা প্রতিনিধি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘‘ছাকোয়াত হোসেন নামের ওই ব্যক্তি আমার পাশেই বসে ছিলেন। হঠাৎ তিনি মঞ্চ লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপ করেন।’’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের চেয়ারম্যান ড.

মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন বলেন, ‘‘জুতা নিক্ষেপের ঘটনার বিষয়ে কিছু শুনিনি। ওই ব্যক্তি হয়তো সঠিক পদ্ধতিতে আবেদন করেননি, তাই তার অভিযোগের বিষয়ে আমরা অবগত নই।’’

ঢাকা/এনাম/রাজীব

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গণশ ন ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমি এতিম হয়ে গেলাম রে’

“আমি এতিম হয়ে গেলাম রে, আমার বাবা আর নেই, আমি এখন কী করবো ফুফু”- এভাবেই হাহাকার করছিলেন পাপিয়া আক্তার। বাবা হারানোর শোকে কণ্ঠ যেন পাথর ভেদ করা আর্তনাদ। পাশে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে আছেন স্বজনরা। সবাই জানে, এই কান্নার আর কোনো সান্ত্বনা নেই।

পাপিয়া মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার ফলসাটিয়া এলাকায় হলি চাইল্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাসে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া চালক পারভেজ খানের (৪৫) মেয়ে। তিনদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে শেষ পর্যন্ত হার মানলেন পারভেজ খান। সোমবার (১৭ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

আরো পড়ুন:

স্কুল পরিচালকের বিরুদ্ধে ৮ শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাতের অভিযোগ 

শ্রেণিকক্ষে টিকটক বানানোয় ৩ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

গত বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) গভীর রাতে ফলসাটিয়া বাজারের পাশে থেমে থাকা স্কুল বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। বাসে ওই সময় ঘুমিয়ে ছিলেন চালক পারভেজ খান। আগুনে বাসটি মুহূর্তেই দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে। অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে এবং পরে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। তিনদিন ধরে ৭০ শতাংশ দগ্ধ শরীর নিয়ে বাঁচার লড়াই চালিয়েছেন তিনি। কিন্তু জীবন তাকে আর সময় দেয়নি।

নিহত পারভেজ খান সদর উপজেলার বারাইভিকড়া গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। তার ঘরে রয়েছে স্ত্রী, এক স্কুলপড়ুয়া ছেলে এবং ছোট মেয়ে পাপিয়া আক্তার। 

স্ত্রী চোখে মুখে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “স্বামীকে হারিয়ে আমরা পথে বসে গেলাম। এখন সন্তানদের কীভাবে মানুষ করবো? কে চালাবে সংসার?”

স্থানীয়রা জানান, এটা কোনো দুর্ঘটনা নয়, এটা হত্যাকাণ্ড। যারা করেছে, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পারভেজের পরিবার যেন রাষ্ট্রীয় সাহায্য পায়, সন্তানদের পড়াশোনা ও সংসারের ব্যয় চালাতে যেন সরকার ও প্রশাসন এগিয়ে আসে।

শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আমান উল্লাহ বলেন, “গত বৃহস্পতিবার স্কুলবাসটিতে আগুন দেওয়া হয়। এতে দগ্ধ হন বাসটির ভেতর ঘুমিয়ে থাকা চালক পারভেজ। পুলিশ উদ্ধার করে তাকে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেয়। পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয় তাকে। স্কুলবাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”

ঢাকা/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ