৯ মে ভাইয়ের সাথে নূরুল আমিনের শেষ কথা হয়েছিল। ফোনালাপটি ছিল সংক্ষিপ্ত, কিন্তু খবরটি ছিল ভয়াবহ।

আমিন জানতে পারেন তার ভাই কাইরুল এবং আরো চারজন আত্মীয় ৪০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীর মধ্যে রয়েছেন। তাদেরকে ভারত সরকার মিয়ানমারে নির্বাসিত করেছে, যে দেশটি থেকে তারা বহু বছর আগে ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিল।

আমিনের তার পরিবারের সদস্যদের আবার কখনো দেখতে পাবেন সেই সম্ভাবনা খুবই কম।

২৪ বছর বয়সী আমিন দিল্লিতে বিবিসিকে বলেন, “আমার বাবা-মা এবং অন্য যাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তারা যে যন্ত্রণার মুখোমুখি হচ্ছে তা আমি সহ্য করতে পারছি না।”

ভারতের রাজধানী থেকে সেই ৪০ জন রোহিঙ্গাকে সরিয়ে দেওয়ার তিন মাস পর, বিবিসি মিয়ানমারের শরণার্থীদের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়। বেশিরভাগই বা-হতু আর্মি (বিএইচএ) এর সাথে অবস্থান করছে, যেটি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে সেনাবাহিনীর সাথে লড়াই করছে।

একজন বিএইচএ সদস্যের ফোন থেকে করা ভিডিও কলে রোহিঙ্গা সৈয়েদ নূর বলেন, “আমরা মিয়ানমারে নিরাপদ বোধ করছি না। এই জায়গাটি সম্পূর্ণ যুদ্ধক্ষেত্র।”

বিবিসি শরণার্থীদের কাছ থেকে সাক্ষ্য এবং দিল্লিতে আত্মীয়স্বজনের বিবরণ সংগ্রহ করেছে এবং তাদের সাথে কী ঘটেছে তা একত্রিত করার জন্য অভিযোগ তদন্তকারী বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলেছে।

বিবিসি জানতে পেরেছে, ওই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দিল্লি থেকে বঙ্গোপসাগরের একটি দ্বীপে উড়িয়ে নেওয়া হয়েছিল, একটি নৌযানে চড়ানো হয়েছিল এবং অবশেষে লাইফ জ্যাকেট পরিয়ে আন্দামান সাগরে জোর করে পাঠানো হয়েছিল। এরপর তারা তীরে পৌঁছায় এবং এখন মিয়ানমারে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি।

দলের একজন পুরুষ জন স্থলে পৌঁছানোর পরপরই তার ভাইকে ফোনে বলেছিলেন, “তারা আমাদের হাত বেঁধেছিল, আমাদের মুখ ঢেকেছিল এবং আমাদের (নৌকায়) বন্দিদের মতো করে নিয়ে এসেছিল। তারপর তারা আমাদের সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলেছিল।”

নূরুল আমিন বিবিসির সাংবাদিককে প্রশ্ন করেন-“কেউ কীভাবে মানুষকে সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলতে পারে? পৃথিবীতে মানবতা বেঁচে আছে কিন্তু ভারত সরকারের মধ্যে আমি কোনো মানবতা দেখিনি।”

জাতিসংঘের মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক বিশেষ দূত থমাস অ্যান্ড্রুজ জানিয়েছেন, এই অভিযোগগুলোর ব্যাপারে ‘উল্লেখযোগ্য প্রমাণ’ রয়েছে। তিনি জেনেভায় ভারতের মিশন প্রধানের কাছে এগুলো উপস্থাপন করেছেন কিন্তু এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া পাননি।

বিবিসি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথেও বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করেছে কিন্তু তাদের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

ভারতে ২৩ হাজার ৮০০ রোহিঙ্গা শরণার্থী জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এ নিবন্ধিত রয়েছে। কিন্তু হিউম্যান রাইটস ওয়াচের অনুমান, প্রকৃত সংখ্যা ৪০ হাজারেরও বেশি। ভারতে রোহিঙ্গাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ভারত রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না বরং দেশটির বিদেশী আইনের অধীনে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

ঢাকা/শাহেদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শরণ র থ আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে