মালাইকার বয়স নিয়ে গোলক ধাঁধায় নেটিজেনরা
Published: 24th, October 2025 GMT
বয়স যে কেবলি সংখ্যা, তা বহুবার প্রমাণ করে দিয়েছেন বলিউড অভিনেত্রী মালাইকা আরোরা। বয়সের সংখ্যাকে চলমান রেখে, নিজের শরীরি সৌন্দর্য ঠিকই স্থির রেখেছেন এই অভিনেত্রী।
ফ্যাশন ও স্বাস্থ্যসচেতন মালাইকা বরাবরই বিলাসবহুল জীবনযাপন করে থাকেন। ব্যয়বহুল পরিধেয় পোশাকে রাখেন নান্দনিকতা। ব্যবহার্য নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিসপত্রেও তার ব্যত্যয় ঘটে না। সবকিছু মিলিয়ে মালাইকার সঠিক বয়স ঠাহর করা কঠিন।
আরো পড়ুন:
রাজেশ খান্নার নাতনিকে কতটা চেনেন?
ফুটপাতের দোকানের জিনিস ছুড়ে ফেলছেন ক্ষুব্ধ খুশি, ভিডিও ভাইরাল
কয়েক দিন আগে মুক্তি পেয়েছে ‘থাম্মা’ সিনেমার ‘পয়জন বেবি’ গান। দীর্ঘ দিন পর এ গানের মাধ্যমে পর্দায় ফিরেছেন আইটেম কন্যা মালাইকা আরোরা। জেসমিন স্যান্ডলাস, সচিন-জিগর ও দিব্যা কুমারের এ গানে মালাইকার নাচে বুঁদ হয়ে আছেন দর্শকরা। গানটিতে মালাইকার হিল্লোল তোলা নাচ আর শরীরি সৌন্দর্য গোলক ধাঁধায় ফেলে দিয়েছে দর্শকদের।
সকলেই জানেন মালাইকার বয়স ৫২। সত্যি কি তাই? এ প্রশ্ন যখন জোরালো হয়েছে, তখনই প্রকৃতির নিয়মে চলে এসেছে মালাইকার জন্মদিন। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) ছিল বলিউডের ‘মুন্নির’ জন্মদিন। এ উপলক্ষে বরাবরের মতো এবারো ঘরোয়া আয়োজন ছিল। পুত্র ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কেক কেটে দিনটি উদযাপন করেন এই অভিনেত্রী। আর এই আসরে ‘রহস্যময়ী মালাইকার’ বয়স ফাঁস করলেন তার বোন অমৃতা আরোরা।
জন্মদিনের কেক ও মালাইকার কয়েকটি ছবি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করেছেন অমৃতা আরোরা। এক পোস্টে অমৃতা আরোরা লেখেন, “এত বছর ধরেই তোমার ৫০ হওয়ার গল্প, অবশেষে সত্যি তোমার ৫০ হলো, আমার সুন্দরী বোন।”
অন্য একটি পোস্টে অমৃতা লেখন, “মাল্লা, অবশেষে তোমার ৫০ হলো। আহ, এর চেয়ে ভালো ৫০ বছরের কেউ হতে পারে নাকি! উফফ, আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি… গত রাতটা কী দারুণ ছিল… একেবারে জাদুকরি।”
অমৃতার এসব পোস্ট দেখে নেটিজেনদের অনেকের চোখ কপালে উঠেছে। রেডিটে দেওয়া এক পোস্টে একজন লেখেন, “২০১৯ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত আপনি ৪৯ ও ৫০ তম জন্মদিন উদযাপন করছেন।” এ পোস্টে একজন লেখেন, “বয়স নিয়ে আপনারা কেন চিন্তিত? বয়সের তুলনায় সে (মালাইকা) দেখতে অসাধারণ।” আরেকজন লেখেন, “আমার বয়স ৩৫, আমাকে দেখতে তার চেয়েও বেশি বয়েসি মনে হয়।”
মালাইকার বয়স ৫০, নেটিজেনদের অনেকে তা মানতে নারাজ। একজন লেখেন, “এক সাক্ষাৎকারে মালাইকা বলেছিলেন, আরবাজের চেয়ে ২ বছরের বড় সে। গুগল বলছে, আরবাজের বয়স এখন ৫৮, তাহলে মালাইকার বয়স ৬০ বছর? ধুর, ৬০ বছর বয়সেও আমি এরকম দেখতে হলে যেকোনো কিছু করতে রাজি!”
এমন অসংখ্য মন্তব্য ভেসে বেড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। বয়স নিয়ে নানা সময় নানা ধরনের চর্চা চললেও পরিষ্কার কোনো মন্তব্য করেননি মালাইকা।
মালাইকার বাবার নাম অনিল আরোরা, মায়ের নাম জয়েস পলিকার্প। অনিল-জয়েস দম্পতির দুই সন্তান। তারা হলেন—মালাইকা আরোরা ও অমৃতা আরোরা। মালাইকার বয়স যখন ১১ বছর তখন তাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। তবে পরবর্তীতে অনীল কুলদীপ মেহতাকে বিয়ে করেন মালাইকার মা। গত বছরের শেষের দিকে আত্মহত্যা করেন মালাইকার সৎবাবা অনিল কুলদীপ।
মালাইকার বাবা-মা অনিল আরোরা ও জয়েসের বিচ্ছেদের পর মায়ের কাছেই বেড়ে উঠেন মালাইকা ও তার বোন অমৃতা। ফলে মালাইকার চাকচিক্যময় জীবন নিয়ে নানা সময়ে নানা প্রশ্নও উঠলেও তার সত্যিকারের জীবন এতটা সহজ নয়, কখনো ছিলও না। কারণ অনেক সংগ্রাম করে আজকের অবস্থান তৈরি করেছেন এই অভিনেত্রী।
১৯৯৮ সালে আরবাজ খানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন মালাইকা আরোরা। ২০১৬ সালে দীর্ঘ ১৮ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি টানতে আদালতে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন এই দম্পতি। ২০১৭ সালের মে মাসে তাদের বিচ্ছেদ মঞ্জুর করেন মুম্বাইয়ের বান্দ্রার পারিবারিক আদালত। মালাইকা-আরবাজের আরহান খান নামে একটি পুত্রসন্তান রয়েছে। এরপর আর বিয়ে করেননি মালাইকা।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র বছর র আরব জ
এছাড়াও পড়ুন:
জাবরা গ্রাম থেকে কম্পিউটার অধ্যাপনায় ড. কায়কোবাদ
ডাচ্–বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত অলিম্পিয়াডের কথা আমরা এখন গৌরবের সঙ্গে বলি। গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশ সোনার পদক পেয়েছে, অন্য পদক পেয়েছে অনেক, কিন্তু সেরা পুরস্কার হলো, সারা দেশে শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণিত বিষয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। পৃথিবীর সেরা সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থীকে স্বাগত জানানো হয়েছে শুধু এ কারণে যে তারা গণিত অলিম্পিয়াডে ভালো করেছে।
গণিত অলিম্পিয়াডের আইডিয়া প্রথম যাঁর মাথায় আসে, আপনারা কি তাঁর নাম জানেন? অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ। ২১ বছর আগে মোহাম্মদ কায়কোবাদ স্যার ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন প্রথম আলোর অফিসে। দেখা করেছিলেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের সঙ্গে। তাঁরা গণিত নিয়ে আন্দোলন করতে চান। ‘গণিতের ইশকুল’ নামে একটা গণিতের পাতা বের করা শুরু করে প্রথম আলো। সেই একটা মোমবাতি থেকে এখন চলেছে আলোর মিছিল।
ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ তখন বুয়েটের কম্পিউটার কৌশল বিভাগের প্রধান। তখন থেকেই তাঁকে আমরা জেনে এসেছি একজন নিরহংকার, সাদাসিধে একজন ভালো মানুষ হিসেবে। আমরা একটা ভাঙাচোরা মাইক্রোবাস নিয়ে খুলনা কিংবা রংপুরে গণিত অলিম্পিয়াডের অনুষ্ঠান শেষ করে রাত দুইটায় বাড়ি ফিরেছি। কত গল্প, কত কথা। আর দেখেছি, এই শিক্ষকেরা কত কষ্ট স্বীকার করেছেন। কায়কোবাদ স্যার ক্রিকেটের বিরোধী। আমি বাংলাদেশের ক্রিকেটের পাগলপারা ভক্ত। তিনি বলতেন, একটা সময় তিনি সারা দিন রেডিওতে কান পেতে রেখে ক্রিকেট শুনতেন। কিন্তু এখন তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে আগ্রহী নন। তিনি মনে করেন, আমরা ভালো করব বুদ্ধির খেলায়। যেমন দাবায়। নিয়াজ মোরশেদের পর আরও অনেক গ্র্যান্ডমাস্টার আমরা তৈরি করতে পারতাম।
‘ক্রাউন সিমেন্ট অভিজ্ঞতার আলো’ শিরোনামের সাক্ষাৎকার সিরিজে আমরা দেশের অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্বের সাক্ষাৎকার নিই। ২০ নভেম্বর ২০২৫ ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের খোলা ছাদে ড. কায়কোবাদের ভিডিও সাক্ষাৎকার নিই। তাঁর শৈশব থেকে শুরু করে আজকের জীবনের নানা দিক তাতে আলোচনা করি।
মানিকগঞ্জের তরা সেতু পেরিয়ে উজানের দিকে একটু এগোলেই জাবরা গ্রাম। ১৯৫৪ সালের ১ মে সেখানেই জন্ম ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদের। কালিগঙ্গা নদীর ঢেউ, বর্ষার জল, পীর পরিবারের বড় উঠান—এসব মিলেই তাঁর শৈশব। তাঁর দাদা মুন্সি এখলাসউদ্দিন আহমেদ ছিলেন পীর, ওরস হতো বাড়িতে। বাবা আনিসউদ্দিন কবিতা লিখতেন, গান করাতেন, ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের ঢেউ এসে সবকিছু বদলে দিল। মোহাম্মদ কায়কোবাদের ইন্টার পরীক্ষা পেছাল, ফল প্রকাশিত হলো ১৯৭৩ সালে। ভর্তি পরীক্ষা দিলেন বুয়েটে, মেডিকেলে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে—সবখানেই ভালো ফল। কিন্তু বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ এল, যা তখনকার দিনে বড় প্রাপ্তি। স্কলারশিপে রওনা হলেন সোভিয়েত ইউনিয়নে। পড়লেন শিপ বিল্ডিং বিভাগে। কিন্তু ড্রয়িং তাঁর পছন্দের বিষয় নয়। শেষ পর্যন্ত বিভাগ বদল করে চলে এলেন অটোমেটেড ম্যানেজমেন্ট অব মেরিটাইম ট্রান্সপোর্টে। শুরু হলো কম্পিউটারের সঙ্গে জীবনব্যাপী সম্পর্ক। সে সময় ডেটাবেজ শেখানো হতো যখন এ সম্পর্কে বই-ই ছিল না। খুলে গেল নতুন জ্ঞানের দিগন্ত।
১৯৭৯ সালে দেশে ফিরে যোগ দিলেন বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনে। কিন্তু বাস্তবে শেখা কাজ প্রয়োগের সুযোগ নেই, যন্ত্র চলে গতানুগতিক ব্যবস্থায়। অবশেষে পড়তে গেলেন ব্যাংককের এআইটিতে।
এরপর অস্ট্রেলিয়ার ফ্লিন্ডার্স ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি ১৯৮৬ সালে। বিষয় কম্পিউটেশনাল কমপ্লেক্সিটির থিওরি। অ্যালগরিদম আবিষ্কারের আগেই অনুমান করা—প্রবলেমের যুক্তি কতটা কঠিন হবে।
দেশে ফিরে যোগ দেন অ্যাটোমিক এনার্জি রিসার্চ এস্টাবলিশমেন্টে। পরে বুয়েটে অতিথি শিক্ষক হিসেবে ক্লাস নেন ১৯৮৭ থেকে। ছাত্রদের মেধা দেখে বিস্মিত। যে ভালো ছাত্রকে দেখার জন্য শৈশবে ১০–১২ কিলোমিটার হেঁটে যেতেন, এখানে ডানে-বাঁয়ে তাকালেই স্ট্যান্ড করা ছাত্র। ১৯৯১ সালে যোগ দিলেন পূর্ণকালীন শিক্ষক হিসেবে। তিন দশক ধরে তৈরি করেছেন অগণিত প্রকৌশলী। ব্যস্ত ছিলেন প্রতিযোগিতা, অলিম্পিয়াড, গবেষণা নিয়ে। আফসোস করেন, বাংলাদেশের বিজ্ঞানমনস্ক মেধাবীরা জাতীয় নেতৃত্বে এখনো যথেষ্ট দৃশ্যমান নয়। মেধা আছে, কিন্তু রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মেধাবীদের অবদান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
২০২০ সালে অবসর বুয়েট থেকে, এখন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর। আজও তাঁর প্রত্যাশা, বাংলাদেশে জ্ঞানের প্রতি আগ্রহ বাড়ুক, মেধা সক্রিয় হোক উদ্ভাবনে, নেতৃত্বে। কারণ, তাঁর বিশ্বাস, শিক্ষা শুধু মুখে বলা স্লোগান নয়, শিক্ষা সত্যিই জাতির মেরুদণ্ড, যদি আমরা তা কাজে লাগাতে পারি।