প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৮০তম অধিবেশনে অংশ নিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গীদের সংখ্যা নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সাম্প্রতিক দাবি ‘ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এবং যাচাই–বাছাইবিহীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্ট থেকে নেওয়া।’

আজ শুক্রবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে প্রেস সচিব এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার বর্তমান প্রতিনিধিদল অতীতের হাসিনা আমলের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে ছোট এবং অনেক বেশি মনোযোগী, কর্মঠ ও ফলাফলমুখী।’

শফিকুল আলম বলেন, টিআইবি দীর্ঘদিন ধরে স্বচ্ছতার পক্ষে কাজ করছে এবং একটি মর্যাদাপূর্ণ নাগরিক সমাজ সংগঠন। তবে যাচাই করা তথ্যের পরিবর্তে গুজব ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভুয়া তথ্যের ওপর নির্ভর করে জনসমক্ষে বিবৃতি দেওয়া হতাশাজনক।

প্রেস সচিবের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এবারের প্রতিনিধিদলে সদস্যসংখ্যা ৬২, যা টিআইবির দাবি করা ১০০-এর বেশি নয়। গত বছর প্রতিনিধিদলে সদস্য ছিল ৫৭ জন। তবে এতে প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে ভ্রমণ করা ছয়জন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি বলেও তিনি পরিষ্কার করেন।

শফিকুল আলম জানান, এবারের সফরসঙ্গীদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নিরাপত্তা কর্মকর্তা, যাঁরা প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সমর্থকদের পক্ষ থেকে আসা প্রকাশ্য হুমকির কারণে এই নিরাপত্তাব্যবস্থা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। অনেক কর্মকর্তা প্রতিদিন টানা ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করছেন।’

প্রেস সচিব আরও জানান, গত পাঁচ দিনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল অন্তত এক ডজন উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছে, যার মধ্যে ছয়টির বেশি রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ছিল।

শফিকুল আলম বলেন, ‘প্রতিনিধিদলের উদ্দেশ্য হলো জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের মতো বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক আসরে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ তুলে ধরা, যেখানে বৈশ্বিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।’ তিনি উল্লেখ করেন, এবারের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন বাংলাদেশের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে, এমন সময়ে যখন বিভিন্ন মহল দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে এবং জুলাই গণ–অভ্যুত্থান নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

আরও পড়ুনপ্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীর বড় তালিকা নিয়ে প্রশ্ন১১ ঘণ্টা আগে

প্রেস সচিব অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীরা কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে অন্তর্বর্তী সরকার ও জুলাই গণ–অভ্যুত্থান সম্পর্কে ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছে এবং বিদেশে লবিং করছে, যেখানে কিছু আন্তর্জাতিক মহলের নীরব সমর্থনও রয়েছে।

শফিকুল আলম জানান, সফরসঙ্গী তালিকায় এমন ব্যক্তিরাও আছেন, যাঁরা ৩০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় রোহিঙ্গা সম্মেলনে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করবেন।

এ ছাড়া কয়েকজন উপদেষ্টা আনুষ্ঠানিক প্রতিনিধিদলের বাইরে থেকেও বৈশ্বিক সমকক্ষদের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন। পাশাপাশি দেশের জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদেরও এ সফরে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, যাঁদের সহায়তায় বেশ কিছু কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন বলে প্রেস সচিব জানান।

শফিকুল আলম বলেন, ‘এই অন্তর্ভুক্তিমূলক পদক্ষেপ স্পষ্ট বার্তা দেয় যে বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রতি দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

আরও পড়ুনজাতিসংঘে শতাধিক প্রতিনিধি, কর্তৃত্ববাদী চর্চার পথেই হাঁটল অন্তর্বর্তী সরকার: টিআইবি২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র সফরসঙ গ কর মকর ত ট আইব

এছাড়াও পড়ুন:

নিউইয়র্ক সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগদান শেষে নিউইয়র্ক থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকালে দেশে ফিরেছেন।

নয় দিনের নিউইয়র্ক সফর শেষে প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফিরলেন। এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে আজ সকাল ৯টায় ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বাসসকে এই তথ্য জানান।

এর আগে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ১১টা ১০ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সফরসঙ্গীরা যুক্তরাষ্ট্রের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি সালাহউদ্দিন নোমান চৌধুরী ও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারেক এমদাদ আরিফুল ইসলাম বিমানবন্দরে প্রধান উপদেষ্টাকে বিদায় জানান।

সফরকালে গত ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা। ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা মুসলিম ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুর পরিস্থিতিবিষয়ক’ উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের উদ্বোধনী সম্মেলনে বক্তব্য দেন।

২৯ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তাঁর অবস্থান করা হোটেলে সাক্ষাৎ করেন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপো গ্রান্ডি। একই দিন জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশ, স্থলবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ এবং ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রপুঞ্জবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল রাবাব ফাতিমাও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

নিউইয়র্ক সফরে মুহাম্মদ ইউনূস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া সংবর্ধনায় যোগ দেন। তিনি ট্রাম্পকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।

এ ছাড়া মুহাম্মদ ইউনূস নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান, ভুটান, কসোভোসহ বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র-সরকারপ্রধানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।

প্রধান উপদেষ্টা গত ২২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিউইয়র্ক সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা