বেআইনি আন্দোলন কঠোর হাতে দমন করবে সরকার
Published: 11th, December 2025 GMT
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পর এখন দাবিদাওয়া নিয়ে যেকোনো বেআইনি আন্দোলন কঠোর হাতে দমন করবে সরকার।
বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যালয়ে তাঁর সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক হয়। বৈঠকে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকার থেকে পদত্যাগ করা দুই উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার জন্য ধন্যবাদ প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। পরে তাঁদের সৌজন্যে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করা হয়। বৈঠকে বাণিজ্যিক আদালত অধ্যাদেশ, রেজিস্ট্রেশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ এবং আইনগত সহায়তা প্রদান (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫–এর খসড়া অনুমোদন করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যারিবীয় অঞ্চলের দ্বীপরাষ্ট্র গ্রেনাডাকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
পরে বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলন করে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বরাত দিয়ে প্রেস সচিব বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর (বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তফসিল ঘোষণা হয়েছে) রাস্তা বন্ধ করে অন্যায় ও বেআইনি দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলনে নামলে পুরো বিষয়টি কঠোর হাতে দমন করা হবে। এখন পুরো জাতি একটি ভালো নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে। সেটার জন্য সরকার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
প্রেস সচিব আরও বলেন, অনেকে অপেক্ষা করতে চাইছেন না। অনেকে অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়েও আন্দোলন করার চেষ্টা করছেন। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, বিষয়টি কঠোর হাতে দমন করা হবে।
তফসিল ঘোষণার পর এখন উপদেষ্টা পরিষদের পরবর্তী বৈঠকগুলোতে আর কোনো অধ্যাদেশের অনুমোদন দেওয়া হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, তাঁর জানামতে এমন কোনো সিদ্ধান্ত ও আইন অনুমোদন করা হবে না, যেটা নির্বাচনে প্রভাব ফেলে। কিন্তু অন্য যেকোনো আইন, সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।
এআই দিয়ে জালিয়াতি রোধে পৃথক আইন হবে
সংবাদ সম্মেলনে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশে এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) আসার পর জালিয়াতি বেড়ে গেছে অনেক। এত বিস্তৃতি যে এটিকে জালিয়াতির সমুদ্র বলা যায়। এর ফলে দেশের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। জালিয়াত চক্র অনেক মানুষকে ঠকাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে তারা ভিসাও জালিয়াতি করছে। এর ফলে অনেক দেশে বাংলাদেশের নাগরিকেরা হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। তাঁদের ভিসা প্রক্রিয়ায় সমস্যা হচ্ছে। এই জালিয়াতি কীভাবে রোধ করা যায়, সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা আলাদা আইন করার সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন।
প্রেস সচিব বলেন, এই আইন খুব জরুরি ভিত্তিতে করা হবে। যাঁরা এই জালিয়াতি করছেন, তাঁদের বিষয়ে সুস্পষ্ট শাস্তিসহ এটি রোধে যত ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে রকম ব্যবস্থা করা হবে।
মেট্রোরেলের টিকিটে ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা
মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট অব্যাহতির সুবিধা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। এ ছাড়া পবিত্র রমজান মাস সামনে রেখে খেজুর আমদানির ওপর থেকে শুল্ক-কর কমানো হয়েছে। এটি ৫২ দশমিক ২ শতাংশ ছিল। সেটা এখন ৪০ দশমিক ৭০ শতাংশে নেমে আসবে।
এ বিষয়ে প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, মেট্রোরেলের ভ্যাট প্রত্যাহারে সরকারের ৪০ কোটি টাকার মতো (বছরে) লোকসান হবে। কিন্তু এটি যেহেতু ঢাকার মানুষের যাতায়াতে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করছে, সে জন্য ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে।
গত জানুয়ারিতে মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা আরও এক বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই অব্যাহতি থাকবে। এ বিষয়ে এখন সরকার নতুন করে আবারও সিদ্ধান্ত নিল।
বর্তমান ভ্যাট আইন অনুযায়ী, যেকোনো শীতাতপনিয়ন্ত্রিত রেলের টিকিটে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের বিধান আছে। মেট্রোরেল পুরোপুরি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত এবং গণপরিবহন। কিন্তু মেট্রোরেল চালুর পর শুরু থেকেই এর মালিক কোম্পানি ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) অনুরোধে এ সেবার ওপর ভ্যাট আরোপ করা হয়নি।
মাইলস্টোন বিমান দুর্ঘটনায় হতাহত আর্থিক সহায়তা
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ লাখ এবং আহতদের ৫ লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেবে সরকার। পাশাপাশি আহত ব্যক্তিদের সরকারি হাসপাতালে বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হবে। এ জন্য তাঁদের নিবন্ধন কার্ড করে দেওয়া হবে।
গত ২১ জুলাই উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে ৩৬ জন নিহত হন। এর ২৮ জনই শিক্ষার্থী। বিমানের পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামও নিহত হন। এ ছাড়া অনেকে আহত হন। ব্যাপক আলোচিত এ ঘটনা নিয়ে ৯ সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠন করেছিল অন্তর্বর্তী সরকার। সেই কমিশনের প্রতিবেদনে কারণ হিসেবে যুদ্ধবিমানের পাইলটের উড্ডয়ন-ত্রুটি চিহ্নিত হয়েছে।
প্রতি উপজেলায় দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট
এদিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন হিসেবে আগামীকাল শুক্রবার থেকে ভোট গ্রহণের দুই দিন পর পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালতের আওতায় আচরণবিধি প্রতিপালনে প্রতিটি উপজেলায় ও থানায় অন্যূন দুজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে গতকাল চিঠি দিয়েছে ইসি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জীবিত ভাইকে মৃত দেখিয়ে জুলাইয়ের হত্যা মামলা, আসামিদের অব্যাহতির সুপারিশ
জুলাই আন্দোলনের ঘটনা সাজিয়ে গত বছরের ৩০ আগস্ট রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় আপন ছোট ভাইকে মৃত দেখিয়ে হত্যা মামলা করেন বড় ভাই মো. মোস্তফা কামাল। মামলার তদন্তে নেমে পুলিশ আরও দেখতে পায়, মামলার বাদী এলাকায় ‘মোস্ত ডাকাত’ নামে পরিচিত। তাঁর বিরুদ্ধে সার্চ ওয়ারেন্ট থাকায় ১০ বছর ধরে পলাতক। ছোট ভাইয়ের সঙ্গে জমিজমার বিরোধ থেকে ভাইকে মৃত দেখিয়ে হত্যা মামলা করেছেন।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে বৃহস্পতিবার জমা দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনে পুলিশের ওয়ারী গোয়েন্দা বিভাগের উপপরিদর্শক ইনামুল ইসলাম জানিয়েছেন, জীবিত মো. সোলায়মান সেলিম ওরফে দুলালকে মৃত দেখিয়ে মামলা করা হয়েছে। এটি মিথ্যা মামলা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে, মিথ্যা মামলার দায় থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ এজাহারনামীয় ৪১ জন ও তদন্তে প্রাপ্ত ১ আসামিকে অব্যাহতি দেওয়া হোক। পাশাপাশি এজাহারকারীর বিরুদ্ধে ২১১ ধারা অনুযায়ী মামলার অনুমতি চাওয়া হয়েছে।
চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাদী মো. মোস্তফা কামাল ও ভুক্তভোগী সোলায়মান সেলিম আপন ভাই। তাঁরা চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সোলায়মান সেলিম (৫০) সবার ছোট, মোস্তফা কামাল (৫৫) সেজ ভাই। মোস্তফা কামাল এলাকায় ডাকাতি ও অপরাধের কারণে ‘মোস্ত ডাকাত’ নামে পরিচিত। তাঁর বিরুদ্ধে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থানায় ২টি হত্যা ও ১টি অপহরণের মামলা রয়েছে। তিনি ১০ বছর ধরে পলাতক।
প্রতিবেদন বলছে, ভাইদের মধ্যে জমি–সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে। মোস্তফা কামাল জুলাই আন্দোলনের মামলায় ছোট ভাইকে মৃত দেখিয়ে মিথ্যা মামলা করেছেন। এতে পরবর্তীকালে তাঁর ভাইকে হত্যা করে সম্পত্তি আত্মসাৎ করার পরিকল্পনা থাকতে পারে। এ ছাড়া তিনি টাকার বিনিময়ে মামলার অন্য আসামিদেরও প্রভাবিত করতে চাইতেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
অব্যাহতির সুপারিশ পাওয়া অপর আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান, রমেশ চন্দ্র সেন, আসাদুজ্জামান নূর, সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, মশিউর রহমান মোল্লা সজল, শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতি রাজিবুল ইসলাম বাপ্পি, সাধারণ সম্পাদক সজল কুণ্ডু, মোহাম্মদ উল্লাহ পাটোয়ারী, মিরাজ খান।