মুক্ত আবদ্ধ পদ্ধতিতে হাঁস পালন করে সফল হয়েছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা ইউনিয়নের কুশাবাড়িয়া গ্রামের দুই ভাই বাদশা ও বাদল। খোলামেলা পরিবেশে খামার তৈরি করে সেখানে হাঁস পালন করায় খরচ হচ্ছে তুলনামূলক অনেক কম। ফলে, তারা আর্থিকভাবে বেশি লাভবান হচ্ছেন। হাঁস পোকা-মাকড় ও ক্ষতিকর আগাছা খেয়ে ফেলায় ফসলের উপকার হচ্ছে, হাঁসের বিষ্ঠা বাড়াচ্ছে জমির উর্বরতা।  

ফাঁকা মাঠের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে জিকে ক্যানেলের পাড়ে বাঁশের বাতা আর প্লাস্টিকের নেট দিয়ে তৈরি হাঁসের ঘর বাদশার। তার খামারে বর্তমানে ৫৫০টি খাকি ক্যাম্বেল জাতের হাঁস আছে। খোলামেলা ঘর হওয়ায় বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় না। খামারের দুর্গন্ধও যায় না লোকালয়ে। সারাদিন হাঁসগুলোকে মাঠে চরানোর কারণে বাড়তি খাবার দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। খোলামেলা পরিবেশে থাকায় হাঁসের রোগবালাইও বেশ কম হয়।

খামারি বাদশা বলেছেন, “আমি প্রায় ২৪ বছর ধরে এভাবে মাঠে চরিয়ে হাঁস পালন করি। একসময় আমার বাবা এই মাঠে হাঁস চরাতেন। তার সাথে আমিও যেতাম। বাবার মৃত্যুর পর এখন নিজেই খামার করেছি।”  

তিনি বলেন, “এ বছর আমার খামারে ৫৫০টি খাকি ক্যাম্বেল জাতের হাঁস আছে। বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস পালন করেছি। তবে, ইউটিউবে আমি দেখেছি যে, খাকি ক্যাম্বেল জাতের হাঁস বেশি ডিম দেয়। এজন্য এবার আমি এক দিনের বাচ্চা নিয়ে এসেছিলাম।”

বাদশা বলেন, “প্রতি বছরই আমার ১ থেকে ২ হাজার করে হাঁস থাকে। এ হাঁস বছরে প্রায় নয় মাস ধরে ডিম দেয়। আমাদের খামারের হাঁসগুলো ডিম দেওয়া শুরু করেছে। প্রতিদিন সকালে প্রথম কাজ—হাঁসের ঘর থেকে ডিম গোছানো। তারপর ঘর থেকে হাঁস বের করি, সারাদিন মাঠে চরাই।”

তিনি জানান, হাঁসগুলো ক্যানেলের ছোট মাছ, শামুক, ছোট ব্যাঙ, পোকামাকড় খায়। জমি থেকে ধান কাটার পর নাড়ার মধ্যে পড়ে থাকা ধান খায়। বিকেল ৫টার দিকে হাঁসগুলোকে ঘরে তোলা হয়। সারাদিন বাড়তি কোনো খাবার দিতে হয় না। খোলা মাঠে না চড়ালে দিনে ৭০ থেকে ৮০ কেজি ধান লাগত এসব হাঁসের জন্য। 

বাদশা আরো জানান, মাঠের মধ্যে বাঁশের খুঁটি, বেড়া এবং তার ও প্লাস্টিকের নেট দিয়ে চারপাশ ঘিরে দিয়ে ঘর তৈরি করা হয়েছে। যাতে আলো-বাতাস ঠিকমতো ঢুকতে পারে। বিদ্যুৎ খরচ নেই। 

ক্যাম্বেল জাতের হাঁসের পালকের রং খাকি, মাথা ও ঘাড় ব্রোঞ্জ রঙের। পা ও পায়ের পাতার রং হাঁসার হলুদ, হাঁসির কালো। ঠোটের রং হাঁসার নীলাভ, হাঁসির কালো। খাকি ক্যাম্বেল জাতের হাঁস বেশি কষ্ট করতে পারে। এক থেকে তিন বছর পর্যন্ত ডিম পাড়ে এ জাতের হাঁস। বছরে ২৫০ থেকে ৩০০টি ডিম দেয়। 

বাদশা জানান, খোলা অবস্থায় এভাবে মাঠে চরিয়ে হাঁস পালন করা বেশি লাভজনক। তবে, খুবই সতর্ক থাকতে হয় রোগবালাইয়ের ব্যাপারে। কারণ, খামারে একটা হাঁসের রোগ হলে অন্য হাঁসেরও হতে পারে। ৫০০ হাঁস পালন করতে ইতোমধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। এখন শুধু হাঁসই বিক্রি করেই আড়াই লাখ টাকা পাওয়া যাবে। ডিম বিক্রি করেই খরচ উঠে যায়।  

বাদশার ছোট ভাই বাদলও একই পদ্ধতিতে হাঁস পালন করেন। এই প্রাকৃতিক পদ্ধতির কারণে রোগবালাইও অনেক কম হয়। তার খামারে ১৬০টি হাঁসের মধ্যে প্রতিদিন ১৩০-১৪০টি ডিম দেয়।

বাদশা জানান, তার খামার থেকে প্রতিদিন ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা আসে। তিন মাস ধরে ডিম পাচ্ছেন। আরো ছয় মাস এভাবে ডিম পাবেন বলে আশা বাদলের।

স্থানীয় কৃষক হায়দার আলী বলেছেন, “মাঠে আসার সময় প্রায়ই দেখি ক্যানেলের মধ্যে হাঁসগুলো খেলা করছে। দেখতে বেশ ভালো লাগে। এছাড়া, মাঠের মধ্যে পোকামাকড়, খুদে পানা এবং আগাছা খেয়ে ফেলে হাঁস। হাঁসের বিষ্ঠার কারণে জমির উর্বরতাও বৃদ্ধি পায়।” 

স্থানীয় যুবক রোমেল হোসেন বলেছেন, “এভাবে মাঠে কম খরচে হাঁস পালন করা যায়, তা বাদশাকে না দেখলে জানতাম না। সরকার যদি আমাদের প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সুবিধা দিয়ে হাঁস পালনে উৎসাহ দিত, তাহলে অনেকের কর্মসংস্থান হতো।”

মিরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.

আব্দুল্লাহিল কাফি বলেছেন, খাকি ক্যাম্বেল হাঁস ডিম উৎপাদনের জন্য বেশ জনপ্রিয়। আবদ্ধ এবং মুক্ত আবদ্ধ পদ্ধতিতে এ জাতের হাঁস পালন করা লাভজনক। দিনের বেলা খাল-বিল-মাঠে চরিয়ে রাতে ঘরে রেখে লালনপালন করলে হাঁসের উৎপাদন খরচ কম হয়। বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হয় না। হাঁস পালনে খামারিদের পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে।

মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, ধান কাটার পরে জমিতে পোকামাকড় আশ্রয় নেয়। মাঠে হাঁস চরালে তারা পোকা ধরে খায়। এছাড়া, ক্ষতিকর আগাছা ধ্বংস করে হাঁস। হাঁসের বিষ্ঠা জমির উর্বরতা বাড়ায় এবং প্রাকৃতিক সার হিসাবে কাজ করে, যা ফসলের জন্য উপকারী।  

ঢাকা/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বল ছ ন আবদ ধ

এছাড়াও পড়ুন:

উৎসব ঘুরে প্রেক্ষাগৃহে ‘বাড়ির নাম শাহানা’

কৈশোর পেরোনোর আগেই শাহানাবাড়ির মেয়ে দীপার বিয়ে হয়ে যায়। স্বামীর নির্যাতনের জাল ছিঁড়ে নিজের মতো করে বাঁচতে চেয়েছেন তিনি। নব্বইয়ের দশকের পটভূমিতে দীপার বেঁচে থাকার লড়াইয়ের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে বাড়ির নাম শাহানা।

সত্য কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত বাড়ির নাম শাহানায় দীপা চরিত্রে অভিনয় করেছেন আনান সিদ্দিকা। ছবিটি যৌথভাবে প্রযোজনা করেছে কমলা কালেক্টিভ ও গুপী বাঘা প্রোডাকশন্স লিমিটেড।

নির্মাণের বাইরে লীসা গাজী লেখক, নাট্যকর্মী হিসেবে পরিচিত

সম্পর্কিত নিবন্ধ