মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতনের প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘ
Published: 12th, August 2025 GMT
মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর পদ্ধতিগত নির্যাতনের প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘ। নির্যাতনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকেও শনাক্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার জাতিসংঘের তদন্তকারীরা এ তথ্য জানিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘনের প্রমাণ বিশ্লেষণের জন্য ২০১৮ সালে গঠিত স্বাধীন তদন্ত ব্যবস্থা (আইআইএমএম) জানিয়েছে, ভুক্তভোগীদের মারধর, বৈদ্যুতিক শক, শ্বাসরোধ এবং প্লায়ার দিয়ে নখ অপসারণের মতো অন্যান্য ধরণের নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।
১৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনের সাথে যুক্ত এক বিবৃতিতে ব্যবস্থার প্রধান নিকোলাস কুমজিয়ান বলেন, “আমরা প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যসহ উল্লেখযোগ্য প্রমাণ উন্মোচন করেছি, যা মিয়ানমারের আটক কেন্দ্রগুলোতে পদ্ধতিগত নির্যাতনের প্রমাণ দেয়।”
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্যাতনের ফলে কখনো কখনো মৃত্যু ঘটে। নিখোঁজ বাবা-মায়ের প্রক্সি হিসেবে যেসব শিশুকে প্রায়শই অবৈধভাবে আটক রাখা হয়, তারা নির্যাতনের শিকার হয়।
সামরিক সমর্থিত সরকার কথিত অপরাধ এবং দেশে প্রবেশাধিকারের অনুরোধ সম্পর্কে জাতিসংঘের দুই ডজনেরও বেশি অনুরোধের জবাব দেয়নি।
সেনাবাহিনী নৃশংসতা সংঘটিত হওয়ার কথা অস্বীকার করেছে এবং অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য ‘সন্ত্রাসীদের’ দায়ী করেছে।
৩০ জুন পর্যন্ত এক বছরের সময়কাল ধরে প্রতিবেদনটি এক হাজার ৩০০ টিরও বেশি উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, যার মধ্যে শত শত প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য, ফরেনসিক প্রমাণ, নথি এবং ছবি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত চিহ্নিত অপরাধীদের তালিকায় উচ্চপর্যায়ের কমান্ডারও রয়েছেন।
আইআইএমএমের একজন মুখপাত্র তাদের নাম প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছেন, তদন্ত চলছে এবং তারা ব্যক্তিদের সতর্ক করা এড়াতে চায়।
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমি এতিম হয়ে গেলাম রে’
“আমি এতিম হয়ে গেলাম রে, আমার বাবা আর নেই, আমি এখন কী করবো ফুফু”- এভাবেই হাহাকার করছিলেন পাপিয়া আক্তার। বাবা হারানোর শোকে কণ্ঠ যেন পাথর ভেদ করা আর্তনাদ। পাশে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে আছেন স্বজনরা। সবাই জানে, এই কান্নার আর কোনো সান্ত্বনা নেই।
পাপিয়া মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার ফলসাটিয়া এলাকায় হলি চাইল্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাসে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া চালক পারভেজ খানের (৪৫) মেয়ে। তিনদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে শেষ পর্যন্ত হার মানলেন পারভেজ খান। সোমবার (১৭ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
আরো পড়ুন:
স্কুল পরিচালকের বিরুদ্ধে ৮ শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাতের অভিযোগ
শ্রেণিকক্ষে টিকটক বানানোয় ৩ শিক্ষার্থী বহিষ্কার
গত বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) গভীর রাতে ফলসাটিয়া বাজারের পাশে থেমে থাকা স্কুল বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। বাসে ওই সময় ঘুমিয়ে ছিলেন চালক পারভেজ খান। আগুনে বাসটি মুহূর্তেই দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে। অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে এবং পরে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। তিনদিন ধরে ৭০ শতাংশ দগ্ধ শরীর নিয়ে বাঁচার লড়াই চালিয়েছেন তিনি। কিন্তু জীবন তাকে আর সময় দেয়নি।
নিহত পারভেজ খান সদর উপজেলার বারাইভিকড়া গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। তার ঘরে রয়েছে স্ত্রী, এক স্কুলপড়ুয়া ছেলে এবং ছোট মেয়ে পাপিয়া আক্তার।
স্ত্রী চোখে মুখে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “স্বামীকে হারিয়ে আমরা পথে বসে গেলাম। এখন সন্তানদের কীভাবে মানুষ করবো? কে চালাবে সংসার?”
স্থানীয়রা জানান, এটা কোনো দুর্ঘটনা নয়, এটা হত্যাকাণ্ড। যারা করেছে, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পারভেজের পরিবার যেন রাষ্ট্রীয় সাহায্য পায়, সন্তানদের পড়াশোনা ও সংসারের ব্যয় চালাতে যেন সরকার ও প্রশাসন এগিয়ে আসে।
শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আমান উল্লাহ বলেন, “গত বৃহস্পতিবার স্কুলবাসটিতে আগুন দেওয়া হয়। এতে দগ্ধ হন বাসটির ভেতর ঘুমিয়ে থাকা চালক পারভেজ। পুলিশ উদ্ধার করে তাকে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেয়। পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয় তাকে। স্কুলবাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
ঢাকা/মেহেদী