রিখটার স্কেলে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্প নাড়িয়ে দিয়ে গেছে পুরো বাংলাদেশ। শুক্রবার সকালে এই ভূমিকম্পের কারণে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের খেলা পৌন চার মিনিটের মতো বন্ধ ছিল।

মাঠের ভেতরে থাকা খেলোয়াড়রা শুরুতে বুঝতে পারেননি। পরে বুঝতে পেরেই নিরাপদ স্থানে দাঁড়িয়ে যান। এছাড়া ড্রেসিংরুমে থাকা খেলোয়াড়রা দ্রুত বেরিয়ে এসে ডাগ আউটে দাঁড়িয়ে থাকেন। মুহূর্তেই অনাকাঙ্খিত এক ঘটনার মুখোমুখি ঢাকা টেস্ট। বাংলাদেশের অফস্পিনার মিরাজ তখন বোলিংয়ের প্রস্তুতির নিচ্ছিলেন। তখনই ভূমিকম্প কাঁপিয়ে দেয় গোটা স্টেডিয়াম।

আরো পড়ুন:

নাটাই বাংলাদেশের হাতে

ভূমিকম্পে বন্ধ থাকল মিরপুরের খেলা

দিনশেষ সংবাদ সম্মেলনে এসে বাংলাদেশের স্পিনার তাইজুল ইসলাম ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন, ‘‘প্রথমে বুঝি নাই (ভূমিকম্প হচ্ছে)। কিন্তু একটা সময় মিডিয়া বক্স এবং যে যে জায়গাগুলোতে কাচ ছিল ওখান থেকে শব্দ এসেছে। তারপরে শারীরিকভাবেও অনুভব করেছি। ওই সময়ে একটু আতঙ্ক কাজ করেছে।’’

মিরপুরের প্রেসবক্সে চলে ছোটাছুটি। ভয়ংকর ঝাঁকুনিতে কাঁপতে থাকল চেয়ার-টেবিল। ধারাভাষ‌্য কক্ষ থাকা ধারাভাষ‌্যকাররাও বেরিয়ে আসেন। সংবাদ কর্মী ও ধারাভাষ‌্যকাররা সিঁড়ি দিয়ে বেরিয়ে ছুটে যান মিডিয়া ভবনের সামনে। আম্পায়াররা তাৎক্ষণিক খেলা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। প্রায় পৌনে চার মিনিটের মতো খেলা বন্ধ রাখেন অফিসিয়ালরা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে মিরাজ আবার খেলা বোলিং শুরু করেন।

আয়ারল‌্যান্ডের কোচ হাইনরিখ মালানের চিন্তায় তখন অনেক কিছু খেলা করেছে। সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি বলেছেন, ‘‘এটা কখনোই ভালো অনুভূতি না। বোঝার চেষ্টা করেছি আমাদের সামনে ওই সময়ে কী হচ্ছে। একই সঙ্গে ভূমিকম্পের বড় প্রভাবের কথাও ভাবনায় এসেছে। আশা করি খুব বাজে কিছু হয় না।’’

দিনের শেষ পর্যন্ত মিরপুর স্টেডিয়ামে কোনো ক্ষয়-ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ভ ম কম প

এছাড়াও পড়ুন:

আল্লাহ ৭০০ উইকেট যদি দেয়, আমি নিতে রাজি আছি: তাইজুল

তাইজুল ইসলামের জন‌্য আজকের দিনটি নিশ্চিতভাবেই বাড়তি স্মরণীয়। দেশের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেটের তালিকায় তিনি এখন শীর্ষে। তার সঙ্গে আছেন সাকিব আল হাসানও। তবে নিকট ভবিষ‌্যতে যেহেতু সাকিবের টেস্ট খেলার সম্ভাবনা নেই এবং ঢাকা টেস্টের একটি ইনিংস এখনও বাকি আছে তাতে নিশ্চিত করেই বলা যায় তাইজুল ছাড়িয়ে যাবেন সাকিবকে।

আয়ারল‌্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেটের তালিকায় এখন সাকিব আল হাসানের সঙ্গে যৌথভাবে শীর্ষে তাইজুল ইসলাম। দুই বাঁহাতি স্পিনারের উইকেট ২৪৬টি।

আরো পড়ুন:

প্রথমে ভূমিকম্প বুঝতে পারিনি, পরে আতঙ্ক কাজ করেছে: তাইজুল

নাটাই বাংলাদেশের হাতে

ক‌্যারিয়ার শেষে নিজেকে কোথায় দেখতে চান সেই প্রশ্নটা উঠলো সাকিবকে ছুঁয়ে ফেলার দিনটিতে। সরাসরি তাইজুল কোনো উত্তর দেননি। তবে বেশ আগ্রহ নিয়েই বলেছেন, ‘‘আমাকে যদি আল্লাহ ৭০০ উইকেট দেয়, আমি ৭০০টা নিতেই রাজি আছি।’’

২০১৪ সালে তার ক‌্যারিয়ার শুরু ওয়েস্ট ইন্ডিজে। প্রথম ম‌্যাচেই পেয়েছিলেন ফাইফারের স্বাদ। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তাইজুল যখন ক‌্যারিয়ার শুরু করেছিলেন, তার ভাবনায় শীর্ষে যেতে হবে এমন কিছু ছিল না বলে জানালেন, ‘‘প্রত্যেকটা খেলোয়াড়ের একটা লক্ষ‌্য থাকে যে আমি জাতীয় দলে খেলব। প্রথম লক্ষ‌্য এটা থাকে। কিন্তু খেলার পরে অনেকে চিন্তা করে আমি এতদূর যাবো বা অতদূর যাবো। একেকজনের গোল একেক থাকে। ব‌্যক্তিগতভাবে আমার এমন কোনো গোল ছিল না। আমি এইখানে শেষ করব বা এই পর্যন্ত যাব। চেষ্টা করবো আমি যতদূর যেতে পারি আমার ক্যারিয়ারের শেষ পর্যন্ত।’’

জাতীয় দলের হয়ে তার পারফরম‌্যান্স করাটাই মূল‌্য লক্ষ‌্য, ‘‘আপনি যখন জাতীয় দলে খেলবেন তখন আপনাকে পারফরম‌্যান্স করতে হবে। এটা হচ্ছে পারফরম‌্যান্সের জায়গা। এটা আসলে বলাটা কঠিন যে আমি সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হবো কি হবো না। কিন্তু যে সময়টা দেখা যাচ্ছে যে আমার একটা ধারাবাহিকতা আসছে এবং অভিজ্ঞতা এসেছে। আমার নিজের মধ্যেও একটা আত্মবিশ্বাস আসছে যে বাংলাদেশ ক্রিকেট আমাকে অনেকদিন একটা সুযোগের মধ্যে রাখবে।’’

নিজের ক‌্যারিয়ার গোছানোর জন‌্য সাকিবের থেকেও পরামর্শ নিতেন বলে জানালেন তাইজুল, ‘‘উনার অভিজ্ঞতা ছিল, উনি অনেকদিন বাংলাদেশের... ওয়ার্ল্ডের এক নাম্বার পজিশনে ছিল। আসলে একটা মানুষ তো এক নাম্বার পজিশনে এমনি এমনি যেতে পারে না। অবশ্যই উনার মধ্যে ওরকম কিছু ছিল, ওরকম কোয়ালিটি ছিল। আমি চেষ্টা করছি ওই জিনিসগুলো নেওয়ার জন্য এবং আমাদেরকে উনি সবসময় সাজেশানও দিত এবং আমাদের উনার অভিজ্ঞতা থেকে যতটুকু পারছে আমাদের সাথে ডিসকাস করছে যে আমরা আসলে কীভাবে এগিয়ে যেতে পারি।’’

কখনো সাকিবের অনুপস্থিতিতি, কখনো সাফল‌্যের পার্শ্ব-বোলার হিসেবে তাইজুল বিবেচিত হয়ে আসছিলেন। নায়ক হয়েও থাকতেন আড়ালে। পাদপ্রদীপের আলো বাইরে। সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংকে তো একবার বলেওছিলেন, ‘‘আমাদের আরেকজন ওয়ার্ল্ড ক্লাস স্পিনার আছে সাকিব, যে তাইজুলের আগে থাকে। তাই তাইজুল সবসময় সামনে থাকে না। কিন্তু রেকর্ড তার পক্ষ কথা বলছে। আপনারা হয়ত সে ভালো করলেই শুধু কথা বলেন।’’

সাকিবের সঙ্গে ৭১ টেস্টে মাত্র ২৬টিতে ছিলেন তাইজুল। যার ২২টি দেশের মাঠে। ৪টি বাইরে। যেই ৪টি দেশের বাইরে তার মধ‌্যে ২টি ভারতে এবং ১টি করে শ্রীলঙ্কায় ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে। পারফরম‌্যান্সের বিচারে দুইজন কাছাকাছি অবস্থান করছেন। একসঙ্গে খেলা ২৬ টেস্টে সাকিবের উইকেট সংখ‌্যা ১০২টি। তাইজুলের ৯৪টি। দেশে সাকিবের উইকেট ৮৪টি। তাইজুলের ৮৫টি। অ‌্যাওয়েতে সাকিবের শিকার ১৮টি। তাইজুলের ৯টি।

সাকিবের সঙ্গে খেলায় তাইজুল যতটা কার্যকারী ভূমিকা রাখেন, অনুপস্থিতিতে বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে তাইজুল ততটাই ধ্রুপদী। ৩০ ম‌্যাচে ৫১ ইনিংসে ১৪৮ উইকেট পেয়েছেন ২৯.৬২ গড়ে। ক‌্যারিয়ারের ১৭ ফাইফারের ১৩টিই পেয়েছেন সাকিববিহীন ম‌্যাচে। পরিসংখ‌্যানই বলে দেয়, সাকিবের ছায়া থেকে বেরিয়ে তাইজুল হয়ে উঠেন আরো দ‌্যোদিপ‌্যমান। দায়িত্বের মশাল থাকে তার হাতেই। হতে হয় স্পিন আক্রমণের নেতা।

খেলার মাঠে তাইজুলের এসব নিয়ে কোনো মাথা ব‌্যথা থাকে না তা বোঝা গেল কণ্ঠে, ‘‘তাইজুল তো তাইজুলের জায়গাতেই আছে।’’

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ