চট্টগ্রামের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি আড়ত চাক্তাই এলাকার বেহাল সড়কগুলো এখন কেবল স্থানীয় লোকজনের দুর্ভোগের কারণ নয়, বরং দেশের বাণিজ্যব্যবস্থার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। প্রায় সাত-আট মাস ধরে মধ্যম চাক্তাই, রাজাখালী, মকবুল সওদাগর ও সোবহান সওদাগর সড়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ পথগুলো খানাখন্দ ও কাদায় ভরা। এটি শুধু একটি স্থানীয় সমস্যা নয়, বরং নগর কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতা ও অব্যবস্থাপনার করুণ চিত্র।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ-আছদগঞ্জ দেশের ভোগ্যপণ্যের অন্যতম প্রধান পাইকারি বাজার। এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার কোটি টাকার পণ্য কেনাবেচা হয়। কিন্তু ভাঙা ও কাদাভরা সড়কের কারণে পণ্য পরিবহন মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। পণ্য ওঠানো–নামানোর খরচ বেড়ে যাচ্ছে, চালকেরা বাড়তি ভাড়া দাবি করছেন এবং অনেক যানবাহনই বাজারে ঢুকতে চাইছে না। এ কারণে ব্যবসায়ীরা যেমন আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন, তেমনই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহব্যবস্থাও হুমকির মুখে পড়ছে।

এ সমস্যার প্রভাব কেবল ব্যবসায়ীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। শ্রমিকেরা কাদাভরা রাস্তায় পণ্য ওঠানো–নামানো করতে গিয়ে ঝুঁকি নিচ্ছেন এবং তাঁদের ভোগান্তিও বাড়ছে। চাক্তাইয়ের মতো একটি ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকার সড়ক দীর্ঘ সময় ধরে এমন বেহাল থাকা সত্ত্বেও সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ না নেওয়াটা অত্যন্ত হতাশাজনক। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার আশ্বাস যে ‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে’, তা এখন পর্যন্ত কথার কথা হয়েই আছে। এর বাস্তব প্রতিফলন সড়কে দেখা যাচ্ছে না।

এটি শুধু সড়কের সমস্যা নয়, একটি ঐতিহ্যবাহী ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকার প্রতি অবহেলার বিষয়টিও প্রতিফলিত হয়ে ওঠে এখানে। রাজনৈতিক প্রভাব, চাঁদাবাজি ও পরিবহন খরচের মতো সমস্যাগুলোর সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে ভাঙা সড়কের ভোগান্তি, যা ব্যবসায়ীদের আগ্রহ কমিয়ে দিচ্ছে।

এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য অবিলম্বে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। প্রথমত, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে জরুরি ভিত্তিতে চাক্তাই এলাকার সব ভাঙা সড়ক মেরামতের কাজ শুরু করতে হবে। শুধু আশ্বাস নয়, বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের পরিস্থিতি আর তৈরি না হয়, সে জন্য নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির একটি কার্যকর ব্যবস্থা চালু করতে হবে। তৃতীয়ত, স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতি ও সিটি করপোরেশনের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ও সমন্বয় নিশ্চিত করতে হবে, যাতে সমস্যাগুলো দ্রুত চিহ্নিত ও সমাধান করা যায়।

চাক্তাইয়ের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্যকেন্দ্রের পুনরুদ্ধার কেবল এর সড়ক মেরামতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এর জন্য প্রয়োজন একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, যা এই এলাকার সব সমস্যাকে বিবেচনায় নেবে। চট্টগ্রামকে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে গড়ে তুলতে হলে চাক্তাইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস থ ব যবস য় এল ক র সমস য করপ র

এছাড়াও পড়ুন:

ফ্লোটিলা বহরে ভেসে চলা একমাত্র জাহাজ ম্যারিনেট কোথায়

ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখে যাত্রা করা ত্রাণবাহী নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’-এর একটি মাত্র নৌযান এখনো আটক করতে পারেনি ইসরায়েলি বাহিনী। এই নৌযানটি হলো দ্য ম্যারিনেট।

পোল্যান্ডের পতাকাবাহী এই নৌযানে ছয়জন আরোহী রয়েছেন ।

ফ্লোটিলার লাইভ ট্র্যাকার অনুযায়ী, ম্যারিনেট আন্তর্জাতিক জলসীমায় ভেসে চলেছে। এর গতি ঘণ্টায় প্রায় ২.১৬ নট (ঘণ্টায় প্রায় ৪ কিলোমিটার) , গাজার আঞ্চলিক জলসীমা থেকে ম্যারিনেটের দূরত্ব  প্রায় ১০০ কিলোমিটার।

বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে জাহাজটির ক্যাপ্টেন বলেন, ম্যারিনেটের ইঞ্জিনে সমস্যা হচ্ছিল। এটি  এখন সারানো  হয়েছে।

ফ্লোটিলা আয়োজকেরা বলছেন, ম্যারিনেট নৌযান এখনো স্টারলিঙ্কের মাধ্যমে সংযুক্ত। এটি যোগাযোগের আওতার মধ্যেই রয়েছে। লাইভস্ট্রিমও সক্রিয় আছে।  

ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা জানিয়েছে, অন্য জাহাজগুলো আটক করলেও ম্যারিনেট এখনো ভেসে চলছে।

ম্যারিনেট ফিরে যাবে না বলেও ওই পোস্টে জানানো হয়েছে।  পোস্টে বলা হয়েছে, ‘ম্যারিনেট শুধু একটি জাহাজ নয়। ম্যারিনেট হলো ভয়, অবরোধ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ়তা।’

ফ্লোটিলা আয়োজকরা আরও লিখেছেন, ‘গাজা একা নয়।’ ‘ফিলিস্তিনকে কেউ ভুলে যায়নি। আমরা কোথাও যাচ্ছি না।’

ফ্লোটিলা বহরের প্রায় সব নৌযানে থাকা অধিকারকর্মীদের আটক করেছে ইসরায়েল। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সুইডিশ অধিকারকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। ইসরায়েলের এমন পদক্ষেপকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে অনেক দেশ। বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভও হয়েছে।

আরও পড়ুনগাজা অভিমুখী নৌবহরে ইসরায়েলি সেনাদের আক্রমণ, ধরে নেওয়া হলো অধিকারকর্মীদের৬ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ