চাঁদপুরে ইলিশের ডিম বিক্রি শুরু, ২৪০০ থেকে ৩৬০০ টাকা কেজি
Published: 28th, September 2025 GMT
চাঁদপুরে পুরোদমে শুরু হয়েছে ইলিশের ডিম বেচাবিক্রি। এ কাজের জন্য চলতি মৌসুমে ময়মনসিংহ ও জামালপুর থেকে প্রায় অর্ধশত লোক চাঁদপুরের মাছঘাটে এসেছেন। আগামী ৩ অক্টোবর মা ইলিশ রক্ষায় অভিযান শুরুর আগ পর্যন্ত চলবে এই ডিম সংগ্রহ ও বিক্রির কাজ।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বড়স্টেশনের মাছঘাটের রাস্তার পাশে টিনশেডের ঘরগুলোতে প্রকাশ্যেই ইলিশের ডিম সংগ্রহ ও বেচাকেনা করতে দেখা গেল।
জামালপুর থেকে আগত শ্রমিকরা জানান, ডিম সংগ্রহের জন্য ঘাটে নিলামে ওঠা নোয়াখালীর হাতিয়া বা চট্টগ্রাম থেকে আসা ৩/৪টায় কেজি হয় এমন নরম ইলিশ মণ হিসেবে কেনা হয়। এরপর সেই ইলিশের আঁশ ছাড়িয়ে পেটের ভিতর পরিষ্কার করার সময় ডিম বের করে নেওয়া হয়। এরপর সেই মাছ পানিতে ধুয়ে লবণ দিয়ে স্তুপাকারে সাজানো হয়। পরে সেই ডিম ড্রামের গরম পানি কিংবা সনাতনী পদ্ধতিতে কয়েক মাসের জন্য লোনা ইলিশ হিসেবে সংরক্ষণ করে অন্যত্র বিক্রির উদ্দ্যেশ্যে পাঠানো হয়।
ডিম বেচাকেনার উদ্যোক্তারা জানান, ইলিশের ডিমের আকার অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করে বাক্সে করে রপ্তানি কিংবা কেজি দরে খুচরাও বিক্রি করেন পাইকাররা। এরমধ্যে ছোট সাইজের ডিম ২৪০০ থেকে ২৫০০ টাকা এবং বড় সাইজের ডিম তিন হাজার থেকে ৩৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ইলিশের ডিম বের করে বিক্রির জন্য এখানে সিজনে ১৫/১৬ জন লোক উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তবে অন্য সময় তারা আড়তদারির কাজে জড়িত থাকে।
ক্রেতারা জানান, প্রতিদিনই দূর দূরান্ত থেকে এসে ইলিশ কেনার পাশাপাশি ইলিশের ডিম কিনতে বড়স্টেশন মাছঘাটে আসেন তারা। ছোট ডিমের চেয়ে বড় সাইজের ডিমের প্রতিই সবার আগ্রহ। আগের তুলনায় এবার দামও কিছুটা কম।
বড়স্টেশন মাছঘাটের ব্যবসায়ী সম্রাট জানান, পদ্মা-মেঘনার বড় সাইজের ইলিশের দামে পোষাতে না পেরেই মূলত ব্যবসায়ীরা হাতিয়া, রামগতির নরম ছোট ইলিশগুলো মণ হিসেবে কিনে আনেন। সেই ইলিশ থেকে ডিম বের করে ক্রেতার চাহিদা মেটান। ইলিশের ডিম সুস্বাদু হওয়ায় বিদেশেও রপ্তানি করা হয়।
এ বিষয়ে চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছঘাটের মৎস্য বনিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো.
ঢাকা/অমরেশ/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ড ম ব র কর স ইজ র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
‘বাসটির সঙ্গে একটি ট্রাকের ধাক্কা লাগে, এরপর আর কিছু মনে নেই’
‘আমরা বসেছিলাম বাসটির সামনে থেকে দুই সিট পড়ে। যতটুকু মনে পড়ে, সামনে একটি মোটরসাইকেল বেপরোয়াভাবেই চলছিল। ডানে-বাঁয়ে বারবার কাত হচ্ছিল সেটি। মোটরসাইকেলটিকে অতিক্রম করতে গিয়ে বাসটির সঙ্গে একটি ট্রাকের ধাক্কা লাগে, এরপর আর কিছু মনে নেই। হুঁশ আসার পর নিজেকে ঝোপঝাড়ের মধ্যে পাই। তখন স্ত্রী আর ছেলে কোথায় আছে, সে চিন্তা হচ্ছিল বারবার।’
কিছুটা দম নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন বিজয় কুমার দেব। গতকাল রোববার রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। গতকাল সন্ধ্যায় সীতাকুণ্ড পৌর সদরের পন্থিছিলা বটতল এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন পাঁচজন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ২১ জন, যাঁদের মধ্যে বিজয় কুমার দেব ও তাঁর স্ত্রী-সন্তান রয়েছেন। রাতে হাসপাতালে যখন বিজয় কুমারের সঙ্গে কথা হচ্ছিল, তখন সবে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে এসেছেন তিনি। তাঁর শার্টের এক পাশে রক্তের দাগ স্পষ্ট।
বিজয় কুমার দেব সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক। চার দিন আগে তাঁর শাশুড়ি মারা যান। সে কারণে স্ত্রী কণিকা চৌধুরী ও ছেলে অর্ণব দেবকে নিয়ে মিরসরাই উপজেলার বারইয়ারহাট এলাকায় গিয়েছিলেন তিনি। কণিকা চৌধুরী বাঁশবাড়িয়া উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ও অর্ণব দেব আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
বিজয় কুমার দেব জানান, বারইয়ারহাট থেকে সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড এলাকায় ফিরছিলেন সিডিএম নামের বাসে করে। তিনি ও তাঁর স্ত্রী যেখানে বসেছিলেন এর দুই আসন পড়ে ছিল তাঁদের ছেলে। দুর্ঘটনায় তিনি গুরুতর আহত না হলেও স্ত্রী মাথায় আঘাত পেয়েছেন। সেখানে সেলাই দেওয়া হয়েছে। তবে ছেলের অবস্থা গুরুতর। তাঁর হাত ভেঙেছে এবং মুখ ও মাথায় আঘাত রয়েছে।
দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই চারজন নিহত হন। এরপর ঘটনাস্থল থেকে আরও ২১ জনকে উদ্ধার করে সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান আরও একজন।
সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন বলেন, বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাছে ধাক্কা দেয়। এরপর খাদে পড়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে তাঁরা চারজনের লাশ উদ্ধার করেছেন। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ি ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, সীতাকুণ্ডের দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের মধ্যে রাত ১১টা পর্যন্ত ১৬ জনকে চিকিৎসার জন্য আনা হয়। তাঁদের মধ্যে ১০ জনকে নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে এবং ১ জনকে ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। ২ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডের সহকারী রেজিস্ট্রার উপল চৌধুরী বলেন, ‘পাঁচজনকে ক্যাজুয়ালটিতে আনা হয়েছিল। এর মধ্যে দুজনকে নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে। একজনের বুকে আঘাত রয়েছে। তাঁকে অস্ত্রোপচার শেষে ক্যাজুয়ালটিতে ভর্তি করা হয়েছে। দুজন পর্যবেক্ষণে আছেন। প্রয়োজন হলে ভর্তি নেওয়া হবে।’
সাধারণত মাথায় আঘাত থাকলে নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সীতাকুণ্ডের দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ওয়ার্ডটিতে ভর্তি থাকা ১০ জনের মধ্যে ৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। রেজিস্ট্রি খাতার তথ্য অনুযায়ী, নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা ব্যক্তিরা হলেন অর্ণব দেব (২৩), জমির হোসেন (৩০), মোজাম্মেল হক (৬০), রিজভী (৩২), শিখা (৪৫), অর্ণব (৬), রিংকু দাশ (৪০), নিশান দাশ (১৫), ইমন (১৯) এবং আরেকজন অজ্ঞাতপরিচয় তরুণ (২৫)। তাঁদের প্রত্যেকের মাথায় ও হাত-পায়ে আঘাত রয়েছে।
হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে দেখা গেছে, সেখানে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সেরা। আহত ব্যক্তিদের কারও হাতে, কারও পায়ে ব্যান্ডেজ। প্রায় সবার মাথায় সেলাই ও ব্যান্ডেজ করে রাখা হয়েছে। কথা বলতে এগিয়ে গেলেও তাঁরা কথা বলতে পারছেন না। ইশারায় চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলছেন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার খোরশেদ আনোয়ার বলেন, ভর্তি থাকা ১০ জনের মধ্যে ৩ জনের পরিবারের খোঁজ পাওয়া যায়নি। ৫ জনের অবস্থা গুরুতর। সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে। তাঁদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।