গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে শঙ্কার মধ্যে ইসরায়েলে ভ্যান্স
Published: 21st, October 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতির মধ্যেও চরম নৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। গত রোববার উপত্যকাটিতে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিজেই বলেছেন, রোববার গাজায় ১৫৩ টন বোমা ফেলেছেন তাঁরা। এমন পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতি টিকিয়ে রাখতে ইসরায়েল সফর করেছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স।
গাজায় ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর একাধিকবার একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে হামাস ও ইসরায়েল। হামাস ইসরায়েলি দুই সেনাকে হত্যা করেছে—এমন অভিযোগ তুলে রোববার হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে এক দিনে অন্তত ৩৩ ফিলিস্তিনি নিহত হন। যদিও ইসরায়েলি সেনাদের ওপর হামলার অভিযোগ নাকচ করেছিল হামাস।
এরপর গতকাল সোমবার ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটে দেওয়া বক্তব্যে গাজায় ১৫৩ টন বোমা ফেলার কথা জানান নেতানিয়াহু। দম্ভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের এক হাতে অস্ত্র। আর অন্য হাত শান্তির জন্য বাড়িয়ে দেওয়া রয়েছে। দুর্বলের সঙ্গে নয়, বরং শক্তিশালীর সঙ্গে শান্তি স্থাপন করুন। ইসরায়েল এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি শক্তিশালী।’
নেতানিয়াহু মুখে শান্তির কথা বললেও মাঠের চিত্র ভিন্ন। আজ মঙ্গলবার থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় গাজার হাসপাতালগুলোয় ইসরায়েলের হামলায় নিহত আরও ১৩ জনের মরদেহ নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় অন্তত ৬৮ হাজার ২২৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি।
এ ছাড়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী গাজায় ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ইসরায়েল। উপত্যকার দক্ষিণে রাফা সীমান্ত বন্ধ রেখেছে তারা। মাত্র দুটি সীমান্ত দিয়ে গাজাবাসীর জন্য ত্রাণ প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। গাজার গণমাধ্যম কার্যালয় জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে উপত্যকায় ৬ হাজার ৬০০ ট্রাক ত্রাণ প্রবেশের কথা ছিল। তবে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মাত্র ৯৮৬ ট্রাক প্রবেশ করেছে।
এমন পরিস্থিতিতে গাজায় ত্রাণ প্রবেশের জন্য সব পথ খুলে দেওয়া ‘অত্যন্ত জরুরি’ বলে আজ উল্লেখ করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। আর কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি দেশটির শুরা কাউন্সিলে দেওয়া বক্তব্যে বলেছেন, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের নিন্দা জানায় কাতার। উপত্যকাটিতে ইসরায়েলে আগ্রাসন জাতিগত নিধন ছাড়া কিছু নয়।
ইসরায়েলে জেডি ভ্যান্সগাজায় প্রথম ধাপে যে যুদ্ধবিরতি চলছে, তার ভিত্তি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা। তবে ইসরায়েল হামলা চালিয়ে যাওয়ায় এই যুদ্ধবিরতি কতটা টেকসই হবে, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তাও মার্কিন গণমাধ্যমকে বলেছেন, নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতি চুক্তি থেকে সরে গিয়ে আবার পুরোদমে হামলা শুরু করতে পারেন বলে উদ্বেগ বাড়ছে।
এমন উদ্বেগের মধ্যে আজ ইসরায়েলে পৌঁছেছেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স। এর আগের দিন ইসরায়েলে নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ট্রাম্পের জামাতা জেরাড কুশনার ও বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। ইসরায়েলের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, মার্কিন নেতাদের লক্ষ্য হলো নতুন করে সংঘাত ঠেকানো এবং যুদ্ধবিরতির পরের ধাপ নিয়ে আলোচনা।
ইসরায়েল সফরে গিয়ে আজ ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ বাহিনীর প্রধান কার্যালয় পরিদর্শনের কথা ছিল ভ্যান্সের। সেখানে সংঘাত পরবর্তী গাজার নিরাপত্তার জন্য একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী নিয়ে আলোচনার কথা ছিল তাঁর। এদিনই যুদ্ধবিরতি নিয়ে স্টিভ উইটকফ ও ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য ইসরায়েলে যাওয়ার কথা মিসরের গোয়েন্দাপ্রধানসহ একটি প্রতিনিধিদলের।
হামাস নেতা খলিল আল-হায়ার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলও মিসরের রাজধানী কায়রোয় যুদ্ধবিরতির পরের ধাপ নিয়ে বৈঠক করছে। হামাসের এই নেতা বলেছেন, গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন শেষ হয়েছে বলে তাঁদের নিশ্চিত করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও আলোচনার মধ্যস্থতাকারীরা। কায়রোয় বৈঠকের পর গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বাড়বে বলেও আশাবাদ প্রকাশ করেন তিনি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত র ণ প রব শ ইসর য় ল র য় ইসর য় ল র জন য বল ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
যেকোনো মূল্যে দনবাস দখল করব: পুতিন
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সতর্ক করে বলেছেন, ইউক্রেনের সেনাবাহিনী ভালোয় ভালোয় সরে না গেলে শক্তি প্রয়োগ করে হলেও দনবাস অঞ্চল দখল করবে রাশিয়া। ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার পন্থা নিয়েও কোনো সমঝোতা করার বিষয় বাতিল করে দিয়েছেন তিনি।
দুদিনের ভারত সফর শুরুর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পুতিন এ হুঁশিয়ারি দেন।
পুতিন বলেন, ‘ইউক্রেনের সেনারা হয় এ অঞ্চল ছেড়ে চলে যাবে, নয় আমরা সামরিকভাবে বা অন্য কোনো উপায়ে এ অঞ্চলকে মুক্ত করব।’
ইউক্রেনের পূর্বাংশের দনবাস অঞ্চলের প্রায় ৮৫ শতাংশ এখন মস্কোর দখলে রয়েছে।
ইউক্রেন বলেছে, মস্কো ইউক্রেনের যেসব অঞ্চলে যুদ্ধে ব্যর্থ হয়েছে, তারা সেগুলো তাকে দিতে চায় না। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি কোনো অঞ্চলগত ছাড় দেওয়ার সম্ভাবনা বাতিল করে দিয়েছেন।
জেলেনস্কি বলেছেন, যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছিল। এ জন্য মস্কোকে কোনো পুরস্কার দেওয়া উচিত নয়।
বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় ১৯ শতাংশ এলাকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। এর মধ্যে ক্রিমিয়াও রয়েছে। ২০১৪ সালে এটি দখল করে নেয় রাশিয়া।
এ ছাড়া গোটা লুহানস্ক, দোনেৎস্কের ৮০ শতাংশ, খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়ার প্রায় ৭৫ শতাংশ এলাকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। খারকিভ, সুমি, মাইকোলাইভ ও দনিপ্রোপ্রোভস্ক অঞ্চলের ছোট কিছু অংশও তাদের নিয়ন্ত্রণে।
আরও পড়ুনইউক্রেন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠকে ভূখণ্ড নিয়ে ‘কোনো আপস’ হয়নি: রুশ কর্মকর্তা০৩ ডিসেম্বর ২০২৫অন্যদিকে দোনেৎস্কের প্রায় ৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা এখনো ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে একটি শান্তিচুক্তির উদ্যোগ নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে গত মঙ্গলবার মস্কোয় বৈঠক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা।
এ ছাড়া মস্কোয় থাকা ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফের ফ্লোরিডায় ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করার কথা ছিল।
মস্কোয় অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর ট্রাম্প বলেছেন, তাঁর প্রতিনিধিরা বিশ্বাস করেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ‘যুদ্ধ শেষ করতে চান’।
আরও পড়ুনপুতিনের সঙ্গে ট্রাম্প প্রতিনিধিদের ৫ ঘণ্টার বৈঠকেও হলো না সমঝোতা০৩ ডিসেম্বর ২০২৫ট্রাম্পের এ বক্তব্যের পর নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন পুতিন। এদিকে ওই বৈঠকের বিষয়ে আজ শুক্রবার ক্রেমলিন বলেছে, রাশিয়ায় বৈঠকের পর মস্কো এখন ওয়াশিংটনের সাড়ার অপেক্ষায় আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি পরিকল্পনার মূল প্রস্তাবে দনবাসের যেসব এলাকার নিয়ন্ত্রণ এখনো ইউক্রেনের হাতে আছে তা কার্যত পুতিনের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলা ছিল। কিন্তু উইটকফের নেতৃত্বে মার্কিন প্রতিনিধিদল মস্কোয় ওই প্রস্তাবের একটি সংশোধিত সংস্করণ উপস্থাপন করেছে।
বর্তমানে ভারত সফরে আছেন পুতিন। ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পুতিন আরও বলেন, উইটকফ ও ট্রাম্পের মেয়ের জামাই জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে আলোচনার আগে তিনি নতুন সংস্করণটি দেখেননি।
যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনার কয়েকটি অংশের সঙ্গে মস্কো একমত হতে পারেনি বলেও জানান পুতিন। তবে কোন কোন অংশ নিয়ে মস্কোর আপত্তি সে সম্পর্কে তিনি কিছু বলেননি।
আরও পড়ুনরাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাইলে দ্রুত পরাজিত হবে ইউরোপ, হুঁশিয়ারি পুতিনের০২ ডিসেম্বর ২০২৫