কুড়িল থেকে সদরঘাট হয়ে মিরপুরে বাসে যেতে কত সময় লাগে
Published: 22nd, October 2025 GMT
ঢাকার কুড়িল থেকে সদরঘাটের দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার; এক বিকালে গুগল ম্যাপে দেখাচ্ছিল যানজট ধরে গাড়িতে এই পথ পাড়ি দিতে ১ ঘণ্টা ২৪ মিনিট লাগবে, আর যানজট না থাকলে পৌঁছনো সম্ভব ৩১ মিনিটেই। এই পথ বাসে যেতে কত সময় লাগে, বুঝতে চাইলাম এক কর্মদিবসে।
৯ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার; সকাল ৮টায় কুড়িল থেকে চাপলাম বাসে। ভিক্টর ক্ল্যাসিক নামে বাসটিতে ওঠার পর মনে হলো, প্রাচীনকালের এক যানবাহনে উঠেছি; যাত্রীসেবা দিতে দিতে গাড়িটি তার নিজের অবস্থার কোনো উন্নতি করতে পারেনি। বাসের ভেতরে পেছনের দিকে জানালার পাশে একটি ফাঁকা আসন পেলাম, বসতে যেতেই হাঁটু ঠেকে গেল সামনের আসনের সঙ্গে। কোনোমতে জড়োসড়ো হয়েই বসতে হলো।
সড়ক পরিবহন আইন অনুসারে, রাজধানীতে চলাচল করা মিনিবাসের আসনসংখ্যা হবে চালকেরটিসহ ৩১টি। কিন্তু এই বাসে মোট ৩৯টি আসন। ফলে জড়োসড়ো হয়েই বসতে হচ্ছে যাত্রীদের। এর বাইরে দাঁড়িয়ে ও বাসে ওঠার প্রবেশমুখেও ছিল কর্মস্থলমুখী মানুষের পথ পাড়ি দেওয়ার লড়াই।
ঢাকায় চলাচলরত অধিকাংশ বাসের বাইরে যেমন রংচটা, ভেতরটাও অপরিচ্ছন্ন। আসনের কভারগুলোও ময়লা জমে জমে তেল–চিটচিটে। ‘লক্কড়ঝক্কড়’ এই বাস নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা হলেও চিত্র বদলায়নি। পুরোনো এসব গাড়ির মান উন্নত না হওয়ার জন্য মালিক এবং সরকারি কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবকেই কারণ হিসেবে দেখা হয়।
আরও পড়ুনমিরপুরে সুখবর, ৬০ ফিট সড়কের ‘চিকেন নেকে’ সমাধান আসছে১৬ অক্টোবর ২০২৫ঢাকায় চলাচলরত অধিকাংশ বাসের বাইরে যেমন রংচটা, ভেতরটাও অপরিচ্ছন্ন। আসনের কভারগুলোও ময়লা জমে জমে তেল–চিটচিটে। ‘লক্কড়ঝক্কড়’ এই বাস নিয়ে বিভিন্ন সময় কথা হলেও চিত্র বদলায়নি।স্টপেজ ৩টি, বাস থামল ১১ বারকুড়িল থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত নির্ধারিত স্টপেজ তিনটি। কিন্তু এ পথটুকুতে বাসটি থেমেছে ১১ বার। যাত্রীরা যেখানে নামতে ছেয়েছেন, নামিয়েছে। আর যাত্রী ওঠাতে দাঁড়িয়েছিল দীর্ঘক্ষণ। এমন চিত্র অবশ্য রাজধানী ঢাকার সব সড়কেই, তা যানজটের বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বাসে পাশের আসনে বসে সদরঘাট যাচ্ছিলেন ঢাকার খিলক্ষেতের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মো.
কুড়িল থেকে প্রগতি সরণি হয়ে ব্যস্ত এই সড়কে বাস থামার নির্দিষ্ট কয়েকটি স্থান নির্ধারিত থাকলেও তা মানা হয় না। কখনো কখনো ট্রাফিক পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকলে কালেভদ্রে আইন মানতে চান বাসচালকেরা। এই বাসটিও ইচ্ছেমতো যত্রতত্র থামিয়ে যাত্রী উঠা–নামা করেই সামনে এগিয়ে চলছিল।
নতুন বাজার থেকে থেমে থেমেই গেছি সদরঘাটে। সকাল আটটার দিকে রওনা দিয়ে কর্মব্যস্ত দিনের সকালে সদরঘাট পৌঁছাতে সময় লাগে আড়াই ঘণ্টা। এর মধ্যে বড় ধরনের যানজটে পড়তে হয়েছে বাড্ডা লিংক রোড, রামপুরা ব্রিজ এলাকা, আবুল হোটেল, কাকরাইল, গুলিস্তান, সুরিটোলা, তাঁতীবাজার, বংশাল ও জনসন রোডে। রিকশার দখল এবং বাসচালকদের সড়ক আটকে যাত্রী উঠানামা করার কারণেই এই যানজট; কিছু ক্ষেত্রে দীর্ঘ সিগন্যালও যানজট বাড়িয়ে তোলে।
আরও পড়ুনঢাকার পরিবহনব্যবস্থার সংকটের কারণ কী১০ অক্টোবর ২০২৫ভিক্টর ক্ল্যাসিকের এই বাসের মতো ঢাকার অধিকাংশ বাসই রংচটাউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সদরঘ ট এই ব স য নজট
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকার সদরঘাটে লঞ্চের আগুনের ভিডিওটি ২০২৩ সালের
দেশে পরপর কয়েকটি অগ্নিকাণ্ড ঘটার পর সেগুলো নিয়ে আলোচনার মধ্যে ঢাকার সদরঘাটে বুড়িগঙ্গা নদীতে একটি লঞ্চে আগুনের ভিডিও ছড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
ভিডিওটির ক্যাপশনে দাবি করা হচ্ছে, ‘এবার ঢাকা সদরঘাটে লঞ্চে ভয়াবহ আগুন, দেশে যেন আগুনের খেলা শুরু হয়েছে।’
গত কয়েক দিনে দেশে কয়েকটি বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটে। গত বুধবার ঢাকার মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে একটি পোশাক কারখানা এবং একটি রাসায়নিকের গুদামে আগুন লেগে ১৬ জনের মৃত্যু ঘটে। এরপর গত শুক্রবার আগুন লাগে চট্টগ্রাম ইপিজেডের একটি কারখানায়। শনিবার ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে।
এর পরপরই রোববার সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, নদীতে একটি লঞ্চে আগুন লেগেছে। ‘ঢাকা সদরঘাটে লঞ্চে ভয়াবহ আগুন লেগেছে’ শিরোনামে ছড়াচ্ছে এটি।
লিংক: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে
তবে যাচাই করে দেখা গেছে, ভিডিওটি নতুন নয়। ইনভিড টুলে কি-ফ্রেম বিশ্লেষণ করে রিভার্স সার্চে পাওয়া যায়, এটি ২০২৩ সালের ৩০ জুন রাজধানীর সদরঘাটে ‘ময়ূর-৭’ নামের একটি লঞ্চে আগুন লাগার সময় ধারণ করা ভিডিও।
সে সময় মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলো এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের ৩০ জুন বেলা ১১টার দিকে লালকুঠি ঘাটের ২২ নম্বর পন্টুনে দাঁড়ানো ঢাকা-চাঁদপুরগামী ‘ময়ূর-৭’ লঞ্চে আগুন লাগে। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিট কাজ করে।
সংবাদের লিংক: এখানে, এখানে, এখানে, এখানে
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানিয়েছিলেন, লঞ্চটি তখন ঘাটে দাঁড়ানো অবস্থায় ছিল এবং এতে কোনো যাত্রী ছিল না। আগুন লঞ্চের দ্বিতীয় তলায় লেগেছিল।
গত কয়েক দিনে সদরঘাটে কোনো লঞ্চে আগুন লাগার খবর কোনো সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং সম্প্রতি সদরঘাটে লঞ্চে আগুন লাগার দাবিটি ঠিক নয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো ভিডিওটি ২০২৩ সালের পুরোনো ঘটনার।