মাছ চুরির অভিযোগে শ্রমিক দলের দুই নেতাকে গাছে বেঁধে পিটুনি, বিপাকে যুবদল কর্মী
Published: 19th, October 2025 GMT
রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় ‘মাছ চুরির অভিযোগে’ শ্রমিক দলের দুই নেতাকে গাছে বেঁধে মারধর করা হয়েছে। এরপর পুকুরের মালিক যুবদল কর্মী নিজেই বিপাকে পড়েছেন। তাই নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তা ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে আজ রোববার সকালে রাজশাহী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তিনি।
এই পুকুরমালিকের নাম মানিক ইসলাম। ঘটনার পর তাঁর ওপর হামলার চেষ্টা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন তিনি।
মানিক ইসলামের বাড়ি দুর্গাপুর উপজেলার সাইবার গ্রামে। তিনি দুর্গাপুর পৌর শ্রমিক দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম ও সদস্যসচিব মো.
সংবাদ সম্মেলনে মানিক বলেন, তিনি সাইবার গ্রামের আলিমুদ্দিন নামের এক ব্যক্তির ৭৮ শতাংশ পুকুর তিন বছরের জন্য ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করছেন। এর মধ্যে এক বছর পার হয়েছে। সম্প্রতি শ্রমিক দল নেতা আবুল কালাম ও রিপন তাঁকে ডেকে বলেন, তাঁরা প্রদীপ বাবু নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে পুকুরটি কিনে নিয়েছেন। তাঁকে পুকুরটি ছেড়ে দিতে হবে। পরে ১২ জন ব্যক্তির উপস্থিতিতে তাঁরা সমাধানের জন্য বসেন। সেখানে মানিক জানান, আবুল কালাম ও রিপন যদি পুকুর কেনার বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেন তাহলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তিনি তাঁর মাছ তুলে নিয়ে পুকুর ছেড়ে দেবেন। কালাম কাগজ দেখাতে সময় চান। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার ভোররাতে জেলেদের নিয়ে রিপন ও কালাম পুকুরে জাল ফেলে মাছ ধরতে থাকেন। মাছ ধরে বস্তায় ভরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
মানিক বলেন, সকালে তাঁর বাবা কালাম মোল্লা ও মামা মাইনুল ইসলাম পুকুরে গিয়ে দেখেন, পুকুরে জাল দিয়ে শেষ টান দেওয়ার আগে বিষ প্রয়োগ করা হয়েছে। এতে মাছ লাফালাফি করছে। পুকুরের দক্ষিণ দিকে তাঁরা দেখেন, রিপন ও কালাম জেলেদের নিয়ে মাছ ধরছেন। তাঁদের দেখে অন্যরা পালিয়ে যান। তবে কালাম ও মাইনুল শ্রমিক দলের দুই নেতাকে ধরে ফেলেন। খবর পেয়ে মানিক সেখানে গিয়ে দুজনকে তাঁদের বাড়ির সামনে নিয়ে যান।
মানিক বলেন, ‘এ সময় অনেক উত্তেজিত লোকজন জড়ো হয়ে যায়। আমি বাধা দেওয়া সত্ত্বেও গ্রামের কিছু যুবক বাড়ির সামনে ছাগল বেঁধে রাখা দড়ি খুলে দুজনকে গাছের সঙ্গে বাঁধেন। এ সময় দু–একজন একটু মারধরও করেন। পরে তাঁদের প্রাণে বাঁচাতে আমি বাড়ির ভেতরে নিয়ে যাই এবং পানি ও বিস্কুট খেতে দিই। কারণ, কালাম সম্পর্কে আমার মামার চাচাশ্বশুরও।’
মানিক জানান, এ ঘটনার পর দলীয় নেতা-কর্মীরা আসেন। তখন তিনি ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। পরে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেন, ২১ অক্টোবর তাঁরা সবাই বসবেন। এরই মধ্যে কালামের ছেলে সোয়াদ এসে বলতে থাকেন, তাঁর বাবাকে নাকি রাস্তা থেকে তুলে আনা হয়েছে। তিনি মামলা করার হুমকি দিয়ে চলে যান। পরে সোয়াদ থানায় যান। এ সময় দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুল ইসলাম তাঁকে ফোন করে দুজনকে ছেড়ে দিতে বলেন। পরে দুই নেতাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
মানিক অভিযোগ করেন, এ ঘটনার জের ধরে পরদিন সন্ধ্যায় কাঁঠালবাড়িয়া এলাকায় সোয়াদ ও তাঁর সহযোগী করিম ও সজিব রুমাল দিয়ে মুখ ঢেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁর (মানিক) ওপর হামলার চেষ্টা করেন। তাঁরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁকে আঘাতের চেষ্টা করলেও তিনি প্রাণে বেঁচে যান। এখন ভয়ে তাঁর পরিবারের কেউ বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না। তাঁর চাচা মো. আসাদুল উপজেলা সদরে দলিল লেখকের কাজ করেন। রোববার সকালে তাঁকে সেখান থেকে বের করে দিয়েছেন কালাম ও রিপনের লোকজন। ঘটনার পর তাঁর সঙ্গে উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি নাহিদুল হক দোকানে বসে চা পান করেছিলেন। তাই রোববার সকালে তাঁকেও উপজেলা সদরে মারধর করা হয়েছে। এখন তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। তিনি নিজের নিরাপত্তা এবং ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রমিক দল নেতা আবুল কালাম বলেন, ‘পুকুরটা আমি কিনে নিয়েছি। কাগজপত্র আছে। পুকুর ছেড়ে দিতে বললে মানিক পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। বৃহস্পতিবার সকালে আমি ও রিপন পুকুর দেখতে গিয়েছিলাম। তখন আমাদের ধরে মানিক তার বাড়ির সামনে নিয়ে যায় এবং গাছে বেঁধে মারধর করে। আমরা মাছ চুরি করতে যাইনি। পুকুর থেকে কোনো মাছও ধরা হয়নি। মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।’
এ বিষয়ে দুর্গাপুর থানার ওসি আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটা আমরা শুনেছি। কিন্তু কোনো পক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে আমরা সেটা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ড় র স মন উপজ ল ম রধর ইসল ম ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনা কারাগারে সংঘর্ষের ঘটনায় ৩ বন্দীকে কাশিমপুরে প্রেরণ
খুলনা জেলা কারাগারের অভ্যন্তরে মারামারির ঘটনায় কারাবিধি অনুযায়ী তিন কারাবন্দীকে ঢাকার হাই সিকিউরিটি কাশিমপুর কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
রবিবার (১৯ অক্টোবর) পুলিশ পাহারায় প্রিজনভ্যানে তাদের তিনজনকে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় নামের তালিকায় যারা আছেন, তাদেরও পরবর্তীতে ঢাকায় পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।
আরো পড়ুন:
খুলনা কারাগারে বন্দিদের মধ্যে সংঘর্ষ, আহত ৮
কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য, অতিষ্ঠ মাদারীপুরবাসী
বিষয়টি নিশ্চিত করে খুলনা জেলা কারাগারের জেলার মুনীর হুসাইন বলেন, “কারাগারের ভেতরে মারামারির পর শনিবার রাতে কারা হেড কোয়ার্টারে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। এ ঘটনায় কয়েকজনের নামের তালিকা তৈরি করে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।”
তিনি বলেন, “সেখান থেকে আসামিদের পাঠানোর কথা জানানো হলে প্রাথমিক পর্যায়ে সকালে কালা তুহিন, গ্রেনেড বাবুর ছোটভাই রাব্বি এবং জিতুকে পুলিশ পাহারায় প্রিজন ভ্যানে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছে। নামের তালিকায় যারা আছে পরবর্তীতে তাদেরও ঢাকায় পাঠানো হবে।”
শনিবার (১৮ অক্টোবর) খুলনার দুটি প্রভাবশালী সন্ত্রাসী গ্রুপ গ্রেনেড বাবু গ্রুপ ও কালা লাভলু গ্রুপের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কারা কর্তৃপক্ষ লাঠিচার্জ করে। সংঘর্ষ ও লাঠিচার্জে একজন কারারক্ষীসহ অন্তত ৭-৮ জন আহত হন। সংঘর্ষ চলাকালে পাগলা ঘণ্টা বাজিয়ে সতর্কতা জারি করা হয়।
এ সংঘর্ষে অংশ নেন অন্তত ৪০ থেকে ৪৫ জন কয়েদি। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেনেড বাবুর ভাই রাব্বি চৌধুরী, অনুসারী হিরন, রুহান-পলাশ গ্রুপের পলাশ, কালা লাবলু, সৈকত ও মইদুলসহ আরো অনেকে।
খবর পেয়ে জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধানের নেতৃত্বে কারারক্ষীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে লাঠিচার্জের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে এক পর্যায়ে উভয় পক্ষ কারারক্ষীদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে হামলার চেষ্টা চালায়। পরে উত্তেজিত বন্দিদের পৃথক লকারে স্থানান্তর করা হয়।
ঢাকা/নুরুজ্জামান/মেহেদী