“ভুল তথ্য উপাত্ত দিয়ে আমাদের অর্থনীতিকে বিগত সরকারের সময়ে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হয়েছে। এ তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করেই এলডিসি গ্রাজুয়েশন সিদ্ধান্ত এসেছে। অর্থনীতিকে ফুলিয়ে ফাপিয়ে দেখিয়ে গত সরকার আমাদের ব্যবসায়িদের ঝুঁকিতে ফেলেছে।”

শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর পল্টন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘এলডিসি গ্রাজুয়েশন ও বাংলাদেশের প্রস্তুতি’ শীর্ষক এক সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম আলী এসব কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

হিলি বন্দরে বেড়েছে আমদানি-রপ্তানি, ফিরেছে কর্মচাঞ্চল্য

আন্তর্জাতিক বাজার হারাচ্ছে কাঁচাপাট

সেমিনারে প্রধান অতিথির ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী। এছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিজের (বিএপিআই) নির্বাহী কমিটির সদস্য মো.

মোস্তাফিজুর রহমান ও পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজ।

মোহাম্মদ হাতেম আলী বলেন, “বর্তমান সরকার অর্থনীতিকে ভালো অবস্থায় নিতে কাজ করছে। আমাদের এখন সরকারকে সময় দিতে হবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আটটি দেশ এলডিসি গ্রাজুয়েশন হয়েছে। তাদের রপ্তানি বাজার অতটা বড় না হওয়ায় এটি সহজ হয়েছে। তবে আমাদের রপ্তানি বাজার অনেক বড়, এখানেই আমাদের ঝুঁকি। গ্র্যাজুয়েশন হলে আমাদের রপ্তানি বাজারে বড় ধাক্কা লাগতে পারে।”

তিনি বলেন, “আমাদের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তীতে কী কী ধরনের চ্যালেঞ্জ আছে, সেগুলো নিয়ে সরকারকে কাজ করতে হবে। আমাদের সঙ্গে বসেই ঠিক করতে হবে, কীভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব। এছাড়া এলডিসি গ্রাজুয়েশনের সময় বাড়ানো যায় কিনা, সরকারকে এ বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার গত ১ বছরেরও বেশি সময়ে এটি নিয়ে আমাদের সঙ্গে বসেনি। আমাদের কাস্টমসে অনেক সমস্যা আছে, সেগুলো সমাধান করতে হবে। অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো সমাধান করলে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পথ সহজ হবে বলে মনে করছি।”

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, “এত অল্পসময়ে শুধু সরকারের পক্ষে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের সময় বাড়ানো অসম্ভব প্রায়। আপনারা ব্যবসায়ীরা আপনাদের জায়গা থেকে বায়ারদের মাধ্যমে আমদানিকারক দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যান। শুধু ইউকে কিংবা কয়েকটি দেশের সমর্থন দিয়ে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন থামানো সম্ভব নয়। বায়ারের মাধ্যমে তাদের দেশের সরকারের সমর্থন আনতে আপনাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যান।”

তিনি বলেন, “এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পথে বাংলাদেশ নেপাল ও লাওস থেকে ভালো অবস্থানে আছে। এখন কোনো ভুল তথ্য দেওয়া হচ্ছে না। এই দুই দেশ যদি গ্র্যাজুয়েশন পেছানোর আবেদন করে, তাহলে বাংলাদেশ ও আবেদন করতে পারবে। এটা অন্তর্বর্তী সরকারের একার পক্ষে সম্ভব না। ব্যবসায়ীদের নিজ উদ্যোগে প্রচেষ্টা বাড়াতে হবে।”

সেমিনারে তিনি ওয়েস্টার্ন সিডনি ইউনিভার্সিটি (অস্ট্রেলিয়া) ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

তিনি বলেন, “একজন গবেষক হিসেবে আমার গবেষণা তুলে ধরব। বাংলাদেশ এলডিসি গ্রাজুয়েশনের জন্য নেপাল, লাওসসহ অনেক দেশের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশ বিগত সরকারের সময়ে অনেক ভুয়া ও ম্যানিপুলেটেড তথ্য দিয়ে এই এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পথে এসে দাঁড়িয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এখন দেশের অর্থনীতি অনেকটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ফার্মাসিউটিক্যালস খাতে রপ্তানি জট দূর হয়েছে, ন্যাশনাল ক্রেডিট রেটিং মূল্যায়ন শুরু হয়েছে। বন্ডেড সুবিধা, এগ্রিকালচারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়েছে।”

“এখন আমরা যে অবস্থায় আছি, তা অনেক দেশের তুলনায় ভালো। অতীতে অর্থনৈতিকভাবে কোরিয়া, ভিয়েতনাম, জিম্বাবুয়ে দেশগুলো বড় ধরনের বিপর্যয়ের মধ্যে পতিত হয়েছিল। কিন্তু তারা এলডিসি সুযোগ না নিয়ে নিজেরাই সফল হয়েছে। বাংলাদেশও চ্যালেঞ্জ নিলে সফল হতে পারবে বলে বিশ্বাস করি,” -যোগ করেন আনিসুজ্জামান।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “আমাদের ব্যবসায়ীদের ঝুঁকি নেওয়ার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। যখন আপনি ঝুঁকি নেবেন, তখনই আপনি বড় কিছু করতে পারবেন।”

তিনি বলেন, “২০০৫ সালে আমরা ঝুঁকি নিলাম। তখন আমাদের গার্মেন্টস সেক্টরে বড় প্রবৃদ্ধি এসেছিল। আমাদের গার্মেন্টস সেক্টরে শ্রমিকদের বেতন এভারেজ ১০০ ডলার, যা ২০০৮ সালে একই ছিল। অথচ ভিয়েতনাম আমাদের কাছাকাছি একটা অর্থনীতির দেশ হয়ে কর্মীদের ২০৮ ডলার দিয়েও ভালো করছে। আমরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেয়েও কেন পিছিয়ে থাকব। তাই ব্যবসায়ীদের অবশ্যই ঝুঁকি নিতে শিখতে হবে।”

সেমিনারে মাশরুর রিয়াজ বলেন, “এলডিসি গ্রাজুয়েশন হতে হবে, তার বিকল্প নেই। তবে কখন গ্র্যাজুয়েশন হতে হবে, সেটা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকার ও বেসরকারি খাতের সবাই বসে সময় ঠিক করতে হবে। গ্র্যাজুয়েশন হলে সমস্যা কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। এলডিসি গ্রাজুয়েশন হলে আমাদের শুল্কহার ভিয়েতনাম ও ভারতের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে আমাদের অনেক বেগ পেতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের সক্ষমতা তৈরি করতে হবে।”

বিএপিআইয়ের নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “যে বিদেশি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে ওষুধ উৎপাদন করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে, তারা এলডিসি গ্রাজুয়েশন হলে থাকবে না। কারণ তারা তো এত বেশি শুল্ক দিয়ে রপ্তানি করতে এখানে উৎপাদন করবে না। এছাড়া ওই কোম্পানিগুলো আমাদের দেশে ওষুধ উৎপাদন না করলে অনেক ওষুধই বাংলাদেশের মানুষকে বেশি দামে কিনতে হবে।”

বিজিএমইএ সহ-সভাপতি এনামুল হক খান বলেন, “আমরা গ্র্যাজুয়েশন হতে চাই। তবে এটি আরো অন্তত ৩ বছরের জন্য সময় নিয়ে হতে চাচ্ছি। আমরা রপ্তানিকারকরা এই মুহূর্তে গ্র্যাজুয়েশনের জন্য প্রস্তুত নই।”

ঢাকা/নাজমুল/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গত সরক র সরক র র ত সরক র ব যবস য আম দ র এলড স

এছাড়াও পড়ুন:

কেইনের জোড়া গোলে চেলসিকে হারাল বায়ার্ন, চ্যাম্পিয়ন পিএসজির গোল উৎসব

বায়ার্ন মিউনিখ ৩–১ চেলসি

২০১২ সালে আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় ইতিহাস গড়েছিল চেলসি। ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখকে টাইব্রেকারে হারিয়ে প্রথমবারের মতো পরেছিল ইউরোপসেরার মুকুট।

 তবে এরপর থেকে বায়ার্নের সঙ্গে মুখোমুখি সব ম্যাচেই হেরেছে চেলসি। লন্ডনের ক্লাবটি পারল না আজও। হ্যারি কেইনের জোড়া গোলে চেলসিকে ৩–১ ব্যবধানে হারিয়েছে বায়ার্ন।

আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় ম্যাচের ২০ মিনিটে বায়ার্ন প্রথম গোলটা পেয়েছে উপহারসূচক। চেলসির সেন্টার–ব্যাক ট্রেভোহ চালোবাহ নিজেদের জালে বল জড়ালে এগিয়ে যায় বাভারিয়ানরা।

কিছুক্ষণ পরেই ব্যবধান দ্বিগুণ করেন কেইন। এবার ভুল করে বসেন চেলসির মইসেস কাইসেদো। নিজেদের বক্সে কেইনকে কাইসেদো অযথা ট্যাকল করলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি।

নতুন মৌসুমে গোলের পর গোল করেই চলেছেন হ্যারি কেইন

সম্পর্কিত নিবন্ধ