গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বর্বর হামলায় আরো ৫০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ৯ জন ছিলেন খাদ্যসাহায্য নিতে আসা মানুষ।

বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সারাদিন অব্যাহত বোমাবর্ষণ চালিয়েছে ইসরায়েল। এ হামলায় গাজায় অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন।

আরো পড়ুন:

কাতারে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৬

হামাসকে শেষবারের মতো সতর্ক করলেন ট্রাম্প

সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে দক্ষিণ গাজায় ত্রাণের আশায় জড়ো হওয়া অন্তত ৯ জন বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন। ওয়াফা সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, গাজার বন্দর এলাকায় বাস্তুচ্যুত পরিবারের একটি অস্থায়ী তাঁবুতে ড্রোন হামলায় দুই বেসামরিক নিহত ও অনেকে আহত হয়েছেন। এছাড়া যুদ্ধবিমান হামলা চালিয়েছে একাধিক আবাসিক ভবনে, গাজার আল-মুখাবারাত এলাকার চারটি বাড়ি এবং সিটির উত্তর-পশ্চিমের জিদান ভবনে। দেইর আল-বালাহ অঞ্চলের তালবানি এলাকায় আরেকটি বাড়ি ধ্বংস হয়, তুফাহর আজ-জারকা এলাকায় হামলায় নিহত হন দুই তরুণ।

এর আগে সোমবার ইসরায়েল ঘোষণা দিয়েছিল, গাজা সিটির জামাল আবদেল নাসের সড়কের একটি ভবন ও আশপাশের তাঁবু খালি না করলে প্রাণঘাতী ঝুঁকি থাকবে। মানুষকে দক্ষিণ গাজার আল-মাওয়াসি এলাকায় যেতে বলা হয়, যেটিকে তথাকথিত ‘মানবিক অঞ্চল’ বলা হচ্ছিল। কিন্তু বাস্তবে আল-মাওয়াসিতেই বারবার বোমা বর্ষণ করেছে ইসরায়েল।

জাতিসংঘের তথ্য বলছে, বছরের শুরুতে যেখানে প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার মানুষ ছিল, সেই আল-মাওয়াসিতে এখন ৮ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। সবাই ঠাসাঠাসি করে তাঁবুতে দুর্দশার জীবন কাটাচ্ছেন।

ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি এটিকে ‘ক্ষুধার্ত ও হতাশ মানুষের বিশাল ক্যাম্প’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, “গাজায় কোথাও নিরাপদ নয়, এমনকি কথিত মানবিক অঞ্চলও নয়। দুর্ভিক্ষের সতর্কতা কেউ শুনছে না।”

গাজার সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, “গাজা সিটি জ্বলছে, মানবতা নিশ্চিহ্ন হচ্ছে।” সংস্থাটির হিসেবে, মাত্র ৭২ ঘণ্টায় পাঁচটি বহুতল ভবন ধ্বংস হয়েছে, যেখানে ২০০টিরও বেশি অ্যাপার্টমেন্ট ছিল। এতে হাজারো মানুষ গৃহহীন হয়েছেন। একই সঙ্গে ৩৫০টিরও বেশি তাঁবু ধ্বংস হয়ে গেছে, ফলে প্রায় ৭ হাজার ৬০০ মানুষ খোলা আকাশের নিচে ক্ষুধা, অসহনীয় গরম আর মৃত্যুভয়ে দিন কাটাচ্ছেন।

সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ইসরায়েলি আগ্রাসনে এ পর্যন্ত ৬৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ২০ হাজার শিশু। বহু মানবাধিকারকর্মী ও গবেষক এই হত্যাযজ্ঞকে গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

জাতিসংঘ বলছে, প্রায় দুই বছর ধরে ইসরায়েলের ব্যাপক সামরিক অভিযানের ফলে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং প্রায় ৮৫ শতাংশ জনসংখ্যা অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

গাজায় ইসরায়েলি হামলা নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। জানুয়ারিতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন রায়ে তেল আবিবকে গণহত্যা বন্ধ করতে এবং গাজার বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তা প্রদান নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে রায় উপেক্ষা করে আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল ইসর য় ল এল ক য়

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী

২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।

সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।

পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু

১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।

বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।

এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।

আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।

জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে
  • একাত্তরের গণহত্যার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে: আলাল
  • সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী