তাইজুল ইসলামের জন‌্য আজকের দিনটি নিশ্চিতভাবেই বাড়তি স্মরণীয়। দেশের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেটের তালিকায় তিনি এখন শীর্ষে। তার সঙ্গে আছেন সাকিব আল হাসানও। তবে নিকট ভবিষ‌্যতে যেহেতু সাকিবের টেস্ট খেলার সম্ভাবনা নেই এবং ঢাকা টেস্টের একটি ইনিংস এখনও বাকি আছে তাতে নিশ্চিত করেই বলা যায় তাইজুল ছাড়িয়ে যাবেন সাকিবকে।

আয়ারল‌্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেটের তালিকায় এখন সাকিব আল হাসানের সঙ্গে যৌথভাবে শীর্ষে তাইজুল ইসলাম। দুই বাঁহাতি স্পিনারের উইকেট ২৪৬টি।

আরো পড়ুন:

প্রথমে ভূমিকম্প বুঝতে পারিনি, পরে আতঙ্ক কাজ করেছে: তাইজুল

নাটাই বাংলাদেশের হাতে

ক‌্যারিয়ার শেষে নিজেকে কোথায় দেখতে চান সেই প্রশ্নটা উঠলো সাকিবকে ছুঁয়ে ফেলার দিনটিতে। সরাসরি তাইজুল কোনো উত্তর দেননি। তবে বেশ আগ্রহ নিয়েই বলেছেন, ‘‘আমাকে যদি আল্লাহ ৭০০ উইকেট দেয়, আমি ৭০০টা নিতেই রাজি আছি।’’

২০১৪ সালে তার ক‌্যারিয়ার শুরু ওয়েস্ট ইন্ডিজে। প্রথম ম‌্যাচেই পেয়েছিলেন ফাইফারের স্বাদ। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তাইজুল যখন ক‌্যারিয়ার শুরু করেছিলেন, তার ভাবনায় শীর্ষে যেতে হবে এমন কিছু ছিল না বলে জানালেন, ‘‘প্রত্যেকটা খেলোয়াড়ের একটা লক্ষ‌্য থাকে যে আমি জাতীয় দলে খেলব। প্রথম লক্ষ‌্য এটা থাকে। কিন্তু খেলার পরে অনেকে চিন্তা করে আমি এতদূর যাবো বা অতদূর যাবো। একেকজনের গোল একেক থাকে। ব‌্যক্তিগতভাবে আমার এমন কোনো গোল ছিল না। আমি এইখানে শেষ করব বা এই পর্যন্ত যাব। চেষ্টা করবো আমি যতদূর যেতে পারি আমার ক্যারিয়ারের শেষ পর্যন্ত।’’

জাতীয় দলের হয়ে তার পারফরম‌্যান্স করাটাই মূল‌্য লক্ষ‌্য, ‘‘আপনি যখন জাতীয় দলে খেলবেন তখন আপনাকে পারফরম‌্যান্স করতে হবে। এটা হচ্ছে পারফরম‌্যান্সের জায়গা। এটা আসলে বলাটা কঠিন যে আমি সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হবো কি হবো না। কিন্তু যে সময়টা দেখা যাচ্ছে যে আমার একটা ধারাবাহিকতা আসছে এবং অভিজ্ঞতা এসেছে। আমার নিজের মধ্যেও একটা আত্মবিশ্বাস আসছে যে বাংলাদেশ ক্রিকেট আমাকে অনেকদিন একটা সুযোগের মধ্যে রাখবে।’’

নিজের ক‌্যারিয়ার গোছানোর জন‌্য সাকিবের থেকেও পরামর্শ নিতেন বলে জানালেন তাইজুল, ‘‘উনার অভিজ্ঞতা ছিল, উনি অনেকদিন বাংলাদেশের.

.. ওয়ার্ল্ডের এক নাম্বার পজিশনে ছিল। আসলে একটা মানুষ তো এক নাম্বার পজিশনে এমনি এমনি যেতে পারে না। অবশ্যই উনার মধ্যে ওরকম কিছু ছিল, ওরকম কোয়ালিটি ছিল। আমি চেষ্টা করছি ওই জিনিসগুলো নেওয়ার জন্য এবং আমাদেরকে উনি সবসময় সাজেশানও দিত এবং আমাদের উনার অভিজ্ঞতা থেকে যতটুকু পারছে আমাদের সাথে ডিসকাস করছে যে আমরা আসলে কীভাবে এগিয়ে যেতে পারি।’’

কখনো সাকিবের অনুপস্থিতিতি, কখনো সাফল‌্যের পার্শ্ব-বোলার হিসেবে তাইজুল বিবেচিত হয়ে আসছিলেন। নায়ক হয়েও থাকতেন আড়ালে। পাদপ্রদীপের আলো বাইরে। সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংকে তো একবার বলেওছিলেন, ‘‘আমাদের আরেকজন ওয়ার্ল্ড ক্লাস স্পিনার আছে সাকিব, যে তাইজুলের আগে থাকে। তাই তাইজুল সবসময় সামনে থাকে না। কিন্তু রেকর্ড তার পক্ষ কথা বলছে। আপনারা হয়ত সে ভালো করলেই শুধু কথা বলেন।’’

সাকিবের সঙ্গে ৭১ টেস্টে মাত্র ২৬টিতে ছিলেন তাইজুল। যার ২২টি দেশের মাঠে। ৪টি বাইরে। যেই ৪টি দেশের বাইরে তার মধ‌্যে ২টি ভারতে এবং ১টি করে শ্রীলঙ্কায় ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে। পারফরম‌্যান্সের বিচারে দুইজন কাছাকাছি অবস্থান করছেন। একসঙ্গে খেলা ২৬ টেস্টে সাকিবের উইকেট সংখ‌্যা ১০২টি। তাইজুলের ৯৪টি। দেশে সাকিবের উইকেট ৮৪টি। তাইজুলের ৮৫টি। অ‌্যাওয়েতে সাকিবের শিকার ১৮টি। তাইজুলের ৯টি।

সাকিবের সঙ্গে খেলায় তাইজুল যতটা কার্যকারী ভূমিকা রাখেন, অনুপস্থিতিতে বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে তাইজুল ততটাই ধ্রুপদী। ৩০ ম‌্যাচে ৫১ ইনিংসে ১৪৮ উইকেট পেয়েছেন ২৯.৬২ গড়ে। ক‌্যারিয়ারের ১৭ ফাইফারের ১৩টিই পেয়েছেন সাকিববিহীন ম‌্যাচে। পরিসংখ‌্যানই বলে দেয়, সাকিবের ছায়া থেকে বেরিয়ে তাইজুল হয়ে উঠেন আরো দ‌্যোদিপ‌্যমান। দায়িত্বের মশাল থাকে তার হাতেই। হতে হয় স্পিন আক্রমণের নেতা।

খেলার মাঠে তাইজুলের এসব নিয়ে কোনো মাথা ব‌্যথা থাকে না তা বোঝা গেল কণ্ঠে, ‘‘তাইজুল তো তাইজুলের জায়গাতেই আছে।’’

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ত ইজ ল র প রফরম আম দ র উইক ট প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

অস্ট্রেলিয়ার অ্যাশেজ একাদশ ঘোষণা, নতুন দুই মুখের অভিষেক

অ্যাশেজের প্রথম টেস্টে পার্থে অস্ট্রেলিয়ার জার্সিতে একসঙ্গে অভিষেক হতে যাচ্ছে ওপেনার জেক ওয়েদারাল্ড এবং পেসার ব্রেন্ডান ডগেটের। জশ হ্যাজলউড হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে ছিটকে পড়ায় ডগেট খেলবেন, এটা প্রায় নিশ্চিতই ছিল। তবে ওপেনিংয়ে ওয়েদারাল্ডকে নামানো হবে, নাকি মার্নাস লাবুশেন ওপেন করবেন; এই ধন্দে ছিল দল। শেষ পর্যন্ত নর্দান টেরিটরিতে বেড়ে ওঠা ওয়েদারাল্ডই জায়গা পেলেন। ডেভিড ওয়ার্নার অবসরের পর উসমান খাওয়াজার এটি ষষ্ঠ নতুন ওপেনিং সঙ্গী।

ওয়েদারাল্ডকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ বললেন, “ওর ভেতর প্রচণ্ড সাহস আছে। নেটে সে সারাক্ষণ পেসারদের মুখোমুখি হতে চায়। সবাই গতিতে বল করছিল, আর সে সেগুলো দারুণভাবে সামলেছে। তার ব্যাকফুট ও ফ্রন্টফুট পজিশন নিখুঁত ছিল।”

আরো পড়ুন:

মুশফিকের ইতিহাসের পর লিটনের সেঞ্চুরি, আয়ারল‌্যান্ডকে চাপে রেখেছে বাংলাদেশ

পেছাল বিপিএল নিলাম, ব‌্যাংক গ‌্যারান্টি পায়নি বিসিবি

তিনি আরও যোগ করেন, “গত দেড় বছরে পারফরম্যান্স দিয়েই সে জায়গা পেয়েছে। তাসমানিয়ার হয়ে ওপরে ব্যাট করে সে অসাধারণ ধারাবাহিকতা দেখিয়েছে। আশা করছি, সেই ফর্মটাই টেস্ট ক্রিকেটেও নিয়ে আসবে।”

এর ফলে ওয়েদারাল্ডের তাসমানিয়া সতীর্থ বো ওয়েবস্টার বাদ পড়লেন। জানুয়ারিতে ভারতের বিপক্ষে চমকজাগানো অভিষেকের পর সাতটি টেস্ট খেললেও এবার জায়গা পেলেন না।

২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কুর্টিস প্যাটারসন ও ঝাই রিচার্ডসনের অভিষেক ম্যাচের পর এই প্রথম একই টেস্টে দুই নতুন মুখ নামাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বাদ পড়লেও এবার দুর্দান্ত ঘরোয়া মৌসুমের পারফরম্যান্সে আবার দলে ফিরে এসেছেন লাবুশেন। স্মিথ বললেন, “মার্নাস যখন তিন নম্বরে ছন্দে থাকে, তখন আমরা ভীষণ শক্তিশালী দল হয়ে যাই। ফিরেই সে প্রমাণ করেছে কেন তাকে রাখা জরুরি।”

পিঠের গুরুতর ইনজুরি থেকে ফিরে কিছুদিন তিন নম্বরে খেললেও ক্যামেরন গ্রিন এবার আবার নেমে যাচ্ছেন তার পুরনো জায়গা- ছয় নম্বরে। তবে দীর্ঘমেয়াদে তিনি স্মিথের পর চার নম্বরে ওঠার প্রবল দাবিদার বলে মনে করা হয়। ২৬ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার এ বছর চার টেস্টে ব্যাটার হিসেবেই খেলেছিলেন, সদ্যই আবার বল করতে শুরু করেছেন।

ইংল্যান্ডও বুধবার তাদের ১২ সদস্যের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে। পেসার জোফরা আর্চার ও মার্ক উড দু’জনই আছেন একাদশে। তারা অস্ট্রেলিয়ার পার্থের ঐতিহ্যবাহী বাউন্সি উইকেট কাজে লাগাতে প্রস্তুত। ৪০ বছরের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় সবচেয়ে হাড্ডাহাড্ডি অ্যাশেজ সিরিজ হতে চলেছে বলেই ধারণা অনেকের।

অস্ট্রেলিয়ার প্রথম টেস্টের একাদশ:
উসমান খাজা, জেক ওয়েদারাল্ড, মার্নাস লাবুশেন, স্টিভ স্মিথ (অধিনায়ক), ট্রাভিস হেড, ক্যামেরন গ্রিন, অ্যালেক্স ক্যারি (উইকেটকিপার), মিচেল স্টার্ক, স্কট বোল্যান্ড, নাথান লায়ন ও  ব্রেন্ডান ডগেট।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অস্ট্রেলিয়ার অ্যাশেজ একাদশ ঘোষণা, নতুন দুই মুখের অভিষেক