মানিকগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী হাজল মেলা
Published: 8th, September 2025 GMT
গ্রামীণ জীবনের সঙ্গী ছিল দেশি মুরগি পালন। উঠোনে হাঁস-মুরগি দৌড়ে বেড়াত, ডিম ফুটিয়ে নতুন বাচ্চা তোলার দৃশ্য ছিল প্রতিটি গ্রামের সাধারণ চিত্র। আর এ প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম ছিল হাজল বা এঁটেল মাটির তৈরি বিশেষ পাত্র। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যেতে বসা এই ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে মানিকগঞ্জের কৃষাণীরা আয়োজন করলেন হাজল মেলা।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সদর উপজেলার পুটাইল ইউনিয়নের মান্তা মধ্যেপাড়া গ্রামে বারসিকের উদ্যোগে দিনব্যাপী এই মেলা বসে। দুই শতাধিক কৃষক-কৃষাণীর অংশগ্রহণে হাজল ও পরিবেশবান্ধব চুলা প্রদর্শনী পরিণত হয় গ্রামের এক ব্যতিক্রমী উৎসবে।
মেলায় হাজল তৈরির হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেন আদর্শ কৃষাণী রেনু বেগম। তিনি বলেন, “হাজল ব্যবহারে শতভাগ ডিম ফুটানো সম্ভব হয়। মুরগিকে বাইরে খাবার খুঁজতে যেতে হয় না। ফলে ডিমও নষ্ট হয় না, বাচ্চাও ভালোভাবে বেড়ে ওঠে।”
উপস্থিত নারীরা জানান, তারা আবারো বাড়িতে হাজল তৈরির উদ্যোগ নেবেন। এতে শুধু পরিবারে দেশি মুরগি সংরক্ষণই নয়, বাড়তি আয়েরও সুযোগ তৈরি হবে।
মেলায় অংশ নেওয়া কৃষাণীরা বলেন, হাজল শুধু একটি পাত্র নয়, বরং গ্রামীণ সংস্কৃতির টুকরো ইতিহাস। তাদের দাদী-নানীরা হাজল ব্যবহার করতেন। আজ আবার সেই পুরোনো দিন ফিরে আসছে। এতে শুধু ঐতিহ্য রক্ষা নয়, তাদের সংসারেও সুবিধা হবে।
হাজলের পাশাপাশি প্রদর্শিত হয় নানা ধরনের পরিবেশবান্ধব চুলা। কৃষাণীরা ছাবনা চুলা, পদ্ম চুলা, তিন তালা চুলা, তিন ঝিক চুলা, বন্ধু চুলা, ঝিকছাড়া চুলা ও খেলনা চুলা নিয়ে এসেছিলেন। এসব চুলা শুধু ধোঁয়া কমায় না, জ্বালানি সাশ্রয় করে এবং চোখের ক্ষতি কমায়।
মেলার আলোচনায় বক্তব্য দেন মান্তা নারী সংগঠনের সভাপতি রেনু বেগম, সহ-সভাপতি বিউটি আক্তার, বারসিকের কর্মকর্তা সুবীর কুমার সরকার, শ্যাময়েল হাসদা ও আলপনা রানী সরকার।
আলপনা রানী বলেন, “হাজল ও পরিবেশবান্ধব চুলা শুধু ঐতিহ্যের পুনর্জাগরণ নয়, এটি গ্রামীণ জীবনের টেকসই উন্নয়নের হাতিয়ার। আজ আধুনিক ইনকিউবেটর হাজলকে অনেকটা আড়ালে সরিয়ে দিলেও, এই ঐতিহ্য আবারো ফিরে আসছে নারীদের হাত ধরে। হাজল মেলা যেন গ্রামীণ জীবনের হারানো ইতিহাসকে আবারো জীবন্ত করে তুলল।”
বিউটি আক্তার বলেন, “গ্রামীণ সমাজে হাজল শুধু ডিম ফোটানোর পাত্রই নয়, বরং এটি ছিল নারীর সৃজনশীলতার পরিচয়। অনেক গ্রামে প্রবাদ ছিল- ‘হাজল আছে ঘরে, অভাব যাবে দূরে।’ কারণ হাজল থাকলে দেশি মুরগির বংশবিস্তার হত সহজে, যা পরিবারে বাড়তি খাদ্য ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দিত।”
ঢাকা/জাহিদুল/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনের দিন অমোচনীয় কালি সরবরাহ না হলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে: ছাত্রদল
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনে অমোচনীয় কালি সরবরাহ না করলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতারা। এ ছাড়া এমফিল কোর্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা না দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ছাত্রদলকে ভোট প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তাঁরা।
রোববার উপাচার্যের সভাকক্ষে রাজনৈতিক ও সক্রিয় সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত জকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫–এর আচরণবিধিবিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় ছাত্রদলের নেতারা এমন মন্তব্য করেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ‘নির্বাচনে যদি কোনো ধরনের অনিয়মের ঘটনা ঘটে, তাহলে আমরা একচুল ছাড় দেব না। আমি প্রতিজ্ঞা করছি, যদি কোনো ধরনের অনিয়ম হয়— কোনো ছাড় হবে না। নির্বাচনের সময় অমোচনীয় কালি ব্যবহার করতে হবে। যদি নির্বাচন কমিশন অমোচনীয় কালি ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে।’
ভোটের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ‘ম্যানুয়ালি’ ভোট গণনার দাবি জানিয়ে শামসুল আরেফিন বলেন, ‘কত ব্যালট ছাপানো হলো, কত ভোট গণনা হলো, কত ব্যালট নষ্ট হলো—এসব তথ্য স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রকাশ করতে হবে। কারণ, আমরা ডাকসুতে ব্যালট কেলেঙ্কারির অভিযোগ সম্পর্কে জানি।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ বিধিমালায় এমফিল শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা না দিয়ে ছাত্রদলকে ‘মাইনাস’ করার একটি মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘জকসু গঠন ও পরিচালনা বিধিমালায় বলা হয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর নিয়মিত শিক্ষার্থী ভোটার কিংবা প্রার্থী ছাড়া কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। অন্যদিকে এমফিল শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থীর যোগ্যতা না দিয়ে আমাদের মাইনাস করা ছিল মাস্টারপ্ল্যান—আর সেই মাস্টারপ্ল্যান সফল হয়েছে।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা হাসানের সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য রেজাউল করিম, প্রক্টর, সিন্ডিকেটের সদস্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ ও হল শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এর নির্বাচন কমিশনার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।