প্রান্তিক মানুষের অধিকারের প্রশ্নে শেরেবাংলা ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক
Published: 25th, October 2025 GMT
প্রান্তিক মানুষের অধিকারের প্রশ্নে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক। তিনি প্রজাদের নাগরিক হিসেবে তাঁদের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তবে শেরেবাংলার জীবনী নিরপেক্ষভাবে পাঠ করা বেশি প্রয়োজন। শেরেবাংলার ১৫২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দ্য ডেইলি স্টার–এর আয়োজনে আলোচনা সভায় উঠে এল এসব কথা।
‘আজকের বাংলাদেশে শেরেবাংলার প্রাসঙ্গিকতা’ শিরোনামে এ আলোচনার আয়োজন করা হয় গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ডেইলি স্টার সেন্টারে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন দ্য ডেইলি স্টার–এর সাংবাদিক শামসুদ্দোজা সাজেন।
অনুষ্ঠানে আলোচকের বক্তব্যে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘মানুষ তার নিজের ইতিহাস তৈরি করে, কিন্তু ঠিক যেমনটি সে চায় তেমনভাবে নয়।’ মিথ তৈরির বিরুদ্ধে সতর্ক করে তিনি বলেন, নেতাদের অতিরিক্ত প্রশংসা বোধগম্যতাকে বিকৃত করতে পারে। তাই এ কে ফজলুল হককেও নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে পাঠের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। তিনি ফজলুল হকের বিনা মূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা, গ্রামীণ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ঋণ সালিসি বোর্ডের মতো সংস্কারগুলোর কার্যক্রম তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক পারভিন হাসান। তিনি বলেন, অসাম্প্রদায়িকতার ধারণাটি মনের ভেতর ধারণ করতে হবে। আর সেই উদাহরণগুলো পাওয়া যাবে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের অনেক প্রতিকূলতার ভেতরও শিক্ষা, কৃষি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলোর দিকে তাকালে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে শেরেবাংলার জীবনের একটি তীব্র এবং নিরপেক্ষ পাঠের দাবি রয়েছে। ‘আমরা যদি তাঁর দ্বন্দ্বগুলো চিহ্নিত না করে কেবল তাঁর প্রশংসা করি, তাহলে আমরা এগিয়ে যাব না’ বলে উল্লেখ করেন তিনি। এ কে ফজলুল হককে একজন বহুমাত্রিক, পরীক্ষামূলক নেতা হিসেবে বর্ণনা করে আলতাফ পারভেজ বলেন, ‘ভূমি সংস্কার এবং ঋণমুক্তির মাধ্যমে ফজলুল হক বাংলাকে এক নতুন চেতনায় জাগ্রত করেছিলেন।’
লেখক তরুণ ইউসুফের বক্তব্যে উঠে আসে সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থান ন্যায়বিচার এবং অন্তর্ভুক্তির আশা জাগিয়ে তুলে পুনরায় অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে সেই হতাশার কথা। তিনি বলেন, প্রান্তিক মানুষের অধিকার যখনই অপূর্ণ থাকে, তখনই ফজলুল হক প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেন।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ আরিফ খানের বক্তব্যে উঠে আসে বাঙালি মুসলমানদের জন্য শিক্ষা, ভূমিহীনদের জন্য ভূমি অধিকার এবং ঋণ থেকে মুক্তির জন্য শেরেবাংলার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলোর কথা। তিনি বলেন, শেরেবাংলা ফজলুল হক প্রজাদের নাগরিক হিসেবে তাঁদের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর বক্তব্যে এ কে ফজলুল হকের সরকারি আইনজীবী হয়েও কৌশলী পদক্ষেপ নিয়ে তেভাগা নেত্রী ইলা মিত্রের পাশে থাকার উদাহরণ উঠে আসে।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কবি ইমরান মাহফুজ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দ্য ডেইলি স্টার–এর সম্পাদক মাহ্ফুজ আনামসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেকে। এই আলোচনা ছিল দ্য ডেইলি স্টার–এর ইতিহাস আড্ডার দ্বিতীয় পর্ব। প্রথম পর্ব ছিল ‘ঢাকার বিদ্রোহী নবাব’ শিরোনামের আলোচনা অনুষ্ঠান।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কালিজিরা খেতে কেন বলেছেন নবীজি (সা.)
নবীজির (সা.) হাদিসে কালিজিরাকে বলা হয়েছে ‘সব রোগের ওষুধ’। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এর নাম Nigella sativa, আরবিতে হাব্বাতুস সাওদা (الحَبَّةُ السَّوْدَاءُ)। এটি একাধারে খাদ্য, ওষুধ ও প্রতিষেধক। নবীজির বাণী আজ আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের কাছে প্রমাণিত সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কালিজিরা খাও, এতে মৃত্যু ছাড়া সব রোগের আরোগ্য আছে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৬৮৮; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২২১৫)
যদিও কোরআনে সরাসরি কালিজিরার নাম উল্লেখ নেই, তবে আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি প্রতিটি রোগের জন্য নিরাময় সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা শু‘আরা, আয়াত: ৮০)
প্রাকৃতিক উপাদানে আল্লাহ নিরাময়ের গুণ রেখেছেন, কালিজিরা সেই নিরাময়ের এক অনন্য উদাহরণ।
নবীজির (সা.) খাদ্যাভ্যাসে কালিজিরার স্থাননবীজি (সা.) সাধারণ জীবন যাপন করতেন। তিনি খেজুর, যব, মধু, দুধ, কালিজিরা ও অলিভ তেল নিয়মিত ব্যবহার করতেন। কালিজিরা ছিল তাঁর ঘরোয়া চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। হাদিসে এসেছে, আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি নবীজিকে বলতে শুনেছি, কালিজিরায় মৃত্যু ছাড়া সব রোগের নিরাময় রয়েছে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৬৮৮)
এই হাদিসে ‘মৃত্যু ছাড়া সব রোগের আরোগ্য’ কথাটি বোঝায় যে আল্লাহ তাআলা কালিজিরায় এমন প্রাকৃতিক গুণ রেখেছেন, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা জাগ্রত করে। তবে এটি চিকিৎসার বিকল্প নয়, বরং প্রাকৃতিক প্রতিষেধক ও পরিপূরক খাদ্য।
আরও পড়ুনহালাল খাদ্যাভ্যাস কেন গুরুত্বপূর্ণ৩১ আগস্ট ২০২৫কালিজিরা ঠান্ডা-গরম দুই ধরনের রোগেই উপকারী