প্রান্তিক কৃষক সজল আহমেদ (৩৫)। বাড়ি চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার মানিকপুর গ্রামে। নিজের তেমন জমিজমা না থাকায় ২০০৯ সালে অন্যের কাছ থেকে সাত বিঘা জমি বন্দোবস্ত নিয়ে নিজ গ্রামে বরই ও পেয়ারার বাগান করেন। প্রথম বছরেই লাভের মুখ দেখেন। দিনে দিনে তা সম্প্রসারিত হতে থাকে। বর্তমানে তাঁর ১৩৯ বিঘা জমিতে দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির ফলের মিশ্র বাগান রয়েছে।

সজলের বাগানে দেশি-বিদেশি অন্তত ৫৫০ প্রজাতির ফল উৎপাদন হয়ে থাকে। যার মধ্যে ১৯৭ প্রজাতির মাল্টা-কমলা, ১০৬ প্রজাতির আম, ৬ প্রজাতির পেয়ারা, ১০ প্রজাতির বরই, ৫ প্রজাতির কতবেল, এভোকাডো, সাউথ আফ্রিকান, চায়নিজ ও দার্জিলিং জাতের কমলা, ইয়েলো কিং মাল্টা, বিচিবিহীন (সিডলেস) লিচু, হাইব্রিড সফেদা, রামবুটান, বারোমাসি কাটিমন আম, সৌদি আরবের আজওয়া ও মরিয়ম খেজুর, থাইল্যান্ডের গোলাপজাম, পেঁপে ও আঙুর, ভিয়েতনামের আঠাবিহীন বারোমাসি লাল ও সবুজ কাঁঠাল রয়েছে। এ ছাড়া ১ হাজার ২০০ প্রকারের ফলের চারা আছে সজলের নার্সারিতে।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে নিজ গ্রামে কিনেছেন পাঁচ বিঘা জমি। চলতি উৎপাদন মৌসুমেই খরচ বাদে লাভ করেছেন অন্তত এক কোটি টাকা। বর্তমানে সেখানে নিয়মিত ৪২ জন কর্মচারীর পাশাপাশি চুক্তিভিত্তিক আরও ১০-১২ জন শ্রমিক কাজ করেন।

এসএসসি পাস করা সজল দাবি করেন, ফল চাষের শুরুতে পারিবারিকভাবে সমর্থন পাননি। তবে এখন সবাই সাধ্যমতো সহযোগিতা করছেন। বিভিন্ন সূত্রে খবর পেয়ে সারা দেশ থেকে নামীদামি তারকাসহ অসংখ্য দর্শনার্থী ছুটে আসছেন মানিকপুরে। দেশের শিক্ষিত তরুণেরা এভাবে ফলের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করলে দেশের বেকার সমস্যার বড় অংশের সমাধান হবে। ফলের আমদানিনির্ভরতা কমবে। ২০৩০ সালের মধ্যে গোটা বাংলাদেশ ফলের রাজ্যে পরিণত হবে। দেশে ফলকেন্দ্রিক অ্যাগ্রো ট্যুরিজম গড়ে উঠবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চুয়াডাঙ্গা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ৮ হাজার ৫৪ হেক্টর জমিতে ফলের আবাদ হলেও চলতি বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৩০১ হেক্টরে। ফলন বেড়েছে প্রায় ২১ হাজার মেট্রিক টন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চুয়াডাঙ্গার উপপরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার প্রথম আলোকে জানান, বয়স্ক কৃষকেরা সনাতন পদ্ধতির কৃষিকে আঁকড়ে রাখলেও তরুণেরা ঝুঁকি নিয়ে ফল-ফসলের আবাদে মনোনিবেশ করছেন, যা কৃষিতে ইতিবাচক দিক হিসেবেই দেখা হচ্ছে। তরুণ এসব উদ্যোক্তার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে পরামর্শসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হচ্ছে।

তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে সজলের পরামর্শ, যাঁরা বাগান করতে চান, উদ্যোক্তা হতে চান, তাঁদের সরাসরি মানসম্মত বাগান ভিজিট করতে হবে। ভালো জাত নির্বাচন করতে হবে। বাগান তৈরির প্রয়োজনীয় যত্ন করতে হবে। তা না হলে বিনিয়োগ বিফলে যাবে।

শুধু সজলই নন, জেলার চারটি উপজেলায় অনেক তরুণের হাত দিয়ে নতুন দিনের কৃষির সূচনা ঘটছে। যাঁদের কেউ বিদেশ থেকে ফিরে, কেউ দেশে চাকরির আশায় না থেকে আবার কেউ ব্যবসা ছেড়ে বাণিজ্যিক কৃষিতে মনোনিবেশ করছেন। যাঁদের বেশির ভাগই তরুণ।

সদর উপজেলার গহেরপুর গ্রামের প্রবাসী দুই ভাই রবিউল ইসলাম ও উজ্জ্বল হোসেন বিদেশে যাওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে নিজ গ্রামে সাড়ে তিন বিঘা জমিতে বাণিজ্যিক পদ্ধতিতে ড্রাগন ফল চাষ করেন। প্রথম বছরেই কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়ায় পরের বছর ৯ বিঘায় ও বর্তমানে ২০ বিঘা জমিতে কয়েকটি প্রজাতির ড্রাগন ফল চাষ করছেন। সফল ড্রাগনচাষি হিসেবে এই দুই ভাইয়ের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে দেশ ছেড়ে দেশের বাইরেও।

রবিউল প্রথম আলোকে জানান, চলতি বছরের সব ধরনের খরচ বাদ দিয়ে ২৭ লাখ টাকা নিট লাভ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সফলতা দেখে এলাকার প্রায় প্রতিটি গ্রামে শিক্ষিত তরুণেরা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ড্রাগন চাষ করছেন।’

ওই দুই ভাইয়ের দেখাদেখি চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বুজরুকগড়গড়ি এলাকার বাসিন্দা কৃষিবিদ আব্দুল কাদির সোহান লেখাপড়া শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে ২০১৭ সালে গড়ে তোলেন মনোমিলা গার্ডেন অ্যান্ড নার্সারি নামের সমন্বিত কৃষি খামার। ২০১৭ সালে বাবার দেওয়া ৫০ হাজার টাকা ও দুই বিঘা জমি দিয়ে খামারের যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে ৩৫ বিঘা জমিতে রয়েছে তাঁর খামার। সোহান জানান, স্ত্রী শারমিন আক্তারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতা এবং নিরলস পরিশ্রমে মনমিলা বর্তমানে একটি সফল প্রতিষ্ঠান। তাঁর খামারে দেশি-বিদেশি ফল, সবজি চাষের পাশাপাশি তিনটি পুকুরে মাছ এবং উন্নত জাতের গরু পালন করা হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক চুয়াডাঙ্গার দামুড়দা উপজেলার হৈবতপুর গ্রামের বাসিন্দা কৃষিবিদ হামিদুর রহমান জানান, তরুণেরা উচ্চমূল্যের ফল ফসলের সম্পৃক্ত হওয়ায় পুষ্টির জোগান বাড়ছে। বিদেশ থেকে আমদানিনির্ভরতা কমায় এ খাতে কর্মসংস্থানও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: তর ণ র প রথম করছ ন উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

জুটির হাহাকার, তাওহীদের আর্তনাদ

‘একটা বড় জুটি হলেই হতো’ - বারবার তাওহীদ হৃদয় এই কথাটাই বোঝাতে চাচ্ছিলেন একাধিক প্রশ্নে। ১৮২ রানের লক্ষ‌্য তাড়া করতে নেমে ৩৯ রানে ম‌্যাচ হারের পর দলের সেরা ব‌্যাটসম‌্যান বোঝাতে চাইলেন, ‘একটা বড় জুটি হলেই খেলাটা অন‌্যরকম হতে পারত।’ 

শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাওয়া তাওহীদ ৫০ বলে ৮৩ রানে অপরাজিত থাকেন। ৭ চার ও ৩ ছক্কায় সাজানো ইনিংসটি তার ক‌্যারিয়ার সেরা। তবে, দিন শেষে হাসিটা মুখে রাখতে পারেননি ডানহাতি ব‌্যাটসম‌্যান। স্কোরবোর্ড, উইকেট, লক্ষ‌্য, শিশির, কোনো কিছুই বাংলাদেশের জন‌্য জটিল ছিল না। কিন্তু শীর্ষে থাকা ৪ ব‌্যাটসম‌্যান ম‌্যাচকে উপহার দিয়ে আসেন আয়ারল‌্যান্ডকে। 

আরো পড়ুন:

খই খই এখন দ্যুতি ছড়াচ্ছেন আন্তর্জাতিক মঞ্চে

দারুণ জয়ে ক্রিকেট কার্নিভালের কোয়ার্টার ফাইনালে ওয়ালটন

পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে বাংলাদেশের ৪ ব‌্যাটসম‌্যান সাজঘরে। রান মাত্র ২০। প্রথম বাউন্ডারি পেতে বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয় ২৮তম বল পর্যন্ত। এমন হতশ্রী শুরুর পর জয়ের আশা করা কঠিন। তবুও তাওহীদ চেষ্টা চালিয়ে যান। 

ম‌্যাচ নিয়ে তাওহীদের মূল‌্যায়ন, ‘‘যদি আমাদের একটা বড় পার্টনারশিপ হতো, তাহলে খেলাটা অন্যরকম হতো। আমরা বেশি রানে, বেশি ব্যবধানে হারিনি। একটা পার্টনারশিপ, আমি আর জাকের যখন ব্যাটিং করছিলাম, তখনও যদি আমাদের একটা পার্টনারশিপ ৭০-৮০ পার্টনারশিপ হতো, তাহলে হয়তোবা অন্যরকম একটা সিনারিও হতে পারতো।’’ 

পঞ্চম উইকেটে জাকের ও তাওহীদ দলের হাল ধরেন। তাওহীদ নিজের সহজাত খেলাটা খেলতে পারলেও জাকের সময় নিয়েছেন। পরে তা পুষিয়ে দিতে বাড়তি ঝুঁকি নিয়ে শট খেলেন। তাতেই ডেকে আনেন বিপদ। ৩৪ বলে ৪৮ রান আসে তাদের জুটিতে। এছাড়া, নবম উইকেটে শরিফুল ও তাওহীদের জুটি আছে সমান ৪৮ রান। ক‌্যারিয়ারের সপ্তম টি-টোয়েন্টি ফিফটির ইনিংসটিকে স্মরণীয় করে রাখতে পারেননি তাওহীদ। তা নিয়ে কিছুটা আক্ষেপ আছে তার। 

তবে দলের পরাজয়ের পেছনে তার মাথায় কেবল ঘুরছে, একটি বড় জুটি না আক্ষেপ, ‘‘অবশ্যই উইকেট অনেক ভালো। ওরা ভালো খেলেছে, আমরা ভালো করতে পারিনি। উইকেটের কোনো এখানে দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমরা নিজেরাই আমাদের এক্সিকিউশনটা ভালো করতে পারিনি। আর্লি কিছু উইকেট পড়েছে। যখন আমরা খেলাটা ধরেছিলাম, আমি আর জাকের যখন ব্যাটিং করছিলাম, ওই সময় যদি আরেকটু খেলাটা টেনে নেওয়া যেত তাহলে ভালো হতো।”

স্কোরবোর্ড যতই বড় হোক, প্রতিপক্ষ যতই কঠিন হোক নিজেদের ওপর বিশ্বাস রাখার কথা বললেন তাওহীদ, ‘‘আমাদের নিজেদের উপরে সেই বিশ্বাসটা রাখতে হবে এবং আমরা অবশ্যই সবাই জিততে চাই। এক্সিকিউশন হচ্ছে না। এজন‌্য আমাদের দায়িত্ব নিতে হবে।’’

গতকাল টপ অর্ডারের ব‌্যাটিং ভালো যায়নি। মিডল অর্ডারেও রয়েছে জটিলতা। তাওহীদ উন্নতির ‍উপর জোর দেওয়ার কথা বললেন, ‘‘শুধু মিডল অর্ডার না। শুধু টপ টু বটম সব জায়গায় উন্নতির জায়গা আছে আমাদের। যখন ইম্প্রুভমেন্টটা হবে, তখন আমরা ভালো কিছু করব।’’

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ