গাজায় তীব্র শীত–বৃষ্টি: ‘আমার ছোট্ট বাচ্চা নিথর হয়ে গেল’
Published: 11th, December 2025 GMT
শীতের রাত। এরপর আবার তুমুল বর্ষণ। ভেসে গেছে আরাফাত আল-গান্দুরের ছোট তাঁবুটি। পাঁচ সন্তান নিয়ে দিশাহারা অবস্থা আরাফাত ও তাঁর স্ত্রী নূরের। সকালের সূর্য ওঠার পর একটু স্বস্তির শ্বাস ফেলতে পারছেন তাঁরা। নূর বললেন, একসময় শীতকাল ভালোই লাগত। তবে এখন সেটিই দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।
দুর্বিষহ হবেই না কেন? এটা ফিলিস্তিনের গাজা। দুই বছর ধরে ইসরায়েলের জাতিগত নিধন আর ধ্বংসযজ্ঞের মুখে সেখানে বলতে গেলে আর কোনো ঘরবাড়িই অবশিষ্ট নেই। ছেঁড়া-ফাটা তাঁবু দিয়ে শীত আর কতটা আটকানো যায়। আর গতকাল বুধবার রাতে যে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে, তা আগামী শনিবার পর্যন্ত চলবে—এমনটাই পূর্বাভাস।
আরাফাতের পরিবার বাস্তুচ্যুত। থাকেন মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহে। ইসরায়েলি হামলার মুখে উত্তর গাজা থেকে পালিয়ে এসেছিলেন তাঁরা। গত বুধবার রাতের বৃষ্টিতে দেইর আল-বালাহর আল-বাসা ও আল-বারাকা এলাকা ভেসে গেছে। পানি জমে দেখা দিয়েছে বন্যা। একই অবস্থা খান ইউনিসে আল-মাওয়াসিসহ নুসেইরাত ও উত্তর গাজার বিভিন্ন এলাকায়।
এসব এলাকায় দেখা গেছে, ফিলিস্তিনিদের বহু তাঁবু ভেঙে পড়েছে। ভেতরে পানি-কাদায় একাকার। তীব্র শীতে ভেজা পোশাকে জবুথবু হয়ে আছে শিশুরা। তারা এখন কোথায় থাকবে, কী খাবে নেই তার কোনো ঠিকঠিকানা। রাস্তাঘাটে জমে গেছে পানি। বৃষ্টিপাতের পর গাজাবাসীর কাছ থেকে ২ হাজার ৫০০টির বেশি সাহায্যের আবেদন পেয়েছে স্থানীয় সিভিল ডিফেন্স।
তীব্র শীতে গরম কাপড়ের অভাবে মারা গেছে নয় মাসের শিশুটি। তার মরদেহ কোলে নিয়ে মায়ের কান্না.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বেগম রোকেয়াকে নিয়ে রাবি শিক্ষকের মন্তব্য একাডেমিক নৈতিকতার লঙ্ঘন: আসক
বাঙালি মুসলমান নারীজাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনকে নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষকের ফেসবুক পোস্টের নিন্দা জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। সংস্থাটি বলছে, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের এমন মন্তব্য একাডেমিক নৈতিকতার সরাসরি লঙ্ঘন।
আজ বৃহস্পতিবার আসকের সিনিয়র সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবির স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে জানা যাচ্ছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে সমাজসংস্কারক মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়াকে ‘মুরতাদ কাফির’ আখ্যায়িত করে পোস্ট দিয়েছেন। এ ঘটনায় আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলা ও বাঙালি নারীজাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া, যাঁর অবদান আমাদের শিক্ষা, সমাজচিন্তা ও মনন গঠনের ভিত্তি; তাঁকে নিয়ে এমন বিদ্বেষপূর্ণ ও উসকানিমূলক মন্তব্য কেবল নিন্দনীয়ই নয়, এটি নারীর মর্যাদার ওপর সরাসরি আক্রমণ। আমাদের মনে রাখতে হবে, বেগম রোকেয়ার শিক্ষা ও সামাজিক আন্দোলন ধর্ম, বর্ণ, জাতিনির্বিশেষে বাঙালি নারীদের পরাধীনতা ও কুসংস্কারের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করেছে।
বিবৃতিতে আসক বলেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক, যিনি নিজেদের পেশার নৈতিকতা, শালীনতা ও প্রগতিশীল চেতনার প্রতীক হওয়ার কথা, তাঁর কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্য একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বজ্ঞানহীন, ঘৃণা প্রচারমূলক ও নারীবিদ্বেষী বক্তব্য পেশাগত নীতিবোধের চরম লঙ্ঘন।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) মনে করে, এ ধরনের মন্তব্য ব্যক্তিগত দায়িত্বহীনতার সীমা ছাড়িয়ে সমাজে বিভাজন, নারীবিদ্বেষী ও ঘৃণামূলক বক্তব্যকে উসকে দেয়, যা মানবাধিকার মানদণ্ড, রাষ্ট্রীয় আইন এবং একাডেমিক নৈতিকতার সরাসরি লঙ্ঘন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) দৃঢ়ভাবে বলতে চায়, বেগম রোকেয়া শুধুই একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব নন, তিনি বাঙালি নারীর মুক্তি আন্দোলনের ভিত্তি। তাঁকে অবমাননা করা মানে আমাদের সামষ্টিক অগ্রযাত্রাকে আঘাত করা।
আরও পড়ুনবেগম রোকেয়াকে ‘মুরতাদ কাফির’ বললেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক০৯ ডিসেম্বর ২০২৫