পানির নিচে জমি, হাওরের কৃষকদের মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ
Published: 8th, September 2025 GMT
মৌলভীবাজারের কাউয়াদিঘি হাওরপাড়ে পানির নিচে তলিয়ে শত শত হেক্টর জমি। ধান রোপণের মৌসুম পেরিয়ে গেলেও জলাবদ্ধতার কারণে কৃষকেরা মাঠে নামতে পারছেন না। এতে নষ্ট হচ্ছে চারা, দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে হাওরপারের হাজারো কৃষকের।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ পানি সেচ দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড পানি সেচ দিচ্ছে না। যে কারণে চাষের সময় পার হলেও আমরা চাষ করতে পারছি না।
কৃষি বিভাগ বলছে, বন্যার ব্যাপকতা কমে যাওয়ায় বিগত কয়েক বছর ধরে হাওরের ওপরের দিকে আমন চাষ হয়ে আসছে। তবে আমাদের নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনে এর কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। অতিরিক্ত আমন আবাদ কৃষকের জন্য লাভজনক। গভীর হাওরে পানির লেভেল ৭ থেকে সাড়ে ৭ মিটার পর্যন্ত থাকলে ৮০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ সম্ভব হতো।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তপক্ষ জানিয়েছে, হাওরের জীববৈচিত্র ও মৎস সম্পদ রক্ষার জন্য গভীর হাওরে কমপক্ষে ১২ মিটার পানি জমাট থাকার প্রয়োজন। চলতি মৌসুমের শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে অতিবৃষ্টি হওয়ায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
ভুক্তভোগি কৃষকরা জানান, মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলায় অবস্থিত আমন উৎপাদনের অন্যতম উৎস কাউয়াদিঘি হাওর। চলতি মৌসুমে নিম্নাঞ্চল থেকে পানি মানছে ধীরে। এতে ৮০০ হেক্টর জমিতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ধান লাগানোর সঠিক সময়ও পার হয়ে যাচ্ছে। কৃষকের লাগানো হালিচারা নষ্ট হচ্ছে। এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন হাওর পারের কৃষকরা।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকালে কানিকিয়ারি গ্রামের মনফর মিয়া রাইজিংবিডিকে বলেন, “বন্যার দাপট কমে যাওয়ায় বিগত তিন বছর ধরে হাওরের ওপরের অংশে আমরা আমন চাষ করে আসছি। আমার ১৫ বিঘা জমি পানির নিচে রয়েছে। একদিকে চাষের সময় চলে যাচ্ছে। আবার নষ্ট হচ্ছে হালি চারা। আমরা খেতের আয়োজন করে বিপাকে পড়েছি।”
রাজনগর উপজেলার পাঁচগাও ইউনয়নের পশ্চিমভাগ গ্রামের প্রান্তিক চাষী আব্দুল আহাদ বলেন, “আমার ৩ বিঘা জমিতে এখনো হাঁটু সমান পানি। চারা লাগানোর সময় চলে যাচ্ছে। পানি না নামলে চলতি মৌসুমে জমি পতিত থাকবে। বোরো ধানের পাশাপাশি আমন চাষ হলে আমরা স্বল্প আয়ের মানুষ ভালোভাবে দিন পার করতে পারতাম। এবারের দীর্ঘ জলাবদ্ধতায় আমাদের মুখের হাসি কেড়ে নিল।
সদর উপজেলার দিশালোক গ্রামের জয়নাল মিয়া বলেন, “হাওর পারের মানুষের চাষযোগ্য একমাত্র ফসল বোরো। খালবিল দখলে নদী-নালায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। পানি প্রবাহের স্বাভাবিক গতি বদলে গেছে। এতে ভরাট হয়ে গেছে হাওরের নিম্নাঞ্চল। তাই বোরোর পাশাপাশি আমন চাষের সুযোগ সৃষ্টি হয়। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বছর কয়েক ধরে শুরু হয় আমন চাষ। কিন্তু চলতি বছর মৌসুমের শেষ সময়ের বৃষ্টিপাত আমন চাষের জন্য প্রতিকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।”
স্থানীয় কৃষক ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজারের রাজনগর ও সদর উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন নিয়ে ২২ হাজার ৫৮০ হেক্টর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত হাওর কাউয়াদিঘি। পাশাপাশি রয়েছে ৪৮টি ছোট বড় বিল। বোরো চাষের পাশাপাশি দেশী প্রজাতির মাছের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল এই হাওর। এদিকে অকাল বৃষ্টি আর আকস্মিক বন্যার হাত থেকে ফসল নিরাপদে তোলার লক্ষে ১৯৭৫-৭৬ অর্থ বছরে বাংলাদেশ ও কুয়েত সরকারের যৌথ অর্থায়নে মনু প্রকল্পের আওতায় নেওয়া হয় হাওর কাউয়াদিঘি। ১৯৮২-৮৩ সালের অর্থবছরে শত কোটি টাকা ব্যয়ে স্থানীয় কাশিমপুরে অত্যাধুনিক ৮টি পাম্পের সমন্বয়ে নির্মাণ করা হয় পাম্প হাউস। পাম্পের সাহয্য বোরো ধান কাটার সময় অতিরিক্ত জমে যাওয়া পানি সেচ দিয়ে কুশিয়ারা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। এসময় কৃষকরা নিরাপদে বোরো ফসল ঘরে তোলতে পারেন।
অপরদিকে, মনু নদীতে আরেকটি প্রকল্প মনু ব্যরেজ বা সুইচগেইট স্থাপন করা হয়। এর সাথে খাল খনন করে মনুর পানি জমা করে শুকনা মৌসুমে কৃষি জমিতে বোরো চাষ শুরু হয়।
কৃষকরা জানান, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বড়বাড়ি, দিশালোক, বিরইমাবাদ, জুমাপুর, জগৎপুর, বানিশ্রী, রাজনগর উপজেলার পাচঁগাও ইউনিয়নের রক্তা আমিরপুর, অন্তেহরি.
রাজনগর উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল আমিন বলেন, “জলাবদ্ধতার কারনে হাওর কাউয়াদিঘিতে আমাদের আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রার বাইরে প্রায় ২৩০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হবে না।”
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. জালালউদ্দিন বলেন, “হাওরে বোরো ফসল উৎপাদন বেশি হয়ে থাকে। সম্প্রতি বোরোর পাশাপাশি হাওর প্রকৃতির পরিবর্তনে ৮০০ থেকে ১০০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়ে আসছে। চলতি মৌসুমে জলাবদ্ধতার কারণে এর ব্যত্যয় ঘটার শঙ্কা রয়েছে।”
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ বিন ওয়ালিদ বলেন, “কাউয়াদিঘি হাওরের প্রাণ প্রকৃতি জীববৈচিত্র জলজ উদ্ভিদ রক্ষার জন্য গভীর হাওরে কম পক্ষে ১২ মিটার পানি থাকার প্রয়োজন। আমরা এই লেভেলের নিচে আসতে পারবো না। চলতি মৌসুমে শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে রের্কড পরিমাণ বৃষ্টি হওয়ায় হাওরের ওপরের দিকে জলাবদ্ধতা রয়েছে। নিয়মিত পানি সেচ দেওয়া হচ্ছে।”
ঢাকা/আব্দুল আজিজ/ইভা
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জনগর উপজ ল উপজ ল র আমন চ ষ র জন য হ ওর র র সময় ক ষকর
এছাড়াও পড়ুন:
শেফালি আর দীপ্তিতে নতুন মুম্বাইয়ে নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত
নাবি মুম্বাই। নয়া মুম্বাই। নতুন সেই মুম্বাইয়ে কাল নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পেল মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত।
দীপ্তি শর্মার করা ৪৬তম ওভারের তৃতীয় বলে নাদিন ডি ক্লার্কের তোলা ক্যাচটি এক্সট্রা কাভারে ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌরের হাতে জমা হতেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের আনন্দে মাতল পুরো ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকা ২৪৬ রানে অলআউট, ভারত ৫২ রানে জয়ী।
ভারতের জয়ের উৎসব অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছিল পাঁচ ওভার আগেই। লরা ভলভার্টকে ফিরিয়ে পথের কাঁটা উপড়ে ফেলেই উদ্যাপন শুরু করেছিল ভারতীয়রা। অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করে দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক চোখ রাঙাছিলেন ভারতের উৎসব ভন্ডুল করার। কিন্তু সেঞ্চুরি করার পরপরই ক্যাচ তুললেন ভলভার্ট। আর সেই ক্যাচ নিতে গিয়ে আমানজোত কৌর ভারতের প্রায় শত কোটি মানুষের হৃৎস্পন্দন প্রায় থামিয়ে দিয়েছিলেন। একবার নয়, দুবার নয়, তৃতীয়বারের চেষ্টাতেই ক্যাচ নিতে পারেন আমানজোত। এবারও বোলার সেই অফ স্পিনার দীপ্তি শর্মা।
৯৮ বলে ১০১ রান করে ভলভার্ট যখন ফিরলেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ৪১.১ ওভারে ২২০/৭। এরপর শুধু আনুষ্ঠানিকতাই ছেড়েছে ভারত। দীপ্তি আরও ২টি উইকেট নিয়ে পেয়ে গেছেন ৫ উইকেট। আর ভারত হয়ে গেছে চ্যাম্পিয়ন। এর আগে ব্যাট হাতেও ৫৮ বলে ৫৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন দীপ্তি।
ব্যাট হাতে ৮৭ রান করা শেফালি বর্মা বল হাতে নিয়েছেন ২ উইকেট