নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়া, জনতাকে ‘শাস্তি’ ও গণতন্ত্র নিয়ে কয়েকটি কৌতুক
Published: 4th, November 2025 GMT
১.
একটি প্রচলিত কৌতুক দিয়ে শুরু করি।
আকাশে উড়ন্ত বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছে। বিমানে যাত্রী মোট চারজন। একজন পাইলট, একজন রাজনৈতিক নেতা, একজন শিক্ষক, অপরজন ছাত্র। কিন্তু বিমানে প্যারাসুট আছে তিনটি! একটা প্যারাসুট নিয়ে পাইলট বললেন, ‘আমি লাফিয়ে পড়ছি, আমাকে তাড়াতাড়ি রিপোর্ট করতে হবে যে বিমান ক্রাশ করছে।’ রাজনৈতিক নেতা একটি প্যারাসুট নিয়ে বললেন, ‘দেশ ও জাতির জন্য আমার অনেক কিছুই করার এখনো বাকি। তাই আমার বেঁচে থাকা দরকার।’
পাঠক, নিশ্চয়ই ধরতে পারছেন এ রাজনৈতিক নেতা বাংলাদেশি ছাড়া আর কে হবেন। দেশের সব রাজনৈতিক নেতাই যে এমন তা বলছি না। এটিও তো ঠিক, আমাদের অনেক রাজনৈতিক নেতাও আছেন যারা দেশ ও দশের জন্য রাজনীতি করার কথা বলে গলা ফুলিয়ে ফেললেও বিপদে আগেই সরে পড়েন। নিজের দলের কর্মীদেরও বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে পালাতে একমুহূর্ত দেরি করেন না।
তবে কৌতুকটি এখানেই শেষ নয়। বাকি আছেন শিক্ষক ও এক ছাত্র। শিক্ষক বললেন, প্যারাসুট তো আছে আর একটা। এখন কী হবে? ছাত্র বলল, চিন্তা নেই স্যার। প্যারাসুট দুইটিই আছে। ওই নেতা ব্যাটা প্যারাসুট মনে করে আমার স্কুলব্যাগ নিয়ে ঝাঁপ দিয়েছে। এতক্ষণে নির্ঘাত অক্কাও পেয়েছেন। শিক্ষকের প্রাণে পানি এল। তাঁরা শুধু বাঁচার উপায় পেয়েই আনন্দিত হলেন না, নেতার করুণ পরিণতি দেখেও যেন ‘নিষ্ঠুর আনন্দ’ পেলেন। কেনই–বা পাবেন না?
আরও পড়ুন‘আমার তো রাজনীতি নাই, আমার হইল পেটনীতি’২৩ অক্টোবর ২০২৫২.একটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে। স্বাভাবিকভাবেই কেউ মনোনয়ন পাবেন, কেউ পাবেন না। এতে কেউ হতাশ হবেন, কেউ উল্লসিত হবেন—এটিই তো স্বাভাবিক। শুধু তা–ই নয়, আরও একটা ‘স্বাভাবিক’ প্রতিক্রিয়াও এখানকার রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ হয়ে পড়েছে। তা হচ্ছে মনোনয়নবঞ্চিত হলে সড়ক অবরোধ করা, ধর্মঘট-হরতাল ডাকা, ভাঙচুর করা, আগুন জ্বালানো ইত্যাদি ইত্যাদি।
হ্যাঁ, আরও একটা ‘স্বাভাবিক’ ঘটনাও আছে। মনোনয়ন পাওয়ার পর বঞ্চিত পক্ষের ওপর হামলে পড়া। এটিই তো দেখলাম গতকাল সোমবার দেশে বর্তমান বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির আনুষ্ঠানিক প্রার্থিতা ঘোষণার পর।
আমরা সংস্কার সংস্কার বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলছি ঠিকই, কিন্তু গাছের গোড়াতে পানি ঢালার কথা কেউ বলছি না, বললেও সেটি খুব একটা গুরুত্ব পাচ্ছে না। গাছের গোড়ার পানি ঢালার বিষয়টা কী? যারা রাষ্ট্র ও শাসনব্যবস্থার সংস্কার আনবে, তাদের ভেতরেই সংস্কারটা আগে হতে হবে। এর জন্য জরুরি হচ্ছে, মন ও মগজে সংস্কার আনা। সেটিই যদি করা না যায়, প্রায় তিন হাজার বছর আগে গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটলের বলে যাওয়া সেই উক্তিই সঠিক হয়—গণতন্ত্র হচ্ছে মূর্খ ও অযোগ্যদের শাসন।সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ-আশাশুনি আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য মনোনয়ন না পাওয়ার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার অর্ধদিবস হরতাল ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা। অথচ এ দেশে হরতালের রাজনীতি বহু আগেই আবেদন হারিয়ে ফেলেছে, সেটি তাদেরই সবার আগে বোঝার কথা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে। ফলে এ হরতাল জন-স্বতঃস্ফূর্তামূলক ছিল না। যার যার ব্যস্ততা নিয়েই মানুষ কাজেকর্মে যোগ দিতে ঘর থেকে বের হয়েছে। কিন্তু মনোনয়নবঞ্চিত নেতার সমর্থকেরা জোরপূর্বক হরতাল পালন করতে গিয়ে সড়ক অবরোধ করে যে চরম যানজট তৈরি করলেন, তাতে হাজার হাজার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হলো।
গতকাল সন্ধ্যায় প্রার্থিতা ঘোষণার পরপরই দ্রুত প্রতিক্রিয়াটা আসে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড আসন থেকে। সে আসনে বিএনপির এক সাবেক যুগ্ম মহাসচিবকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তাঁর বিক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকেরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
ঢাকা-চট্টগ্রামের যোগাযোগের লাইফলাইনখ্যাত দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক আটকে দেওয়া হয়। এতে দীর্ঘ যানজট ছড়িয়ে মহাসড়কের দুই পাশে, এমনকি এর প্রভাব পড়ে চট্টগ্রাম শহরের ভেতরেও। শুধু তা–ই নয়, মনোনয়নবঞ্চিত নেতার ক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকেরা ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনও অবরোধ করেন।
চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ড আসনে মনোনয়নবঞ্চিত নেতার বিক্ষুব্ধ কর্মী–সমর্থকেরা ঢাকা–চট্টগ্রাম শহর অবরোধ করেন। সোমবার সন্ধ্যায়উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক ন ত ধ কর ম হরত ল
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচন মানে গণতন্ত্র, এই ভুয়া তত্ত্ব থেকে বের হতে হবে: ফরহাদ মজহার
নির্বাচনের সঙ্গে গণতন্ত্রের কোনো সম্পর্ক নেই বলে মন্তব্য করেছেন চিন্তক ও কবি ফরহাদ মজহার।
সোমবার (১০ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড পিস স্টাডিজের উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ফরহাদ মজহার বলেন, “যদি আমরা কিছু করতে চাই তাহলে, দয়া করে নির্বাচনের ধারণাটা বাদ দেন। নির্বাচন মানেই গণতন্ত্র, এটা মারাত্মক ভুল। নির্বাচনের সঙ্গে গণতন্ত্রের কোনো সম্পর্ক নেই। নির্বাচন মানে গণতন্ত্র, এই ভুয়া তত্ত্ব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। গণতন্ত্র মানে হচ্ছে জনগণের সামষ্টিক অভিপ্রায় বাস্তবায়িত করা। এটার আরেকটা নাম আছে, সেটা হচ্ছে গণসার্বভৌমত্ব। জনগণের গাঠনিক ক্ষমতা কখনো হরণ করা যায় না। আন্দোলনসহ বিভিন্ন কিছুর মধ্য দিয়ে জনগণ তার এই গাঠনিক ক্ষমতাকে জারি রাখে।”
তিনি বলেন, “এখন সমস্যা হচ্ছে কেন্দ্রীয় ক্ষমতাকে যেখানে দিয়েছেন, পুরনো প্রতিষ্ঠানগুলো রয়ে গেছে। যেহেতু আমরা শেখ হাসিনার রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রেখেছি, সেই রাষ্ট্রটা এখনও আছে। ফলে সেই রাষ্ট্রটি আপনার সামনে দানবের মতো দাঁড়িয়ে আছে। এটাকে আপনি ভাঙতে পারছেন না। আপনি (ড. ইউনূস) বলছেন এটাকে সংস্কার করতে হবে।”
ফরহাদ মজহার বলেন, “আমাদের নতুন বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ খুব সহজ। নতুন গণপরিষদ গঠন করা এবং একটা গণপরিষদে নির্বাচন করা। গণপরিষদে আমাদের সমস্ত সাংবিধানিক প্রশ্ন, সকল আইনি প্রশ্ন, রাষ্ট্রীয় প্রশ্ন ফয়সালা করা। যখন আমরা সিম্পল ফরমুলাকে জটিল করে ফেলি, এদিক-ওদিক নিয়ে যাই, তখন বিভিন্ন শক্তির কারণে আমরা এটাকে তখন নষ্ট করে ফেলি।”
ড. ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “জনগণকে বলতে দেন, তারা কেমন বাংলাদেশ চায়। জনগণকে ক্ষমতা দেন। এটা না করে আপনি দু-তিনটা লোক নিয়ে এসে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করলেন। এটার তো কোনো ভ্যালিডিটি নেই। আপনাদের কোনো এখতিয়ারই নেই।”
আলোচনা সভায় কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/রায়হান/সাইফ