নওগাঁ-৪ (মান্দা) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ইকরামুল বারীর (টিপু) মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে মান্দায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন মনোনয়নবঞ্চিত এম এ মতিনের অনুসারী নেতা-কর্মীরা। আজ মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার ফেরিঘাট এলাকায় নওগাঁ-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে এ বিক্ষোভ করা হয়।

গতকাল সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ২৩৭টি আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এতে নওগাঁ-৪ আসনে মান্দা উপজেলা বিএনপির সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকরামুল বারী মনোনয়ন পান। এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মতিন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, আজ বিকেল পাঁচটার দিকে উপজেলার ফেরিঘাট এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন এম এ মতিনের অনুসারীরা। বিক্ষোভে শতাধিক নেতা-কর্মী অংশ নেন। এতে প্রায় এক ঘণ্টা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে।

বিক্ষোভকারী নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে মান্দায় ইকরামুল বারীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, যা তৃণমূল বিএনপির কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। তাঁরা অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত বাতিল করে এম এ মতিনকে প্রার্থী হিসেবে পুনর্বিবেচনার দাবি জানান।

কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে উপজেলার ভালাইন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, পরানপুর ইউনিয়নের সভাপতি গোলাম মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ, কসব ইউনিয়নের সভাপতি আবুল হাশেম, সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলী, কাশোপাড়া ইউনিয়নের সভাপতি সোহানুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক কাজী নাজিম উদ্দিন, কালিকাপুর ইউনিয়নের সভাপতি আবদুল মান্নান, সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, গণেশপুর ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন, মান্দা ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক হামিদুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, মান্দা উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মতিন ত্যাগী, পরীক্ষিত ও বারবার কারা নির্যাতিত নেতা। তাঁর নেতৃত্বেই মান্দা বিএনপি ঐক্যবদ্ধ। অথচ তৃণমূলের মতামত অগ্রাহ্য করে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে। এম এ মতিনকে প্রার্থী ঘোষণা না করা হলে তৃণমূল বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবে। প্রয়োজনে গোটা মান্দা অচল করে দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া ইকরামুল বারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। যাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধান করা হবে।’

মনোনয়নবঞ্চিত এম এ মতিন বলেন, ‘দলের নিবেদিত কর্মী হিসেবে হাইকমান্ড যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে, আমি তা মেনে নিয়েছি। গতকালই আমি নেতা-কর্মীদের ইকরামুল বারীর পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছি। তারপরও দলের কিছু নেতা-কর্মী ও আমার কিছু সমর্থক আমাকে মনোনয়ন না দেওয়ায় কষ্ট পেয়েছে। তারই বহিঃপ্রকাশ হিসেবে তারা বিক্ষোভ করেছে। তবে বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইকর ম ল ব র ল ইসল ম ব এনপ র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় ঢাবিতে মানবেন্দ্র লারমাকে স্মরণ

সাবেক আইনপ্রণেতা ও বিপ্লবী নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করা হয়েছে। সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় এক স্মরণসভায় তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।

স্মরণসভার শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন এম এন লারমার ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা।

মানবেন্দ্র লারমা গরিব মেহনতি মানুষের নেতা উল্লেখ করে স্মরণসভায় সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, ‘তিনি কেবল পাহাড়ি মানুষের নেতা ছিলেন না। বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা সমগ্র নিপীড়িত মানুষের কথা বলেছেন। তিনি বাহাত্তরের সংবিধানে আদিবাসী, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের কথা তুলে ধরেছেন। তিনি সে সময় সংসদে দাড়িয়ে দৃঢ় কণ্ঠে প্রতিবাদ করেছিলেন যে তিনি একজন চাকমা, একজন চাকমা কোনো দিন বাঙালি হতে পারেন না।’

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, ‘জুলাই সনদে আজকে আদিবাসী মানুষের কথা বলা নেই। অথচ কেবল মুখে বহুত্ববাদী, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে। বিগত সময়ের দলীয় সরকার নাহয় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করেনি। কিন্তু গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময় পাহাড়ি আদিবাসীরা কমপক্ষে দুটি সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হয়েছেন। অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে রাজনৈতিভাবে সমাধানের লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের কথা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো উচ্চারণ করেনি।’

ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ তারেক বলেন, ‘চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান যে চেতনা নিয়ে শুরু হয়েছিল, আজ সেই চেতনা মৌলবাদী শক্তির কাছে লুট হয়ে গেছে। সত্তরের দশকে নতুন বাংলাদেশে মহান নেতা মানবেন্দ্র লারমা সেই স্বপ্ন দেখছিলেন, যে স্বপ্ন একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার, গরিব মেহনতি তথা নিপীড়িত পাহাড়ি আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বুনেছিলেন।’

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সহসাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, বাহাত্তরের সংবিধানে নিপীড়িত মানুষের অধিকারের কথা বলা হয়নি, নারী-পুরুষের বৈষম্য বিলোপ এবং মেহনতি মানুষের মৌলিক অধিকারের কথা তুলে ধরা হয়নি। সে সময় শোষিত মানুষের বন্ধু মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা তাঁদের হয়ে কথা বলেছেন। তিনি সংবিধান প্রণয়নের সময় শ্রমিক, গরিব ও আদিবাসী নিপীড়িত মানুষের কথা বলেছিলেন।

সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে এ দেশের যত রাজনৈতিক দল আছে, তারা অন্য জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করার মতো মানসিকতা এখনো তৈরি করতে পারেনি। ভোটের আগে মুখে বললেও তা বাস্তবে বাস্তবায়ন করে না।’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল কাফি রতন বলেন, ‘মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা জুম্ম জাতির জন্য ছাত্রজীবন থেকে অধিকারের কথা বলেছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সংবিধান যখন বাঙালি বলে আদিবাসী মানুষের পরিচয় করে দিতে চেয়েছিল, সেই সময় গণপরিষদে এম এন লারমা প্রতিবাদ করেছিলেন।’

স্মরণসভায় আরও বক্তব্য দেন লেখক ও সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, সাংবাদিক সাইফুর রহমান, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা ও নারীনেত্রী শিরিন হক। স্মরণসভা শেষে গান, কবিতা পাঠ ও প্রদীপ প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ