মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক তিনটি মামলায় সাবেক ও বর্তমান ২৫ সেনা কর্মকর্তাসহ ৩২ আসামির আগামীকাল বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার দিন ধার্য রয়েছে। তবে তাঁরা যদি হাজির না হন অথবা তাঁদের হাজির না করা হয়, তাহলে তাঁদের হাজির হতে দুটি সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।

এ ছাড়া আসামিরা যদি কাল হাজির হন এবং ট্রাইব্যুনাল তাঁদের জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন, তাহলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে কারা কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে তাঁরা কোন কারাগারে থাকবেন।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক ব্রিফিংয়ে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম এসব কথা বলেন।

মামলা তিনটির মধ্যে দুটি হচ্ছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে গুম-নির্যাতনের মাধ্যমে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায়। অন্যটি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রামপুরা ও বনশ্রী এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায়।

আসামিদের মধ্যে সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তাদের বাইরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, বেনজীর আহমেদসহ র‍্যাবের সাবেক তিন মহাপরিচালক (ডিজি) ও পুলিশের দুই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। আর অভিযুক্ত সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৫ জন সেনা হেফাজতে আছেন।

আজ ব্রিফিংয়ে প্রসিকিউটর মোনাওয়ার হুসাইন বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান সামরিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আগামীকাল (বুধবার) ট্রাইব্যুনালে ওই মামলা তিনটির নির্ধারিত তারিখ আছে। ট্রাইব্যুনাল এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করতে পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) আদেশ দিয়েছিলেন। এসব আসামির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কপি পাঠানো হয়েছে।

আরও পড়ুনপরোয়ানা থাকা ১৫ কর্মকর্তা ‘সেনা হেফাজতে’, একজন লাপাত্তা১১ অক্টোবর ২০২৫

এখন আইন অনুযায়ী দুটি কাজ হতে পারে উল্লেখ করে মোনাওয়ার হুসাইন বলেন, একটি হলো তাঁরা (আসামি) আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে পারেন। অথবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁদের গ্রেপ্তার করে ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসবেন। ট্রাইব্যুনালে তাঁরা উপস্থিত হয়ে জামিন চাইতে পারেন। জামিনের ভিত্তি থাকলে ট্রাইব্যুনাল তাঁদের জামিন দিতে পারেন। আর যদি আসামিদের জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়, তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে কারা কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে তাঁরা কোন কারাগারে থাকবেন।

যদি আসামিরা আগামীকাল হাজির না হন, অথবা তাঁদেরকে হাজির না করা হয়, তবে আইন অনুযায়ী তাঁদের ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হতে দুটি জাতীয় পত্রিকায় (একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি) বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে বলে জানান মোনাওয়ার হুসাইন। তিনি বলেন, সেখানে তাঁদের ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে একটি তারিখ নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। সেদিনও যদি তাঁরা হাজির না হন, তাহলে তাঁদের পলাতক ঘোষণা করে তাঁদের পক্ষে স্টেট ডিফেন্স কাউন্সেল (রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী) দেওয়া হবে। এই স্টেট ডিফেন্স কাউন্সেল তাঁদের পক্ষে মামলা পরিচালনা করবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত পর য় ন আস ম র অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

৩৩ বছর কেটে গেল, কেউ কথা রাখেনি : বঞ্চনার দীর্ঘশ্বাস প্রধান শিক্ষিকা বিলকিসের

“৩৩ বছর কেটে গেল, কেউ কথা রাখেনি”এমন করুণ আর্তিতে নিজের মনের ক্ষোভ ও বঞ্চনার কথা প্রকাশ করেছেন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার ভট্টপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বি. আর. বিলকিস।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি নিজের জীবনের সংগ্রাম, অবহেলা আর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা তুলে ধরেন।

তিনি লেখেন,“বেতন-ভাতা নিয়ে কখনো কিছু বলিনি, লিখিনি। কিন্তু আজ মনে হলো লিখি একটু। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় টাইমস্কেল প্রাপ্য ছিলাম। আজ ২০২৫ সাল এর মধ্যে কত কিছুই ঘটে গেল, কিন্তু আমি পাইনি।”

তিনি আরও বলেন,“দেশ একটা, মন্ত্রণালয় এক, অধিদপ্তর এক তবুও কেউ টাইমস্কেল পেলো, কেউ পেলো না। আমি বা আমার মতো অনেক কপাল পোড়া শিক্ষক এখনো অপেক্ষায়।

বিলকিস উল্লেখ করেন, ২০১৪ সালের ৯ মার্চ ছিল তাঁর জীবনের এক কালো দিন। দ্বিতীয় শ্রেণির সিল ব্যবহারের অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এরপর থেকে তাঁদের জীবন যেন এক দীর্ঘ অপেক্ষা।“

এখন আমরা সবাই মিলে তৃতীয় শ্রেণির কামলা। ৪৫ জন বাদী হয়ে টাইমস্কেল, সিলেকশন গ্রেড ভুলে গেছেন। তারা মর্যাদা চান, টাকার দরকার নেই। কিন্তু আমরা শুধু চেয়ে থাকি আকাশের দিকে।”

তিনি আরও লিখেছেন,“প্রধান শিক্ষকদের চেয়ার ক্ষয়ে যায়, ভেঙে পড়ে, কিন্তু পদোন্নতির অস্তিত্ব নেই। আমরা যেন একেকটা জড় পদার্থ। তারপরও আশার বাণী শুনিয়েছেন ডিজি স্যার বলেছেন প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতির কথা ভাবছেন।”

শেষে নিজের মানসিক অবস্থা প্রকাশ করে তিনি লিখেছেন, “জীবন যেন এক বোঝা হয়ে গেছে। দুঃখ এখন আমার শিক্ষকতার জীবনের অলংকার। আমি এক আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত, অসহায় শিক্ষক।”

ফেসবুকে প্রকাশের পর থেকেই তাঁর এই পোস্টটি ছড়িয়ে পড়েছে শিক্ষকদের মধ্যে। অনেকেই একে “দেশের হাজারো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বাস্তব চিত্র” বলে মন্তব্য করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ