ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং, লেজুড়বৃত্তি ও স্বজনপ্রীতির প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থিতার ঘোষণা দেন শাখা ছাত্রদল নেত্রী সৈয়দা অনন্যা ফারিয়া।

এবার নির্বাচনের দুইদিন আগে তিনি নির্বাচন থেকেই সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।

আরো পড়ুন:

জাকসু নির্বাচনের ২ দিন আগে ডোপ টেস্ট নিয়ে যা বলছেন প্রার্থীরা

জাকসু নির্বাচন: চেম্বার আদালতে অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বাতিল

মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তিনি। 

জানা যায়, অনন্যা ফারিয়া জাবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। তিনি গত ২৮ আগস্ট ছাত্রদলের প্যানেলে অবমূল্যায়নের অভিযোগ এনে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে স্বতন্ত্র প্রার্থিতা ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে তাকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য বলা হলেও তিনি তা করেননি।

সংবাদ সম্মেলনে অনন্যা ফারিয়া বলেন, “সম্মিলিত ঐক্যের স্বার্থে আমি সতন্ত্র প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।”

এদিকে শাখা ছাত্রদল সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা, বিএনপির নেতৃবৃন্দ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি কয়েকজন শিক্ষক অনন্যাকে চাপ ও বিভিন্ন প্রলোভন দেখান। এছাড়া ছাত্রদলের জিএস পদে মনোনয়নপ্রাপ্ত তানজিলা হোসাইন বৈশাখীর ভোট বৃদ্ধি করার জন্য তাকে নির্বাচন থেকে সরে দিয়েছেন।

তবে অনন্যা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমি চাপের কাছে নতিস্বীকার করার মতো কোনো ব্যক্তি নয়। আমি আমার নৈতিকতার জায়গা থেকে যা ঠিক মনে হয়, সেটাই করেছি।”

মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে দেখা যায়, অনন্যা জাবি ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি এবং যুক্তরাজ্য বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পারভেজ মল্লিকের সঙ্গে সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌরঙ্গী মোড় সংলগ্ন অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গায় বসে কথা বলছেন। 

জিএস প্রার্থীতা থেকে অনন্যা ফারিয়ার সরে আসার পেছনে দলের পক্ষ থেকে পারভেজ মল্লিকের প্রলোভন কিংবা আশ্বাস রয়েছে বলে মনে করছেন অনেক প্রার্থী।

এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, “এ ধরনের কিছু আমার মনে পড়ছে না এবং এমন কিছু হয়নি।”

প্যানেল‌ ঘোষণার পর গত ২৮ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং, লেজুড়বৃত্তি ও স্বজনপ্রীতির কারণে জাবি শাখা ছাত্রদল শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে- এমন অভিযোগ তুলে জাকসু নির্বাচনে জিএস পদে স্বতন্ত্র প্রার্থিতার ঘোষণা দেন অনন্যা ফারিয়া।

সংবাদ সম্মেলনে অনন্যা ফারিয়ার দাবি করেন, শাখা ছাত্রদলের পক্ষ থেকে তাকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে মনোনয়ন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা রক্ষা করা হয়নি। এ কারণে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। 

এছাড়া একই দিনে তিনি এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, “জাহাঙ্গীরনগর ও জুলাইয়ের প্রতি দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে, সংঘবদ্ধ প্রতারণা ও দলকে জিম্মি করার বিরুদ্ধে আমি জিহাদ ঘোষণা করছি। তাই আসন্ন জাকসু নির্বাচনে জিএস পদে স্বতন্ত্র দাঁড়াচ্ছি।”

ঢাকা/আহসান/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল স বতন ত র প র র থ ত ব শ বব দ য ছ ত রদল র জ এস প অনন য

এছাড়াও পড়ুন:

নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা: দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে

লোহার ফটক ভাঙার শব্দে চারপাশ কেঁপে উঠল। বিক্ষুব্ধ লোকজন তখন দৌড়ে ঢুকে পড়লেন ভবনের ভেতরে। কয়েক ঘণ্টা আগেও যেসব প্রতিবন্ধক ছিল ক্ষমতার প্রতীক, মুহূর্তেই সেগুলো গুঁড়িয়ে দিল জনতার ঢল।

প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের করিডর ভরে গেল কাদামাখা পায়ে হাঁটার শব্দে। কেউ জানালার কাচ ভাঙলেন, কেউ আবার দামি চাদর আর জুতা নিয়ে গেলেন।

নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা যে বাড়ি এত দিন ছিল সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে, সেদিন কয়েক ঘণ্টার জন্য তাঁরাই তা দখলে নিলেন।

এ দৃশ্য নেপালের গত সপ্তাহের। আবার এটি শ্রীলঙ্কার ২০২২ সালের কিংবা বাংলাদেশের ২০২৪ সালেরও চিত্র।

এসব আন্দোলনের আসল শক্তি হলো তরুণদের স্বপ্ন দেখা—একটা ভালো রাজনীতি আর ভালো অর্থনীতির ভবিষ্যৎ কল্পনা করার ক্ষমতা। কিন্তু সেই কল্পনার সঙ্গে বাস্তব জীবনের বড় পার্থক্য তাঁরা বুঝতে পারছেন। স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তবের এ ফারাকই তাঁদের ক্ষোভ বাড়িয়ে দিয়েছে।পল স্ট্যানিল্যান্ড, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক

৩০ মিলিয়ন (৩ কোটি) মানুষের দেশ নেপাল, ভারত ও চীনের মাঝখানে অবস্থিত। সেখানকার সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ প্রথাগত নির্বাচনী গণতন্ত্রের চেনা ধারা ভেঙে দিয়েছে। আর দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশগুলোয় একের পর এক সরকার পতনে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণ প্রজন্ম বিশ্বকে নতুন এক প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন—দক্ষিণ এশিয়াই কি জেন–জি (জেনারেশন জেড) প্রজন্মের বিপ্লবের কেন্দ্রস্থল?

শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পল স্ট্যানিল্যান্ড আল–জাজিরাকে বলেন, ‘এটা সত্যিই চোখে পড়ার মতো। এখানে একধরনের নতুন অস্থির রাজনীতির জন্ম হচ্ছে।’

গত বৃহস্পতিবার প্রায় ১০ হাজার নেপালি তরুণ–তরুণী অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করেছেন। এ তরুণ–তরুণীদের অনেকে প্রবাসী। তবে কোনো নির্বাচনী ব্যালটে নয়, বার্তা আদান–প্রদানের মাধ্যম ডিসকর্ডে ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বাছাই করেছেন। এর আগে তিন দিনের দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিবিরোধী বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয় এবং সেনাসদস্য ও পুলিশের দমন–পীড়নে ৭০ জনের বেশি নিহত হন। এখন নেপাল সরকার ঘোষণা করেছে, আগামী মার্চে নতুন নির্বাচন হবে।

প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির জেন–জি প্রজন্মকে উপহাস করার কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁর পদত্যাগ দেখিয়ে দিয়েছে—দক্ষিণ এশিয়ার তরুণেরা বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আস্থাহীন হলে নিজেরাই ক্ষমতা হাতে তুলে নিচ্ছেন এবং নিজেদের নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী প্রশাসন কে হবে, তা–ও নির্ধারণ করছেন।

শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও নেপালের আন্দোলনের পেছনে প্রতিটির নিজস্ব ইতিহাস ও অনন্য প্রেক্ষাপট আছে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এর মধ্যে মিলও আছে—নতুন প্রজন্ম আর ভাঙা প্রতিশ্রুতি মেনে নিচ্ছে না।

স্ট্যানিল্যান্ড বলেন, এটি দক্ষিণ এশিয়ার জন্য নাটকীয় পরিবর্তন। এ অঞ্চল দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক আন্দোলনের সাক্ষী, তবে সরকার পতনের ঘটনা বিরল।

‘এ ধরনের আন্দোলন বিভিন্ন দেশে সংঘটিত সামরিক অভ্যুত্থান থেকে আলাদা। দক্ষিণ এশিয়ার সংকট বরাবরই অন্যভাবে সমাধান হয়েছে, এবার সেটা ভিন্নপথে যাচ্ছে’, বলেন স্ট্যানিল্যান্ড।

শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও নেপালের আন্দোলনের পেছনে প্রতিটির নিজস্ব ইতিহাস ও অনন্য প্রেক্ষাপট আছে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এর মধ্যে মিলও আছে—নতুন প্রজন্ম আর ভাঙা প্রতিশ্রুতি মেনে নিচ্ছে না।

এ ছাড়া দেশগুলোর আন্দোলন একে অন্যের কাছ থেকেও শিক্ষা নিচ্ছে।

তিন দেশের আন্দোলনের মূল কারণ এক—বৈষম্য আর দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক অভিজাত শ্রেণি। এ শ্রেণি তরুণ প্রজন্মের বাস্তব চাওয়া-পাওয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল।মীনাক্ষী গাঙ্গুলি, এইচআরডব্লিউর দক্ষিণ এশিয়ার উপপরিচালক কলম্বো থেকে ঢাকা হয়ে কাঠমান্ডু: আন্দোলনের পটভূমি

নেপালে সাম্প্রতিক জেন–জি আন্দোলনের সূত্রপাত সরকারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করার সিদ্ধান্ত থেকে। সরকার বলেছিল, প্ল্যাটফর্মগুলোর অপব্যবহার হচ্ছে এবং নিয়ম মেনে নিবন্ধন করছে না। তবে ক্ষোভের প্রকৃত কারণ অন্য—বৈষম্য, দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতি; তা–ও এমন একটি দেশে, যেখানে প্রবাসী নেপালিদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতির এক–তৃতীয়াংশ অবদান রাখছে।

হাজার হাজার কিশোর–কিশোরী স্কুলের ইউনিফর্ম পরেই রাস্তায় নেমে আসে। ৭০ জনের বেশি নিহত হয়, আহত হয় শত শত।

শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে প্রেসিডেনশিয়াল সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভকারীদের যাওয়া ঠেকাতে সড়ক অবরোধ করে পুলিশের বিশেষ টাস্কফোর্স

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা: দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে