‘জাহানারার অভিযোগ ভিত্তিহীন, কল্পিত এবং সত্যতার কোনো অংশে মিল নেই
Published: 4th, November 2025 GMT
বাংলাদেশ জাতীয় নারী দলের ক্রিকেটার জাহানারা আলম অস্ট্রেলিয়াতে থিতু হয়েছেন। সিডনিতে খেলার পাশাপাশি কোচিংয়েও হাত পাকাচ্ছেন। এরই মধ্যে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া থেকে লেভেল ২ কোচিং কোর্স সম্পন্ন করেছেন। যা নিঃসন্দেহে নারী ক্রিকেটের জন্য বিরাট খবর।
কিন্তু হঠ্যাৎ তাকে নিয়ে আলোচনার কারণ বাংলাদেশের ক্রিকেট। সম্প্রতি দৈনিক কালের কণ্ঠকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাতীয় দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতির বিরুদ্ধে দলে আধিপত্য বিস্তার, সিন্ডিকেট তৈরি, ক্রিকেটারদের মারধর করা, জুনিয়র ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করাসহ নানা অভিযোগ করেছেন। ড্রেসিং রুমে ভয়ের পরিবেশ বিরাজ করছে এবং নানা শঙ্কায় অনেকে মুখ খুলতে পারছেন না বলেও দাবি করেন তিনি। একই সঙ্গে তাকে পরিকল্পিতভাবে বাদ দেওয়া এবং তীর্যক মন্তব্য ও অভিযোগ করেছেন নির্বাচক, অধিনায়ক, স্টাফদের নিয়ে।
তার দেওয়া সাক্ষাৎকার নজরে এসেছে বাংলাদেশে ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি)। যা কোনোভাবেই ভালোভাবে নেয়নি বিসিবি। জাহানারার বক্তব্য প্রত্যাহার করে বিসিবি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, জাহানারার সব অভিযোগ ভিত্তিহীন, কল্পিত এবং সত্যতার কোনো অংশে মিল নেই। বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নারী দল যখন আন্তর্জাতিক স্তরে প্রশংসনীয় অগ্রগতি এবং একতার পরিচয় দিচ্ছে, তখন এমন হানিকর মন্তব্য করা অত্যন্ত দুঃখজনক।
ক্রিকেট বোর্ডের মতে, এই মন্তব্যগুলো সময়োপযোগী নয়, সুপরিকল্পিত এবং বোঝা যায় যে এর উদ্দেশ্য নারী দলের মনোবল ও আত্মবিশ্বাস ক্ষুণ্ন করা। বিসিবি উল্লেখ করেছে, বর্তমানে বাংলাদেশ ক্রিকেটের পরিকল্পনা ও কার্যক্রমে যে ব্যক্তি অংশগ্রহণ করছে না, তিনি জনসমক্ষে বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য দেওয়া অবাঞ্চিত এবং দুঃখজনক।
ওই সাক্ষাৎকারে জাহানারা বলেছেন, “যদি মনে করে কাউকে ‘সাইজ’ করতে হবে, তখন জ্যোতির সঙ্গে আলোচনা করে। জ্যোতির আবার আলাদা একটি গ্রুপ। ওর সঙ্গে আছে পিংকি (ফারজানা হক) ও ইশমা (তানজিম)। রাবেয়া ওর ডান হাত। এখন সুমাইয়াও যোগ হয়েছে। এই হচ্ছে জ্যোতির প্যানেল। এরা যে কী করতে পারে, আপনার কোনো ধারণাই নেই। পুরো ক্রিকেটটাকে এরা ধ্বংস করে দিচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুন্দর পরিবেশটা ওরা রাখছে না। ‘’
তিনি আরো বলেছেন, ‘‘সিলেটে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের ফিটনেস সেশন করার পর কেউ যখন ঠিকমতো হাঁটতেও পারছে না, তখন দেখি এক জুনিয়র জ্যোতির কিটব্যাগ টেনে এক মাঠ থেকে আরেক মাঠে নিচ্ছে। জুনিয়ররাই সব সময় ওর কিটব্যাগ টানে। কতবার যে জ্যোতিকে বলতে শুনেছি, ‘এই বসে আছিস কেন? যা আমার ব্যাগ নামা।’ জুনিয়ররা আসলে করতে বাধ্য, কিছু করার নেই। সিলেটেরই আরেকটি ঘটনা বলি। দুটি ড্রেসিংরুমের একটি জুনিয়রদের জন্য বরাদ্দ। জ্যোতিকে দেখলাম, ওটায় গিয়ে জুনিয়রদের দিয়ে মাথা টেপাচ্ছে, চুলে তেল দেওয়াচ্ছে।’’
নির্বাচকদের নিয়ে জাহানারার দাবি, ‘‘বাংলাদেশ গেমসের ফাইনালের পর থেকে শুরু হয় আমার সঙ্গে মঞ্জু ভাইয়ের (নারী দলের সাবেক নির্বাচক ও ম্যানেজার মঞ্জুরুল ইসলাম) দুর্ব্যবহার, অপমান ও টিজিং। তখন থেকে মঞ্জু ভাই ও তৌহিদ ভাই (বিসিবির নারী ক্রিকেট বিভাগের সাবেক ইনচার্জ প্রয়াত তৌহিদুর রহমান) আমার ফোন ধরতেন না। উনারা দুজন আমাকে নিয়মিত অপমান করতে শুরু করেন। তাঁরা চাইছিলেন আমি যেন হারিয়ে যাই। ২০২৩ সাল পর্যন্ত ওভাবেই চলছিল। বিকেএসপিতে দল নির্বাচনের অনুশীলন ম্যাচে গিয়ে দেখি আমার সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ। পরে জানতে পারি, মঞ্জু ভাই ও তৌহিদ ভাইয়ের সরাসরি নির্দেশনা ছিল আমাকে কিছু না দেওয়ার। যে সফরে বাদ পড়লাম, তার আগে থেকে জ্যোতিও আমার সঙ্গে কথা বলে না।’’
বিসিবি সরাসরি এমন বিষয় প্রত্যাখ্যান করেছে, ‘‘বিসিবি স্পষ্ট করতে চায়, নারী জাতীয় দলের নেতৃত্ব, খেলোয়াড় ও ব্যবস্থাপনায় বোর্ডের পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা রয়েছে। বোর্ড কোনো প্রমাণ খুঁজে পায়নি যা এই দাবিগুলোর সমর্থন করে। দল ও এর কর্মীদের পেছনে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত জাহানারার করা অভিযোগের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি এবং বোর্ড দৃঢ়ভাবে দলের পক্ষেই রয়েছে।’’
ঢাকা/ইয়াসিন
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
রামগতিতে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন
বর্ষা মৌসুম শেষ হতেই লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলায় শুরু হয়েছে ফসলি জমি ও জনস্বাস্থ্যের ওপর এক নতুন আগ্রাসন। সেখানে নজিরবিহীন ঔদ্ধত্যের সঙ্গে চলছে অনুমোদিত ২টি ভাটার বিপরীতে ৫১টি অবৈধ ইটভাটা। এর মধ্য দিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের চরম ব্যর্থতা এবং পরিবেশ বিনষ্টকারী প্রভাবশালীদের কাছে তাদের নতজানু অবস্থান স্পষ্টভাবে প্রকাশ পাচ্ছে। যে কারণে আদালতের নির্দেশও সেখানে কোনো কাজে আসছে না। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুযায়ী, কৃষিজমি এবং লোকালয়ের কাছাকাছি ইটভাটা স্থাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু রামগতির এই ৫১টি ভাটাই চলছে কৃষিজমি গিলে খেয়ে। চর আফজল গ্রামের কৃষক নুরুল আলমের কথায় উঠে আসে সেই নির্মম সত্য, ‘গ্রামে একসময় ছিল ধান ও সবজির জমি। এখন সেখানে সারি সারি ইটভাটা। জমির মাটি কেটে নেওয়ায় ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে।’ জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি (টপ সয়েল) কেটে ইট তৈরি করতে গিয়ে ভবিষ্যতের খাদ্যনিরাপত্তার মেরুদণ্ডও ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এই ভাটাগুলো সাত মাস ধরে (নভেম্বর থেকে মে) যে কালো ধোঁয়া ও দূষণ ছড়ায়, তা স্থানীয় লোকজনের মধ্যে ভয়াবহ স্বাস্থ্য–সংকট তৈরি হয়েছে।
আইন লঙ্ঘনের জন্য যেখানে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড ও বড় অঙ্কের জরিমানার বিধান রয়েছে, সেখানে প্রশাসনের ভূমিকা অত্যন্ত দুঃখজনক। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, এসব অবৈধ ভাটা বন্ধে প্রতিবছর ‘লোকদেখানো অভিযান’ চালানো হয়, যেখানে শুধু সাময়িক জরিমানা দিয়ে মালিকেরা পার পেয়ে যান। জরিমানা দিয়ে প্রশাসন চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভাটার কার্যক্রম আবার পুরোদমে শুরু হয়।
যখন হাইকোর্ট স্পষ্ট করে রামগতি ও কমলনগর উপজেলার ৪৮টি অবৈধ ভাটা বন্ধের নির্দেশ দেন এবং প্রশাসন তা বাস্তবায়ন করতে পারে না, বরং হাইকোর্টের আদেশের পরও নতুন ভাটা তৈরি হয়, তখন পরিবেশ অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসনের সক্ষমতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন ওঠে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানিয়েছেন, হাইকোর্টের নির্দেশে কয়েকটি ভাটা ভেঙে দিয়েছিল প্রশাসন। পরে মালিকেরা আবার মেরামত করে চালু করেছেন। ইউএনওর বক্তব্য থেকে এটিই প্রতীয়মান হয়, এভাবে অভিযান চালিয়ে কোনো সুফল মিলছে না। এ ক্ষেত্রে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের ক্ষোভও যথার্থ। তিনি বলেছেন, মালিকদের প্রভাবের কাছে প্রশাসনের নতি স্বীকারের কারণেই নাগের ডগায় এসব অবৈধ ভাটা বছরের পর বছর ধরে গড়ে উঠছে এবং টিকে থাকছে।
স্থানীয় প্রশাসন কঠোর না হওয়া ছাড়া ইটভাটা বন্ধ করা যাবে না। একবার বন্ধ করে আবার চালু করার মতো সুযোগ রাখা যাবে না। যথাযথ আইন প্রয়োগ করে মূল হোতাকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মুখোমুখি করতে হবে।