২০২২ সালে মুক্তি পাওয়া ‘বারবারিয়ান’-এর কথা মনে আছে? এয়ারবিএনবি রিজার্ভেশন থেকে শুরু হওয়া সেই অদ্ভুত হরর সিনেমাটি যেন হঠাৎ করেই ঝড় তুলেছিল। রাতারাতি পরিচালক জ্যাক ক্রেগার হয়ে উঠেছিলেন ভূতের সিনেমার নতুন রাজা। তবে দুর্দান্ত ভিজ্যুয়ালের আড়ালে ‘বারবারিয়ান’-এর গল্পটা ছিল দুর্বল। নির্মাতার দ্বিতীয় সিনেমা ‘ওয়েপনস’ নিয়ে তাই অপেক্ষা ছিলই, হরর দুনিয়ার কোন জাদুতে এবার মুগ্ধ করবেন তিনি; এ কৌতূহলও আরও বাড়িয়েছিল সিনেমার টিজার, ট্রেলার। শেষ পর্যন্ত কেমন হলো সিনেমাটি?

একনজরে
সিনেমা: ‘ওয়েপনস’
ধরন: মিস্ট্রি-হরর
পরিচালক: জ্যাক ক্রেগার
অভিনয়ে: জুলিয়া গার্নার, জশ ব্রোলিন, অলডেন এহরেনরাইখ, বেনেডিক্ট ওয়ং
দৈর্ঘ্য: ২ ঘণ্টা ৮ মিনিট

গল্প শুরু হয় ১৭ স্কুলছাত্রের লাপাত্তা হওয়ার ঘটনা দিয়ে। হঠাৎই করে রাত ২টা ১৭ মিনিটে বিছানা ছেড়ে ১৭ শিশু বেরিয়ে যায় অন্ধকারে। পুলিশ হতবাক, অভিভাবকেরা ক্ষুব্ধ। অভিযোগের তির ছুটে যায় স্কুলে নতুন আসা শিক্ষিকা মিস জাস্টিন গ্যান্ডির (জুলিয়া গার্নার) দিকে। কারণ, ১৭ শিক্ষার্থীর সবাই তাঁর ক্লাসের। ছেলেকে হারিয়ে স্কুলের এক মিটিংয়ে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন আর্চার গ্রাফ (জশ ব্রোলিন)। তিনি সরাসরি অভিযোগ তোলেন জাস্টিনের দিকে, ‘আমাদের সন্তানদের সঙ্গে কী করেছ?’ এখন যুক্তরাষ্ট্রে যেভাবে অভিভাবকেরা মাঝেমধ্যে শিক্ষকদের বিপরীতে দাঁড়ান, ছবিটি সেই ভয়কেই প্রতিফলিত করে। কিন্তু কোথায় গেল এই শিশুরা? কী আছে তাদের এই রহস্যময় অন্তর্ধানের আড়ালে? এমন গল্প নিয়ে এগিয়ে যায় ‘ওয়েপনস’।

গল্পের শুরুটা টানটান। কোথাও যেন স্টিফেন কিং আর গ্রিম ভ্রাতৃদ্বয়ের কথা মনে পড়ে; এক শিশুর ভয়েস ওভারে যখন সুনসান শহরতলির ‘শিশু উধাও রহস্য’-এর কথা বলা হচ্ছিল; অজান্তেই মনোযোগ কেড়ে নেয় সিনেমাটি। ‘বারবারিয়ান’-এ ভয় লুকিয়ে ছিল এক ভাড়া বাড়ির অচেনা ভূগর্ভে। ‘ওয়েপনস’-এও ক্রেগার সেটাই আরও বিস্তৃত করেছেন। স্থান এবার পেনসিলভানিয়ার মেব্রুক শহর, যেখানে শিশুদের নিখোঁজ হয়ে যাওয়া শান্ত স্বভাবের মা–বাবার রূপান্তরিত করে তোলে ক্ষুব্ধ জনতায়।

আরও পড়ুনরজনীকান্ত এবার আর পারলেন না২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ক্রেগার একটি চরিত্রকে কেন্দ্র করে গল্প বলেননি। বরং ছবিটি গড়ে উঠেছে ছয়টি অধ্যায়ে, ছয়টি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে। শিক্ষক, অভিভাবক, পুলিশ কর্মকর্তা (অলডেন এহরেনরাইখ), স্কুল প্রশাসক (বেনেডিক্ট ওয়ং) এবং আরও কয়েকজনের চোখে একই ঘটনাই নতুন ব্যাখ্যা পায়।

‘ওয়েপনস’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

৪১ বছর ধরে হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি করেন গাইবান্ধার রহিম

গাইবান্ধার পত্রিকা বিক্রেতা আবদুর রহিম। বাড়ি পলাশবাড়ী পৌরসভার নুনিয়াগাড়ি এলাকায়। বয়স ৭১ বছর। এই বয়সেও তিনি ঘুমভাঙা চোখে একনজর পত্রিকার শিরোনাম দেখে নেন। পত্রিকা গুছিয়ে বগলে চেপে ছুটে চলেন পাঠকের কাছে। ‘ভাই, আজকে গরম খবর আছে’ বলেই পাঠকের হাতে এগিয়ে দেন পত্রিকা।

এক পাঠক থেকে আরেক পাঠকের কাছে যান আবদুর রহিম। পত্রিকা বিলি করেন সকাল ৬টা থেকে টানা ৭ ঘণ্টা। বিকেল ৫টা থেকে ৪ ঘণ্টা বিলি করা পত্রিকার টাকা সংগ্রহ করেন। ১১ ঘণ্টার বেশির ভাগ সময় হেঁটে পত্রিকা বিলি ও টাকা সংগ্রহ করেন। দূরের পাঠকের কাছে যান বাইসাইকেলে। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হেঁটে বিলি করেন পত্রিকা। এভাবেই দীর্ঘ ৪১ বছর ধরে গাইবান্ধায় পত্রিকা বিলির কাজ করছেন তিনি।

আবদুর রহিম বলেন, ‘সকাল ৬টা থেকে পত্রিকা বিলির কাজ শুরু করি। বেলা ১টার দিকে শেষ হয়। উপজেলা সদরে হেঁটে বিলি করি। তবে সদর থেকে ৬-৭ কিলোমিটার দূরে জুনদহ, কালীতলা, ঢোলভাঙ্গা, হোসেনপুর এলাকায় সাইকেলে যাই। এসব জায়গায় সাইকেল রেখে হেঁটে পত্রিকা বিলি করি। দুপুরে বাড়িতে বিশ্রাম নিই। এরপর পত্রিকা বিক্রির টাকা তোলা শুরু করি। টাকা তুলতে বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সময় লাগে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হাঁটাহাঁটি হয়ে যায়। এ রকম ব্যস্ততায় কীভাবে ৪১ বছর কেটে গেল, টেরই পেলাম না! তবে পত্রিকা বিলি করে আনন্দ পাই। অনেক পাঠক আমাকে ভালোবাসেন, খোঁজখবর নেন।’

দীর্ঘ সময় পত্রিকা বিলি করতে সমস্যা হয় কি না, তা জানতে চাইলে আবদুর রহিম বলেন, ‘আমার কোনো অসুখবিসুখ নেই। যত দিন শরীর ভালো থাকবে, তত দিন এই কাজ চালিয়ে যাব।’

ব্যবসার শুরু

রহিমের পৈতৃক বাড়ি রংপুর শহরের আরাজি গুলাল বুদাই এলাকায়। সেখানে তাঁর বাবার ৩ শতাংশ জমিতে বসতভিটা ছিল। এ ছাড়া কোনো সম্পদ ছিল না। বাবা আবেদ আলী অনেক আগেই মারা গেছেন। তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। লেখাপড়া করেছেন তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজ করতেন। ১৯৭৫ সালে বিয়ে করেন একই এলাকায়। তাঁর ছয় মেয়ে ও এক ছেলে। দারিদ্র্যের কারণে সংসার চালানো একসময় কঠিন হয়ে পড়ে।

রহিমের খালাতো ভাই রংপুর শহরে পত্রিকা বিলি করতেন। তাঁর পরামর্শে ১৯৮৪ সাল থেকে রংপুরে স্থানীয় পত্রিকা দিয়ে আবদুর রহিমের এই ব্যবসার যাত্রা শুরু। এরপর তিনি বাসে ফেরি করে বিক্রি করতে থাকেন পত্রিকা। প্রতিদিন রংপুর থেকে বাসে উঠে পলাশবাড়ী পর্যন্ত আসেন। এভাবে তিন বছর কেটে যায়। এরপর পলাশবাড়ীর স্থানীয় এক সাংবাদিকের বাড়িতে থেকে পত্রিকা বিক্রি শুরু করেন। ছয় মাস থাকেন সেখানে। এরপর জমানো ও ঋণের টাকায় নুনিয়াগাড়ি এলাকায় সোয়া ৮ শতাংশ জমি কিনে টিনশেড ঘর বানান। বাড়ি থেকে ব্যবসা করতে থাকেন। পলাশবাড়ী চারমাথা এলাকায় বসে ঢাকা, রংপুর ও বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা সংগ্রহ করে পলাশবাড়ী উপজেলা সদরে বিক্রি করতে থাকেন।

হকার থেকে এজেন্ট

কয়েক বছর পর আবদুর রহিম নিজের নামে বেশ কিছু পত্রিকার এজেন্সি নেন। পত্রিকার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় একা সামলাতে পারছিলেন না। তাই চারজন লোক নিয়োগ করেন। তাঁরা এখনো রহিমের কাছে কমিশনে পত্রিকা নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ব্যবসা শুরুর সময় প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ কপি পত্রিকা বিলি করতেন। মাসিক আয় ছিল ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। কয়েক বছর পর পাঠকের চাহিদা বেড়ে যায়। সে সময় মাসিক আয় হতো ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা। বর্তমানে ছাপা পত্রিকার পাঠক কমে গেছে। এখন প্রতিদিন ১৫০ থেকে ১৬০ কপি পত্রিকা বিলি করছেন। বর্তমানে তাঁর মাসিক আয় গড়ে ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা।

আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পত্রিকার ব্যবসা করে রংপুর থেকে এসে পলাশবাড়ীতে বাড়ি করতে পেরেছি, মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। সততার সঙ্গে চলছি। এতেই আমি সন্তুষ্ট।’

পলাশবাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান সরকার বলেন, ‘আবদুর রহিমকে বহু বছর ধরেই পত্রিকা বিক্রি করতে দেখছি। তাঁকে দেখে মনে হয় না ৭১ বছর বয়স হয়েছে। তাঁর মধ্যে ক্লান্তি দেখা যায় না। দিন-রাত পরিশ্রম করেন। কখনো তাঁকে মিথ্যা বলতে শুনিনি। এলাকার মানুষ তাঁকে ভালোবাসেন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাস ধুয়েমুছে চালকের সহকারী ওয়াশরুমে গিয়েছিলেন, ফিরে দেখেন আগুন জ্বলছে
  • ‘বাসটির সঙ্গে একটি ট্রাকের ধাক্কা লাগে, এরপর আর কিছু মনে নেই’
  • রেলের ৭ লাখ টাকার যন্ত্র ২৭ হাজারে বানালেন তিনি
  • রাতে এক ঘণ্টার ব্যবধানে সাভার-ধামরাইয়ে দুই বাসে আগুন
  • জনস্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণাই তাঁর নেশা 
  • ইডেনে স্পিন বিষ, ১৫ উইকেটের দিনে উড়ছে ভারত
  • বিচারকের ছেলে হত্যা মামলার আসামি লিমন পাঁচ দিনের রিমান্ডে
  • বিচারকের ছেলে হত্যা: লিমন ৫ দিনের রিমান্ডে
  • ‘তোকে গুলি করে মারব না, ব্লেড দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারব’
  • ৪১ বছর ধরে হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি করেন গাইবান্ধার রহিম