ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ফ্যাসিবাদবিরোধী থেকে শুরু করে যেকোনো আন্দোলন সংগ্রামের পরিচিত মুখ আকাশ আলী। তিনি সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) ঢাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক।

ডাকসু নির্বাচনে তিনি বামপন্থি সাতটি ছাত্র সংগঠনের জোট প্রতিরোধ পর্ষদ প্যানেল থেকে মানবাধিকার ও আইনবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আগামীকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাইজিংবিডি ডটকমের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাইজিংবিডি ডটকমের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ই এম সৌরভ।

আরো পড়ুন:

ডাকসুর ভোট গণনা সরাসরি দেখা যাবে

প্রস্তুত ঢাবি ক্যাম্পাস, কাল ভোট  

রাইজিংবিডি: কী কারণে শিক্ষার্থীরা আপনাদের ভোট দেবেন বলে মনে করেন? 

আকাশ আলী: আমি এবং আমার সংগঠনের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে পরিপূর্ণ অংশগ্রহণ করেছে। ফলে ছাত্রলীগের যে সন্ত্রাস, দখলদারিত্ব- তা আমরা নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছি। সারা বাংলাদেশে যে ধরনের মব কালচার, মোরাল পুলিশিং, ক্যাম্পাসে যৌন নিপীড়ন এবং ক্যাম্পাসে তোফাজ্জল ও সাম্য হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আমরা দাঁড়িয়েছি। শিক্ষার্থীদের যে বিভিন্ন ধরনের সংকটগুলো আছে, তা নিয়ে আমরা কথা বলছি। এগুলো নিয়ে আমরা কাজ করার চেষ্টা করছি।

রাইজিংবিডি: আপনি আইন ও মানবাধিকারবিষয়ক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ সেক্টরে আপনার নির্দিষ্ট কোনো কাজের অভিজ্ঞতা আছে?

আকাশ আলী: আমরা বলছি যে, ক্যাম্পাসে যে ইজারা প্রথার মাধ্যমে ক্যান্টিনগুলো পরিচালিত হয়, তা বাতিল করে প্রশাসনের মাধ্যমে ক্যান্টিনগুলো পরিচালনা করতে হবে। প্রশাসন থেকে ভর্তুকি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে খাবারের মান ও দাম দুইটাই নিশ্চিত করা যায়। মেডিকেল সেন্টারটির যে মানহীনতা বা সংকট, সেটা দূর করা প্রয়োজন। সব ধরনের ওষুধ সরবরাহ করার সক্ষমতা আমাদের মেডিকেল সেন্টারের থাকা উচিত, তা নিয়ে আমরা শিক্ষার্থীদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছি এবং নির্বাচিত হলে প্রশাসনকে চাপ দিয়ে তা আদায় করে নেব।

ক্যাম্পাসে যে নারী হয়রানি বা যৌন হয়রানি আছে, তা নিয়ে আমি বিভিন্ন সময় আন্দোলন সংগ্রাম সংগঠিত করার চেষ্টা করেছি এবং মোরাল পুলিশিং বা এ ধরনের যে ঘটনাগুলো আছে তা নিয়ে আমি কাজ করার চেষ্টা করেছি। '৭৩ এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে যে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়, তা হয় মূলত রাষ্ট্রপতির সুপারিশে।

রাষ্ট্রপতির প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়া কোনো কিছু করতে পারে না। ফলে সেই প্রধানমন্ত্রী বা তার দলের লেজড়বৃত্তি করতে হয়, আজ্ঞাবহ থাকতে হয়, যা নিরপেক্ষ থাকার পক্ষে অন্তরায়। এজন্য আমাদের দাবি, ৭৩ এ অধ্যাদেশে যে অগণতান্ত্রিক ধারা আছে তা বাতিল করতে হবে। উপাচার্য নিয়োগ হবে একটা সার্চ কমিটির মাধ্যমে, যেখানে শিক্ষক, শিক্ষার্থীর প্রতিনিধি থাকবে।

রাইজিংবিডি: অন্যান্য প্যানেলের চেয়ে আপনার প্যানেলের ইশতেহারে ব্যতিক্রম কি আছে?

আকাশ আলী: আমরা বলেছি, ২৪ ঘণ্টা লাইব্রেরি খোলা রাখতে হবে। লাইব্রেরিতে প্রচণ্ড আসন সংকট। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ লাইন ধরে থাকতে হয় পড়ার জায়গার জন্য। এজন্য ২৪ ঘণ্টা লাইব্রেরি খোলা থাকলে এবং লাইব্রেরির আশপাশে বৃদ্ধি করা গেলে এ সংকটটা থাকবে না। ক্যাম্পাসে নারী হেনস্তার ঘটনা ঘটছে, এটা দূর করার জন্য যা যা প্রয়োজন তা আমাদের করতে হবে। আমারও সেই জায়গা থেকে দেখছি, মোরাল পুলিশিং যারা করছে, প্রশাসন তাদের শাস্তির আওতায় না নিয়ে এসে শিক্ষার্থীদের স্বাধীন চলাফেরাকে সংকুচিত করছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা করি এবং আমরা এ নিয়ে কাজ করব।

রাইজিংবিডি: ক্যাম্পাসে ডাকসু নির্বাচন সামনে রেখে সার্বিকভাবে আপনার প্যানেলের অর্জন কতটুকু?

আকাশ আলী: আমরা নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছি এবং ফিডব্যাক নিচ্ছি। আমরা বুঝতে পারছি, আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচনে আমাদের প্রতিরোধ পর্ষদ বিপুল সংখ্যক ভোটে নির্বাচিত হবে। এরপর আমরা আগের এবং বর্তমানে ক্যাম্পাসে যে সংকটগুলো আছে সেটা নিয়ে আমরা কাজ করব।

রাইজিংবিডি: আপনাদের প্যানেলের বেশ কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। আপনি নির্বাচিত হলে ক্যাম্পাসে মাদক নিয়ন্ত্রণে কী ধরনের ভূমিকা রাখবেন?

আকাশ আলী: আমি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি, আমার সংগঠন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নেতাকর্মীরা কোনো মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে না। আমরা রাজনীতির পাশাপাশি আমাদের নৈতিক বল ও আদর্শকে সমুন্নত রেখে আগাতে চাই। আমরা সবাই যে আমূল পরিবর্তন চাই, সে লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করি। আমরা বিশ্বাস করি, নৈতিক আদর্শ ও বল ছাড়া সে পরিবর্তন সম্ভব নয়। এজন্য আমরা নৈতিক চরিত্রকেই গুরুত্ব দেই।

অন্যান্য বাম সংগঠনগুলোকে নিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, তার বিষয়ে আমি নিশ্চিত না। এ বিষয়ে আমি এখনই মন্তব্য করতে পারছি না। আমি যেটা মনে করি, সেটা হলো মাদকদ্রব্য গ্রহণের বিষয়ে ক্যাম্পাসে আমার অবস্থান হবে জিরো টলারেন্স। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, সংস্কৃতি নৈতিকতার আলো।

রাইজিংবিডি: অন্য আন্দোলন-সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ থাকলেও ডাকসু নির্বাচনে বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলো তিনটি প্যানেলে বিভক্ত। এ অনৈক্যের কারণ কী? 

আকাশ আলী: মোটামুটি কিছুটা মিল থাকলেও সংগঠনগুলোর মধ্যে উদ্দেশ্য ও আদর্শগত দ্বিমত আছে, অমিল আছে এবং রাজনৈতিকভাবে তাদের মধ্যে অন্যরকম বোঝাপড়া আছে। ফলে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ধরনের বামপন্থি সংগঠনগুলোর মধ্যে ভাগ দেখতে পাচ্ছি। এখানে বিভিন্ন মত থাকবে, পথ থাকবে, বিভিন্ন দল বিভিন্নভাবে আগাবে।  

রাইজিংবিডি: যদি আপনি এবং শিবিরের প্যানেল থেকে কেউ নির্বাচিত হলে একসঙ্গে কিভাবে কাজ করবেন?

আকাশ আলী: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শিবিরের প্যানেলকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে এবং করবে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সংগঠন প্রত্যক্ষভাবে গণহত্যার সঙ্গে জড়িত, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই সংগঠনের সদস্যকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নির্বাচিত করবে না। কোনো কারণে যদি নির্বাচিত হয়েও যায় শিক্ষার্থীদের স্বার্থে, অধিকারের প্রশ্নে কাজ করতে আমাদের আপত্তি নেই, আমরা কাজ করে যাব।

ঢাকা/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর র চ ষ ট স গঠনগ ল র স গঠন স গঠন র চ ত কর আম দ র ক জ কর ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

অ্যাপে পরিচয়-প্রেম, বিয়ে করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এলেন চীনের যুবক

ভাষা, সংস্কৃতি ও হাজার মাইলের দূরত্বকে হার মানিয়েছে ভালোবাসা। ভালোবাসার টানে এক তরুণীকে বিয়ে করতে বাংলাদেশে এসেছেন চীনের এক যুবক। গত শুক্রবার রাতে চীন থেকে ঢাকায় পৌঁছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে এক তরুণীর বাসায় আসেন তিনি। আজ রোববার আদালতের মাধ্যমে তাঁরা বিয়ে সম্পন্ন করবেন।

চীনের যুবকের নাম ওয়াং তাও (৩৬)। চীনের হোয়ানান প্রদেশের ওয়াং ইচাং চাওয়ের ছেলে তিনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার কুন্ডা ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামের তাহের মিয়ার মেয়ে সুরমা আক্তারের (২২) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক আছে তাঁর। সুরমা একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন এবং ঢাকার লালবাগে থাকেন। আজ রোববার তাঁরা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন বলে তরুণীর পরিবার জানিয়েছে।

জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার রাতে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পৌঁছান চীনের যুবক ওয়াং তাও। বিমানবন্দর থেকে চীনের যুবককে আতিথেয়তা দিয়ে নিজ বাড়ি নাসিরনগরের কুন্ডার কোনাপাড়ায় নিয়ে আসেন তরুণী সুরমাসহ তাঁর পরিবারের লোকজন।

স্থানীয় লোকজন, পুলিশ ও তরুণীর পরিবারের দাবি, দেড় থেকে দুই মাস আগে ডেটিং এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ওয়ার্ল্ড টক’ নামের একটি অ্যাপের মাধ্যমে ওয়াং তাওয়ের সঙ্গে সুরমার পরিচয় হয়। তাঁরা নিয়মিত চ্যাটে যোগাযোগ রাখতে শুরু করেন। তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব থেকে সম্পর্ক গড়ায় প্রেমে। বিষয়টি চীনের যুবক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তরুণী নিজ নিজ পরিবারকে জানান। উভয় পরিবারের সম্মতিতে তাঁরা একে অপরকে বিয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। পরে চীনের যুবক বাংলাদেশ ও চীনের দূতাবাসের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসেন। ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে দুপুরের পর থেকে চীনের যুবককে দেখার জন্য সুরমার বাড়িতে ভিড় করেন স্থানীয় লোকজন।

সুরমা স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, ‘ওয়ার্ল্ড টক’ অ্যাপের মাধ্যমে চীনের যুবক ওয়াং তাওয়ের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। বন্ধুত্ব থেকে সম্পর্ক প্রেমে গড়ায়। ট্রান্সলেটরের মাধ্যমে তাঁরা একে অপরের সঙ্গে চ্যাট করতেন। একপর্যায়ে তাঁরা পরিবারের সম্মতিতে বিয়ের সিদ্ধান্তে পৌঁছান।

সুরমার মা নুরেনা বলেন, ‘আমার মেয়ের ভালোবাসা পেতে চীন থেকে যুবক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে চলে এসেছে। ওই যুবক কোনো ধর্মই বিশ্বাস করে না। মেয়েকে বিয়ে করতে প্রয়োজনে সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে রাজি হয়েছে। আগামীকাল (আজ) রোববার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে মুসলিম রীতি মেনে সুরমাকে বিয়ে করবে চীনের যুবক। এতে দুই পরিবারের সম্মতি আছে। আমরা এই বিয়েতে আনন্দিত। মেয়ের খুশিই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’

নাসিরনগর থানার কুন্ডা বিট উপপরিদর্শক (এসআই) জাহান-ই-আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি জানতে পেরে কুন্ডা গ্রামে যাই। পাসপোর্ট দেখে নিশ্চিত হলাম যে যুবক চীনের নাগরিক। ওই তরুণী ঢাকার লালবাগে থাকেন। ‘ওয়ার্ল্ড টক’ নামের একটি অ্যাপসের মাধ্যমে তাঁদের পরিচয়। একপর্যায়ে তাঁরা প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। চীনের যুবক ইংরেজি বোঝেন না। তাই কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাঁরা একে অপরের সঙ্গে ট্রান্সলেটরের মাধ্যমে কথা বলতেন। তরুণী ও তাঁর পরিবার জানিয়েছে, রোববার হলফনামার মাধ্যমে চীনের যুবক মুসলিম হবেন। তারপর তাঁরা বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবেন।’ তরুণীর বরাত দিয়ে তিনি আরও জানান, চীনের যুবক এক থেকে দেড় মাস থাকবেন। যাওয়ার সময় হয় ওই তরুণীকে সঙ্গে নিয়ে যাবেন বা পরে নিয়ে যাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ