জুলাই সনদের ভিত্তিতে এবং সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) নির্বাচনের দাবিতে রাজধানীর পর গতকাল শুক্রবার বিভাগীয় শহরগুলোতে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দল। সমাবেশে দলগুলোর নেতারা বলেন, মনোনয়ন-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাবে, এই ভয়ে কোনো কোনো দল পিআর পদ্ধতি ঠেকাতে চায়।

পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল ঢাকার বাইরে রংপুর, রাজশাহী, সিলেট, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রামে অভিন্ন কর্মসূচি পালন করে এসব দল।

এর মধ্যে রংপুরের পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, গায়ের জোরে দেশ শাসনের দিন শেষ হয়ে গেছে। তাঁর দাবি, নির্বাচনে যারা কোটি কোটি টাকার মনোনয়ন-বাণিজ্য করতে পারবে না, তারাই পিআর পদ্ধতি ঠেকাতে চায়।

গোলাম পরওয়ার বলেন, বিএনপি পিআর মানতে চায় না। সাংবিধানিক পদগুলোতে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছামাফিক নিয়োগ বাদ দিতে আলাদা নিয়োগ কর্তৃপক্ষ হবে, সব জায়গায় এটা তারা মানতে চায় না। এসব গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তারা আপত্তি করছে। পিআর তারা এই জন্য মানতে চায় না, কারণ যখন দলকে নির্বাচিত করা হয়, তখন ব্যক্তির কোনো স্বার্থ থাকে না। এতে কোনো ব্যক্তি কালোটাকা, মাস্তানি, পেশিশক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে কারচুপি করতে কেন যাবে?

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন না করে যদি বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামোতে আবার নির্বাচন হয়, আরেকটি হাসিনার জন্ম হবে। আরেকটি ফ্যাসিবাদের জন্ম হবে। বাংলার মানুষ তা হতে দেবে না।

রংপুর মহানগর জামায়াতের আমির এ টি এম আজম খানের সভাপতিত্বে সমাবেশ আরও বক্তব্য দেন মহানগরের সাবেক আমির মাহবুবার রহমান, জেলা জামায়াতের আমির গোলাম রব্বানী প্রমুখ।

জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনসহ কয়েকটি অভিন্ন দাবিতে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) তিন দিনের বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করে। উল্লেখযোগ্য দাবিগুলো হলো আগামী নির্বাচনে সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করা; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা; ফ্যাসিবাদী সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা। এসব দাবিতে গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় কর্মসূচির পর গতকাল বিভাগীয় শহরগুলোতে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। ২৬ সেপ্টেম্বর সারা দেশের সব জেলা-উপজেলায় এই কর্মসূচি হবে।

গতকাল জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন সব বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করলেও বাকি পাঁচটি দলের সবাইকে সব জায়গায় কর্মসূচি করতে দেখা যায়নি। এর মধ্যে খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস কয়েকটি বিভাগে কর্মসূচি পালন করেছে।

৭১ শতাংশ মানুষ পিআরের পক্ষে

বরিশাল মহানগর জামায়াত আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, দেশের ৭১ শতাংশ মানুষ এর পক্ষে রায় দিয়েছে। প্রয়োজন হলে গণভোট দিয়েও পরীক্ষা করতে পারেন।

বরিশাল ফজলুল হক অ্যাভিনিউতে এই সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল করেন জামায়াতের নেতা-কর্মীরা।

ইসলামী আন্দোলনের বরিশাল জেলা ও মহানগর শাখা সমাবেশ করে নগরের সদর রোডের অশ্বিনী কুমার হল চত্বরে। পরে তারা মিছিল বের করে। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বরিশাল মহানগর শাখার সভাপতি মো.

লোকমান হাকীম।

দেশকে বিপদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে

চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে সমাবেশ করে জামায়াত। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘অনেকেই বলেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সাহেব একটি রাজনৈতিক দলের পকেটে ঢুকে গেছেন। এটা আমরা বিশ্বাস করতে চাই না। তবে আমরা বিশ্বাস করি, তাঁর আশপাশের লোকজন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। তাঁরা এ দেশকে বিপদের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন।’

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় জামায়াতের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মুহাম্মাদ শাহজাহান ডাকসু নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই ধারাবাহিকতায় আগামী জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী সরকার গঠনের মতো আসনে বিজয়ী হবে। জামায়াতে ইসলামী সরকারি দল হবে। বিএনপিকে বিরোধী দলে যেতে হবে।

চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মুহাম্মদ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন দলটির নগর শাখার সেক্রেটারি মুহাম্মদ নুরুল আমিন, সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুজ্জামান হেলালী প্রমুখ। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।

জনগণ তাদের পিআর বোঝাবে

ময়মনসিংহে পৃথক সমাবেশ ও মিছিল করে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।

শহরের রেলওয়ে কৃষ্ণচূড়া চত্বরে জামায়াতের সমাবেশে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সেক্রেটারি এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, একটি দল কথায় কথায় বলে, পিআর বোঝে না। আগেও তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বুঝত না। জনগণ তাদের বুঝিয়েছে। জনগণ এবারও তাদের পিআর বোঝাবে। পিআর ছাড়া নির্বাচন হবে না।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ময়মনসিংহ মহানগর জামায়াতের আমির কামরুল আহসান। আরও বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, জেলা জামায়াতের আমির আবদুল করিম প্রমুখ।

জুমার নামাজের পর ময়মনসিংহের বড় মসজিদের সামনে সমাবেশের পর বিক্ষোভ মিছিল করে ইসলামী আন্দোলন। একই সময়ে টাউন হল মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে খেলাফত মজলিস। বাদ আসর নগরের বড় মসজিদের সামনে থেকে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।

প্রয়োজনে আরেকটি গণ-অভ্যুত্থান

গতকাল দুপুরে রাজশাহীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে পথসভা করে ইসলামী আন্দোলন। বিকেলে বড় মসজিদের সামনে সমাবেশ করে জামায়াত।

ইসলামী আন্দোলনের পথসভায় দলের রাজশাহী জেলা সভাপতি মুরশিদ আলম ফারুকীসহ নেতারা বলেন, প্রয়োজনে আরেকটি গণ-অভ্যুত্থান হবে। পিআর ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না।

জামায়াতের সমাবেশে দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আলোচনায় সমাধান হচ্ছে না বলে তাঁরা আন্দোলনে নেমেছেন।

মহানগর জামায়াতের আমির কেরামত আলীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন মহানগরের নায়েবে আমির আবু মোহাম্মদ সেলিম, রাজশাহী সদর আসনে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, জেলা আমির আবদুল খালেক প্রমুখ।

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিন

খুলনা নিউমার্কেট বাইতুন নুর চত্বরে ইসলামী আন্দোলন ও ডাকবাংলা সোনালী ব্যাংক চত্বরে জামায়াত সমাবেশ করে। পরে দুটি দল পৃথক বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

জামায়াতের সমাবেশে দলের কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ নির্বাচনের আগে জুলাই হত্যার বিচার দৃশ্যমান করার দাবি জানান। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিন। সাংবিধানিক অর্ডার জারি করুন। গণভোট দিন। ফ্যাসিবাদের কার্যক্রম স্থগিত করুন।

জামায়াতের খুলনা মহানগর আমির মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন দলের খুলনা অঞ্চলের পরিচালক আবদুল খালেক, সহকারী পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, খুলনা জেলা আমির এমরান হুসাইন প্রমুখ।

ইসলামী আন্দোলনের সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দলের খুলনা মহানগর সভাপতি মুফতি আমানুল্লাহ। বক্তব্য দেন জেলা সভাপতি আবদুল্লাহ ইমরানসহ দলের অন্য নেতারা।

কোনো কোনো দল দখল, চাঁদাবাজিতে লিপ্ত

গতকাল দুপুরে সিলেটের বন্দরবাজার এলাকায় ইসলামী আন্দোলন এবং ধোপাদিঘীরপাড় এলাকায় খেলাফত মজলিস বিক্ষোভ মিছিল বের করে। বিকেলে নগরের রেজিস্টারি মাঠে সমাবেশ করে জামায়াত।

জামায়াতের সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের শাসনামলে যা ঘটেছে, বর্তমানেও তা ঘটছে। কোনো কোনো দল নিজের দলের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছে না। তারা দখল, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসে লিপ্ত।

সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন জেলা আমির হাবিবুর রহমান, সেক্রেটারি জয়নাল আবেদিন, মহানগর সেক্রেটারি মোহাম্মদ শাহজাহান আলী প্রমুখ। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ক ষ ভ ম ছ ল ব র কর দল র ক ন দ র য় জ ল ই সনদ র ছ ল ন দল র ম হ ম মদ আম র ম হ ল ইসল ম র রহম ন বর শ ল নগর র সরক র আবদ ল সহক র মসজ দ গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

এবার চার্লস–ক্যামিলাকে যুক্তরাষ্ট্রে আমন্ত্রণের পরিকল্পনা ট্রাম্পের

যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলাকে আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রে আমন্ত্রণের পরিকল্পনা করছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা বিবিসিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীনতার ২৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করবে। এ আয়োজনে যুক্তরাজ্যের রাজা–রানিকে আমন্ত্রণ জানানো হবে কিনা, সেটা নিশ্চিত নয়। তাঁদের আমন্ত্রণের সময় সম্পর্কে কিছুই জানানো হয়নি।

সর্বশেষ ২০০৭ সালে যুক্তরাজ্যের কোনো রাষ্ট্রপ্রধান যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছিলেন। ওই সময় যুক্তরাজ্যের তৎকালীন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ রাষ্ট্রীয় সফরে যুক্তরাষ্ট্র যান।

দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে সবে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরেছেন ট্রাম্প। যুক্তরাজ্য সফরে ট্রাম্পের সঙ্গী ছিলেন স্ত্রী মেলানিয়া, মেয়ে টিফানিসহ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।

আরও পড়ুনযুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্র বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করলেন ট্রাম্প১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সফরকালে তিনি যুক্তরাজ্যের রাজা–রানি, প্রিন্স অব ওয়েলস উইলিয়াম ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস কেট মিডলটনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গেও।

যুক্তরাজ্যে এটা ট্রাম্পের দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর। দায়িত্ব পালনকালে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের যুক্তরাজ্যে দুবার রাষ্ট্রীয় সফর বিরল ঘটনা। ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে ২০১৯ সালের জুনে প্রথমবার যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফরে গিয়েছিলেন।

আরও পড়ুনরাজকীয় ভোজে ট্রাম্প–মেলানিয়াকে কী কী খাওয়ালেন রাজা চার্লস১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ট্রাম্প দম্পতির সম্মানে রাজকীয় নৈশভোজ আয়োজন করেন চার্লস–ক্যামিলা। উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ জন অতিথির জন্য জাঁকজমকপূর্ণ এ ভোজসভা আয়োজন করা হয়।

ট্রাম্প বহু বছর ধরেই প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের একজন প্রশংসাকারী। সফরে ট্রাম্প উইন্ডসরে তাঁর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান।

আরও পড়ুনযুক্তরাজ্যে দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফরে ট্রাম্প১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ