সুপ্রিম কোর্ট ‘হেল্পলাইন’: সেবা পেতে ও অভিযোগ জানাতে ৩ হাজার ‘কল’
Published: 16th, September 2025 GMT
একজন চিকিৎসকের করা রিট–সংক্রান্ত নথি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় পাওয়া যাচ্ছিল না। প্রায় ছয় মাস খোঁজ করার পরও নথি না পেয়ে তিনি সুপ্রিম কোর্ট ‘হেল্পলাইনে’ যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে তাঁকে লিখিত আবেদন জমা দিতে বলা হয়। সেই আবেদন জমা দেওয়ার মাত্র ১০ কার্যদিবসের মধ্যেই নথির খোঁজ পান তিনি।
‘হেল্পলাইন’ একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলে মনে করেন সিলেটের সেই চিকিৎসক মোখলেসুর রহমান। তিনি গতকাল সোমবার রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘হেল্পলাইন না থাকলে হয়তো আরও ভোগান্তি হতো। এই সেবা চালু হওয়ায় মানুষের অনেক উপকার হচ্ছে।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো ‘হেল্পলাইন’ সেবা চালু করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। বিচারপ্রার্থীদের সেবা নিশ্চিত ও সহজ করতে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নির্দেশে এই সেবা চালু করা হয়। এ বিষয়ে গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রির কোনো শাখায় সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে কেউ বাধা পেলে বা যেকোনো বিষয়ে অসুবিধার মুখোমুখি হলে সংশ্লিষ্ট বিচারপ্রার্থী সরাসরি তা মুঠোফোনে জানাতে পারবেন। বিচারপ্রার্থী বা সেবাগ্রহীতাকে সহায়তা দিতে হেল্পলাইনে প্রথমে একটি মুঠোফোন নম্বর (০১৩১৬১৫৪২১৬) ছিল।
এই সেবা জনপ্রিয় হওয়ায় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন এখন ‘হেল্পলাইনে’ আরও একটি নম্বর (০১৭৯৫৩৭৩৬৮০) যুক্ত করেছে। সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত হেল্পলাইন থেকে সেবা গ্রহণ করা যায়।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো ‘হেল্পলাইন’ সেবা চালু করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর চালুর পর থেকে চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় এক বছরে হেল্পলাইনে সারা দেশ থেকে আইনি পরামর্শ, মামলা–সম্পর্কিত তথ্য ও অভিযোগ দাখিল-সংক্রান্ত ৩ হাজার ৭২টি কল এসেছে। এর মধ্যে আইনি পরামর্শ পেতে ১ হাজার ৬৬৮টি কল এসেছিল। বিভিন্ন মামলার তথ্য জানতে এসেছিল ১ হাজার ১৫৭টি কল। নাগরিকদের প্রয়োজনীয় সব তথ্য তাৎক্ষণিকই দেওয়া হয় বলে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান।
সুপ্রিম কোর্ট হেল্পলাইনের পাশাপাশি এখন দেশের ৬৪টি জেলা আদালত এবং ৮টি মহানগর দায়রা জজ আদালতেও পৃথকভাবে একই ধরনের সেবা চালু করা হয়েছে। এতে সারা দেশেই বিচারপ্রার্থীরা নানা ধরনের তথ্য ও সেবা পাচ্ছেন বলে জানান সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা।
ঘুষ, দায়িত্বে অবহেলা ও অসদাচরণ
সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ‘হেল্পলাইনে’ ৬১টি কল এসেছে। তবে এসব অভিযোগ সুপ্রিম কোর্টের এখতিয়ারবহির্ভূত। যে কারণে হেল্পলাইনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা অভিযোগকারীদের উপযুক্ত ফোরামে যাওয়ার বিষয়ে পরামর্শ দেন।
সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন সূত্র জানায়, তথ্য বা পরামর্শ চাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম, ঘুষ, দায়িত্বে অবহেলা, সেবা পেতে দেরি হওয়া, অসদাচরণ ইত্যাদি–সম্পর্কিত ১৮৬টি অভিযোগ এসেছে ‘হেল্পলাইনে’। এর মধ্যে বিলম্বে আইনি সেবা প্রাপ্তি–সংক্রান্ত অভিযোগ ৯৬টি। এসব অভিযোগ যাচাই-বাছাই করে অভিযোগকারীদের সেবা নিশ্চিতের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জবাবদিহির মুখোমুখি করা হয়েছে।
এ ছাড়া বাকি ৯০টি অভিযোগ ছিল বিভিন্ন অনিয়ম, ঘুষ, দায়িত্বে অবহেলা ও অসদাচরণ–সম্পর্কিত। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন সূত্র বলেছে, এই ৯০টি অভিযোগের মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকদের বিরুদ্ধে ৫টি, জেলা আদালতের বিচারকের বিরুদ্ধে ৩২টি, আপিল বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ১টি, হাইকোর্ট বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ৬টি, জেলা আদালতের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ৩৭টি এবং আইনজীবীদের বিরুদ্ধে ৯টি অভিযোগ এসেছে ‘হেল্পলাইনে’। এসব অভিযোগের ক্ষেত্রে যাচাই সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট হেল্পলাইনের মাধ্যমে সেবা পাওয়া ৭৪ বছর বয়সী খুলনার বাসিন্দা রমজান ফকির মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, একটি মামলায় উচ্চ আদালতের রায়ে তাঁর ছেলেকে খালাস দেওয়া হয়। তবে নথি কারাগারে না পৌঁছানোয় তাঁর ছেলে মুক্তি পাচ্ছিলেন না। পরে তিনি হেল্পলাইনের একটি নম্বরে যোগাযোগ করে তাৎক্ষণিক আবেদন করেন। এরপর সংশ্লিষ্ট নথি আদালত থেকে কারাগারে পৌঁছায় এবং তাঁর ছেলে মুক্তি পান।
সেবাগ্রহীতা রমজান ফকির বলেন, ‘চিনি না, জানি না, চেহারাও কখনো দেখি নাই, একটা ফোনকলে আমার যে উপকার করছে, তা আমি আর আমার পরিবার কখনো ভুলব না। প্রধান বিচারপতির কাছে আমরা চিরকৃতজ্ঞ।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স প ট ম বর কর মকর ত গত বছর র প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
কারও ওপর আক্রমণ হলে যৌথভাবে জবাব দেবে পাকিস্তান ও সৌদি আরব
পাকিস্তান ও সৌদি আরব ‘কৌশলগত যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি’ সই করেছে। বুধবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এ চুক্তি সই করেন। চুক্তি অনুযায়ী, কোনো একটি দেশ আক্রান্ত হলে সেটাকে দুই দেশের ওপর ‘আগ্রাসন’ হিসেবে দেখবে রিয়াদ ও ইসলামাবাদ।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রিয়াদের ইয়ামামা প্রাসাদে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে শাহবাজ শরিফের বৈঠক হয়। সেখানে দুই নেতা চুক্তিতে সই করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যৌথ প্রতিরোধ জোরদার করার লক্ষ্যে দুই দেশের নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও নিজেদের সুরক্ষিত করা এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি অর্জনের জন্য উভয় দেশের অভিন্ন প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন ঘটেছে এই চুক্তিতে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইসলামাবাদ ও রিয়াদের মধ্যে ‘প্রায় আট দশকের ঐতিহাসিক অংশীদারত্ব...ভ্রাতৃত্ব ও ইসলামি সংহতির বন্ধন...অভিন্ন কৌশলগত স্বার্থ এবং ঘনিষ্ঠ প্রতিরক্ষা সহযোগিতার’ ভিত্তিতে এ চুক্তি সই করা হয়েছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর বলেছে, দু্ই পক্ষ ও তাদের প্রতিনিধিদল উভয় দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক ও কৌশলগত সম্পর্ক পর্যালোচনা করেছে। একই সঙ্গে দুই পক্ষের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কয়েকটি বিষয়ে পর্যালোচনা করা হয়েছে।
এর আগে সৌদি আরব সফররত শাহবাজ শরিফ ইয়ামামা প্রাসাদে পৌঁছালে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান সৌদি যুবরাজ। এ সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। পরে সৌদি আরবের যুবরাজের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে বৈঠক করেন তিনি।