ছাত্রদল নেতা জোবায়েদ হত্যাকাণ্ডে বর্ষাসহ তিনজনের স্বীকারোক্তি
Published: 21st, October 2025 GMT
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা জোবায়েদ হোসেন হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন বার্জিস শাবনাম বর্ষাসহ তিন আসামি। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে তাঁরা আজ মঙ্গলবার এই জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দি দেওয়া অপর দুই আসামি হলেন মাহির রহমান ও ফারদীন আহম্মেদ আয়লান।
ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, জোবায়েদ হোসেন হত্যা মামলায় বর্ষাসহ তিন আসামিকে আদালতে হাজির করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করে পুলিশ। পরে আদালত তাঁদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
পিপি ওমর ফারুক ফারুকী প্রথম আলোকে বলেন, সাক্ষী হিসেবে প্রিতম চন্দ্র দাস আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
এর আগে আজ দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো.
পুলিশ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, পড়াতে গিয়ে জোবায়েদের সঙ্গে বর্ষার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তবে বর্ষার সঙ্গে আগে থেকেই মাহিরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এটা মূলত ত্রিভুজ প্রেমের গল্প।
নজরুল ইসলাম আরও বলেন, মাহিরকে বর্ষা বলেন যে, জোবায়েদকে না সরালে তিনি মাহিরের হতে পারবেন না। এরপর জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। গ্রেপ্তার দুই আসামি মাহির ও বর্ষাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ এসব তথ্য জেনেছে বলে তিনি জানান।
পুলিশ কর্মকর্তা মল্লিক আহসান উদ্দিন ব্রিফিংয়ে বলেন, বাসার নিচে ছুরি দিয়ে আঘাতের পর জোবায়েদ বাঁচার জন্য সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠে আসেন। বেশ কয়েকটি বাসার দরজায় তিনি নক করেন। কেউ খোলেননি। তৃতীয় তলায় এসে তিনি বর্ষার কাছে বাঁচার আকুতি জানান। তবে বর্ষা তাঁকে সাহায্য করেননি।
জোবায়েদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯–২০ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি ছাত্রদলের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি বর্ষাকে টিউশন পড়াতেন।
আরও পড়ুনএক মাস আগে জোবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়: পুলিশ৫ ঘণ্টা আগেউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
লক্ষ্মীপুরে কাঠমিস্ত্রির রহস্যজনক মৃত্যু, হত্যার অভিযোগ পরিবারের
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে আরিফ হোসেন (৪০) নামের এক যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। আরিফের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় অজ্ঞাতদের আসামি করে রায়পুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন নিহতের বোন নাসরিন আক্তার।
নিহতের স্ত্রী নাসিমা আক্তার বলেছেন, তিন দিন আগে শনিবার রাতে আরিফের মোবাইল ফোনে কল আসে। কিন্তু, তিনি ঘর থেকে বের হননি। পরে কে যেন বাইরে থেকে তাকে ডাক দিয়েছে। তখন আরিফ বের হয়ে যান, পরে আর ফিরেননি। পরদিন সকালে স্থানীয়রা বাড়ির অদূরে একটি গভীর নলকূপের পাশে তার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন।
নিহতের মেয়ে মুন্নি আক্তার বলেছেন, আমার বাবার মাথায়, ডান হাতে আঘাতের চিহ্ন ছিল। তার পা ভাঙা ছিল। কে যেন বাবাকে ডেকে নিয়েছে।
আরিফ কাঠমিস্ত্রি ছিলেন। তিনি রায়পুর পৌরসভার গোলাম রহমান সর্দার বাড়ির মানিক মিয়ার ছেলে।
নিহতের ভাই শরীফুল ইসলাম ও বোন নাসরিন আক্তার জানিয়েছেন, বাড়ির সামনে কবরস্থানের জমি নিয়ে রায়পুর পৌরসভার সাবেক নারী কাউন্সিলর শামছুন্নাহার লিলিদের সঙ্গে তাদের বিরোধ আছে। এর জের ধরে ১০ অক্টোবর লিলির নেতৃত্বে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। এতে শরীফুলের মাথায় জখম হয়। এ ঘটনায় লিলিরা আবার থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় তারা (শরীফুল ও তার পরিবারের সদস্যরা) জামিন পান। এরপর প্রকাশ্যে হুমকি দেন লিলির পক্ষের লোকজন। লিলিরা পরিকল্পিতভাবে শনিবার (১৮ অক্টোবর) রাতে ডেকে নিয়ে আরিফকে হত্যা করে মরদেহ ফেলে রেখে যায়। পরদিন রোববার (১৯ অক্টোবর) সকালে তার মরদেহ দেখে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। বিকেলে নাসরিন বাদী হয়ে রায়পুর থানা মামলা দায়ের করেন।
নাসরিন আক্তার বলেছেন, আমার ভাই শরীফের মাথায় রক্তাক্ত জখম করেছে লিলি ও মামুনরা। এরপর তারা মামলা দিয়েছে আমাদের নামে। পরে জামিন পাওয়ায় তারা আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। আমাদেরকে হুমকিও দিয়েছে। তারাই পরিকল্পিতভাবে আমার ভাই আরিফকে হত্যা করেছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রতিবশী লিলিদের সঙ্গে জমি নিয়ে আরিফদের বিরোধ আছে। কিছুদিন আগেও তাদের মধ্যে মারামারি হয়েছে। আরিফের মৃত্যু রহস্যজনক। দ্রুত মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে সাবেক কাউন্সিলর শামছুন্নাহার লিলির মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) অরুপ পাল বলেছেন, আরিফের মরদেহের ডান পায়ের হাড়ে একাধিক অংশ ভাঙা ছিল। তবে, পায়ে দৃশ্যমান কোনো আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি। কপালের ডান পাশে চোখের কাছে থেঁতলানো জখম ছিল।
রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেছেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে। পরিবারের পক্ষ থেকে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।
ঢাকা/জাহাঙ্গীর/রফিক