সড়ক দুর্ঘটনার উচ্চ ঝুঁকি ২১ জায়গায়
Published: 22nd, October 2025 GMT
ব্যবসায়ী বিলু চৌধুরী গত জুনে বগুড়ার শেরপুর উপজেলা পরিষদের সামনে দুর্ঘটনায় আহত হন। তিনি রাস্তা পার হচ্ছিলেন। তাঁকে ধাক্কা দেয় একটি তিন চাকার যান। রাজধানীর একটি হাসপাতালে ১৫ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর বিলু চৌধুরীর মৃত্যু হয়।
বিলু চৌধুরী যেখানে আহত হয়েছিলেন, সেই জায়গায় নিয়মিতই দুর্ঘটনা ঘটে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এটি ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের একটি অংশ। শুধু এ অংশে নয়, শেরপুর উপজেলার উত্তরে দশমাইল এলাকা থেকে দক্ষিণে সীমাবাড়ি পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার মহাসড়ক দুর্ঘটনাপ্রবণ।
সরেজমিন গতকাল মঙ্গলবার দেখা যায়, সড়কটি দিয়ে দ্রুতগতিতে শত শত যানবাহন চলাচল করে। তবে রাস্তা পারাপারের নিরাপদ ব্যবস্থা নেই। সড়কের দুই উপজেলার মহিলা কলেজসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান। নানা কাজে প্রতিদিন উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে কয়েক শ মানুষ আসেন। সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ পায়ে চালিত রিকশার যত্রতত্র চলাফেরা এই সড়কে।
শেরপুর পৌর শহরের ক্রীড়া সংগঠক আবদুল খালেক বলেন, ‘প্রতিদিন জীবন হাতে করে এই সড়ক ধরে আমাদের চলাচল করতে হয়।’
সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, শেরপুরের এই জায়গার মতো দেশের ২১টি স্থান সড়ক দুর্ঘটনার অতি উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল—এই পাঁচ বছরের ৩৭ হাজার সড়ক দুর্ঘটনা বিশ্লেষণ করে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, এই ২১ জায়গায় মোট সড়ক দুর্ঘটনার ১৪ শতাংশ সংঘটিত হয়েছে।
আরও পড়ুনসড়ক দুর্ঘটনা: প্রচার নেই, ক্ষতিপূরণের সুযোগ হারাচ্ছেন অনেক ভুক্তভোগী১৫ অক্টোবর ২০২৫দুর্ঘটনায় অনেক পরিবার হারিয়েছে উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে। অনেক মা-বাবা সন্তানকে, সন্তানেরা মা-বাবাকে হারিয়েছেন। দুর্ঘটনায় আহত হয়ে অনেকে অঙ্গ হারাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে আজ পালিত হচ্ছে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস।দেশে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণহানি বাড়ছে। প্রাণহানি ও দুর্ঘটনার সংখ্যা নিয়ে সরকারের হিসাবের সঙ্গে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর উপাত্তের ভিন্নতা থাকলেও দুর্ঘটনা যে বাড়ছে, তা নিয়ে কারও দ্বিমত নেই। দুর্ঘটনায় অনেক পরিবার হারিয়েছে উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে। অনেক মা-বাবা সন্তানকে, সন্তানেরা মা-বাবাকে হারিয়েছেন। দুর্ঘটনায় আহত হয়ে অনেকে অঙ্গ হারাচ্ছেন। এ পরিস্থিতিতে আজ পালিত হচ্ছে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশে সড়ক যেভাবে হয়েছে, সেভাবে হয়নি সড়কের ব্যবস্থাপনা। সড়কের উন্নয়ন হলেও পরিচালন কৌশল কী হবে, তা নিয়ে সরকারি স্তরে ভাবনার অভাব রয়েছে। তাই উন্নত সড়কে নছিমন, ভটভটির মতো অবৈধ যানবাহনের ভিড়। তাতে বাড়ছে দুর্ঘটনা। এমন সময় কোন কোন এলাকায় দুর্ঘটনা বেশি, তা জানা গেল রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের বিশ্লেষণে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবহনবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকার স্থান নির্ধারণ গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এই মানচিত্রায়ণ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান ও প্রবণতা কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু সরকার কীভাবে তা করবে, সেটাই বিচার্য বিষয়।
আরও পড়ুনসেপ্টেম্বরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪১৭ জন, মোটরসাইকেলেই ১৪৩০৪ অক্টোবর ২০২৫এই মানচিত্রায়ণ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান ও প্রবণতা কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু সরকার কীভাবে তা করবে, সেটাই বিচার্য বিষয়।মোয়াজ্জেম হোসেন, অধ্যাপক, বুয়েটকেন এই গবেষণা, পদ্ধতি কীগবেষণার কারণ প্রসঙ্গে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের কাছে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকার একটি তালিকা ছিল। এটি ধরে এলাকাগুলো সংশোধন করে কিছু ফলও পাওয়া গেছে। কিন্তু দেশে নতুন নতুন সড়ক হয়েছে, যানবাহন বেড়েছে আর সেই সঙ্গে বেড়েছে দুর্ঘটনা। তিনি বলেন, এসব এলাকা সম্পর্কে যদি সঠিক ধারণা না থাকে, তবে দুর্ঘটনা কমবে না। দুর্ঘটনা রোধে স্থানভিত্তিক পদক্ষেপ জরুরি। আর সে জন্যই এ তালিকা করা হয়েছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালে দেশে মোট ৩৭ হাজার দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩১৪টি জায়গায়। এসব জায়গায় তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২১টিকে অতি উচ্চ ঝুঁকি, ১৩৯টিকে অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা এবং ১৭৫টিকে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
অতি উচ্চ ঝুঁকির এলাকাগুলোর মধ্যে আছে রাজধানী ঢাকা ও ধামরাই, গাজীপুরের সদর উপজেলা, কালিয়াকৈর ও শ্রীপুর, টাঙ্গাইলের কালিহাতী, মাদারীপুরের শিবচর ও টেকেরহাট, ফরিদপুরের ভাঙ্গা, পাবনার ঈশ্বরদী, বগুড়ার শেরপুর, নাটোরের বড়াইগ্রাম, চট্টগ্রামের মিরসরাই, পটিয়া ও সীতাকুণ্ড, কক্সবাজারে চকরিয়া, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা, বরিশালের গৌরনদী, হবিগঞ্জের মাধবপুর এবং ময়মনসিংহের ত্রিশাল ও ভালুকা।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাবে, গত পাঁচ বছরে দেশের সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩৩ হাজার ২৫৬ জন। এর মধ্যে এই উচ্চ ঝুঁকির স্থানগুলোতে নিহত হয়েছেন ৪ হাজার ৬৩৯ জন।
আরও পড়ুনসড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সব রাজনৈতিক দলের সদিচ্ছা অপরিহার্য: নিসচা০১ অক্টোবর ২০২৫দেশে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণহানি বাড়ছে। প্রাণহানি ও দুর্ঘটনার সংখ্যা নিয়ে সরকারের হিসাবের সঙ্গে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর উপাত্তের ভিন্নতা থাকলেও দুর্ঘটনা যে বাড়ছে, তা নিয়ে কারও দ্বিমত নেই।উচ্চ ঝুঁকির স্থানগুলোর অবস্থারোড সেফটি ফাউন্ডেশন দেশের দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে উচ্চ ঝুঁকির যে ২১ স্থানের উল্লেখ করেছে, এর মধ্যে আছে চট্টগ্রামের মিরসরাই। গত এক বছরে মিরসরাইয়ের সড়কে ৮২ দুর্ঘটনায় ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে রাস্তার পাশে থামানো গাড়ির পেছনে অন্য গাড়ি ধাক্কা দেওয়ার কারণে।
মিরসরাই উপজেলার বড় দারোগারহাট থেকে ধুমঘাট সেতু পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ১৮ কিলোমিটার এলাকায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। এই রাস্তার দুই পাশজুড়ে নিজামপুর কলেজ এলাকা, বড়তাকিয়া ইউটার্ন, সুফিয়া রাস্তার মাথা এলাকা, সোনাপাহাড় বিশ্বরোড, বিএসআরএম গেট এলাকা, বালেরহাট পৌরবাজার দক্ষিণ ইউটার্ন ও বারইয়ারহাট পৌর বাজার এলাকা।
জোরারগঞ্জ হাইওয়ে থানা–পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই অংশে সড়ক দুর্ঘটনার বড় একটি কারণ হচ্ছে চোখে ঘুম নিয়ে চালকের গাড়ি চালানো। বেশির ভাগ সময় ঢাকা বা উত্তরবঙ্গের জেলাগুলো থেকে দীর্ঘ সময় গাড়ি চালিয়ে চালকেরা ভোরের দিকে মিরসরাই উপজেলা এলাকা অতিক্রম করেন। তখন তাঁদের শরীরে ক্লান্তি ও চোখে ঘুম থাকে। এ কারণে ভোররাতের দিকে মিরসরাই অংশে অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে।
এ ছাড়া সড়কে অবৈধ তিন চাকার যানবাহন চলাচল, অসতর্ক ও এলোমেলো রাস্তা পারাপার, গাড়ির দ্রুতগতি ও বর্ষায় সড়কে খানাখন্দ এ এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেন ওসি।
আরও পড়ুনআগস্টে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪২৮ জন, সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালে দেশে মোট ৩৭ হাজার দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩১৪টি জায়গায়। এসব জায়গায় তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২১টিকে অতি উচ্চ ঝুঁকি, ১৩৯টিকে অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা এবং ১৭৫টিকে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।কেন এত দুর্ঘটনাগবেষণায় রোড সেফটি ফাউন্ডেশন দুর্ঘটনার কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছে। দেখা গেছে, এলাকার ভিন্নতায় দুর্ঘটনার কারণও ভিন্ন। এসব কারণের মধ্যে আছে, বড় সড়কে ছোট বা তিন চাকার যানের চলাচল, দুর্ঘটনার নতুন নতুন এলাকা সৃষ্টি, সড়কের পাশে হাট-বাজার ও বাসের টিকেট বিক্রয়কেন্দ্র বা কাউন্টারের অবস্থান।
বিআরটির হিসাব অনুযায়ী, দেশে এখন নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা সাড়ে ৬৪ লাখ। বুয়েটের একাধিক গবেষণা অনুযায়ী, নিবন্ধিত যানবাহনের বাইরে প্রায় ৭০ লাখ তিন চাকার ছোট যানবাহন সড়কে চলাচল করে। সরকার এসব যানবাহনকে অবৈধ হিসেবে বিবেচনা করে। এসব যানের মধ্যে রয়েছে নছিমন, করিমন, আলমসাধু, ভটভটি, ইজিবাইক ও পাখি। এ ছাড়া আছে ব্যাটারি বা যন্ত্রচালিত রিকশা।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪৪৬টি। এতে নিহত হন ৪১৭ জন এবং আহত ৬৮২ জন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৪ শতাংশ মোটরসাইকেলচালক ও আরোহী। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৩ শতাংশ তিন চাকার যানবাহন।
এদিকে দেশের কম দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাগুলোতে বেড়ে গেছে দুর্ঘটনার সংখ্যা। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য হলো, মেহেরপুর, নেত্রকোনা, নড়াইল, মাগুরার মতো জেলাগুলোতে ছয়–সাত বছর আগেও সড়ক দুর্ঘটনা অনেক কম ছিল। সেগুলোতে এখন দুর্ঘটনা বেড়ে গেছে। এটা হয়েছে কারণ, এসব এলাকায় নতুন নতুন সড়ক হয়েছে। কিন্তু সেখানে যত্রতত্র তিন চাকার যানের চলাচল কমেনি।
উচ্চ ঝুঁকির দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকার মধ্যে রয়েছে গাজীপুর সদর, কালিয়াকৈর ও শ্রীপুর এলাকা। কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রায় রাস্তার পাশে অসংখ্য পরিবহনের কাউন্টার। আশপাশে কারখানাসহ নানা প্রতিষ্ঠান আছে। গবেষণায় এখানকার দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে যত্রতত্র যানবাহন থেকে যাত্রী ওঠানো, একে গাড়িকে আরেক গাড়ির ধাক্কা—এসব কারণ উল্লেখ করা হয়।
আরও পড়ুন১১ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৮৬ হাজারে বেশি১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাবে, গত পাঁচ বছরে দেশের সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩৩ হাজার ২৫৬ জন। এর মধ্যে এই উচ্চ ঝুঁকির স্থানগুলোতে নিহত হয়েছেন ৪ হাজার ৬৩৯ জন।উন্নত সড়কে অনুন্নত যানবাহন ও পরিকল্পনাদেশে দিন দিন নতুন সড়ক হলেও সেই সড়কে দুর্ঘটনা বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান নিরূপণ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলেই মনে করেন দুর্ঘটনা বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু দুর্ঘটনার ঝুঁকিপূর্ণ স্থান নিরূপণে ও দুর্ঘটনা রোধে সরকার কী করছে, জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) পরিচালক (রোড সেফটি) সীতাংশু শেখর বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, দুর্ঘটনার স্থান চিহ্নিত করার বিষয়টি আসলে সড়ক ও জনপথ বিভাগ করে। তাদের কাছে নিশ্চয়ই আছে। বড় সড়কে ‘অনুন্নত’ যান চলছে, এটা পরিকল্পনার সময়ের গলদ, তা বলা যায়। তিনি বলেন, ‘এখন বাস্তবতা হলো ছোট যানগুলোকে আমাদের ধর্তব্যের মধ্যে নিতে হবে। চালকদের প্রশিক্ষণ বাড়াতে হবে। এ জন্য আমরা নতুন কর্মপরিকল্পনা নিচ্ছি।’
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। চেষ্টা করা হয়েছে।
বিভিন্ন সরকারের সময় সড়কে যতটা মনোযোগ দেওয়া হয়েছে, ততটাই উপেক্ষিত থাকে সড়ক ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনের বিষয়টি—এমনটাই মনে করেন বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবহনবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সড়কে এক চরম দ্বান্দ্বিক অবস্থা দেখা যায়। এখানে অবকাঠামো বা সড়কটি তৈরি হচ্ছে উন্নত প্রকৌশল মেনে। কিন্তু এর পরিচালনব্যবস্থা কী হবে, তা নিয়ে কোনো নীতি নেই। উন্নত সড়কে চলছে একেবারে নিবন্ধনহীন ও অনুন্নত যান। এটা কীভাবে সম্ভব?’
[প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন প্রতিনিধি , শেরপুর (বগুড়া) এবং প্রতিনিধি মিরসরাই (চট্টগ্রাম)।
আরও পড়ুন১৩ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের প্রায় ৩২ শতাংশ মোটরসাইকেল আরোহী২০ আগস্ট ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র সড়ক দ র ঘটন য় সড়ক দ র ঘটন র দ র ঘটন র স প রথম আল ক স প ট ম বর ও দ র ঘটন র দ র ঘটন সরক র র র উপজ ল উপজ ল র ব যবস থ ম রসর ই ন নত ন এল ক র এল ক য় র এল ক অন য য় ন হত হ সন ত ন ন সড়ক সড়ক র
এছাড়াও পড়ুন:
ইউএনওদের সিইসি: ব্যালট বাক্স দখল করে বাড়ি যাওয়ার পর হাজির হলেন, সেটা যেন না হয়
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) কোনো চাপের কাছে নতিস্বীকার না করে, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন।
আজ বুধবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ইউএনওদের নির্বাচন ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত প্রশিক্ষণের উদ্বোধনীতে সিইসি এ আহ্বান জানান। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে এ প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নাসির উদ্দীন। ইউএনওদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্র দখল করে, বাক্স দখল করে বাড়ি চলে গেছে, আর আপনি গিয়ে হাজির হলেন, সেটা যাতে না হয়।’
নির্বাচনে সব কটি সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের কাজটি ইউএনওদের গুরুত্বের সঙ্গে করতে হবে বলে উল্লেখ করেন সিইসি। তিনি বলেন, কোনো সংকট দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে নিরসনের চেষ্টা করতে হবে। ঘটনা শেষ হয়ে যাওয়ার পর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে হবে না। কোনো চাপের কাছে নতিস্বীকার করা যাবে না। আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্তে অটল থাকতে হবে।
নাসির উদ্দীন বলেন, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশনও কারও চাপের কাছে নত হবে না। প্রচলিত আইন মেনেই নির্বাচন কমিশন সব নির্দেশনা দেবে।
ইউএনওদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, যে ধরনের কাজের দায়িত্বই পড়ুক না কেন, তা ন্যায়, আইনসংগত ও নিরপেক্ষভাবে পালন করতে হবে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, তাহমিদা আহমদ ও আব্দুর রহমানেল মাছউদ। স্বাগত বক্তব্য দেন নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ও নির্বাচনী আচরণবিধির কিছু কিছু জায়গায় পরিবর্তন আসতে পারে, সেটি বিবেচনায় রাখতে হবে।
প্রবাসীদের ভোট গ্রহণের জন্য ওসিভি (আউট অব কান্ট্রি ভোটিং) ও নির্বাচনী কার্যক্রমে যুক্ত ব্যক্তিদের জন্য আইসিপিভি (ইন কান্ট্রি পোস্টাল ভোট) সম্পর্কে প্রশিক্ষণার্থীদের ধারণা দেন আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তিনি জানান, আগামী ১৬ নভেম্বরে প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার অনলাইন অ্যাপ সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
নির্বাচনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা গুরুত্বপূর্ণ ও মুখ্য ভূমিকা পালন করবেন বলে উল্লেখ করেন আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টির কাজ এখন থেকেই করতে হবে। প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে, সে আবহাওয়া এখন থেকে সৃষ্টি করতে হবে।
নির্বাচনী দায়িত্ব সাহসের সঙ্গে পালন করার পরামর্শ দেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম। ইউএনওদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ, নির্বাচন কমিশন সঠিক কাজ করা কর্মকর্তাদের পাশে থাকবে। তবে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অন্যায় কাজ করলে কঠিন পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে।
আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো মারামারি বা ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে উভয় পক্ষকেই ধরতে হবে। কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। সেই সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালত অবশ্যই আয়নার মতো স্বচ্ছ হতে হবে, যাতে পক্ষপাতিত্বের বিতর্ক সৃষ্টি না হয়। যাঁরা আগামী নির্বাচনে ভালো দায়িত্ব পালন করবেন, তাঁদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকবে।
নির্বাচন পরিচালনাকালে কর্মকর্তাদের অতি উৎসাহী ও অতি সাহসী না হওয়ার পরামর্শ দেন নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদ। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আদেশ নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত শুনতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তাহমিদা আহমদ বলেন, নিজেদের বিদ্যা, বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে কোনটা ভুল আর কোনটা সত্য, সে পার্থক্য বুঝে কাজ করতে হবে।
ভালো নির্বাচন করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ। তিনি বলেন, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। ভালো নির্বাচন করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তাই কর্মকর্তাদের অর্পিত দায়িত্ব সঠিক ও সফলভাবে পালন করে বিশ্ব ও মানুষের কাছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে হবে।