ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ম্যানহোলে পড়ে যাওয়া মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারীকে তিন দিন পর জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে, যা নিয়ে নগরজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা শোনা গেছে।

শনিবার (১৫ নভেম্বর) রাত পৌনে ১২টার দিকে নগরীর জেলাখানা রোড এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয় ৩৮ বছর বয়সি এই নারীকে, যিনি ময়মনসিংহ নগরের গল্ডা এলাকার বাসিন্দা। জানা গেছে, এই নারী উচ্চশিক্ষিত; তবে একটি দুর্ঘটনার কারণে ভারসাম্য হারিয়েছেন তিনি।

আরো পড়ুন:

বিরামপুর রেলস্টেশনে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ নারীর সন্তান প্রসব

কুষ্টিয়ায় রেলসেতুর নিচ থেকে নারীর রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার

বুধবার (১২ নভেম্বর) সকালে ওই নারী বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন, তবে রাতে আর ফেরেননি। বিভিন্ন এলাকায় ও আত্মীয়দের কাছে খোঁজ নিয়ে না পেয়ে তার বাবা বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) ময়মনসিংহ কতোয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

উদ্ধারের সময় ঘটনাস্থলে জড়ো হয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দুজন রিকশাচালক উদ্ধারের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন, যাদের মধ্যে একজনের নাম মো.

রোমান মিয়া। 

এই রোমান মিয়ার বর্ণনা অনুযায়ী, ঢাকনা দেওয়া যে ম্যানহোলের নিচ থেকে ওই নারীকে উদ্ধার করা হয়, সেখান থেকে আনুমানিক ৫০ ফুট দূরে আরেকটি ম্যানহোলের ঢাকনা ছিল না অনেক দিন ধরেই। তারা ধারণা করছেন, ঢাকনা না থাকা ম্যানহোলে দুই-তিন আগে পড়ে যান ওই নারী। হয়তো ড্রেনের নিচ দিয়ে কোনোভাবে ঢাকনা দেওয়া ম্যানহোলের নিচে চলে যান। 

ম্যানহোলে পড়ে যাওয়ার পর থেকেই হয়তো বাঁচার আকুতি জানাচ্ছিলেন ওই নারী- এমনটি ধারণা রোমান মিয়ার। তার মতে, এলাকাটি ময়মনসিংহ-টঙ্গাইল মহাসড়কের খুব কাছে হওয়ায় সারাক্ষণই গাড়ির শব্দ থাকে।  ম্যানহোলের কাছে দোকানপাট ও একটি ওয়ার্কশপ থাকায় শব্দের কারণে ওই নারীর বাঁচার আকুতি শোনা যায়নি। 

“‍রাত পৌনে ১২টার দিকে এলাকা নীবর হওয়ায় তখন তার আকুতি কানে আসে। পরে আমরা উদ্ধার করি,” বলেন রোমান মিয়া।

রোমান মিয়ার বর্ণনামতে, রাতে ওই নারীকে উদ্ধারের পর প্রথমে তার পরিচয় জানা যায়নি। তিনি কোনো কথা বলতে পারেননি। তার সারা শরীর ফ্যাকাশে ছিল। 

স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ মাসুদ ও তার স্ত্রী উদ্ধার করা নারীকে তাদের বাসায় নিয়ে যায়।

মোহাম্মদ মাসুদ বলেন, “বাসায় নেওয়ার পর আমার স্ত্রী তাকে প্রথমে গরম পানি দিয়ে গোসল করিয়ে গরম পোশাক পরিয়ে দেন। তারপর তাকে কিছু খেতে বলা হলেও তিনি খাননি। তিনি মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হওয়ায় নিজের পরিচয়ও বলতে পারেননি। কিছুক্ষণ পর আরেকজন তাকে চিনতে পারেন। এরপর ওই নারীকে ময়মনসিংহ নগরীর জেলখানা রোডে তার বাবার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।”

ভুক্তভোগী নারীর বাবার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, তার মেয়ে উচ্চশিক্ষিত। তবে ২০১৩ সালে একটা দুর্ঘটনার পর থেকে মানসিকভাবে কিছুটা ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। তাকে ঘরে রাখা যায় না। দিনের বেলা বেশিরভাগ সময়ই বাইরে থাকত। তবে রাতে ঠিকই বাড়িতে ফিরে আসত। গত বুধবার রাতে না ফেরায় বৃহস্পতিবার থানায় জিডি করেন তিনি।

এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের সচিব এবং প্রকৌশলীকে একাধিকবার কল করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।

ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম বলেন, ‍ফেসবুকে দেখেছি ম্যানহোলে পড়ে যাওয়া এক নারীকে তিন দিন পর উদ্ধার করা হয়েছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

ম্যানহোলের ঢাকনা চুরি হয়, সে ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। তবে সিটি করপোরেশন এ ক্ষেত্রে আরেকটু দায়িত্বশীল হলে ভালো হয়, বলেন ওসি।

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উদ ধ র ভ রস ম য ওই ন র

এছাড়াও পড়ুন:

ময়মনসিংহে মামলা করায় নারী যাত্রাশিল্পীকে মারধর, চুল কেটে নির্যাতন

ময়মনসিংহ নগরে এক নারী যাত্রাশিল্পীকে মারধর ও চুল কেটে মুখে কালি মাখিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। এ ঘটনায় ওই ভুক্তভোগী নারী থানায় মামলা করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তার শাহ আলম (৪০) চরকালীবাড়ি এলাকার মো. রাশেদের ছেলে। তিনি মামলার ৩ নম্বর আসামি। গতকাল রাত আটটার দিকে তাঁকে জুবিলী ঘাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

নির্যাতনের শিকার যাত্রা নৃত্যশিল্পীর নাম মোছা. রুপা। তিনি নগরের বড় কালীবাড়ি এলাকার বাসিন্দা শহিদুল ইসলামের স্ত্রী। তবে তাঁরা নগরের পাটগুদাম ব্রিজ মোড় এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই মাসুদ জামেলী বলেন, ওই নারীকে বেঁধে চুল কেটে মারধর করা হয়েছে, মুখে কালি মেখে দেওয়া হয়েছে। দুটি পরিবারের মধ্যে আগে থেকেই মামলা চলছিল। অপহরণ মামলার আসামিরা জামিনে ছিলেন। আদালতের আরেকটি ভাঙচুরের মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ গত বুধবার দুপুরে ফিরে আসে। তখন প্রতিপক্ষ রাস্তায় রুপাকে আটকে নির্যাতন চালায়।

ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, বড় কালীবাড়ি লোকনাথ মন্দির-সংলগ্ন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরের একটি বস্তিতে বাস্তুহারা সমবায় সমিতির কাছ থেকে প্রায় ১৫ বছর আগে ৩ লাখ টাকায় একটি জমি কেনেন রুপা। গত বছর সেখানে আধা পাকা ঘর করতে গেলে সমবায় সমিতির সদস্য শাহ আলম চাঁদা দাবি করেন। ১ লাখ টাকা দেওয়ার পরও আরও ১০ লাখ টাকা দাবি করেন তিনি। টাকা না পেয়ে গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর রুপার বাড়িতে হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় রুপা আদালতে মামলা করেন। এরপর ক্ষিপ্ত হয়ে চলতি বছরের ৬ এপ্রিল রুপার অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে মো. রনি সুলতানকে অপহরণ করা হয়। এ ঘটনায় রুপা ৯ এপ্রিল মামলা করলে আসামি শাহ আলমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান। রুপার করা ভাঙচুর মামলার তদন্ত করতে পুলিশ বুধবার দুপুরে ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশ চলে যাওয়ার পর প্রতিপক্ষ রাস্তায় রুপাকে ধরে নিয়ে বেঁধে মারধর করে, চুল কেটে ও মুখে কালি মেখে হেনস্তা করে। এ সময় তাঁর সামনে মাদক ও টাকা রেখে ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে রুপার স্বামী জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করলে পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে।

রুপা বলেন, ‘পুলিশ চলে যাওয়ার পরই আমাকে রাস্তায় ধরে নিয়ে গিয়ে বেঁধে চুল কেটে মুখে কালি মেখে দেয়। আমি বিচার চাই।’

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শিবিরুল ইসলাম বলেন, মামলা তদন্ত করে পুলিশ ফিরে আসার পর ওই নারীর সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মামলা নেওয়া হয়েছে এবং একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • একাদশ জাতীয় ত্বকী চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতার ফলাফল প্রকাশ
  • ময়মনসিংহে দুষ্কৃতকারীদের আগুনে পুড়ল কাভার্ডভ্যান
  • ময়মনসিংহে তিন প্রজন্ম ধরে মহিষের দুধের বিখ্যাত ‘সেনবাড়ির দই’
  • সরকারের টাকায় সচিবের বাড়ির কবরস্থান উন্নয়ন, বরাদ্দ ২৪ লাখ টাকা
  • ময়মনসিংহে মামলা করায় নারী যাত্রাশিল্পীকে মারধর, চুল কেটে নির্যাতন
  • চার বিভাগে নতুন বিভাগীয় কমিশনার