পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনা অনুযায়ী অবশেষে নিট সম্পদের ঘাটতি পূরণ করেছে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের প্রতিষ্ঠানসহ আটটি ব্রোকারেজ হাউজ।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) যথাযথ তদারকির পরিপ্রেক্ষিতে ব্রোকারেজ হাউজগুলো তাদের নিট সম্পদের ঘাটতি পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে ব্রোকারেজ হাউজগুলোর ট্রেক সনদ বাতিল হওয়ার বিষয়ে যে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল, তা এবার কেটে গেছে।

আরো পড়ুন:

পুঁজিবাজারে সূচকের পতন

কারণ ছাড়াই বাড়ছে বিকন ফার্মার শেয়ার দর

বুধবার (২৭ আগস্ট) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ রাইজিংবিডি ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ব্রোকারেজ হাউজগুলোর নাম হলো- মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেড, মীর সিকিউরিটিজ লিমিটেড, কলম্বিয়া শেয়ারস অ্যান্ড সিকিউরিটিজ লিমিটেড, উইংসফিন লিমিটেড, ফারিহা সিকিউরিটিজ লিমিটেড, অ্যাসুরেন্ট সিকিউরিটিজ অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড, ম্যাট্রিক্স সিকিউরিটিজ লিমিটেড এবং তাসিয়া সিকিউরিটিজ লিমিটেড।

এর আগে, গত ২৫ আগস্ট ‘নিট সম্পদে ঘাটতি: সাকিবের প্রতিষ্ঠানসহ ৮ ব্রোকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে রাইজিংবিডি ডটকম।

তথ্য মতে, সাম্প্রতিক সময়ে ডিএসইর প্রাথমিক অনুসন্ধানে পুঁজিবাজারের সদস্যভুক্ত আটটি ব্রোকারেজ হাউজ বা ট্রেকহোল্ডারের নিট সম্পদের ঘাটতি পাওয়া যায়। বিএসইসির বিধান অনুযায়ী, ব্রোকারেজ হাউজের নিট সম্পদ তাদের পরিশোধিত মূলধনের ৭৫ শতাংশের বেশি রাখতে হবে। ব্রোকারেজ হাউজগুলো এ শর্ত পরিপালন না করার পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা চেয়ে বিএসইসিকে অনুরোধ জানায়।

ওই অনুরোধের ভিত্তিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির তদন্তেও ব্রোকারেজ হাউজগুলোর নিট সম্পদের ঘাটতির প্রমাণ পাওয়া যায়। তাই গত ১১ আগস্ট ব্রোকারেজ হাউজগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ডিএসইকে নির্দেশ দেয় বিএসইসি।

বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের একাধিক চিঠির অনুরোধের ভিত্তিতে কমিশন আটটি ট্রেকহোল্ডার কোম্পানির বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। তদন্তে ওই ট্রেকহোল্ডার ট্রেকহোল্ডার কোম্পানির নিট সম্পদে ঘাটতি পেয়েছে কমিশন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট) বিধিমালা, ২০২০-এর বিধি ৭(৪) অনুসারে, ডিএসইকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো। সেই সঙ্গে তদন্ত প্রতিবেদনের একটি অনুলিপি ডিএসইকে প্রেরণ করা হলো।

বিএসইসির ওই নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রোকারেজ হাউজগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ডিএসই। প্রতিষ্ঠানগুলোকে দ্রুত বিএসইসির বিধান অনুযায়ী, নিট সম্পদের ঘাটতি পূরণ করার জন্য তাগিদ দেয় প্রাইমারি এ রেগুলেটর।

এরই ধরাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) কলম্বিয়া শেয়ারস অ্যান্ড সিকিউরিটিজ লিমিটেড কর্তৃপক্ষ তাদের নিট সম্পদের ঘাটতি পূরণের তথ্য প্রমাণ স্বরূপ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন ডিএসইতে দাখিল করে। এছাড়া ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের প্রতিষ্ঠান মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেড কর্তৃপক্ষ তাদের নিট সম্পদের ঘাটতি পূরণের তথ্য প্রমাণ স্বরূপ অনিরীক্ষিত আর্থিক হিসাব দাখিল করেছে। তবে শিগগিরই তারা নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন ডিএসইতে দাখিল করবে বলে আশ্বস্ত করেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মীর সিকিউরিটিজ লিমিটেডের হেড অব বিজনেস অপারেশন মো.

মোস্তাফিজুর রহমান রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “ব্রোকারেজ হাউজের নিট সম্পদ পরিশোধিত মূলধনের ৭৫ শতাংশের বেশি রাখতে হবে- এ বিষয়টা আমরা খেয়াল করিনি। তবে যখনই ডিএসইর নির্দেশনা পেয়েছি, সঙ্গে সঙ্গে আমরা শেয়ার মানি ডিপোজিট করে নিট সম্পদের যে ঘাটতি ছিল, তা পূরণ করেছি।”

এদিকে মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সাদিয়া হাসানের সঙ্গে একাধিকার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

জানা গেছে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট) রুলস ২০২০ এর রুল ৩(গ) অনুযায়ী, যে কোনো ব্রোকারেজ হাউজের নিট সম্পদ মূল্য পরিশোধিত মূলধনের ৭৫ শতাংশের বেশি থাকতে হবে। এটি সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী ব্রোকারেজ লাইসেন্স পেতে বা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদ্যমান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। এই বিধানটি যেসব ব্রোকারেজ হাউজ পরিপালন করে তারা আর্থিক দিক থেকে শক্তিশালী এবং বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দিতে সক্ষম।

এছাড়া ব্রোকারেজ হাউজগুলোর আর্থিক স্বচ্ছলতা নিশ্চিত করতে নিট সম্পদ পরিশোধিত মূলধনের ৭৫ শতাংশের বেশি রাখা নিশ্চিত করা হয়, যা ব্রোকারেজ হাউজগুরোকে আর্থিকভাবে যথেষ্ট শক্তিশালী করে। আর বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে এটি একটি শক্তিশালী আর্থিক ভিত্তি। একইসঙ্গে ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে তাদের কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করতে এবং বিনিয়োগকারীদের অর্থ সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। এ শর্ত পরিপালন করতে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (ট্রেডিং রাইট এনটাইটেলমেন্ট সার্টিফিকেট) রুলস ২০২০ এর রুল ৭(২) এর অধীনে ট্রেক সনদ বাতিল করার বিধান রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুর রহমান রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আটটি ব্রোকারেজ হাউজ ইতিমধ্যে তাদের নিট সম্পদের ঘাটতি পূরণ করেছে। তবে এর মধ্যে সাতটি প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে নিট সম্পদের ঘাটতি পূরণের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। তবে একটি প্রতিষ্ঠান নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন এ মুহূর্তে দাখিল করতে পারেনি।”

তিনি বলেন, “প্রতিষ্ঠানটি তাদের অনিরীক্ষিত আর্থিক হিসাব দাখিলের মাধ্যমে নিট সম্পদের ঘাটতি পূরণের বিষয়টি নিশ্চিত রয়েছে। আর আগামী সপ্তাহের মধ্যে তারা নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন ডিএসইতে দাখিল করবে। সে হিসেবে সবগুলো ব্রোকারেজ হাউজই তাদের নিট সম্পদের ঘাটতি পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে।”

বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “ডিএসইর অনুরোধে বিএসইসির তদন্তে আটটি ব্রোকারেজ হাউজের নিট সম্পদের ঘাটতি পাওয়া যায়। তাই ডিএসইকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই ধরাবাহিকতায় ডিএসই ব্রোকারেজ হাউজগুলোর নিট সম্পদের ঘাটতি পূরণের তাগিদ দিয়েছে। ফলে ব্রোকারেজ হাউজগুলো তাদের নিট সম্পদের ঘাটতি পূরণে সক্ষম হয়েছে।”

ঢাকা/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব র ক র জ হ উজগ ল র র পর প র ক ষ ত ব এসইস র দ খ ল কর ব যবস থ ড এসইক র জন য অন য য় অন র ধ আগস ট তদন ত ড এসই

এছাড়াও পড়ুন:

৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ

‎পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

আরো পড়ুন:

সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা

পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা

‎গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‎বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

‎সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি। 

এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

‎ঢাকা/এনটি/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
  • সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা
  • ২২ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ দেবে বিএসইসি
  • পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা
  • বিএসইসির তদন্তের মুখে ভ্যানগার্ড ও ক্যাপিটেক অ্যাসেট
  • দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে পুঁজিবাজার ও বন্ডকে ব্যবহারের প্রস্তাব
  • ৫ কোম্পানির শেয়ার কারসাজি: ৩ জনকে দেড় কোটি টাকা অর্থদণ্ড