অফিস সহায়ক দিয়ে হাসপাতাল চলে কীভাবে
Published: 3rd, October 2025 GMT
গ্রামীণ জনপদে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার প্রাথমিক কেন্দ্র হলো ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো। অথচ চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ছয়টি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিত্র দেশের প্রান্তিক স্বাস্থ্যসেবার ভঙ্গুর দশা উন্মোচন করেছে। যেখানে থাকার কথা চিকিৎসক, ফার্মাসিস্ট ও প্রয়োজনীয় জনবল, সেখানে রোগীকে সেবা দিচ্ছেন অফিস সহায়ক, কোথাওবা স্থানীয় বয়স্ক মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে ওষুধ বিতরণ করছেন। জরাজীর্ণ ভবন, খসে পড়া পলেস্তারা আর ছাদ চুইয়ে পড়া পানির মধ্যে চলছে দায়সারা চিকিৎসা কার্যক্রম। পটিয়ার স্বাস্থ্যসেবার এমন চিত্র খুবই হতাশাজনক।
পটিয়ার উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর মূল সমস্যা হলো জনবল ও অবকাঠামোর চরম সংকট। ছয়টি কেন্দ্রের মধ্যে পাঁচটিই চলছে চিকিৎসা কর্মকর্তা (এমও) ছাড়া। পাঁচুরিয়া ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে দেখা গেল, চিকিৎসক না আসায় অফিস সহায়ক নিজেই রোগীর বিবরণ শুনে নাপা আর ভিটামিন দিচ্ছেন। অন্যদিকে ধলঘাট গুরুদাশ দত্ত কেন্দ্রে অফিস সহায়ক না থাকায় একজন স্থানীয় প্রবীণ নাগরিক স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে রোগীদের ওষুধ বিলি করছেন। এ দৃশ্যগুলো সেখানকার স্বাস্থ্যসেবার চরম ব্যর্থতাকেই প্রকাশ করে।
চিকিৎসকের পদগুলোর বেশির ভাগই শূন্য এবং এমনকি যাঁরা আছেন, তাঁরাও প্রেষণে অন্যত্র নিয়োজিত। ফলে পটিয়া সদর বা বুধপুরার মতো গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলো কেবল উপসহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তা দিয়ে চলছে। রোগীরা কেন্দ্রে এসে নিয়মিত চিকিৎসক না পেয়ে চিকিৎসা না নিয়েই ফেরত যাচ্ছেন, যা গ্রামীণ মানুষের দুর্ভোগকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর অবকাঠামোগত অবস্থা আরও ভয়াবহ। পাঁচুরিয়ার উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভাঙাচোরা ভবন, ব্যবহারের অনুপযোগী কক্ষ ও তালাবদ্ধ শৌচাগারগুলো সেবা দেওয়ার পরিবেশের সম্পূর্ণ বিপরীত। আছে সাপের ভয়ও। ধলঘাট কেন্দ্রের চিত্রও একই। দেয়ালে ফাটল, ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে এবং পরিত্যক্ত হলরুমের আসবাব চুরি হয়ে গেছে। ২০১৫ সালে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা সত্ত্বেও কর্মচারীরা এখনো মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু তৈয়ব স্বীকার করেছেন যে কেন্দ্রগুলো জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ এবং চিকিৎসক প্রেষণে থাকায় সেবা ব্যাহত হচ্ছে। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও পরিস্থিতির কোনো বদল নেই। পটিয়ার মতো ঐতিহ্যবাহী ও সমৃদ্ধ উপজেলার মাঠপর্যায়ের চিকিৎসাব্যবস্থার এমন হাল হবে তা কোনোভাবে কল্পনা করা যায় না।
আমরা আশা করব, প্রেষণে থাকা চিকিৎসকদের অবিলম্বে কেন্দ্রে ফিরিয়ে আনা হবে। শূন্য পদগুলোতে দ্রুত নিয়োগ দিতে হবে। চিকিৎসকেরা যেন নিয়মিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উপস্থিত থাকেন, নিশ্চিত করতে হবে। আর অফিস সহায়কদের দিয়ে চিকিৎসা করানোর কোনোভাবেই সুযোগ নেই। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো দ্রুত ব্যবহারের অনুপযোগী ঘোষণা করে নিরাপদ বিকল্প স্থানে অস্থায়ীভাবে কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে এবং স্থায়ী ভবন নির্মাণের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বরাদ্দ দিতে হবে। আমরা আশা করব স্বাস্থ্য খাতে নীতিনির্ধারকেরা পটিয়ার স্বাস্থ্যসেবার দিকে সুনজর দেবেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ন দ রগ ল চ ক ৎসক
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমি সদরঘাটের জবা ফুল’
ছবি: ফেসবুক থেকে