জেরিন, নিশাত ও নুসরাত তিনজনই ময়মনসিংহ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ–৫ পেয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রস্তুতির পড়াশোনার চাপে ফলাফলের পর তিন বান্ধবীর আর দেখা হয়নি। আজ বুধবার কৃতী শিক্ষার্থী উৎসবে দেখা হওয়ায় তাঁরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন।

নিশাত তাসনিম বলেন, ‘পড়াশোনার চাপে অনেক দিন বান্ধবীদের সঙ্গে দেখা হয়নি। আজ দেখা হয়ে খুব ভালো লেগেছে। শুধু আড্ডা নয়, সবার ভর্তি প্রস্তুতি ও ভবিষ্যৎ ভাবনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।’

আজ ময়মনসিংহে ‘প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি–প্রথম আলো জিপিএ–৫ কৃতী শিক্ষার্থী উৎসব ২০২৫’–এ যোগ দিয়ে এভাবেই নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেন কৃতী শিক্ষার্থী নিশাত তাসনিম। ময়মনসিংহ নগরের টাউন হলের তারেক স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত উৎসবে নিবন্ধন করেন প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী। উৎসবে সহযোগিতা করে ময়মনসিংহ, জামালপুর ও কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা।

‘স্বপ্ন থেকে সাফল্যের পথে, একসাথে’ প্রতিপাদ্যে সারা দেশে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ–৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থীদের নিয়ে এবারই প্রথম এই উৎসবের আয়োজন করেছে প্রথম আলো। চট্টগ্রাম, রংপুর, ঢাকা, খুলনা ও রাজশাহীর পর আজ ময়মনসিংহে হলো ষষ্ঠ এ আয়োজন। অন্য বিভাগগুলোয়ও এমন আয়োজন হবে। উৎসবের পৃষ্ঠপোষক প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি।

সকাল থেকেই কৃতী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে টাউন হল মাঠ। নির্ধারিত বুথ থেকে ক্রেস্ট, স্ন্যাকস ও ডিজিটাল সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। জীবনের লক্ষ্য লেখার বোর্ডে অনেকে লিখছিলেন নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। এসব লেখায় মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, বৃত্তি নিয়ে বিদেশ গমন কিংবা ভালো মানুষ হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তাঁরা।

অনুষ্ঠানে কৃতী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য দেন অতিথিরা। বুধবার ময়মনসিংহ টাউন হল মিলনায়তনে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বাউল–বিরোধিতার আড়ালে চলছে গ্রামের অর্থনীতি দখলের লড়াই

অগ্রহায়ণ মাস চলছে। গ্রামীণ সংস্কৃতিতে মাসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই মাসেই দেশের প্রান্তিক কৃষকেরা মাঠের ধান গোলায় তোলেন। হাটে-বাজারে সেই ধান বিক্রি করে একসঙ্গে বেশ কিছু টাকা হাতে আসে কৃষকদের। চাকরিজীবীদের জীবনে ঈদের মাসে যেমন একসঙ্গে বেশ কিছু টাকা হাতে আসে, কৃষকদের জীবনে অগ্রহায়ণ মাস তেমনই। এই সময়ই তাঁরা বাড়িতে স্বজনদের দাওয়াত দেন, পিঠাপুলি বানান, নবান্ন উৎসব করেন এবং নানান সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও আয়োজন করেন।

অগ্রহায়ণের শুরুতেই সাধারণত গ্রামবাংলায় শীত নেমে আসে। দিন ছোট এবং রাত দীর্ঘ হয়। দীর্ঘ রাতগুলোকে উদ্‌যাপন করতে আবহমানকাল ধরেই নানান সাংস্কৃতিক উৎসব করে আসছেন গ্রামবাংলার লোকেরা। এসব উৎসবে বাউলগান, পালাগান, গাজির গান, যাত্রাপালা, জলসা কিংবা মাজারগুলোতে ওরস শরিফের প্রভাব একসময় ছিল সবচেয়ে বেশি। গ্রামের বাজার অর্থনীতিতে এসব সাংস্কৃতিক ধারার মানুষদের মধ্যে বিতর্ক ও বিরোধিতা যেমন ছিল, একই সঙ্গে আবার ছিল সহাবস্থানও। ১৯৯০–এর দশক থেকে ওয়াজ মাহফিলও এই তালিকায় জায়গা করে নিতে থাকে এবং ধীরে ধীরে প্রতাপশালী হয়ে ওঠে।

মতাদর্শিক কারণেই ওয়াজ মাহফিল ওপরের সব কটি সাংস্কৃতিক ধারার বিরোধী। আর সেই বিরোধিতা প্রকাশে ওয়াজের বক্তারা কখনো রাখঢাক করেননি। শীতের মৌসুমে ওয়াজগুলোতে বাউলগান, ওরস, জলসা কিংবা যাত্রাপালার বিরুদ্ধে বিষোদ্‌গার বিগত দশকগুলোর নিয়মিত ঘটনা। তবু এই বিরোধ বা বিষোদ্‌গার ছিল সামাজিক বোঝাপড়ার স্তরেই। মাঝেমধ্যে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া কেউ মামলা–মোকদ্দমা বা সংগঠিত হামলার প্রয়োজন বোধ করেনি। কিন্তু এখন সেটা করছে। কেন?

আরও পড়ুনবাউল-পালাকার-বয়াতিরা কাদের শত্রু২৩ নভেম্বর ২০২৫২.

সর্বশেষ ২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী দেশে মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। সেটা এখন হয়তো আরও বেড়েছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের এক প্রতিবেদন বলছে, শুধু রাজধানী ঢাকাতেই বাস করে ৩ কোটি ৬৬ লাখ মানুষ। অন্যান্য বিভাগীয় শহরের (মহানগর) জনসংখ্যাও সব মিলিয়ে ২ কোটির কাছাকাছি। এ ছাড়া দেড় কোটির মতো প্রবাসী ছড়িয়ে রয়েছেন বিশ্বের নানান প্রান্তে। মানে দেশের মোট জনসংখ্যার অন্তত ৪১ শতাংশ লোক নিশ্চিতভাবেই গ্রামে থাকেন না। থাকেন মহানগরীগুলোতে ও প্রবাসে। বাকি যাঁরা গ্রামে থাকেন, তাঁদের ভেতর নারী ও শিশুর হার বেশি। সামাজিক বাস্তবতায় গ্রামের রাত্রিকালীন আয়োজনে তাঁদের অংশগ্রহণের সুযোগ কম।

ফলে নবান্ন বা শীতের মৌসুমে এখন দেশের ৮৭ হাজার ১৯১টি গ্রামে পালাগান, ওরস শরিফ কিংবা ওয়াজ মাহফিল যা–ই হোক, তা হয় খুব অল্পসংখ্যক মানুষকে কেন্দ্র করে। ফলে এসব অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে অর্থনীতির যে চাকাটি চলমান ছিল সেটি খুবই সংকুচিত হয়ে এসেছে। এই ক্ষুদ্র অর্থনীতি আর অল্প লেনদেনের ভেতরে তীব্র হয়ে উঠেছে বিবিধ সাংস্কৃতিক ধারার প্রতিযোগিতা!

দেশের অর্থনীতির শক্তিশালী ভিতগুলো এখন আর গ্রামকেন্দ্রিক নেই। অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তির আসনে বসে আছে তৈরি পোশাকশিল্প ও প্রবাসী আয়। ফলে গ্রামের উৎসবগুলো বহু আগেই লোকবল ও অর্থনৈতিক শূন্যতায় জৌলুশ হারিয়েছে। সীমিত পরিসরে তবু নানা ধারার সাংস্কৃতিক আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। মাজারগুলোতে ওরস শরিফ ও ওয়াজ মাহফিল ছাড়া প্রায় সব কটি সাংস্কৃতিক ধারাই চলছিল ধুঁকে ধুঁকে।

অবশ্য এই পরিবর্তন শুধু জনসংখ্যা বা বাজার অর্থনীতির কারণই হয়নি। টেলিভিশন ও তথ্যপ্রযুক্তির বিশ্বায়িত নতুন বিনোদনের দুনিয়াও গ্রামীণ বিনোদনের পুরোনো সাংস্কৃতিক ধারাকে অনেকটা হটিয়ে দিয়েছে। টেলিভিশন আর ইন্টারনেটের পর্দা মাঠঘাটে সংস্কৃতির অর্থনৈতিক সংগ্রামকে আরও তীব্রতর করে তুলেছে। প্রতিযোগিতার এই তীব্রতা বিবিধ ধারা সংস্কৃতির মধ্যেকার অর্থনৈতিক দ্বন্দ্বকে আর বিষোদ্‌গারের সীমানায় আটকে রাখতে পারছে না। সম্প্রতি সেই সীমানা পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। দ্বন্দ্বগুলো এখন রূপান্তরিত হয়েছে সহিংসতায়। এই সহিংসতা দেশকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে সাংস্কৃতিক বিভাজনের পথে।

স্কুলশিক্ষার্থীরা পালা উপভোগ করছে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শেষ রাউন্ডেই শিরোপার নিষ্পত্তি, প্রিতম–সোহাগের সেঞ্চুরি
  • বাউল–বিরোধিতার আড়ালে চলছে গ্রামের অর্থনীতি দখলের লড়াই
  • ময়মনসিংহে প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি–প্রথম আলো কৃতী শিক্ষার্থী উৎসব
  • ময়মনসিংহে ভোরের কুয়াশা মাড়িয়ে স্বপ্নবাজদের ভিড়
  • আমার বাবা শিল্পী কামরুল হাসান
  • ৬টি ভাষার প্রশিক্ষক নেবে সরকার, ঘণ্টাপ্রতি বেতন ৮০০ টাকা, পদ ১২৪
  • ভিডিও বানাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ময়মনসিংহের এক কনটেন্ট ক্রিয়েটর
  • আনন্দে ভরপুর উৎসবে ‘ভালো মানুষ’ হওয়ার প্রত্যয়