গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ওবায়দুর ইসলাম দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।

শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে গোবিন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

আরো পড়ুন:

চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতির পদত্যাগের দাবিতে প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও

নাটোরে গণঅধিকার পরিষদের ৩৬ নেতাকর্মীর পদত্যাগ

লিখিত বক্তব্যে ওবায়দুর ইসলাম বলেন, “আমি বিগত দিনে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। আজ থেকে আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব ধরনের পদ-পদবি থেকে পদত্যাগ করছি। ভবিষ্যতে আর কখনো আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত থাকব না। দেশ ও জাতির কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখব।”

তিনি জানান, আওয়ামী লীগের বর্তমান রাজনৈতিক নীতি ও আদর্শের সঙ্গে তিনি একমত নন, এ কারণেই দল থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন।
 

ঢাকা/বাদল/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পদত য গ আওয় ম ল গ পদত য গ আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে সাধারণ মানুষ বেশি চাপে

দেশে দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকা উচ্চ মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে নিম্নআয়ের পরিবার এ কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যদিকে গত এক বছর ধরে উচ্চ সুদ হারের কারণে ব্যবসা ও বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে ছোট উদ্যোক্তারা বেশি চাপে পড়েছেন।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ স্টেট অব দ্য ইকোনমি ২০২৫’ প্রতিবেদনে দেশের গত এক বছরের অর্থনীতির এমন চিত্র উঠে এসেছে। আজ সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রথমবারের মতো এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। একই সঙ্গে ২০২৫ সালের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) অগ্রগতি প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার অর্থবিষয়ক বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গত এক বছরে সামষ্টিক অর্থনীতিতে কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। তবে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের কারণে এখনো বেশ কিছু সংকট রয়েছে। বিভিন্ন সংস্কার উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে এই সংকট ধীরে ধীরে কাটবে।

বিপ্লব–পরবর্তী সময়ে অনিশ্চয়তার কারণে কোনো দেশেই প্রত্যাশিত বিনিয়োগ আসে না বলে জানান আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, কোনো দেশে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আসে? কারণ, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাঁদের অর্থের নিরাপত্তা ও নিশ্চিয়তা চায়। তারপরও গণ–অভ্যুত্থানের পর এক বছরে এফডিআই বেড়েছে ১৯ শতাংশ। এটি ইতিবাচক।

‘আমরা ঋণের ফাঁদে পড়ে গেছি’

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার ও আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করে রাজস্ব আদায় বাড়াতে না পারলে বাংলাদেশ গুরুতর ঋণের ফাঁদে পড়ে যেতে পারে, এমন আশঙ্কা আছে। এটি দেশের জন্য ভালো হবে না।

মোস্তাফিজুর রহমানের এই মন্তব্যের ভিত্তিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান মন্তব্য করেন, ‘আমরা ইতিমধ্যেই ঋণের ফাঁদে পড়েছি; এ সত্য স্বীকার না করলে সামনে এগোনো সম্ভব না। কয়েক বছর আগেও আমাদের কর-জিডিপি অনুপাত ১০ শতাংশের বেশি ছিল, এখন তা ৭ শতাংশের ঘরে ঘোরাফেরা করছে।’

নেতিবাচক ঝুড়ি বেশি ভারী

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ঝুড়ির চেয়ে নেতিবাচক ঝুড়ি বেশি ভারী। একদিকে অর্থনীতির সংগ্রাম চলছে, অন্যদিকে জীবিকার সংগ্রামও চলছে। তবে এর চেয়েও পরিস্থিতি খারাপ হতে পারত। গত দেড় বছরের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, সরকারের সদিচ্ছা স্পষ্ট, কিন্তু বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অগ্রগতি সীমিত।’

সমস্যাগ্রস্ত পাঁচটি ব্যাংক একীভূতের প্রক্রিয়া দ্রুত এগোচ্ছে জানিয়ে সেমিনারে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, এসব ব্যাংকের আমানত বিমার সীমা ১ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা করা হয়েছে। আগামী এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে আমানতকারীদের মধ্যে এই অর্থ দেওয়া শুরু হতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন, ‘এক প্রান্তিকে ভালো হলে অন্য প্রান্তিকে খারাপ—এই হচ্ছে আমাদের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা। আমাদের অর্থনীতি প্রিমিটিভ অ্যাকিউমুলেশনে (সম্পদ ও ক্ষমতা ধনী বা ক্ষমতাসীন শ্রেণির হাতে যাওয়া) পরিচালিত। লুটপাট ও চাঁদাবাজি এই ব্যবস্থার একটি বড় অংশ। ব্যবসায়ের টাকা চাঁদাবাজির মাধ্যমে চাঁদাবাজ বা রাজনীতিবিদদের হাতে চলে যায়। এমন পরিস্থিতিতে খুব বেশি প্রবৃদ্ধি আশা করা যায় না।’

অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, দায়িত্বশীল গণমাধ্যম হওয়া সত্ত্বেও অনেকেই নিজেদের এজেন্ডা সামনে রেখে নির্দিষ্ট কিছু তথ্যকে অস্বাভাবিক বড় করে তুলে ধরছেন। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যে বিপ্লবের পরে আসা একটি ঐতিহাসিক সরকার, এই বিষয়টা তাদের উপস্থাপনায় থাকে না। আবার এসব তথ্যকে সামনে রেখে অনেকে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের দুটি টার্মিনাল চুক্তিকে ঘিরে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সবচেয়ে কম সহযোগিতা পেয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি–বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, অর্থ বিভাগের সচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, পরিকল্পনা বিভাগের সচিব এস এম শাকিল আখতার। স্বাগত বক্তব্য দেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য মঞ্জুর হোসেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জিইডির অতিরিক্ত সচিব মনিরা বেগম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ