প্রান্তিক মানুষের অধিকারের প্রশ্নে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক। তিনি প্রজাদের নাগরিক হিসেবে তাঁদের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তবে শেরেবাংলার জীবনী নিরপেক্ষভাবে পাঠ করা বেশি প্রয়োজন। শেরেবাংলার ১৫২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দ্য ডেইলি স্টার–এর আয়োজনে আলোচনা সভায় উঠে এল এসব কথা।

‘আজকের বাংলাদেশে শেরেবাংলার প্রাসঙ্গিকতা’ শিরোনামে এ আলোচনার আয়োজন করা হয় গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ডেইলি স্টার সেন্টারে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন দ্য ডেইলি স্টার–এর সাংবাদিক শামসুদ্দোজা সাজেন।

অনুষ্ঠানে আলোচকের বক্তব্যে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘মানুষ তার নিজের ইতিহাস তৈরি করে, কিন্তু ঠিক যেমনটি সে চায় তেমনভাবে নয়।’ মিথ তৈরির বিরুদ্ধে সতর্ক করে তিনি বলেন, নেতাদের অতিরিক্ত প্রশংসা বোধগম্যতাকে বিকৃত করতে পারে। তাই এ কে ফজলুল হককেও নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে পাঠের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। তিনি ফজলুল হকের বিনা মূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা, গ্রামীণ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ঋণ সালিসি বোর্ডের মতো সংস্কারগুলোর কার্যক্রম তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক পারভিন হাসান। তিনি বলেন, অসাম্প্রদায়িকতার ধারণাটি মনের ভেতর ধারণ করতে হবে। আর সেই উদাহরণগুলো পাওয়া যাবে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের অনেক প্রতিকূলতার ভেতরও শিক্ষা, কৃষি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলোর দিকে তাকালে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে শেরেবাংলার জীবনের একটি তীব্র এবং নিরপেক্ষ পাঠের দাবি রয়েছে। ‘আমরা যদি তাঁর দ্বন্দ্বগুলো চিহ্নিত না করে কেবল তাঁর প্রশংসা করি, তাহলে আমরা এগিয়ে যাব না’ বলে উল্লেখ করেন তিনি। এ কে ফজলুল হককে একজন বহুমাত্রিক, পরীক্ষামূলক নেতা হিসেবে বর্ণনা করে আলতাফ পারভেজ বলেন, ‘ভূমি সংস্কার এবং ঋণমুক্তির মাধ্যমে ফজলুল হক বাংলাকে এক নতুন চেতনায় জাগ্রত করেছিলেন।’

লেখক তরুণ ইউসুফের বক্তব্যে উঠে আসে সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থান ন্যায়বিচার এবং অন্তর্ভুক্তির আশা জাগিয়ে তুলে পুনরায় অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে সেই হতাশার কথা। তিনি বলেন, প্রান্তিক মানুষের অধিকার যখনই অপূর্ণ থাকে, তখনই ফজলুল হক প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেন।

সংবিধান বিশেষজ্ঞ আরিফ খানের বক্তব্যে উঠে আসে বাঙালি মুসলমানদের জন্য শিক্ষা, ভূমিহীনদের জন্য ভূমি অধিকার এবং ঋণ থেকে মুক্তির জন্য শেরেবাংলার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলোর কথা। তিনি বলেন, শেরেবাংলা ফজলুল হক প্রজাদের নাগরিক হিসেবে তাঁদের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর বক্তব্যে এ কে ফজলুল হকের সরকারি আইনজীবী হয়েও কৌশলী পদক্ষেপ নিয়ে তেভাগা নেত্রী ইলা মিত্রের পাশে থাকার উদাহরণ উঠে আসে।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কবি ইমরান মাহফুজ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দ্য ডেইলি স্টার–এর সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনামসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেকে। এই আলোচনা ছিল দ্য ডেইলি স্টার–এর ইতিহাস আড্ডার দ্বিতীয় পর্ব।  প্রথম পর্ব ছিল ‘ঢাকার বিদ্রোহী নবাব’ শিরোনামের আলোচনা অনুষ্ঠান।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ট র এর অন ষ ঠ ন

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রামে পাহাড় কাটায় সওজকে ১ কোটি ৩২ লাখ টাকা জরিমানা

পাহাড় কাটার অভিযোগে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে ১ কোটি ৩২ লাখ টাকা জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। সড়ক সম্প্রসারণের জন্য সওজ প্রায় ৩৫ শতক পাহাড় কেটেছে। তদন্ত শেষে আজ বুধবার জরিমানা করা হয়।

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চল কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ রসায়নবিদ গোলাম বাশির আহমেদ প্রথম আলোকে জরিমানার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আইন অমান্য করে এবং সরকারি অনুমোদন ছাড়া পাহাড় কাটার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এ জরিমানা করা হয়েছে।

সওজের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ জাহেদ হোসেন দাবি করেন, তাঁরা জনস্বার্থে পাহাড় কেটে সেতু তৈরি করেছেন। তবে পরিবেশ অধিদপ্তর যে পরিমাণ উল্লেখ করেছে, সে পরিমাণ পাহাড় কাটা হয়নি। তারা এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।

পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, চট্টগ্রামে সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাধীন ‘বারাইয়ারহাট-হেঁয়াকো-রামগড় সড়ক সম্প্রসারণ (এলওসি-৩)’ প্রকল্পের কাজে ওই পাহাড় কাটা হয়। এ সড়কের ১৭টি এলাকায় পাহাড় কাটা হয়। গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা গিয়ে পাহাড় কাটার প্রমাণ পান। এক বছরের মাথায় গত ৪ নভেম্বর আরেক দফা তদন্ত করা হয়। দুবার তদন্ত করে মোট ১ লাখ ৩২ হাজার ৫৭০ ঘনফুট বা ৩৪ দশমিক ৯২ শতক পাহাড় কাটার হিসাব বের করা হয়।

অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, আজ সওজের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ জাহেদ হোসেন, নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দীন চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে শুনানি হয়। এরপর জরিমানা করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ