ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত আরো ৫০ ফিলিস্তিনি
Published: 10th, September 2025 GMT
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বর্বর হামলায় আরো ৫০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ৯ জন ছিলেন খাদ্যসাহায্য নিতে আসা মানুষ।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সারাদিন অব্যাহত বোমাবর্ষণ চালিয়েছে ইসরায়েল। এ হামলায় গাজায় অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন।
আরো পড়ুন:
কাতারে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৬
হামাসকে শেষবারের মতো সতর্ক করলেন ট্রাম্প
সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে দক্ষিণ গাজায় ত্রাণের আশায় জড়ো হওয়া অন্তত ৯ জন বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন। ওয়াফা সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, গাজার বন্দর এলাকায় বাস্তুচ্যুত পরিবারের একটি অস্থায়ী তাঁবুতে ড্রোন হামলায় দুই বেসামরিক নিহত ও অনেকে আহত হয়েছেন। এছাড়া যুদ্ধবিমান হামলা চালিয়েছে একাধিক আবাসিক ভবনে, গাজার আল-মুখাবারাত এলাকার চারটি বাড়ি এবং সিটির উত্তর-পশ্চিমের জিদান ভবনে। দেইর আল-বালাহ অঞ্চলের তালবানি এলাকায় আরেকটি বাড়ি ধ্বংস হয়, তুফাহর আজ-জারকা এলাকায় হামলায় নিহত হন দুই তরুণ।
এর আগে সোমবার ইসরায়েল ঘোষণা দিয়েছিল, গাজা সিটির জামাল আবদেল নাসের সড়কের একটি ভবন ও আশপাশের তাঁবু খালি না করলে প্রাণঘাতী ঝুঁকি থাকবে। মানুষকে দক্ষিণ গাজার আল-মাওয়াসি এলাকায় যেতে বলা হয়, যেটিকে তথাকথিত ‘মানবিক অঞ্চল’ বলা হচ্ছিল। কিন্তু বাস্তবে আল-মাওয়াসিতেই বারবার বোমা বর্ষণ করেছে ইসরায়েল।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, বছরের শুরুতে যেখানে প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার মানুষ ছিল, সেই আল-মাওয়াসিতে এখন ৮ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। সবাই ঠাসাঠাসি করে তাঁবুতে দুর্দশার জীবন কাটাচ্ছেন।
ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি এটিকে ‘ক্ষুধার্ত ও হতাশ মানুষের বিশাল ক্যাম্প’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, “গাজায় কোথাও নিরাপদ নয়, এমনকি কথিত মানবিক অঞ্চলও নয়। দুর্ভিক্ষের সতর্কতা কেউ শুনছে না।”
গাজার সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, “গাজা সিটি জ্বলছে, মানবতা নিশ্চিহ্ন হচ্ছে।” সংস্থাটির হিসেবে, মাত্র ৭২ ঘণ্টায় পাঁচটি বহুতল ভবন ধ্বংস হয়েছে, যেখানে ২০০টিরও বেশি অ্যাপার্টমেন্ট ছিল। এতে হাজারো মানুষ গৃহহীন হয়েছেন। একই সঙ্গে ৩৫০টিরও বেশি তাঁবু ধ্বংস হয়ে গেছে, ফলে প্রায় ৭ হাজার ৬০০ মানুষ খোলা আকাশের নিচে ক্ষুধা, অসহনীয় গরম আর মৃত্যুভয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলি আগ্রাসনে এ পর্যন্ত ৬৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ২০ হাজার শিশু। বহু মানবাধিকারকর্মী ও গবেষক এই হত্যাযজ্ঞকে গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
জাতিসংঘ বলছে, প্রায় দুই বছর ধরে ইসরায়েলের ব্যাপক সামরিক অভিযানের ফলে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং প্রায় ৮৫ শতাংশ জনসংখ্যা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
গাজায় ইসরায়েলি হামলা নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। জানুয়ারিতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন রায়ে তেল আবিবকে গণহত্যা বন্ধ করতে এবং গাজার বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তা প্রদান নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে রায় উপেক্ষা করে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল ইসর য় ল এল ক য়
এছাড়াও পড়ুন:
হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স।
গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’
পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।
আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’
তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ