উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কাপ্তাই হ্রদের পানি এখন সর্বোচ্চ বিপদসীমায় রয়েছে।

মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরেও কাপ্তাই হ্রদের পানি রেকর্ড করা হয় ১০৮.৮৮এমএসএল (মিনস সি লেভেল)। হ্রদের সর্বোচ্চ পানি ধারণক্ষমতা ১০৯ এমএসএল। গত কয়েক দশকের মধ্যে এবারই এই সর্বোচ্চ পরিমাণ পানি রেকর্ড করা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

রাঙামাটির ৪০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া সামগ্রী বিতরণ

রাঙামটিতে বিদ্যালয়ে হাতির তাণ্ডব, বন্ধ শ্রেণি কার্যক্রম

হ্রদের পানি সর্বোচ্চ বিপদসীমায় পৌঁছানোর কারণে কাপ্তাই হ্রদ তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে সড়ক, সেতু ও রাস্তাঘাট। দুর্ভোগে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ ও নিচু এলাকার বাসিন্দারা। 

কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে রাঙামাটি পৌরসভা এলাকার খিপ্যাপাড়া, লেমুছড়ি ও কিনারাম পাড়ার সেতু ডুবে জনদুর্ভোগ বেড়েছে। এছাড়া শহরের ঝুল্লিক্যাপাহাড়, ব্রাহ্মণটিলা, শান্তিনগর, বালুখালী, জীবতলীসহ অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

এদিকে, রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি, লংগদু, নানিয়ারচর, বরকল, জুরাছড়ি, কাপ্তাই ও বিলাইছড়ি উপজেলার নিচু এলাকা তলিয়ে গেছে। এতে অন্তত ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তবে সরকারিভাবে তালিকা প্রণয়ন চলছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

বাঘাইছড়ি উপজেলার আটটি ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচটি ইউনিয়নের অনেক গ্রাম ও ফসলের মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে রয়েছে- বঙ্গলতলী, মারিশ্যা, রূপকারী, খেদারমারা, বাঘাইছড়ি ও আমতলী ইউনিয়ন।

লংগদু উপজেলার হ্রদে পানি বেড়ে যাওয়ায় সেখানকার ঝরনাটিলা, ভাসাইন্যাদম ইউনিয়ন, বগাচতর ইউনিয়নের জালিয়াপাড়া, গুলশাখালী ইউনিয়নের সোনাগাঁওপাড়া, মাইনী ইউনিয়নের এফআইডিসি বড় কলোনি পানিতে তলিয়ে গেছে।

বিলাইছড়ি উপজেলা সদর, ধূপ্পারচড়, বহলতলী, বাঙালকাটা এলাকাসহ নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল কাপ্তাই হ্রদের পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া জেলার বরকল, জুরাছড়ি, নানিয়ারচর ও কাপ্তাই উপজেলার নিচু এলাকাও প্লাবিত হয়েছে।

লেমুছড়ি গ্রামের তপন ত্রিপুরা বলেন, “কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধির কারণে খিপ্যাপাড়া লেমুছড়ি ব্রিজটি পানিতে ডুবে যাওয়ায় সিএনজি অটোরিক্সা ও মোটরসাইকেল চলাচল করতে পারছে না। গ্রামের ৭০টি পরিবারের মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।”

ব্রাহ্মণটিলা এলাকার বাসিন্দা নুরুল হক বলেন, “গত দেড় মাস ধরে পানিতে কষ্ট পাচ্ছি। মাঝখানে কিছুদিন পানি কিছুটা কম থাকলেও এখন আবার বেড়ে গিয়ে পুরো এলাকাটায় ডুবে গেছে। কাপ্তাই বাঁধের গেট আরো বেশি খোলা রেখে হ্রদের পানি দ্রুত কমানো দরকার।”

রাঙামাটি সরকারি কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ও লেমুছড়ি বাসিন্দা পারমী চাকমা বলেন, “প্রতিদিন পানিতে ভিজে রাস্তা পার হয়ে কলেজে যেতে হয়।”

ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা ব্যাংকে কর্মরত মাসাচিং মারমা বলেন, “পানি বৃদ্ধির কারণে দুর্ভোগের শেষ নেই। সকাল ৮টার দিকে বড় মেয়েকে কোলে করে ব্রিজ পার করে দিয়েছি। ছোট মেয়েকেও সেভাবে ব্রিজ পার করে দিয়েছি। পানি বাড়লে ব্রিজটা ডুবে যায়। ব্রিজটা পুনরায় নির্মাণ না করলে দুর্ভোগ দূর হবে না।”

এ বিষয়ে রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রুহুল আমিন বলেন, “কী পরিমাণ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন, তার তালিকা সংশ্লিষ্ট ইউএনও অফিস করছেন। শীঘ্রই আমরা সেই তালিকা পেয়ে যাব। দুর্গত মানুষের পাশে সবসময় রয়েছে প্রশাসন। দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতার জন্য প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে এবং পর্যাপ্ত খাদ্যশস্যও মজুদ রয়েছে।”

এদিকে, কাপ্তাই হ্রদের পানি বিপদসীমার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছালে সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর থেকে কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি গেট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি কাপ্তাই হ্রদ থেকে কর্ণফুলীতে নিষ্কাশিত হচ্ছে।

এরপরও হ্রদের পানি না কমায় মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭টায় গেট ৬ ইঞ্চি থেকে বাড়িয়ে ১ ফুট উচ্চতায় খুলে রাখা হয়েছে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ১৮ হাজার কিউসেক পানি নিষ্কাশন হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিট চালু রেখে আরো ৩২ হাজার কিউসেক পানি নিষ্কাশন হচ্ছে নদীতে।

কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মাহমুদ হাসান বলেন, “যে পরিমাণ পানি ছাড়া হচ্ছে তাতে জনসাধারণের আতঙ্ক হওয়ার প্রয়োজন নেই। আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বলতে পারি ৩ ফুট পর্যন্ত গেট খুললে বন্যার আশঙ্কা নেই। তবে এর বেশি হলে বন্যার আশঙ্কা থাকে। আমাদের লক্ষ্য থাকবে যেন ৩ ফুটের বেশি যাতে খুলতে না হয়।”

তিনি বলেন, “বর্তমানে হ্রদের ইনফ্লো ও বৃষ্টিপাত পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ইনফ্লো বেশি হলে অর্থাৎ পানির লেভেল অপ্রত্যাশিতভাবে বৃদ্ধি পেলে স্পিলওয়ের (জলকপাট) গেট খোলার পরিমাণ পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি করা হবে।”

ঢাকা/শংকর/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প ন বন দ উপজ ল র ব পদস ম এল ক র পর ম ণ

এছাড়াও পড়ুন:

উত্তর বাড্ডায় বদ্ধ ঘরে মিলল নারী-পুরুষের মরদেহ

রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় একটি বাড়ি থেকে সাইফুল (৩০) ও শাকিলা (২৮) নামে দুই জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

রবিবার (২ নভেম্বর) সকাল ১১টার দিকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে আইনি পক্রিয়া শেষে মরদেহ দুটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে।

আরো পড়ুন:

নিখোঁজের ১২ দিন পর কৃষকের গলিত মরদেহ উদ্ধার

সিলেটে নিজ বাসার ছাদে আ.লীগ নেতার লাশ 

বাড্ডা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাবিবুর রহমান জানান, সকাল ১১টার দিকে সংবাদ পেয়ে উত্তর বাড্ডা পূর্বাঞ্চল-২ নম্বর লেনের ওই বাড়িতে যায় পুলিশ। এ সময় তৃতীয় তলায় বাসাটির দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করা ছিল। দরজা খুলে অর্ধগলিত দুটি মরদেহ দেখতে পাওয়া যায়।

তিনি জানান, তারা দুজন সম্পর্কে কি হয় তা বিস্তারিত জানা যায়নি। প্রাথমিকভাবে যতটুক জানা গেছে তারা স্বামী-স্ত্রী নয়। তাদের হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

ঢাকা/এমআর/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ