শরীয়তপুর জেলা সদর হাসপাতালের সামনে বসানো হয়েছে শিল্প ও বাণিজ্য মেলা। দিনে কোনোভাবে চলাচল সম্ভব হলেও সন্ধ্যার পর থেকেই মেলার আশপাশের সড়কে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। ফলে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সসহ সাধারণ যাত্রীরা দীর্ঘসময় আটকে থাকছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, জেলা প্রশাসনের অদূরদর্শিতার কারণে হাসপাতালের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মেলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। 

এদিকে, মেলা স্থানান্তর বা বন্ধের জন্য ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মুহা.

মুস্তাফিজুর রহমান জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও পৌর প্রশাসক বরাবর লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন। গত সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) ডাকযোগে এ নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশ না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম ও পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম।

আরো পড়ুন:

উল্টো টানে শেষ হলো ধামরাইয়ের ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা

বাগেরহাটে ৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা শুরু, বসেছে মেলা

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ১৪ মে নিউ স্টাইল মার্কেটিং নামে একটি প্রতিষ্ঠান শরীয়তপুরে দেশীয় পণ্য, কুটিরশিল্প, কারুশিল্প ও বাণিজ্য মেলা আয়োজনের অনুমতি চেয়ে আবেদন করে। সেই আবেদনের ভিত্তিতে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সামনের মাঠে ১২ আগস্ট থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৫টি শর্তসাপেক্ষে মেলা আয়োজনের অনুমোদন দেয় জেলা প্রশাসন। এ সংক্রান্ত অনুমতিপত্রে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার (সাধারণ শাখা) সুদীপ্ত ঘোষ স্বাক্ষর করেন। 

ঘোষিত সময়ের আগে ৩১ আগস্ট থেকেই মেলাটি চালু করা হয়। মেলা শুরু হওয়ার পরপরই শহরের প্রধান সড়কে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। মেলার স্থানটি জেলা সদর হাসপাতালের ঠিক সামনে হওয়ায়, রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স ও অন্যান্য যানবাহন ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে পড়ছে। যে  কারণে রোগী ও সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছায় এবং স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়।

লিগ্যাল নোটিশে উল্লেখ করা হয়, শরীয়তপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে জেলার শিল্পকলা একাডেমির মাঠে দেশীয় পণ্য, কারুকার্য, কুটির শিল্প ও বাণিজ্য মেলা ২০২৫ নামে মাসব্যাপী মেলার অনুমতি দিয়েছেন জেলা প্রশাসক শরীয়তপুর। যার পাশে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল ও শরীয়তপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং অপরদিকে শরীয়তপুর পার্ক ও জেলার শিল্পকলা একাডেমি অবস্থিত। 

শরীয়তপুর জেলার যোগাযোগের জন্য মাত্র একটি প্রধান সড়ক আছে। যা মূল শহরের উপর দিয়ে গিয়েছে। পদ্মাসেতু চালুর পর এই সড়কে গাড়ি চলাচল বেড়েছে কয়েকগুন। ব্যস্ততম সড়কের পাশে এই মেলার আয়োজনে মূল সড়কেটিতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। রোগী বহনকারী গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স তীব্র যানজটে পড়ে থাকছে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের যাওয়া আসায় মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়া এবং অনৈতিক কার্যকলাপও পরিলক্ষিত হচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে, যা বাংলাদেশের সংবিধানে প্রদত্ত নাগরিক অধিকার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।  

এছাড়াও বাণিজ্য মেলা শুরুর পূর্বে জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন মেলা বন্ধের জন্য মানববন্ধন ও জেলা প্রাশসক বরাবরে স্মারক লিপি প্রদান করেছেন। আর এ সব কারণে এলাকার জনস্বার্থে অনতিবিলম্বে দেশীয় পণ্য, কারুকার্য, কুটির শিল্প ও বাণিজ্য মেলা স্থানান্তর বা বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো বলে উল্লেখ করা হয় নোটিশে। 

এ বিষয় স্থানীয় কুদ্দুস মাদবর বলেন, “মেলা শুরু হওয়ার পর থেকেই জেলাবাসী চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। শহরের একমাত্র সড়কে সবসময় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।  অ্যাম্বুলেন্স স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না। তাই আমরা চাই, মেলাটি দ্রুত অন্য স্থানে স্থানান্তর করা হোক।”

অনামিকা চৌধুরী নামে এক নারী বলেন, “মেলার কারণে প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত অবধি পুরো সড়ক জুড়ে অসহনীয় যানজট লেগে থাকে। কোনো রোগী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে সময়মতো হাসপাতালে নেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে। হাসপাতালের সামনে, যেখানে জরুরি চিকিৎসা সেবার গতি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে মেলার অনুমতি দেওয়া নিছক দায়িত্বহীনতা ও অদূরদর্শিতার চরম উদাহরণ।”

ঢাকা জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট মুহা. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, “আমি জানতে পেরেছি, জেলা প্রশাসন শরীয়তপুর প্রাণকেন্দ্র ও সদর হাসপাতালের সামনে বাণিজ্য মেলার অনুমতি দিয়েছে। মেলার কারণে সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হচ্ছে। রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সসহ সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। জনস্বার্থে মেলা বন্ধ বা স্থানান্তরের জন্য আমি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছি, পদক্ষেপ না হলে আদালতের দ্বারস্থ হব।”

শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, “আমি এই সংক্রান্ত কোনো লিগ্যাল নোটিশ পাইনি, পেলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে মেলার অনুমতির বিষয়টি জেলা প্রশাসনের। আমরা শুধু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি।” 

জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম বলেন, “এই সংক্রান্ত কোনো লিগ্যাল নোটিশ পাইনি, পেলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” 

গতকাল মেলা বন্ধের প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে গণমাধ্যম কর্মীদের তিনি বলেন, “আগামীতে এই স্থানটিতে আর মেলার আয়োজন করব না। জনদুর্ভোগের বিষয়টি আমরা দেখছি, অবস্থা বেশি খারাপ হলে মেলাটি বন্ধ করে দেব।”

ঢাকা/সাইফুল/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম ল র খবর অভ য গ ত ব র য নজট স থ ন ন তর বন ধ র র জন য শহর র

এছাড়াও পড়ুন:

বাহরাইনের প্রতি বাংলাদেশিদের জন্যে ভিসা চালুর অনুরোধ 

ব্যবসায়ী, পেশাজীবী, দক্ষ ও আধা দক্ষ শ্রমিকসহ বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা সুবিধা পুনরায় চালু করতে বাহরাইনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

উপদেষ্টা দু’দেশের জনগণের সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে ভিসা পুনরায় চালুর এ অনুরোধ জানান।

বাহরাইনে ২১তম আইআইএসএস মানামা সংলাপের ফাঁকে শনিবার (১ নভেম্বর) দেশটির উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল বিন খালিফা আল ফাদেলের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন তিনি। এ সময়ে ভিসা পুনরায় চালুর অনুরোধটি জানান উপদেষ্টা। 

রবিবার (২ নভেম্বর) ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে।

একইসঙ্গে তৌহিদ হোসেন কমিউনিটির কল্যাণ নিশ্চিত এবং সামাজিক সম্পর্ক মজবুতের লক্ষ্যে বাহরাইনে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ‘ফ্যামিলি ভিসা’ প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করারও অনুরোধ জানান। 

বাহরাইনের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশটির অর্থনীতিতে বাংলাদেশের নাগরিকদের অবদানের প্রশংসা করেন। তিনি জানান, তার দেশের সরকার ধাপে ধাপে ভিসা সুবিধা পুনরায় চালুর জন্য কাজ করছে।

বৈঠকে উভয়ে দু’দেশের দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের হস্তান্তরে একটি চুক্তি সম্পাদনের সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা করেন।

তৌহিদ হোসেন ২১তম মানামা সংলাপের অধিবেশনের পাশপাশি আরো কিছু অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। এসব আয়োজনে বিশ্ব নেতা, বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও নীতি নির্ধারকরা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করবেন।

তথ্যসূত্র: বাসস

ঢাকা/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ