কফি কীভাবে ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে
Published: 25th, October 2025 GMT
ডায়াবেটিস মেলিটাস, বিশেষ করে টাইপ–২ ডায়াবেটিস বর্তমানে সারা বিশ্বে এক গুরুতর জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ৫০ কোটির বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং এ সংখ্যা আগামী কয়েক দশকে আরও বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ডায়াবেটিস শুধু একটি রোগ নয়; এটি হৃদ্রোগ, স্ট্রোক, কিডনি বিকল, চোখের দৃষ্টি নষ্ট হওয়া ও স্নায়ুর ক্ষতির মতো জটিলতার প্রধান কারণ। ফলে এটি ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়ে বড় আর্থসামাজিক চাপ সৃষ্টি করছে।
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় ডায়াবেটিসের হার খুব দ্রুত বাড়ছে। নগরায়ণ, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, কায়িক শ্রমের অভাব, স্থূলতা ও জেনেটিক প্রবণতা এর প্রধান কারণ। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ফাস্ট ফুড, কোমল পানীয়, উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার ও দীর্ঘ সময় বসে থাকার অভ্যাস এই ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলছে। গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর ১০ থেকে ১২ শতাংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং এর একটি বড় অংশই রোগটি সম্পর্কে অবগত নয়।
সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত কফি সেবন টাইপ–২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কিছুটা কমাতে পারে। কফির মধ্যে থাকা ক্যাফেইন ও অ-ক্যাফেইন উপাদান (যেমন ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড, পলিফেনল, অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট) ডায়াবেটিস প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কফিইনসুলিন সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি: কফির ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড গ্লুকোজ শোষণকে ধীর করে এবং শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ায়। এর ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
মেটাবলিজম ও ফ্যাট বার্নিং: ক্যাফেইন মেটাবলিজম ও শরীরের শক্তি ব্যয় বাড়ায়। পাশাপাশি চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে। স্থূলতা হলো টাইপ–২ ডায়াবেটিসের প্রধান ঝুঁকি, যা একটি পরিবর্তনযোগ্য কারণ। কফি ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হয়ে ডায়াবেটিস প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে।
অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট এবং প্রদাহ কমানো: স্থূলতা ও অস্বাস্থ্যকর জীবনধারার কারণে শরীরে দীর্ঘস্থায়ী নিম্নমাত্রার প্রদাহ তৈরি হয়, যা ইনসুলিন প্রতিরোধ বাড়ায়। কফির অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট উপাদান প্রদাহ কমিয়ে কোষকে সুরক্ষা দেয়।
টাইপ–২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস: আন্তর্জাতিক পর্যায়ের মেটা-অ্যানালাইসিস গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা নিয়মিত কফি পান করেন, তাঁদের মধ্যে টাইপ–২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কফি না খাওয়া মানুষের তুলনায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কম। ডিক্যাফ (ক্যাফেইনমুক্ত কফি) পান করলেও অনুরূপ সুফল দেখা গেছে, যা প্রমাণ করে যে কেবল ক্যাফেইন নয়, বরং কফির অন্যান্য উপাদানও ডায়াবেটিস প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।
সতর্কতাতবে অতিরিক্ত কফি (প্রতিদিন ৪–৫ কাপের বেশি) স্নায়বিক উত্তেজনা, অনিদ্রা, রক্তচাপ বৃদ্ধি ইত্যাদি ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। চিনি, দুধ বা ক্রিম মেশালে কফির ক্যালরি ও চর্বি বেড়ে যায়, যা ডায়াবেটিস প্রতিরোধের পরিবর্তে ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই ব্ল্যাক কফি সর্বোত্তম। কফি কোনোভাবেই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও শারীরিক পরিশ্রমের বিকল্প নয়।
উপসংহারে বলা যেতে পারে, পরিমিত মাত্রায় (প্রতিদিন ২–৩ কাপ, চিনি ও ক্রিম ছাড়া) কফি সেবন টাইপ–২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে। এটি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়, মেটাবলিজম উন্নত করে ও প্রদাহ কমায়। তবে কফিকে সহায়ক হিসেবে বিবেচনা করা উচিত, প্রধান প্রতিরোধমূলক কৌশল নয়। সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনই ডায়াবেটিস প্রতিরোধের মূল উপায়।
ডা.
শাহজাদা সেলিম সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ব স থ যকর ক য ফ ইন ইনস ল ন
এছাড়াও পড়ুন:
‘যানে ভি দো ইয়ারো’ অভিনেতা সতীর্থ মারা গেছেন
জনপ্রিয় বলিউড অভিনেতা সতীশ শাহ আর নেই। আজ ২৫ অক্টোবর দুপুরে মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। দীর্ঘদিন ধরে কিডনির জটিলতায় ভুগছিলেন। কিছুদিন আগে কিডনি প্রতিস্থাপনও করিয়েছিলেন এই বরেণ্য অভিনেতা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চলেই গেলেন তিনি। খবর ইন্ডিয়া টুডের
চার দশকের বেশি সময় ধরে অভিনয়জগতে সক্রিয় থাকা সতীশ শাহ উপহার দিয়েছেন অনেক স্মরণীয় চরিত্র। ‘যানে ভি দো ইয়ারো’-তে তাঁর অভিনীত কমেডি চরিত্র তাকে পরিচিত করে তোলে।
সতীশ শাহ। আইএমডিবি