ইসরায়েল ইস্যুতে সিনেটে জেরার মুখে পড়লেন কুয়েতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে ট্রাম্পের মনোনীত গালিব
Published: 24th, October 2025 GMT
কয়েক মাস দেরি হলেও অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের হ্যামট্রাম্ক শহরের মেয়র আমের গালিব সিনেট ফরেন রিলেশনস কমিটির আইনপ্রণেতাদের কাছে তাঁর বক্তব্য তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছেন। গত মার্চে তাঁকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ইয়েমেনি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক আমের গালিব ডেমোক্রেটিক দলের সমর্থক ছিলেন। পরে গত বছর নির্বাচনী প্রচারের সময় তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম মুসলিম মেয়র হিসেবে তিনি ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন।
তবে ইসরায়েলের কঠোর সমালোচক, তাঁর নানা মন্তব্য এবং একজন সাধারণ নাগরিক থাকাকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করা আমের গালিবের অন্যান্য মন্তব্য রাষ্ট্রদূত হিসেবে তাঁর নিয়োগ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে উঠেছিল। বিশেষ করে ইসরায়েলপন্থী অ্যান্টি-ডিফেমেশন লিগ (এডিএল) এবং কিছু ডানপন্থী সংবাদমাধ্যম তাঁর ওই সব মন্তব্য তুলে ধরার পর জটিলতা তৈরি হয়।
সিনেট ফরেন রিলেশনস কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সিনেটর জ্যান শাহিন গত বছর হামাসের যৌন সহিংসতার প্রতিবেদনগুলোকে ‘বাইডেন প্রশাসনের মিথ্যা ও প্রতারণামূলক প্রচারণা’ বলে গালিবের করা মন্তব্য নিয়ে তাঁকে জেরা করেন।
শাহিন দাবি করেন, ‘ওই সব অভিযোগের নথিবদ্ধ প্রমাণ রয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে যে প্রমাণ দেখেছি, তাতে দেখা যায় হামাসের সদস্যরা ইচ্ছাকৃতভাবে নারী ও শিশুদের ওপর যৌন সহিংসতা চালিয়েছেন।’
জাতিসংঘ গত বছরের মার্চে জানিয়েছিল, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাস যোদ্ধাদের হামলার সময় নোভা মিউজিক ফেস্টিভ্যাল সাইট, রুট ২৩২ ও কিবুৎস রেইম–এ সংঘাত-সংশ্লিষ্ট যৌন সহিংসতা ঘটেছে বলে বিশ্বাস করার যুক্তিসংগত কারণ রয়েছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অন্যান্য স্থানে ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনাগুলো যাচাই করা যায়নি। একই সঙ্গে দলটি নিশ্চিত করেছে, কিবুৎস বে-এরিতে যৌন সহিংসতার অন্তত দুটি অভিযোগ ভিত্তিহীন ছিল। অথচ গণমাধ্যমে সেগুলো বেশ ফলাও করে প্রচার করা হয়েছিল।
গালিব বলেন, শাহিন যেসব প্রমাণের উল্লেখ করেছেন, তার ‘কিছু’ ঘটনা সম্পর্কে তিনি অবগত ছিলেন না। কারণ, তিনি নিজে সেগুলো দেখেননি।
গালিব ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘আমি কেবল একটি কারণে এটি বলেছিলাম। আমার মনে হয়, এটি আমার অফিসের সামনে একটি বিক্ষোভের সময় ঘটেছিল। কারণ, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একটি বিবৃতিতে শিশুদের শিরশ্ছেদ করা নিয়ে কথা বলেছিলেন।’
গাজায় ইসরায়েলি হামলার শুরুর একেবারে প্রথম দিনগুলোতেই হামাস শিশুদের শিরশ্ছেদ করেছে বলে উঠা অভিযোগগুলো ভুল প্রমাণিত হয়েছিল।
গালিব বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে সব ধরনের নির্যাতনের নিন্দা জানাই। ৭ অক্টোবর ছিল একটি ভয়ানক ও মর্মান্তিক দিন। এর পরে ঘটে যাওয়া সব নৃশংসতা সেই দিনের ঘটনার কারণেই হয়েছে।’
রিপাবলিকান সিনেটর পিট রিককেটস গালিবকে চাপ দিয়ে প্রশ্ন করেন, তিনি কেন একজন ব্যক্তিকে হ্যামট্রাম্ক সিটি প্ল্যানিং কমিশনে কাজ করার অনুমতি দিয়েছিলেন, যিনি হলোকাস্ট নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন।
গালিব উত্তর দেন, ‘ওই ব্যক্তি একজন স্বেচ্ছাসেবক। তিনি শহরের কোনো সরকারি কর্মচারী নন। আমি গণমাধ্যমের কাছে পরিষ্কারভাবে বলেছি, আমি তাঁর বক্তব্যের নিন্দা করেছি ও আমি তাঁর সঙ্গে একমত নই।’
রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ ইসরায়েলকে বর্জন, বিনিয়োগ প্রত্যাহার, নিষেধাজ্ঞার (বিডিএস) আন্দোলন সম্পর্কে গালিবের ব্যক্তিগত মতামত জানতে চান। হ্যামট্রাম্ক নগর কর্তৃপক্ষ গত বছর একটি প্রস্তাব আকারে এগুলো গ্রহণ করেছিল।
গালিব এই বিষয় থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেন। তিনি বলেন, ‘জুইস ভয়েস ফর পিস গ্রুপ’—এই প্রস্তাব তৈরি করেছিল। আমি এটির পক্ষে ভোট দিইনি। কারণ, শুধু টাই হলে আমি ভোট দিই। সুতরাং এটি আমার ধারণা ছিল না। এটি আমার উদ্যোগ ছিল না।’
টেড ক্রুজ জানতে চান, ‘কিন্তু আপনি কি বিডিএস সমর্থন করেন?’
গালিব উত্তর দেন, ‘আমি এটি সমর্থন করি না, তবে এটি একজন ইহুদি আইনজীবীর মাধ্যমে তৈরি হয়েছিল।’
২০২০ সালের আব্রাহাম চুক্তি এবং সার্বিকভাবে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের বিষয়ে তাঁর অতীতের বিরোধিতা নিয়ে গালিব জোর দিয়ে বলেন, তিনি এখন মেনে নিয়েছেন। যেহেতু তিনি মাত্র এক বছর আগে ট্রাম্পকে সমর্থন করেছিলেন।
ইসরায়েল ইহুদি জনগণের মাতৃভূমি কি না, জানতে চাইলে গালিব বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি এটি ইহুদি, আরব ও মুসলিম এবং খ্রিষ্টানদের জন্যও একটি বাড়ি হতে পারে।’
আত্মপক্ষ সমর্থনশুনানির সময় মেয়র গালিব প্রায়ই তাঁর নেতৃত্বে গৃহীত একটি প্রস্তাবের দিকে ইঙ্গিত করেন, যেখানে ইহুদিবিদ্বেষের নিন্দা করা হয়েছিল।
গালিব বলেন, ‘ইহুদি সম্প্রদায়ের নেতারা আমার কাছে এসে আমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। তাঁরা সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, এটিই একমাত্র শহর, যেখানে তাঁদের অনুরোধ ছাড়াই একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। আমি আমার সরকারি পদে থেকে এভাবেই মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছি।’
মেয়র গালিব বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই পোস্টগুলোর (গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে প্রকাশিত) কিছু ছিল সেই সময়ের, যখন আমি সাধারণ নাগরিক ছিলাম। আমি ২০২২ সালে মেয়র হয়েছি। আমি আপনাদের নিশ্চিত করতে পারি, এসব পোস্টের (আরবি থেকে) অনুবাদে গণমাধ্যম ভুলভাবে ব্যাখ্যা করেছে। সেগুলোকে প্রসঙ্গ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
টেড ক্রুজ একটি ফেসবুক পোস্ট সম্পর্কে জানতে চান যেখানে গালিব একবার ‘লাইক’ দিয়েছিলেন। সেই পোস্টে লেখা ছিল, ‘সব ইহুদি বানর’। ক্রুজ জিজ্ঞাসা করেন, ‘আমি জানতে চাইছি, “সব ইহুদি বানর”—এমন একটি মন্তব্য কি ইহুদিবিদ্বেষ হিসেবে বিবেচিত হবে?’
গালিব বলেন, ‘আমি ওই মন্তব্যের সঙ্গে একমত নই। যিনি ওই বক্তব্য লিখেছিলেন তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ।’
মেয়র গালিব আরও বলেন, গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে এই বিষয় উল্লেখ করা হয়নি যে তিনি ওই ব্যক্তিকে উত্তর দিয়ে লিখেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের মন্তব্য অনুচিত।
রিপাবলিকান সিনেটর ডেভ ম্যাককর্মিক ১৯৯১ সালে কুয়েত থেকে সাদ্দাম হুসেনকে উৎখাতে সহায়তা করতে ৮২তম এয়ারবোর্ন ডিভিশনে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি গালিবকে বিশেষভাবে কুয়েতি জনগণের কাছে ব্যাখ্যা করতে বলেন, তিনি কেন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের একটি পোস্টে (৭ জানুয়ারি ২০২০) ইরাকি নেতাকে ‘শহীদ’ বলে উল্লেখ করেছিলেন।
জবাবে গালিব বলেন, ‘আমি একজন সাধারণ নাগরিক ছিলাম। এটি ছিল সেই দিন, যখন ইরাকে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলা হয়েছিল। ইরান আমাদের ওপর হামলা করেছিল। আমরা কেন ইরানের শাসনের জবাব দিচ্ছি না, তাতে আমি ক্ষুব্ধ ছিলাম। তাই রাগের বশে আমি সাদ্দাম হুসেন ইরান সরকারকে যেভাবে নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন, তার প্রশংসা করেছিলাম।’
হ্যামট্রাম্কের মেয়র গালিব আরও বলেন, ‘তিনি নিঃসন্দেহে একজন স্বৈরশাসক ছিলেন। নিঃসন্দেহে কুয়েতে আক্রমণ তাঁর অপরাধ ছিল, আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন ছিল। যাঁরা সাদ্দামের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বা প্রিয়জন হারিয়েছেন, আমি তাঁদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।’
রাজনীতিতে কোনো ভবিষ্যৎ নেইগালিবের বক্তব্যে ১৯৯৭ সালে তাঁর যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হওয়ার কথা তুলে ধরা হয়েছে। তখন তিনি জীবিকা নির্বাহের জন্য একটি অটো যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারক কারখানায় কাজ করতেন। পাশাপাশি তাঁর পরিবারের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে হাইস্কুল থেকে স্নাতক হন।
আমের গালিব বলেন, ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়ার ইচ্ছা নিয়ে আমি ২০০১ সালে কলেজে শুরু করেছিলাম। আমার পরিবার, বন্ধু ও শিক্ষকেরা আমাকে অন্য কিছু করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।’
গালিব বলেন, ‘তাঁরা আমাকে বোঝান, আমার পটভূমি ও উচ্চারণের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে আমার কোনো ভবিষ্যৎ নেই, বিশেষ করে ৯/১১-এর পরে। আমি চিকিৎসাবিজ্ঞানের দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। ১০ বছর ধরে আমি সেটাই পড়েছি।’
গালিব বার্বাডোজের রস ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনে মেডিকেল স্কুলে যোগ দিলেও মিশিগানের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো নিশ্চিত করতে পারেনি, তিনি আসলে স্নাতক হয়েছেন কি না, তবে তিনি রাজ্যে একজন নিবন্ধিত নার্স (আরএন)।
হ্যামট্রাম্ক হলো ডেট্রয়েট শহর থেকে মাত্র কয়েক মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত একটি শহর, যেখানে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বসবাস করেন। তাঁদের বেশির ভাগই মুসলিম। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে গালিব যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সম্পূর্ণ মুসলিম সিটি কাউন্সিলের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য শপথ নেন। তিনি একটি কমিউনিটি ক্লিনিকে কাজ করতেন।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ট্রাম্পের প্রতি গালিবের সমর্থন নিঃসন্দেহে ভোট এনে দিয়েছিল, যা তাঁকে দোদুল্যমান রাজ্য মিশিগানে জয়ী হতে সাহায্য করেছিল।
গালিব ইয়েমেনি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক। গাজায় গণহত্যার প্রতি সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সমর্থন এবং সম্প্রদায়ের সামাজিক ইস্যুতে রক্ষণশীল অবস্থানের কারণে হ্যামট্রাম্ক শহরের মুসলিম ভোটাররা ডেমোক্র্যাটদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেমোক্র্যাটরা আরব ভোটারদের আস্থা ফিরে পেতে চাইলে গালিবের মনোনয়ন নিয়ে তাদের রাজনীতি করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
প্রায় দুই সপ্তাহ আগে এক পোস্টে গালিব লিখেছিলেন, এখনো তাঁর প্রতি ট্রাম্পের সমর্থন রয়েছে। তবে ট্রাম্প তাঁর মনোনীত ব্যক্তিদের টেলিভিশন পারফরম্যান্স, ব্রিফিং, সাক্ষাত্কার বা কংগ্রেসের শুনানিতে কঠোরভাবে বিচার করার জন্য কুখ্যাত।
গালিব ১৪ অক্টোবর লিখেছিলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এইমাত্র আমাকে ফোন করেছেন এবং কুয়েত রাষ্ট্রের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করার জন্য তাঁর অবিচল সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। তিনি আমাদের সম্প্রদায়কে তাঁদের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।’
মেয়র গালিব গত কয়েক সপ্তাহে বেশ কয়েকবার হোয়াইট হাউসে গিয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিকের সঙ্গে তোলা ছবি শেয়ার করেছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র আম র গ ল ব ন শ চ ত কর গ ল ব বল ন প রস ত ব ইসর য় ল একজন স গত বছর কর ছ ন য ন সহ ক জ কর র র জন কর ছ ল র জন য প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
একজন ‘প্রধানমন্ত্রী’ ধর্ষণ করেছিলেন ভার্জিনিয়া জিউফ্রেকে: স্মৃতিকথায় দাবি
যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত যৌন নিপীড়ক জেফরি এপস্টেইনের কাছে থাকা ভার্জিনিয়া জিউফ্রেকে অজ্ঞাতনামা একজন ‘প্রধানমন্ত্রী’ নির্মমভাবে মারধর ও ধর্ষণ করেছিলেন। তিনি ভয় পেয়েছিলেন, ‘হয়তো যৌনদাসী হিসেবেই তাঁর মৃত্যু হতে পারে।’
ভার্জিনিয়া জিউফ্রে তাঁর স্মৃতিকথায় এমনটা দাবি করেছেন। প্রায় ছয় মাস আগে অস্ট্রেলিয়ায় জিউফ্রে আত্মহত্যা করেন।
এপস্টেইন ও তাঁর চক্রের বিষয়ে জিউফ্রে লিখেছেন, ‘তাঁদের সঙ্গে থাকার সময় তাঁরা আমাকে বহু ধনী, ক্ষমতাবান মানুষের কাছে পাঠাতেন। নিয়মিতভাবে আমাকে ব্যবহার করা হতো এবং আমাকে অপমান করা হতো। কিছু ক্ষেত্রে আমাকে শ্বাসরোধ, মারধর এবং এমনকি রক্তাক্ত করা হতো।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমি মনে করতাম, একজন যৌনদাসী হিসেবে আমার মৃত্যু হতে পারে।’
জিউফ্রের মৃত্যুর ছয় মাস পর গতকাল মঙ্গলবার তাঁর স্মৃতিকথা ‘নোবডি’স গার্ল’ প্রকাশিত হয়েছে। এতে কিশোরী বয়সে তাঁর ওপর হওয়া নির্যাতন এবং নিজের ও তাঁর সঙ্গে নির্যাতিত অন্য মেয়েদের ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য বছরের পর বছর ধরে তাঁর সংগ্রামের মর্মান্তিক বর্ণনা রয়েছে।
বইয়ের মার্কিন সংস্করণে জিউফ্রে দাবি করেছেন, তাঁকে একজন লোক ধর্ষণ করেছিলেন, যাঁকে তিনি শুধু ‘একজন সুপরিচিত প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। যুক্তরাজ্যের সংস্করণে ওই অংশগুলো প্রায় অভিন্ন। তবে সেখানে ওই লোককে ‘একজন সাবেক মন্ত্রী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বইয়ের দুই সংস্করণে এই অসংগতির কারণ স্পষ্ট নয়।
এপস্টেইনের ক্যারিবীয় দ্বীপে থাকার সময় জিউফ্র কীভাবে তাঁকে এক লোকের কাছে পাচার করেছিলেন, সেই বর্ণনা রয়েছে। ওই ব্যক্তি তাঁকে আগেকার যে কারও চেয়ে বেশি নৃশংসভাবে ধর্ষণ করেছিলেন বলে লিখেছেন জিউফ্রে। তখন তাঁর বয়স ছিল ১৮ বছর।
জিউফ্রে লিখেছেন, ‘তিনি বারবার আমার গলা টিপে ধরেছিলেন, যতক্ষণ না আমি জ্ঞান হারাই এবং আমাকে ভয় পেতে দেখে তিনি আনন্দ পেতেন। যখন প্রধানমন্ত্রী আমাকে ভয়াবহভাবে আঘাত করতেন, তখন তিনি হাসতেন। আমি যখন তাঁকে থামতে মিনতি করতাম, তখন তিনি আরও বেশি উত্তেজিত হতেন।’
জিউফ্রে লিখেছেন, ‘পরে আমি অশ্রুসিক্ত চোখে এপস্টেইনের কাছে অনুরোধ করেছিলাম, যেন তিনি আমাকে আর ওই ব্যক্তির কাছে আর না পাঠান।’
জিউফ্রে স্মৃতিকথায় লিখেছেন, ‘আমি তাঁর পায়ে ধরে অনুরোধ করেছিলাম। আমি জানি না, এপস্টেইন লোকটিকে ভয় পেতেন নাকি তাঁর কাছে ঋণী ছিলেন। তিনি আমাকে কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি; বরং রাজনীতিবিদের নৃশংসতার কথা শুনে নির্দয়ভাবে বলেছিলেন, “কখনো কখনো তুমি এমনটাই পাবে।”’
জিউফ্রের এই স্মৃতিকথা এপস্টেইনের সঙ্গে ধনী ও ক্ষমতাশালী মানুষের কাছাকাছি থাকার কেলেঙ্কারিকে আরও তীব্র করবে। এ ঘটনা যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কয়েক মাস ধরে মার্কিন কংগ্রেসকে পর্যন্ত নাড়া দিয়ে যাচ্ছে।
বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর যুক্তরাজ্যের প্রিন্স অ্যান্ড্রুর ওপর নতুন করে নজরদারি বাড়বে। যুক্তরাজ্যের রাজপরিবারের এই সদস্যের বিরুদ্ধে জিউফ্রে অভিযোগ এনেছিলেন, তিনি কিশোরী থাকাকালে এই ব্যক্তি তাঁর ওপর যৌন নির্যাতন চালিয়েছিলেন।
বর্তমান রাজা চার্লসের ভাই প্রিন্স অ্যান্ড্রু অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন।
স্মৃতিকথায় জিউফ্রে দাবি করেছেন, যুক্তরাজ্যের রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্স অ্যান্ড্রুর সঙ্গে তিনি তিনবার যৌন সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন। এর মধ্যে একবার যৌন সম্পর্ক স্থাপনের সময় জেফরি এপস্টেইন ছাড়াও আরও আটজন তরুণী সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
জিউফ্রে ও লেখক অ্যামি ওয়ালেস মিলে নতুন বইটি লিখেছেন।
স্মৃতিকথায় জিউফ্রে বলেছেন, ২০০১ সালের মার্চে তিনি প্রথমবার প্রিন্স অ্যান্ড্রুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। এপস্টেইনের বান্ধবী গিসলেইন ম্যাক্সওয়েল তাঁকে জাগিয়ে বলেছিলেন, দিনটি একটি ‘বিশেষ দিন’ হবে এবং ‘সিন্ডারেলার মতো’ তিনি একজন সুদর্শন প্রিন্সের দেখা পাবেন।
জিউফ্রে আরও বলেছেন, দিনের শেষের দিকে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর সঙ্গে যখন তাঁর দেখা হয়, ম্যাক্সওয়েল তাঁকে (অ্যান্ড্রু) বলেছিলেন তাঁর (জিউফ্রে) বয়স অনুমান করতে।
অ্যান্ড্রুর বয়স তখন ৪১ বছর ছিল। তিনি যথাযথভাবেই জিউফ্রের বয়স বলতে পেরেছিলেন। তখন জিউফ্রের বয়স ছিল ১৭ বছর।