ঈদগাহ মাঠের দ্বন্দ্ব নিয়ে পাবনার ফরিদপুর উপজেলার মধ্য পুংগলী গ্রামে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে আহত একজন মারা গেছেন। শুক্রবার (২৪ অক্টেবর) ভোরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। 

নিহত গাজ্জালী মুন্সি (৫০) একই গ্রামের মৃত রমজান মুন্সীর ছেলে। তিনি হাজী গোষ্ঠী পক্ষের লোক।

আরো পড়ুন:

কুবিতে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, আহত ২ 

নোয়াখালীতে শিবির-যুবদল সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা

আরো পড়ুন: ঈদগাহ মাঠের পুরনো দ্বন্দ্বে সংঘর্ষ, আহত ২০

ফরিদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাকিউল আজম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, “সংঘর্ষের ঘটনার পর রাতে উভয়পক্ষ থানায় মামলা করেছে। মামলায় কুদরত এ খুদা (৪৫) ও ধলা (২৫) নামে দুই পক্ষের দুইজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।”

বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সকালে ফরিদপুর উপজেলার মধ্য পুংগলী গ্রামে হাজী গোষ্ঠী ও বাদশাহ গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

পুলিশ জানায়, গত বছর ঈদগাহ মাঠে নামাজ পড়া নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। সেই পুরনো বিরোধের জেরে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে হাজী গোষ্ঠী ও বাদশা গোষ্ঠীর মধ্যে আবারো উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে দুই গোষ্ঠীর লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।

সংঘর্ষে আহত ২০ জনকে ফরিদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে গুরুতর কয়েকজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় গাজ্জালী মুন্সীকে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছিল। পথেই মারা যান তিনি। আজ শুক্রবার সকালে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। 

ঢাকা/শাহীন/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ঘর ষ ম মল স ঘর ষ

এছাড়াও পড়ুন:

জাবরা গ্রাম থেকে কম্পিউটার অধ্যাপনায় ড. কায়কোবাদ

ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত অলিম্পিয়াডের কথা আমরা এখন গৌরবের সঙ্গে বলি। গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ সোনার পদক পেয়েছে, অন্য পদক পেয়েছে অনেক, কিন্তু সেরা পুরস্কার হলো, সারা দেশে শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণিত বিষয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। পৃথিবীর সেরা সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থীকে স্বাগত জানানো হয়েছে শুধু এ কারণে যে তারা গণিত অলিম্পিয়াডে ভালো করেছে।

গণিত অলিম্পিয়াডের আইডিয়া প্রথম যাঁর মাথায় আসে, আপনারা কি তাঁর নাম জানেন? অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ। ২১ বছর আগে মোহাম্মদ কায়কোবাদ স্যার ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন প্রথম আলোর অফিসে। দেখা করেছিলেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের সঙ্গে। তাঁরা গণিত নিয়ে আন্দোলন করতে চান। ‘গণিতের ইশকুল’ নামে একটা গণিতের পাতা বের করা শুরু করে প্রথম আলো। সেই একটা মোমবাতি থেকে এখন চলেছে আলোর মিছিল।

ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ তখন বুয়েটের কম্পিউটার কৌশল বিভাগের প্রধান। তখন থেকেই তাঁকে আমরা জেনে এসেছি একজন নিরহংকার, সাদাসিধে একজন ভালো মানুষ হিসেবে। আমরা একটা ভাঙাচোরা মাইক্রোবাস নিয়ে খুলনা কিংবা রংপুরে গণিত অলিম্পিয়াডের অনুষ্ঠান শেষ করে রাত দুইটায় বাড়ি ফিরেছি। কত গল্প, কত কথা। আর দেখেছি, এই শিক্ষকেরা কত কষ্ট স্বীকার করেছেন। কায়কোবাদ স্যার ক্রিকেটের বিরোধী। আমি বাংলাদেশের ক্রিকেটের পাগলপারা ভক্ত। তিনি বলতেন, একটা সময় তিনি সারা দিন রেডিওতে কান পেতে রেখে ক্রিকেট শুনতেন। কিন্তু এখন তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে আগ্রহী নন। তিনি মনে করেন, আমরা ভালো করব বুদ্ধির খেলায়। যেমন দাবায়। নিয়াজ মোরশেদের পর আরও অনেক গ্র্যান্ডমাস্টার আমরা তৈরি করতে পারতাম।

‘ক্রাউন সিমেন্ট অভিজ্ঞতার আলো’ শিরোনামের সাক্ষাৎকার সিরিজে আমরা দেশের অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্বের সাক্ষাৎকার নিই। ২০ নভেম্বর ২০২৫ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের খোলা ছাদে ড. কায়কোবাদের ভিডিও সাক্ষাৎকার নিই। তাঁর শৈশব থেকে শুরু করে আজকের জীবনের নানা দিক তাতে আলোচনা করি।

মানিকগঞ্জের তরা সেতু পেরিয়ে উজানের দিকে একটু এগোলেই জাবরা গ্রাম। ১৯৫৪ সালের ১ মে সেখানেই জন্ম ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদের। কালিগঙ্গা নদীর ঢেউ, বর্ষার জল, পীর পরিবারের বড় উঠান—এসব মিলেই তাঁর শৈশব। তাঁর দাদা মুন্সি এখলাসউদ্দিন আহমেদ ছিলেন পীর, ওরস হতো বাড়িতে। বাবা আনিসউদ্দিন কবিতা লিখতেন, গান করাতেন, ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের ঢেউ এসে সবকিছু বদলে দিল। মোহাম্মদ কায়কোবাদের ইন্টার পরীক্ষা পেছাল, ফল প্রকাশিত হলো ১৯৭৩ সালে। ভর্তি পরীক্ষা দিলেন বুয়েটে, মেডিকেলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে—সবখানেই ভালো ফল। কিন্তু বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ এল, যা তখনকার দিনে বড় প্রাপ্তি। স্কলারশিপে রওনা হলেন সোভিয়েত ইউনিয়নে। পড়লেন শিপ বিল্ডিং বিভাগে। কিন্তু ড্রয়িং তাঁর পছন্দের বিষয় নয়। শেষ পর্যন্ত বিভাগ বদল করে চলে এলেন অটোমেটেড ম্যানেজমেন্ট অব মেরিটাইম ট্রান্সপোর্টে। শুরু হলো কম্পিউটারের সঙ্গে জীবনব্যাপী সম্পর্ক। সে সময় ডেটাবেজ শেখানো হতো যখন এ সম্পর্কে বই-ই ছিল না। খুলে গেল নতুন জ্ঞানের দিগন্ত।

১৯৭৯ সালে দেশে ফিরে যোগ দিলেন বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনে। কিন্তু বাস্তবে শেখা কাজ প্রয়োগের সুযোগ নেই, যন্ত্র চলে গতানুগতিক ব্যবস্থায়। অবশেষে পড়তে গেলেন ব্যাংককের এআইটিতে।

এরপর অস্ট্রেলিয়ার ফ্লিন্ডার্স ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি ১৯৮৬ সালে। বিষয় কম্পিউটেশনাল কমপ্লেক্সিটির থিওরি। অ্যালগরিদম আবিষ্কারের আগেই অনুমান করা—প্রবলেমের যুক্তি কতটা কঠিন হবে।

দেশে ফিরে যোগ দেন অ্যাটোমিক এনার্জি রিসার্চ এস্টাবলিশমেন্টে। পরে বুয়েটে অতিথি শিক্ষক হিসেবে ক্লাস নেন ১৯৮৭ থেকে। ছাত্রদের মেধা দেখে বিস্মিত। যে ভালো ছাত্রকে দেখার জন্য শৈশবে ১০–১২ কিলোমিটার হেঁটে যেতেন, এখানে ডানে-বাঁয়ে তাকালেই স্ট্যান্ড করা ছাত্র। ১৯৯১ সালে যোগ দিলেন পূর্ণকালীন শিক্ষক হিসেবে। তিন দশক ধরে তৈরি করেছেন অগণিত প্রকৌশলী। ব্যস্ত ছিলেন প্রতিযোগিতা, অলিম্পিয়াড, গবেষণা নিয়ে। আফসোস করেন, বাংলাদেশের বিজ্ঞানমনস্ক মেধাবীরা জাতীয় নেতৃত্বে এখনো যথেষ্ট দৃশ্যমান নয়। মেধা আছে, কিন্তু রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মেধাবীদের অবদান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

২০২০ সালে অবসর বুয়েট থেকে, এখন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর। আজও তাঁর প্রত্যাশা, বাংলাদেশে জ্ঞানের প্রতি আগ্রহ বাড়ুক, মেধা সক্রিয় হোক উদ্ভাবনে, নেতৃত্বে। কারণ, তাঁর বিশ্বাস, শিক্ষা শুধু মুখে বলা স্লোগান নয়, শিক্ষা সত্যিই জাতির মেরুদণ্ড, যদি আমরা তা কাজে লাগাতে পারি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • স্বপ্নের উড়াল যাত্রা, অস্ট্রেলিয়ার পথে রিশাদ
  • ‘ওয়ান বক্স পলিসিতে’ সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচন করবে জামায়াতসহ ৮ দল
  • রায়পুরায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে কুয়েতপ্রবাসী যুবক নিহত
  • প্রতিশোধ নয়, ক্ষমা ও কৌশলে নতুন তালেবানের ভিন্ন এক শাসন
  • একাত্তরে জামায়াত নেতার বয়স ছিল ৪, বললেন, ‘আমিও সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম’
  • একটি চিকেন রোল কেনা কীভাবে ইবাদত হতে পারে
  • ইউক্রেনকে যুদ্ধে সহায়তা বন্ধ করে দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প জুনিয়র
  • যে ৭ কারণে প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্ব নয়
  • মাদক একটা ওয়ানওয়ে জার্নি, এটা দিয়ে ঢোকা যায়, বের হওয়া যায় না: উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন
  • জাবরা গ্রাম থেকে কম্পিউটার অধ্যাপনায় ড. কায়কোবাদ