জহির রায়হান, ১৯৭১ সালে ক্যামেরা হয়ে উঠেছিল রাইফেল
Published: 19th, August 2025 GMT
মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ ভারতে আশ্রয় নেন। শরণার্থীদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশের শিল্পী সমাজের একটা অংশ। তাঁদের বেশির ভাগই আশ্রয় নেন কলকাতায়। সেই সময় বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন জহির রায়হান, সৈয়দ হাসান ইমামেরা। তাঁদের হাত ধরেই তৈরি হয় কয়েকটি তথ্যচিত্র, যা হয়ে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের এক প্রামাণ্য দলিল।
নানা সীমাবদ্ধতায় প্রতিকূল পরিবেশে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী ও কুশলী সমিতি এবং পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্রাঙ্গনের কয়েকজনের সহায়তায় ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে জহির রায়হান, আলমগীর কবির ও বাবুল চৌধুরীর পরিচালনায় আরও তিনটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়।জহির রায়হানরা পূর্ব পাকিস্তান থেকে যাওয়া চলচ্চিত্রশিল্পী ও কুশলীদের একত্রিত করতে ও সাহায্য করতে মে মাসের শেষ দিকে গঠন করেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী ও কুশলী সমিতি। সংগঠনটির সভাপতি হন জহির রায়হান, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ হাসান ইমাম, কোষাধ্যক্ষ আব্দুল জব্বার খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খসরু নোমান, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক উদয়ন চৌধুরী (ইসমাইল মোহাম্মদ)। সমিতির মূল কাজ ছিল পূর্ব বাংলা থেকে আসা চলচ্চিত্রশিল্পী ও কলাকুশলীদের খাদ্য, বাসস্থান ও মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করা।
সমিতির সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সংগীত, নাটিকা, একাঙ্কিকা, বিচিত্রানুষ্ঠান করতেন। এ ছাড়া বিক্ষোভ মিছিল, কলকাতার বাইরে প্রচার-প্রচারণা, বেতার অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন। কলকাতার চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন কেউ কেউ।
এ সমিতির শিল্পীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন পরিচালক আব্দুল জব্বার খান, উদয়ন চৌধুরী (ইসমাইল মোহাম্মদ), জহির রায়হান, নারায়ণ ঘোষ মিতা, বাবুল চৌধুরী, ফজলুল হক, দিলীপ সোম; অভিনেতা ও পরিচালক সুভাষ দত্ত, সৈয়দ হাসান ইমাম, আমজাদ হোসেন; অভিনেতা আজমল হুদা মিঠু, জাফর ইকবাল, রাজু আহমেদ, দিলীপ বিশ্বাস, চাঁদ প্রবাসী, পরান বাবু, ফিরোজ ইফতেখার; অভিনেত্রী সুমিতা দেবী, সুচন্দা, কবরী প্রমুখ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চলচ চ ত র
এছাড়াও পড়ুন:
অ্যাপে পরিচয়-প্রেম, বিয়ে করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এলেন চীনের যুবক
ভাষা, সংস্কৃতি ও হাজার মাইলের দূরত্বকে হার মানিয়েছে ভালোবাসা। ভালোবাসার টানে এক তরুণীকে বিয়ে করতে বাংলাদেশে এসেছেন চীনের এক যুবক। গত শুক্রবার রাতে চীন থেকে ঢাকায় পৌঁছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে এক তরুণীর বাসায় আসেন তিনি। আজ রোববার আদালতের মাধ্যমে তাঁরা বিয়ে সম্পন্ন করবেন।
চীনের যুবকের নাম ওয়াং তাও (৩৬)। চীনের হোয়ানান প্রদেশের ওয়াং ইচাং চাওয়ের ছেলে তিনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার কুন্ডা ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামের তাহের মিয়ার মেয়ে সুরমা আক্তারের (২২) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক আছে তাঁর। সুরমা একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন এবং ঢাকার লালবাগে থাকেন। আজ রোববার তাঁরা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন বলে তরুণীর পরিবার জানিয়েছে।
জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার রাতে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পৌঁছান চীনের যুবক ওয়াং তাও। বিমানবন্দর থেকে চীনের যুবককে আতিথেয়তা দিয়ে নিজ বাড়ি নাসিরনগরের কুন্ডার কোনাপাড়ায় নিয়ে আসেন তরুণী সুরমাসহ তাঁর পরিবারের লোকজন।
স্থানীয় লোকজন, পুলিশ ও তরুণীর পরিবারের দাবি, দেড় থেকে দুই মাস আগে ডেটিং এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ওয়ার্ল্ড টক’ নামের একটি অ্যাপের মাধ্যমে ওয়াং তাওয়ের সঙ্গে সুরমার পরিচয় হয়। তাঁরা নিয়মিত চ্যাটে যোগাযোগ রাখতে শুরু করেন। তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব থেকে সম্পর্ক গড়ায় প্রেমে। বিষয়টি চীনের যুবক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তরুণী নিজ নিজ পরিবারকে জানান। উভয় পরিবারের সম্মতিতে তাঁরা একে অপরকে বিয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। পরে চীনের যুবক বাংলাদেশ ও চীনের দূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসেন। ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে দুপুরের পর থেকে চীনের যুবককে দেখার জন্য সুরমার বাড়িতে ভিড় করেন স্থানীয় লোকজন।
সুরমা স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, ‘ওয়ার্ল্ড টক’ অ্যাপের মাধ্যমে চীনের যুবক ওয়াং তাওয়ের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। বন্ধুত্ব থেকে সম্পর্ক প্রেমে গড়ায়। ট্রান্সলেটরের মাধ্যমে তাঁরা একে অপরের সঙ্গে চ্যাট করতেন। একপর্যায়ে তাঁরা পরিবারের সম্মতিতে বিয়ের সিদ্ধান্তে পৌঁছান।
সুরমার মা নুরেনা বলেন, ‘আমার মেয়ের ভালোবাসা পেতে চীন থেকে যুবক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে চলে এসেছে। ওই যুবক কোনো ধর্মই বিশ্বাস করে না। মেয়েকে বিয়ে করতে প্রয়োজনে সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে রাজি হয়েছে। আগামীকাল (আজ) রোববার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে মুসলিম রীতি মেনে সুরমাকে বিয়ে করবে চীনের যুবক। এতে দুই পরিবারের সম্মতি আছে। আমরা এই বিয়েতে আনন্দিত। মেয়ের খুশিই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
নাসিরনগর থানার কুন্ডা বিট উপপরিদর্শক (এসআই) জাহান-ই-আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি জানতে পেরে কুন্ডা গ্রামে যাই। পাসপোর্ট দেখে নিশ্চিত হলাম যে যুবক চীনের নাগরিক। ওই তরুণী ঢাকার লালবাগে থাকেন। ‘ওয়ার্ল্ড টক’ নামের একটি অ্যাপসের মাধ্যমে তাঁদের পরিচয়। একপর্যায়ে তাঁরা প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। চীনের যুবক ইংরেজি বোঝেন না। তাই কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাঁরা একে অপরের সঙ্গে ট্রান্সলেটরের মাধ্যমে কথা বলতেন। তরুণী ও তাঁর পরিবার জানিয়েছে, রোববার হলফনামার মাধ্যমে চীনের যুবক মুসলিম হবেন। তারপর তাঁরা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন।’ তরুণীর বরাত দিয়ে তিনি আরও জানান, চীনের যুবক এক থেকে দেড় মাস থাকবেন। যাওয়ার সময় হয় ওই তরুণীকে সঙ্গে নিয়ে যাবেন বা পরে নিয়ে যাবেন।